Thursday 1 March 2018

যুক্তির মাইক্রোস্কোপের নীচে ইয়েন ইয়েনের জবানবন্দীঃ কতটা সত্য বলেছেন?

ঘটনাস্থল-রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছরি গ্রাম। ছবিঃ পিনাকী দেব অপু

কেন লিখছি এই লেখা?

গত ২১ শে জানুয়ারী ২০১৮ দিবাগত রাত অর্থ্যাৎ ২২ শে জানুয়ারী ভোরে রাঙ্গামাটি জেলার, বিলাইছড়ি উপজেলার, ৩নং ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছড়া গ্রামে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যে কর্তৃক একজন নারীকে ধর্ষন এবং অন্য নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। এই অভিযোগের পর ঘটনা বহুদূর গড়িয়েছে এবং ব্যাপারটিকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে তা বিষ্ময়কর। 

স্বঘোষিত তথাকথিত রাণী ইয়েন ইয়েন এই পুরো ঘটনার রেশ ধরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী তার ফেসবুকে একটি জবানবন্দী পোস্ট করেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে সেই দুই নারীকে তিনি তার দলবলসহ দেখতে যাবার পর তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের মধ্যেই অন্তরীন করে রেখেছিলো এবং তিনি সেনাবাহিনীর এইসব বাঁধা অতিক্রম করে দেয়াল টপকে পালিয়েছিলেন, ১৫ মিনিট বন ও জঙ্গল দিয়ে দৌড়েছিলেন এবং পরে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আধাঘন্টা জলহস্তীর মত পানিতে মটকা মেরে পড়েছিলেন। তার পর তিনি লোকালয়ে ফিরে এসেছিলেন।

এই লেখাতে এই জবানবন্দীর পোস্টমর্টেম করা হবে। আমি দেখতে চেয়েছি যুক্তির মাইক্রোস্কোপের নীচে ইয়েনের জবানবন্দী আসলে কতটা সত্য। আমি একজন আইনজীবির চোখেই নয় বরং একজন সাধারণ মানুষের চোখেই আজ ইয়েন ইয়েনের বক্তব্যগুলোকে দেখবার চেষ্টা করব। আমি যেসব যুক্তি, যেসব ভ্যান্টেজ পয়েন্ট দিয়ে কথা বলব কিংবা যে অপিনিয়ন দেব সেটি একান্তই আমার। আপনারা পাঠকেরা বিবেচনা করবেন আমার বক্তব্যের জোর কিংবা কতটুকু যৌক্তিক। সে ভার আপনাদের কাছেই অর্পিত রইলো।

কিন্তু এগুলো সব জানবার আগে আসলে ঘটনার ইতিবৃত্ত-ও কিছুটা জেনে নেওয়া জরুরী।

আসুন শুরু করা যাক...

কি হয়েছিলো?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২জানুয়ারী ভোরে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছড়ি গ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আর্মি ক্যাম্প দীঘলছড়ি জোন, ১৩ বেঙ্গল ইউনিট। এটি ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এই অভিজানের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়ারেন্ট অফিসার মিজান।

এই ঘটনা বুঝবার আগে এটিও জানিয়ে রাখা ভালো যে গত ৩শরা জানুয়ারী রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বদ্বয় তঞ্চাঙ্গ্যাকে (৩৫) গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছিলো দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার দুর্গম তিন নম্বর ফারুয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, রাত ৩টার দিকে মুখোশ পরা একদল দুর্বৃত্ত আওয়ামী লীগের ওই নেতার বাসায় ঢুকে তার উরুতে চারটি গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।  



বিলাইছড়ির যুবলীগ নেতা বিশ্বরায়কে কুপিয়ে জখম করেছে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীরা























২১ তারিখ রাতে সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর যৌথ সদস্যরা সংবাদ পায় শান্তি বাহিনীর একটি দল (সন্তু লারমা গ্রুপ) বিপুল পরিমাণে অবৈধ অস্ত্রসহ ওরাছড়িগ্রামের আশে পাশে অবস্থান করছে। তারা ঢুকবে লোকালয়ে। বলে রাখা ভালো যে সন্ত্রাসীরা কয়েকদিন আগেই সেখানকার দুইজন আওয়ামীলীগ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এই সন্ত্রাসীদের খুঁজতে গিয়ে ২২ তারিখ ভোরে উল্লেখিত দুটি মেয়ের বাসাতেও যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। বাসায় ছিলো দুই বোন আর তাদের ৮ বছরের ভাই অংচিং থোয়াই মারমা। মেয়েদের বয়স যথাক্রমে আনুমানিক ১৯ ও ১৪। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ওই উপজেলায় আ’লীগ নেতাদের উপর জেএসএস’র হামলায় পুরো উপজেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। 

