Saturday 20 June 2015

বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী প্রবাসী মইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের মামলার রায়:একটি আইনী পর্যবেক্ষন


এই লেখাটা সোনেলা ব্লগে প্রকাশিত আমার প্রথম লেখা। ব্যাতিক্রম ছাড়াই লেখাটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাংলাদেশের উপর। স্পেসিফিক ভাবে বলতে গেলে এই লেখাটি মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের ব্যাপারে আদালতের দেয়া রায়ের একটি আইনী পর্যবেক্ষন। যদিও এখানে রায় ব্যাতীত সংশ্লিষ্ঠ অনেকগুলো ইস্যু আলোচিত হয়েছে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের মূল হোতা চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের ব্যাপারে অনলাইনে তথ্যের পরিমাণ সীমিত। এত বড় দুই খুনীর ব্যাপারে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আসা রায়ের ব্যাপারে সবাইকে জানানো তাই কর্তব্য বলেই মনে করেছি। লেখাটা আপনাদের কাজে লাগলে কিংবা এই লেখা পড়ে আপনারা কেউ উপকৃত হলে আমার এইসব পরিশ্রম স্বার্থক মনে হবে। সোনেলার ব্লগারদের অনেক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।

Friday 19 June 2015

দি কিউরিয়াস কেইস অফ কাদের মোল্লা এবং সাক্ষী মোমেনা

সাফী নামে একজন ভদ্রলোক আরিফ রহমান ভাইয়ের একটি পোস্ট “কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের নাকি এক ব্যাক্তি ছিলেন না; বীরাঙ্গনা মোমেনা বেগম আমায় ক্ষমা করবেন…” এ একটি মন্তব্য করেছেন।

অনেক মন্তব্যের ভেতর এই মন্তব্যটি আমার নজর কেড়েছে এবং একই সাথে বিরক্তিও উৎপাদন করেছে একটা ব্যাপার যে মোটামুটি অনেক যায়গাতেই শুনেছি এই গুজব যে, এই কাদের মোল্লা সেই কাদের মোল্লা না, সাক্ষী মোমেনা ভুয়া ইত্যাদি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমি এই ব্যাপারগুলো পর্যালোচনা করেছি আমার নিজস্ব চিন্তা, চেতনা এবং অবশ্যই আইনী বলয় থেকে। এই পুরো ব্যাপারটি-ই যেহেতু আইনী ব্যাপার, সুতরাং গুজবে কান দেয়ার এখানে কোনো রকমের সুযোগ নেই।

অভিজিৎ’দা সাফী সাহেবের এই মন্তব্যটি আমার নজরে এনেছেন, প্রথমেই অভিজিৎ’দা কে অনেক ধন্যবাদ। এই মন্তব্য না পড়লে এই বিষয়ে এই দীর্ঘ লেখাটি হয়ত হোতো না। আমি মনে করি সাফী সাহেবের এই মন্তব্যের উত্তর দেবার ফলে কাদের মোল্লা বিষয়ক নানান গুজবের অবসান হবে এবং সাক্ষী মোমেনাকে নিয়েও মিথ্যাচার শেষ হবে।

Friday 12 June 2015

জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা আর আইনমন্ত্রীর অদ্ভুত তিন কারন

গতকালই প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য। যেখানে তিনি বলেছেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা আপাতত সম্ভব নয়।” এই বক্তব্যের পেছনে তিনি যে তিনটি কারন দেখিয়েছেন সে কারনগুলোও নীচে দিয়ে দিচ্ছি-


প্রথম কারন,
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই।

দ্বিতীয় কারন,
জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে৷ এই পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ এখন এসব অন্যান্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে৷’

