
একেবারে কৈশোরে আমার বাবার বইয়ের শেলফ থেকে আমার খন্ড খন্ড আকারে পড়া হয়েছিলো তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর”। সেসময় ওই গ্রন্থের অনেক প্রেক্ষাপট, ঘটনা এবং ব্যাখ্যা আমার কাছে দুর্বোধ্য ছিলো কেননা ঐসব ঘটনাগুলোর অনেক প্রাথমিক প্রেক্ষাপটের ব্যাপারে আমার ধারনা ছিলো অপ্রতুল। সে কারনেই কৈশোরে যা পড়েছি ও যা বুঝতে পেরেছি সেটার সাথে এই সময়ের পাঠ ও তার বুঝবার মধ্যে একটা তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য আমি অনুধাবন করতে পারি।
গত প্রায় ৭-৮ বছর ধরেই আমি স্পেসেফিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর আইনী দিক নিয়ে আমি গবেষনা করবার চেষ্টা করছি। এই অপরাধ সংঘটনের দায়ভার যাদের উপর মূলত বর্তায় তাদের বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শুরু হয় ১৯৭২ সালে। যে আইনে এই বিচারটুকু সম্পাদিত হচ্ছিলো সেই আইনের একটা প্রচলিত নাম হচ্ছে ৭২ এর দালাল আইন যদিও তার কেতাবী নাম হচ্ছে Bangladesh Collaborators (Special Tribunal) Order 1972, এই বিচার প্রক্রিয়া মূলত স্থগিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে খুন করবার মাধ্যমেই। যার ধারাবাহিকতায় দেখা যায় যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ঠিক ৪ মাস ১৬ দিনের মাথায় অর্থ্যাৎ ৩১ শে ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে এই দালাল আইনটি রহিত করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। আপনারা এটা সকলেই জানেন যে ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে এইসব দালালদের বিচার বাংলাদেশ সরকার পুনরায় শুরু করে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইন-১৯৭৩ এর মাধ্যমে। এইসব দালালদের বিচার কেন দালাল আইনে না হয়ে ১৯৭৩ এর আইনে হচ্ছে সেটির আইনী ব্যাখ্যা নানান সময়ে নানান যায়গায় দিয়েছি সুতরাং আজকে সেই আলোচনাতে যাচ্ছিনা এবং এই লেখায় সে আলোচনা প্রাসঙ্গিক বলে আমি মনে করিনা।