ওই রাতে ওই এলাকায় সেনা টহলের পরের দিন জেএসএস’র পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় যে ওই এলাকায় দু’কিশোরীকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

একটি অভিজানে প্রায় ২০ জন সেনা ও আনসার সদস্য (১৪ জন সেনা ও ৬ জন আনসার) থাকবার পরে কিভাবে সকলের সামনে দুটি মেয়েকে ধর্ষিত করা হয়েছিলো, কেনই বা ধর্ষন করবে এটির সদুত্তর এখনো পর্যন্ত অভিযোগকারীরা দিতে পারেন নি।

অভিযোগ করেছে কে?

অভিযোগটা আসবার কথা ছিলো সেই দুই নারীর কাছ থেকে কিংবা তাদের পরিবারের কাছ থেকে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে অভিযোগের সকল রীতি নীতি পাল্টে অভিযোগ করেছেন তৃতীয় ব্যাক্তি। কে এই ৩য় ব্যাক্তি বা সংগঠন? এরা হচ্ছে এই এলাকারই সন্ত্রাসী দল শান্তিবাহিনী। যারা নিজেরাই শত শত মেয়েদের ধর্ষন করে, নির্যাতন করে, খুন করে। আমার এই লেখাতেই পাবেন সেসব সূত্র।

যার মানে দাঁড়ায় যে দুইজন নারী ধর্ষিত হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে তাঁরা অভিযোগ করেন নি কিংবা তাঁদের বাবা কিংবা মা’ও অভিযোগ করেন নি। অভিযোগ করেছে শান্তিবাহিনীর গুন্ডারা আর নিজেকেই নিজে রাণী ঘোষনা করা ইয়েন ইয়েন। এলেইজড ভিকটিমের কোনো অভিযোগ নেই কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ইয়েন ইয়েন এবং শান্তিবাহিনী মূল ঘটনার সময় সেখানে না থেকেও তিনি দৈব উপায়ে জেনে ফেলেছেন যে সেই দুইটি মেয়ে রেইপড হয়েছে।

প্রশ্নঃ ভাবুন ভাবুন, মন দিয়ে ভাবুন...

(১) একটি গুরুত্বপূর্ন অভিজানের সময় কেন একজন সদস্য তার অভিজান ফেলে ধর্ষন করবেন একটি মেয়েকে? এই লোকের কি চাকুরীর ভয় নেই? শাস্তির ভয় নেই? প্রেস, মিডিয়া'র ভয় নেই? এই ব্যক্তি কি নির্বোধ?

(২) সেনাবাহিনীর ১৪ জন সদস্য আর আনসারের ৬ জন সদস্য, মোট ২০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে মাত্র একজন ধর্ষন করেছে আর বাকি ১৯ জনের একজনও এটির প্রতিবাদ করেনি? এটা বিশ্বাস করতে হবে? কেন এই গল্প বিশ্বাস করতে হবে? 

(৩) একজন ধর্ষন করেছে আর বাকিরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে গেলো? এটিকে কি খুব স্বাভাবিক একটি কথা মনে হচ্ছে আপনার? 

(৪) একটা ২০ জনের আর্মি কমান্ড এসেছে সন্ত্রাসীদের সাথে যুদ্ধ করতে। স্বাভাবিকভাবেই হাতে সময় কম এবং তারা সতর্ক। ঠিক এমন একটা  ভয়ানক ও উত্তেজনাকর পরস্থিতিতে একমাত্র পাগল কিংবা নির্বোধ হলেই সে সময় কারো ধর্ষনের চিন্তা মাথায় আসবে।


পাঠক উপরের পয়েন্টগুলো কেবল একটু নির্মোহভাবে আপনারা ঠান্ডা মাথায় ভাববেন বলে আমি আশা করি।


মেয়েদের রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলো কে?

