Wednesday 3 December 2014

আমার শ্বশুর সংক্রান্ত FAQ


এটা আমার শ্বশুরকে সংক্রান্ত একটি এফ এ কিউ। মানে ফ্রিকোয়েন্টলি আস্ক কোয়েশ্চেন এবং তার উত্তর। অনেকে এটি দেখে হেসেছেন কিংবা অনেকে এটি দেখে মজা পেয়েছেন কিংবা অনেকে এটি দেখে দুঃখ পেয়েছেন বা পাবেন। আসলে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমি এই জিনিস লিখতে বাধ্য হয়েছি। 

বাংলাদেশের লেখালেখির ইতিহাসে আমিই খুব সম্ভবত প্রথম লেখক ও ব্লগার যার শ্বশুরকে নিয়ে এমন একটা এফ এ কিউ বানাতে হয়েছে। গত একটি দশক আমার শ্বশুরকে কেন্দ্র করে আমাকে যে পরিমানে এবং যে লেভেলে বুলিইং এর শিকার হতে হয়েছে, যে পরিমাণের ট্রলের ও মিথ্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, তাতে বাধ্য হয়েই এই জিনিস আমি বানিয়েছি যাতে করে আর কারো মনে কোনো রকমের কথা না থাকে, প্রশ্ন না থাকে পার্টিকুলারলি এই বিষয়ে। আমার লেখা কিংবা আমার বক্তব্য পছন্দ না হলেই চট করে এসে যায় আমার শ্বশুর প্রসঙ্গ। আরে এই লোক তো ফ্রিডম পার্টির এজেন্ট, ফ্রিডম পার্টির জামাই, ফ্রিডম পার্টির অমুক বা তমুক। 

মনের গহীনে তো একটা দুঃখবোধ আছেই। যারা বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, তাঁরা বুঝবেন। বাংলাদেশে জন্মেছি, এই নোংরামির মধ্যে দিয়ে তো আমাকে যেতে হবেই। জানা কথা। ফলে আর কোনো উপায় না পেয়ে এই FAQ বানিয়েছি।


আশা করি, ক্ষুধার্থরা জবাব পেয়ে যাবেন।


নিঝুম, আপনার শ্বশুর কি বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক?

উত্তরঃ না, সত্য নয়

নিঝুম, আপনার শ্বশুর কি বঙ্গবন্ধুর খুনী মেজর ডালিম?

উত্তরঃ না, সত্য নয়

নিঝুম, আপনার শ্বশুর কি বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছে সেদিনের সেই সেনাবাহিনী দলের কেউ?

উত্তরঃ না, সত্য নয়

নিঝুম, আপনার শ্বশুর তাহলে কে?

আমার শ্বশুরের নাম চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক

নিঝুম, আপনার শ্বশুর কি করতেন?

উত্তরঃ তিনি সাংবাদিক ছিলেন।

নিঝুম, তিনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন?

উত্তরঃ দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন

নিঝুম,শোনা যায় উনি ফ্রিডম পার্টি করতেন

উত্তরঃ ঘটনা খুবই সত্য। তিনি খুবই একটিভলি ফ্রিডম পার্টির সমর্থক ছিলেন। এক সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য।

নিঝুম, উনি কবে ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেন?

উত্তরঃ ১৯৮৭ কিংবা ১৯৮৮ সালে। আমি নিশ্চিত নই

নিঝুম, উনি কি ১৫-ই অগাস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সময় সেখানে ছিলেন?

উত্তরঃ না, ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার নথি, পত্রের কাছে কিংবা ধারে তার নাম নেই।

নিঝুম,আপনার শ্বশুড় কি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার? যুদ্ধাপরাধী?

উত্তরঃ এটি সত্য নয়। আমি যতদূর জানি, উনি এবং উনার আরেকভাই ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে। উনারা দুই ভাই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের দেরাদুনে। মুক্তিযুদ্ধের পর এক সময় জাসদের রাজনীতি করতেন। তারপর দীর্ঘ বিরতির দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার এডিটর এবং পরে ফ্রিডম পার্টিতে যোগদান। উল্লেখ্য, আমার শাশুড়ি ন্যাপ (মতিয়া) দলের কর্মী ছিলেন। শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ী দুইজনই ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন।

নিঝুম, উনি আপনার শ্বশুর কিভাবে হোলো?

উত্তরঃ উনার বড় মেয়েকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি ২০০২ সালে।


নিঝুম,বিয়ের আগে কি জানতেন যে আপনার শ্বশুর ফ্রিডম পার্টির একজন নেতা?