Tuesday 9 June 2015

গ্লোবাল সামিট লন্ডনঃ ৭১এর যে নৃশংসতার কথা পৃথিবীকে জানতেই হবে

                                                                                                        শুরুর কয়েকটি কথাঃ

আমার এই লেখাটি শুরু করবার আগে আমি বিখ্যাত অভিনেত্রী এঞ্জেলিনা জোলির নিজের লেখা একটি প্রবন্ধের অনুবাদ শুরুতেই এই লেখায় তুলে দিতে চাই। ২০০৮ সালে ব্রিটিশ জার্নাল দি ইকোনোমিস্টে “এ ইয়ার অফ একাউন্টিবিলিটি” শীর্ষক প্রবন্ধে জোলি লিখেছিলেন কিছু অবাক করে দেবার মত কথা। জোলি UNHR এর গুড উইল এম্বাসেডর হিসেবে মধ্য আফ্রিকার দেশ শাদ এর পূর্বাঞ্চলে গিয়েছিলেন শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে। শাদ এই শরণার্থীরা এসেছিলেন সুদান থেকে। ২০০৩ থেকে সুদানের লিবারেশন মুভমেন্ট আর্মি এবং জাস্টিস এন্ড ইকুয়ালিটি মুভমেন্ট দুইটি গেরিলা দল অস্ত্র তুলে নেয় সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ অসংখ্য। বঞ্চনা, ডিস্ক্রিমিনেশন, নির্যাতন, দীর্ঘদিনের অবহেলা, সবকিছু মিলে দক্ষিন সুদানের অধিবাসীরা চাইলো স্বাধীন দক্ষিন সুদান আর শুরু হলো যুদ্ধ। যুদ্ধ হলে সাধারণত যা হয় তাই হোলো। অসংখ্য নিরীহ মানুষকে খুন হতে হয়, নারী-শিশুরা হয় ধর্ষিত, লক্ষ কোটি মানুষ হয় ঘর হারা, স্বপ্ন হারা, পথ হারা। সুদানের রাষ্ট্রপতি ওমর আল বশির এই বিদ্রোহ মেনে নিতে চাইলো না আর শুরু হোলো সেই অঞ্চলের মানুষদের উপর গণহত্যা। ঠিক এমন করেই দক্ষিন সুদানের অসংখ্য মানুষ তাদের সীমান্ত নিকটবর্তী দেশ শাদে আশ্রয় নিলেন।

Sunday 7 June 2015

বিচারহীনতার ৪২ বছর, কিন্তু আর না…ফারজানা

এই লেখার বিষয়ঃ এই লেখাটি শুরু করবার আগেই সকল পাঠকদের এক বাক্যে জানিয়ে দেই এই লেখাটির মূল বিষয় বস্তু বাংলাদেশের চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলতে থাকা বিচার নিয়ে। যেই স্পেশাল ট্রাইবুনালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘঠিত হওয়া নানা ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধ সমূহের বিচার হচ্ছে। জানিয়ে রাখা ভালো এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে।


লেখার কারনঃ


এই লেখাটি মূলত মুক্তমনায় আমার আগের একটি লেখার প্রেক্ষিতে আসা প্রতি উত্তরের পাল্টা উত্তর হিসেবে দিচ্ছি। আপনারা হয়ত অনেকেই পড়ে থাকবেন কিংবা দেখে থাকবেন যে আমি সম্প্রতি মুক্তমনা ব্লগে কাদের মোল্লার ফাঁসী হবার পর পর এই ফাঁসী তথা বিচার নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ও অপঃপ্রচারের জবাব দিয়েছি একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে [ আমার সে লেখাটি পরা যাবে এখান থেকে]

মূলত সেই লেখাটি মুক্তমনার একজন ব্লগার আরিফ ভাইয়ের একটি লেখাতে সাফী নামের এক ব্যাক্তির মন্তব্যের জবাবের প্রেক্ষিতে হলেও এই লেখাটি আরো একজনকে জানাবার কিংবা উত্তর দেবার উদ্দেশ্যেও লিখিত হয়েছিলো। [আরিফ ভাইয়ের সে প্রবন্ধটি পাওয়া যাবে এখানে]