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল
মেয়েদেরকে রাঙ্গামাটি মেডিকেলে তাদের বাবা মা নিয়ে যান নি। কেননা ঘটনার সময় ওই দুই কিশোরীর বাবা মা ছিলেন জুম ঘরে হলুদ তুলতে। অন্ততপক্ষে আমি এই কথা বলছি যে সূত্র সেটি হচ্ছে উপরের অডিও কথোপকথনের সূত্রে। যেখানে আরো বলা হয় যৌথবাহিনী চলে যাবার কিছুক্ষন পরেই সন্তু লারমার কিছু ছেলে পেলেরা এসে ঐ মেয়ে দুজনকে নিয়ে যান এই বলে যে এরা ধর্ষিত হয়েছে সুতরাং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

সেই একই অডিও থেকে জানা গেছে বাবা মা সেখানে ছিলেন না এবং সেই মেয়ে দুটিকে উঠিয়ে নিয়ে যায় শান্তি বাহিনীর ছেলেরা এবং তাদের-ই কোনো এজেন্ট মেয়েদের হাসপাতালে রেখে যায়। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় শান্তি বাহিনীর ছেলেরা উঠিয়ে নিয়ে যাবার পর এই সংবাদ কি বাবা মা আর্মি ক্যাম্পে জানিয়েছিলো? সে উত্তর আমি খুঁজে পাইনি। অবশ্য না জানাবার পেছনে একটা যুক্তি আছে। সেটা হচ্ছে শান্তিবাহিনীকে নিয়ে ভয়। 

কেননা শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলবে আর তার পরে জবাই হয়ে যেতে হবে, এই সাহস কারো ছিলোনা। আমার বক্তব্যের ঠিক এই পর্যায়ে দেখে নিতে পারেন যে শান্তিবাহিনী কিভাবে মানুষকে হত্যার হুমকি দেয়। ক্লিক করুন এখানে।

হাসপাতালে যদি বাবা মা নিয়ে যেতেন কিংবা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়া হোতো তাহলে সেটা নিয়ে জনসংহতি সমিতি বিরাট রাজনীতি করতো বলা বাহুল্য। সন্তু লারমার সন্ত্রাসী দল এই পুরো ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রেস রিলিজ ছাড়ে বাজারে। পাওয়া যাবে এখানে। যেখানে এরা এদের প্রেস রিলিজে সেদিনের ঘটনা মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিটি স্টেপ পুংখানোপুংখ হিসেবে বর্ণনা করছে সেখানে তারাই তাদের প্রেস রিলিজের মধ্যে শুধু হাসপাতালে কিভাবে নিলো এটি দ্রুত শেষ করে দিয়েছে। 

আপনি যদি নিজেই এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ভাবেন তাহলে একটা মজার জিনিস লক্ষ্য করবেন এই প্রেস রিলিজে। কি লক্ষ্য করবেন? লক্ষ্য করে দেখুন এদের প্রেস রিলিজের ৮ নাম্বার প্যারাতে এরা লিখেছে 

On 23 January at around 12:00 pm the victims were admitted at Rangamati General Hospital

পাহাড়ী সন্ত্রাসী দল জন সঙ্ঘতি সমিতি'র প্রেস রিলিজ


মেয়েদের বাবা উসি চিং মারমা
মেয়েদের মা সুইক্রাচিং মারমা
পাঠক, লক্ষ্য করে দেখুন, এই প্রেস রিলিজের অন্য সব প্যারায় কে কোথায় গেছে, কিভাবে গেছে, কখন এসেছে এসেব নিয়ে পাই টু পাই বিস্তারিত বর্ণনা থাকলেও শুধু হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যাপারটি চট করে এক লাইনেই শেষ করে দিলো জনসংহতি সমিতির লোকেরা। আনুমানিক ১২ টার সময় হাসপাতালে ভর্তি করবার কথা বলা রয়েছে কিন্তু হাসপাতালে মা নিলো নাকি বাবা নিলো নাকি যৌথবাহিনী নিলো এটি নিয়ে একটি শব্দ-ও নেই। খুব অদ্ভুত লাগছে না ব্যাপারটা?

কারন হাসপাতালে কে নিয়ে গেছে এটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য। এই ঘটনাটি নিয়েই শান্তিবাহিনী বড় রাজনীতি করবার কথা অথচ একলাইনে কেমন যেন চোরের মত মানে মানে কেটে পড়বার মত একটা আচরণ আমরা টের পাই। ঘটনাটা কি একটি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে?