উত্তরঃ না জানতাম না। জানলেও বিয়ে করতাম। প্রেম করেছি বিয়ে করেছি কথা সিম্পল ও পরিষ্কার। আমাদের বিয়ে হয়েছে গোপনে। পরিচয়ের ৪ মাসের মধ্যে। বিয়ের এক থেকে দেড় বছর পরে সবাই জেনেছে। দীর্ঘ ৬ বছর এই বিয়ে দু'পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। আমি বিয়ের ১ বছর পরে লন্ডনে চলে আসি। তারও এক বছর পর আমার স্ত্রী লন্ডনে আমার কাছে চলে আসেন বাসা থেকে পালিয়ে। গোপনে তাঁর আসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।

নিঝুম,আপনি আপনার শ্বশুরের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড কিভাবে দেখেন?

উত্তরঃ খুবই বাজে ভাবে দেখি। ফ্রিডম পার্টি একটা উগ্র খুনীদের দল। এদের নেতারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। বাঙালী জাতির পিতার বুক রক্তে রঞ্জিত করেছে। এমন একটি দলের মুখপাত্র পত্রিকাকে ঘৃণা না করে উপায় নেই।

নিঝুম,আপনি কোন দলের সমর্থক?

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বঙ্গবন্ধু আমার নেতা আমার আদর্শ। একটা সময় আওয়ামীলীগের সাথে আমার ভাবনার মানসিক দূরত্ব এসেছিলো এটি সত্য। কিন্তু সেটি ছিলো সাময়িক। এই দলটিকে ধরেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং বাংলাদেশীদের জীবনে আওয়ামীলীগ-ই শেষ কথা বলে মনে করি। প্রগতিশীল ভাবনার রাজনৈতিক চর্চা এই দলটিকে ঘিরেই একমাত্র ও একমাত্র সম্ভব।

নিঝুম,আপনার রাজনৈতিক আদর্শ আর আপনার শ্বশুরের আদর্শে প্রচুর ফারাক। সমস্যা হয়না?

না হয়না। উনি বেঁচে থাকতে এইসব বিষয়ে উনার সাথে আমার কখনো কথা হয়নি। উনি আমাকে এসব নিয়ে কখনো জিজ্ঞেস করেন নি। আমার রাজনৈতিক আদর্শ আমার, উনার রাজনৈতিক আদর্শ উনার।  এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাবার কিছু নেই। ফ্রিডম পার্টি ঘৃণ্য দল। এটাই সত্য, এটাই প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশে শতাধিক রাজনীতিবিদ রয়েছেন যাদের রক্তের আত্নীয়তার সম্পর্ক কিংবা  বৈবাহিক সূত্রে নানাবিধ সম্পর্ক একজনের সাথে আরেকজনের পুরো উলটা। কেউ একাত্তরের ঘাতক কেউবা আওয়ামীলীগ, কেউ বি এন পি, কী আওয়ামীলীগ। পৃথিবীতে আমি-ই একমাত্র ব্যক্তি নই যে বিরুদ্ধ রাজনৈতিক চিন্তার পরিবারে বিয়ে করেছি। আর আমি যখন বিয়ে করি তখন অলরেডী আমি একটা রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি অনুরক্ত এবং সেটি আমার পরিবার থেকেই শিখেছি, পেয়েছি। এটা একটা খুবই হাস্যকর চিন্তা যে শ্বশুরের রাজনৈতিক চিন্তা আমাকে গ্রহণ করতে হবে শুধু মাত্র তার মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি বলে।

নিঝুম, আপনার শ্বশুর কি বেঁচে আছেন?

উত্তরঃ না বেঁচে নেই।

নিঝুম, এখন কি আপনার শ্বশুর বাড়ীর সাথে আপনার সম্পর্ক/যোগাযোগ রয়েছে?

একদম নেই। ইনফ্যাক্ট আমার স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়েই সেই পরিবারের সাথে আমার ভয়ানক দূরত্ব বাড়ে যেটা আর কখনো ঠিক হয়নি। আমারও নেই, আমার স্ত্রীর-ও তার মায়ের সাথে যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ যে ভবিষ্যতে হবে, সেটির সামান্যতম আগ্রহ আমার পক্ষ থেকে নেই। আমরা আসলে কেউ জানিওনা আমার শ্বাশুড়ি কিংবা তাঁর বাকি সন্তানেরা এখন কোথায় থাকেন।



No comments:

Post a Comment