সেই ব্যাক্তির নাম ফারজানা মাহবুবা [ফামা] ফেসবুকে গত ৯-ই ডিসেম্বর তিনি কাদের মোল্লার ফাঁসী নিয়ে এবং এই পুরো বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে যত্তসব মনগড়া কথা বার্তা লিখেছিলেন এবং সতর্ক ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম তিনি আইন, আদালত, বিচার ব্যাবস্থা সব কিছু নিয়েই জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সুতরাং দেশের একজন সচেতন নাগরিক এবং আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে মনে করেছিলাম এইসব অপঃপ্রচারের যথাযথ আইনী এবং যৌক্তিক উত্তর দেয়া খুব প্রয়োজন।

Saturday 6 June 2015

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ও বিচারিক বিষয়ের কিছু আইনী ভাষ্য

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের মূল ভবন 
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিবিধ আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার একটি ঐতিহাসিক বিচা্রের উদাহরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের এই বিচার করবার পুরো প্রক্রিয়া, রাষ্ট্রের সদিচ্ছা, প্রসিজিওর, বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে নির্মূল করবার পদক্ষেপ এসব সব কিছু মিলিয়েই এই ট্রাইবুনাল, এই আদালত, এই আইন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন নিয়ে যারা পড়েন, গবেষনা করেন, আগ্রহী তাঁদের সকলের জন্যই বাংলাদেশের এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার সব সময়ের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

Thursday 4 June 2015

চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামনের এক্সট্রাডিশন সম্পর্কিত কিছু আইনী ভাবনা

আপনারা সকলেই জেনে থাকবেন যে একাত্তরের ঘাতক, বুদ্ধিজীবি হত্যাকারীদের অন্যতম দুই ভয়ংকর অপরাধী চৌধুরী মইনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানের ফাঁসির দন্ড হয়েছে বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু হতাশার বিষিয় হচ্ছে তাদের এখনো দেশে ফেরত আনা যায় নি। চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিচার বিষয়ক একটি আলোচনা আমি আমার আগের পোস্টে করেছি কিংবা এই ব্যাপারে হয়ত বিশদ জানাও গেছে কিন্তু এই পুরো বিচার-ই মূলত ব্যার্থতায় পরিণত হবে যদি এই দুই কনভিক্টেড অপরাধীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা না যায়। বাংলাদেশের রাজনীতি আর তার দীর্ঘ মারপ্যাঁচে স্বাভাবিকভাবেই এই দুই অভিযুক্তের ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর্যন্ত না নেয়া হলেও এটা সত্য যে এই দুই অভিযুক্তের ব্যাপারে সাধারণ জনতা কিংবা ভিক্টিম পরিবারের সদস্যরা বরাবরই উচ্চকিত ছিলেন এবং বৃটেন-আমেরিকার মিডিয়াও সব সময় উচ্চকিত ছিলো। এত কষ্ট, ত্যাগ ও সংগ্রামের পর অবশেষে এই অপরাধীর বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হয়েছে। কিন্তু অপূর্ণতা রয়েই গেছে শেষ পর্যন্ত। কেননা এই দুই খুনী এই দেশে নিরাপদে জীবন যাপন করছে এবং এই চলমান ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ক্রমাগত বিষেদাগার করেই চলেছে।

Monday 1 June 2015

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালঃ হতাশা কেবল গভীর হয়

প্রারম্ভিক বক্তব্যঃ এ লেখাটা যখন লিখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তারপর থেকেই আমি ঠান্ডা মাথায় কয়েকবার ভেবেছি এই লেখাটা কি সঠিক হচ্ছে কিনা। কেননা লেখাটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে এবং লেখাটার আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে প্রচন্ড হতাশা্র গল্প। এই ট্রাইবুনাল নিয়ে এই পর্যন্ত যতবার লিখেছি যে কোনো মাধ্যমেই কিংবা যেখানে যেখানেই বলেছি প্রতিটি স্থানেই চেষ্টা করেছি এই ট্রাইবুনাল নিয়ে আশার কথা বলতে। বেছে বেছে সব সময়ই ট্রাইবুনালের পজিটিভ দিকগুলোকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।