কেননা সেনাবাহিনীর লোকেরা যদি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় কিংবা বাবা-মা তাহলে এটি দেখানো খুবই সোজা যে মেয়েগুলো আক্রান্ত হয়েছিলো তাই উনারাই নিয়ে গেছেন। কিন্তু প্রতটি সংবাদপত্র, তথ্য, ব্যাক্তর সাথে কথা বলে যা জানা যায় তা হচ্ছে কয়েকটা চাকমা ছেলে মেয়েদের বাসা থেকে নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করে আস্তে করে কেটে পড়ে।

এই ঘটনার পর পর তাদের বাবা মা হাসপাতালের দিকে রওয়ানা করেন এবং একই সাথে শান্তি বাহিনী কর্তৃক এরই মধ্যে চাউর হয়ে গেছে যে যৌথবাহিনী দ্বারা দুজন নারী ধর্ষিত হয়েছে। এই সংবাদ তারা পাঠিয়ে দেন ঢাকাতে তাদের কমরেডদের কাছে যাতে এখান থেকেও আন্দলোন শুরু হয়। আর এই অঞ্চল থেকে মাঠে নামে স্বঘোষিত রানী ইয়েন ইয়েন। শুরু হয় এক নতুন রাজনৈতিক মিশনের নোংরা চালের খেলা। 

এদিকে বাবা মা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন মেয়েদের ডাক্তারী টেস্ট হয়েছে যেখানে ধর্ষনের আলামত পাওয়া যায়নি বলে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে এই রিপোর্টগুলো পড়ে দেখতে পারেন। 



এদিকে আমার সাথে এক অডিও কথপোকথনেও এই দুই কিশোরীর বাবা দৃড়ভাবে বলেন যে তাঁদের মেয়েদের কোনো ধর্ষন করা হয়নি, যৌন হয়রানী করা হয়নি। সেই অডিওটি শুনে নিন-

এই ভিডিওটিতে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আপনারা পাবেন বলে আমি আশা করি। এখানে আপনারা জানতে পারবেন যে কি করে এখানে সন্তু লারমার সন্ত্রাসী বাহিনী উপজাতিদের উপর কি অমানুষিক অত্যাচার চালায়, কি করে চাঁদাবাজি করে, স্বজাতির উপর আক্রমণ করে, ইন্টারনাল রাজনীতি, স্বঘোষিত রাজা দেবাশীষ-এর সঙ্গসদ সদস্য হবার খায়েশ, রাণী ইয়েন ইয়েন এর রাজনীতি করবার রোড ম্যাপ ইত্যাদি।

তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে এই মেয়েদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিলো কে?উপরের ভিডিওতেও দেখবেন বলা হচ্ছে যে মেয়েদের  কয়েকটি চাকমা ছেলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারটিই- এই মামলার ক্ষেত্রে খুব রহস্যের। এদিকে ২৪ তারিখ একটা প্রেস রিলিজ করেও দুই মেয়ের মা ও বাবা [বামে তাঁদের ছবি] বলেন যে তাঁদের মেয়ে তাঁদের জানিয়েছেন যে তাঁরা ধর্ষিত হননি।



মেয়েরা হাসপাতালেঃ স্বঘোষিত রাণীর কুটিল রাজনীতি

মেয়েরা হাসপাতালে ভর্তি হবার পর পুরো ঘটনাকে ছক অনুযায়ী ইয়েন ইয়েন সাজাতে থাকে নিজের মত। তথাকথিত ভলান্টিয়ার ( কিসের ভলান্টিয়ার?) নিয়ে হৈ হৈ করতে করতে সে দেখতে আসার ছল করে হাসপাতালে ভীড় জমায়। 

প্রশ্নঃভাবুন ভাবুন...মন দিয়ে ভাবুন...

(১) একজন সভ্য নাগরিক ঠিক কোন আন্দাজে একদল লোকবল নিয়ে হৈ হৈ করতে করতে একটি হাসপাতালে যেতে পারে? (যেখানে তারা ধারনা করছে যে একটি মেয়ে ধর্ষিত এবং অন্যজন নিপীড়িত)

(২) যেহেতু এখানে রাষ্ট্রের একটি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে অভিযোগ এসেছে সেখানে মেডিকেল কতৃপক্ষ এই ঘটনায় খুবই সতর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এত লোক নিয়ে দেখা করতে দিচ্ছেনা, কেন তাঁরা সতর্ক এটি নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন উঠাবার কারন কি?

(৩) মেয়েদের দেখাশোনা করবার জন্য ডাক্তার রয়েছেন, চিকিৎসক রয়েছেন কিন্তু স্বঘোষিত রাজা ও রাজাকার পূত্র দেবাশীষ ও তথাকথিত রাণী ইয়েন ইয়েন মনে করছেন তারাই দেখাশোনা করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?

(৪) ২০১৭ এর ১২ -ই ডিসেম্বর ঝর্ণা খীসাকে কুপিয়ে জখম করবার পর তিনি যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছিলেন তখন কি এই ইয়েন ইয়েন বা দেবাশীষ এমন ভলাণ্টিয়ার নিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন?

(৫) আয়না চাকমা যখন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন ২৭ শে মে ২০১৬ সালে ঠিক তখন দেবাশীষ আর ইয়েন ইয়েন ছিলেন কোথায়? কোথায়-ই বা ছিলো তাদের ভলান্টিয়ার?

(৬) বাঙালী এক ছেলেকে গত ১৮-ই নভেম্বর "বিয়ে করবার অপরাধে" জোসনা চাকমা নামে যে মেয়েটিকে দুই মাস ধরে নির্যাতন করেছে ইউ পি ডি এফ এর সন্ত্রাসীরা, ঠিক তারপর কি ইয়েন ইয়েন বা দেবাশীষ ভলান্টিয়ার নিয়ে মেয়েটির জন্য এমন দৌড়-ঝাঁপ করেছিলো?

(৭) আরেকজন আয়না চাকমা (যিনি বর্তমানে রীমা আক্তার নামে পরিচিত), বাঙালী ছেলে আবু বক্করকে বিয়ে করবার অপরাধে এখন ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং হয়েছেন। ঘটনাটি গত বছরের (২০১৭) ১৩ ই অক্টোবর-এর। কোথায় ছিলো স্বঘোষিত রাণী ইয়েন ইয়েন কিংবা দেবাশীষ? কোথায় ছিলো তার ভলান্টিয়ারের দল?


(৮) উমাচিং মারমা (১৮) ভালোবেসে বিয়ে করে এক বাঙালী ছেলেকে মার্চ/২০১৫ তে। এরপর তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। বাঙ্গালী ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে সামাজিক শালিসের আয়োজন করে তার পরিবারের এক লাখ টাকা জরিমানা করে এবং নগদে বিশ হাজার টাকা দিতে বলে। তখন হত-দরিদ্র থোয়াই অং মারমা গরু-ছাগল বিক্রি করে ৯মার্চ ২০১৫ তারিখে তাদের দাবীকৃত বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করে। ঠিক সে সময় আমাদের আজকের এই স্বঘোষিত ইয়েন ইয়েন তার ভলাটিয়ারের পাল নিয়ে কোথায় ছিলো?

(৯) দীপা ত্রিপুরা। এক বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করবার অপরাধে তার উপর নেমে আসে ভয়াবহ আক্রমণ। বাঙালী ছেলেটিকে নিয়ে করা হয় নির্যাতন আর মেয়েকে করা হয় ধর্ষন। সেই ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছে আবার সজীব চাকমা নামের এক ধর্ষক। শুনে নিতে পারেন নীচের ভিডিও থেকে

পাহাড়ে এর ফলালফল কি হতে পারে সেটা জানতো বলেই, যখন সে তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে পালাচ্ছিলো, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কিছু কর্মী তাদেরকে অপহরণ করে। পরের ঘটনাবলি পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠিত এমন অন্যান্য ঘটনাগুলোর মতোই। 

রেংকুম-এ একটি ঝুম ঘরে আটক করে দীপা ত্রিপুরাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপি’র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা, নেপাল ত্রিপুরা, সজীব ত্রিপুরা, সুরঞ্জিত ত্রিপুরা, অভি ত্রিপুরা, রাজু ত্রিপুরা। একাধিকবার গণ-ধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত দীপা ত্রিপুরাকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসীরা। এসময় রাজু ত্রিপুরা পুরো গণ-ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে। ছেলেটিকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে মারধর করা হয়। আর মেয়েটিকে শিকার হতে হয় একাধিকবার গণধর্ষণের, এমন কি তা মোবাইলে রেকর্ডও করা হয়। ঘটনাটি বেশি দিন আগের নয়, ২০১৫ সালের জুন মাসের।

সে সময় ঠিক কোথায় ছিলো স্বঘোষিত রাণী ইয়েন ইয়েন আর তার ভলাণ্টিয়ার বাহিনী? 

উত্তরটা দেবে কে?

ইয়েন ইয়েন যদিও দাবী করছে যে তাকে হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হয় নাই কিন্তু একই সাথে তার ফেসবুকেই আমরা দেখতে পাই যে হাসপাতালে ঢুকে সেই দুই নারীর সাথে বসে বসে কাঁথা সেলাই করছে, গল্প করছে। আসুন একটু নীচের ছবিটা দেখে নেই-

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ স্বঘোষিত রাণী ইয়েন। সুতো নিয়ে একটু গুঁতো...

হাসপাতালে ঢুকলেন। কাঁথা-বালিশ নিলেন, সুঁই সুতো দিয়ে ফুল আঁকলেন, ফল আকলেন, কাঁথা বানালেন কিন্তু বের হয়ে এসে বললেন আপনাদের ঢুকতে দেয়নি, কথা বলতে দেয়নি। কি পরিমাণ সময় পেলে কাঁথা সেলাই করা যায়, ফুলের-পাতার ডিজাইন করা যায়? পাঠক আপনারাই ভাবুন।

সে হিসেবে ইয়েনের বক্তব্য কতটুকু গ্রহনযোগ্য সেটি এই পোস্টের পাঠকেরা-ই বিবেচনা করবেন।


হাসপাতাল ও নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে মেয়েরা

ইয়েন ইয়েন ও দেবাশীষের এইসব দৌড়-ঝাঁপ ও অতি উৎসাহ দেখে সকলেই বুঝতে পারে এটি নিয়ে জল ঘোলা করবার পাঁয়তারা করছে ইয়েন ইয়েন আর দেবাশীষ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। ইয়েন আর দেবাশীষ মেয়েদের মা আর বাবাকে চাপ দিতে থাকেন মেয়েরা রেপ হয়েছে এই কথা ওদের মুখ দিয়ে বলাবার। কিন্তু সেটিতে না পেরে বাবা-মায়ের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে ইয়েন ইয়েন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মেয়েদের সুরক্ষা দেবার জন্য তাঁদের হেফাজতে রেখে দেন।

বাবা-মা আইনী পদ্ধতিতে সন্তানদের ফেরত চাইলেন

বাবা মা বুঝতে পারলেন এই মেয়েদের যদি হাসপাতাল থেকে বের করা হয় তাহলে ইয়েন ইয়েন আর তার বাহিনী এক দন্ড শান্তিতে থাকতে দেবে না। ফলে তাঁদের দরকার একটি আইনী হস্তক্ষেপ। একটি আইনী নির্দেশনা। ফলা সূপ্রীম কোর্টে করা হোলো রীট। এতে করে স্পস্ট ভাবে লেখা থাকলো এই মেয়েরা বাবা-মায়ের জিম্মায় থাকবে।

সেই রীটের কাগজের এক ঝলক- যেখানে বিবাদী ৩ থেকে ৬ কে নির্দেশ দেয়া হয় যে বাবা-মার কাছে মেয়েদের ফেরত দেবার জন্য।


আদালতের নির্দেশ


এই নির্দেশের পর পর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিন্ত হয় এবং তাঁরা একটি আইনী নির্দেশনা পান ১৩-ই ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তে। এতদিন ধরে তাঁরাও ছিলেন বিপাকে ও আতংকে। এই নির্দেশনার পর কর্তৃপক্ষ বাবা-মায়ের হাতে দিয়ে দিলেন মেয়েদের। মাথায় রাখবেন এটা আদালতের নির্দেশ ছিলো।

ইয়েনের জবানবন্দীঃ ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঢুকে যায় আইনজীবি


এই নির্দেশের ফলে যখন বাবা মায়ের কাছে মেয়েদের তুলে দেয়া হলো তখন আরো ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো ইয়েন ইয়েন ও তাদের স্যাঙ্গাত রা। দলবল নিয়ে আক্রমণ করলো থানা।

সে এই বিষয় নিয়ে একটি জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীটি একটু দেখে নিন-


ইয়েনের জবানবন্দী



ঠান্ডা মাথায় জবানবন্দী থেকে লক্ষ্য করুনঃ

জবানবন্দীতে  লেখা আছে-

"পুলিশ হাইকোর্ট থেকে একটি অর্ডার নিয়ে আসে এবং ভিক্টিমদের পিতা-মাতাকে তাদের মেয়েদের নিয়ে যেতে বলে। ভিক্টিম দুইজনই তাদের মা-বাবার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ বারবার মা-বাবাকে তাদের মেয়েদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ কর্তৃক প্রণোদিত হয়ে বাবা ভিক্টিমের একজনকে এবং মা অন্যজনকে চড় মারে। 

যেই মেয়েরা বাবা-মাকে এতদিন ধরে দেখেনি এবং তাদের কাছে যেতে পারেনি সেই মেয়েরা বাবা-মায়ের সাথে যেতে চাইবেন না? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা? পুলিশের কথায় প্রণোদিত হয়ে নাকি চড় মেরেছে বাবা ও মা। কতবড় ইতরামি কথা!! পুলিশ এত এত লোকের সামনে শিখিয়ে দেবে যে হে উসি চিং এবনহ হে সুইক্রাচিং মারমা দয়া করে আপনাদের মেয়ের মুখে চড় মারুন!! এগুলো বিশ্বাসযোগ্য কথা?

জবানবন্দীতে  লেখা আছে-

"রাণী ও ভলান্টিয়াররা এই বলে হস্তক্ষেপ করে যে, বাবা-মার হেফাজতে রাখার আদেশ কোর্ট দিলেও মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের জোর করে সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেয়নি এবং সর্বোপরি ভিক্টিমদের হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে নিতে গ্রেপ্তার করা হতে পারে"

তার মানে দাঁড়ায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হতক্ষেপ করেছে। এই কথা মানে কিন্তু স্পস্ট আদালত অবমাননা। মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে যেতে চায়না এই ধুয়ো তুলে বাবা মায়ের সামনেই মেয়েদের ছিনিয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় ইয়েন ইয়েন। পাঠক আপনারা-ই বলুন। দুইজন সহজ সরল কিশোরী এতদিন বাবা মায়ের কাছে বড় হয়েছে, বেড়ে উঠেছে, তারা কিনা বাবা মায়ের কাছে না যেতে চেয়ে যেতে চাইবে ইয়েন ইয়েন এর মত এমন একটা মহিলা র কাছে? এটা কি আসলেই বিশ্বাসযোগ্য? এমন একটা পরিস্থিতিতে পুলিশ বা আইন শৃংখলা বাহিনী যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে সেটি কি অন্যায় হবে? এই ঘটনার পর আজকে মার্চের ১ তারিখ হয়ে গেছে। পুলিশ কি গ্রেফতার করেছে ওই মেয়েদের? ইয়েন ইয়েন এর সেই আযৌক্তিক সন্দেহ কি সত্য হয়েছে? এখন কি করে মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে সুন্দর করে রয়েছে। দুইদিন আগে আমি নিজেও কথা বলেছি। কই কোনো সমস্যার কথা তো শুনিনি!!

আর সবচাইতে জরুরী প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে যাইতে চাচ্ছেন না, এই কথা বলেছে কে? মেয়েরা নিজে ? নাকি ইয়েন ইয়েন এটা নিজে অনুবাদ করে বানিয়েছে?

যে মেয়েরা বাংলা ভাষা ঠিকমত বলতে পারেন না, দূর্গম পাহাড়ের দুই কিশোরী, তাঁরা বলছেন বাবা-মা'র কাছে যাবেন না? এগুলো কি বিশ্বাযোগ্য কথা?


পোস্টারঃ পিনাকী দেব অপু



জবানবন্দীতে  লেখা আছে-

রাণী ও ভলান্টিয়ারদের হস্তক্ষেপে ভিক্টিমদের আইনজীবীদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হয় কিন্তু তা ছিল শুধুমাত্র ১০ মিনিটের জন্য। পুলিশ বারবার রাণী ও ভলান্টিয়ারদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে, তারা এতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রায় ৪টার সময় সকল ভলান্টিয়ারদের ওয়ার্ড ত্যাগ করতে বলা হয়। তবে একজন ভলান্টিয়ার (২১ বছর বয়সী) রাণীর সঙ্গ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সে ঘটনার সর্বশেষ পর্যন্ত রাণীর সাথে ছিল। 

লক্ষ্য করুন। একটু ভাবুন। মেয়েদেরকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ এলো। নিয়ে এলো একজন পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু এই নির্দেশ মোতাবেক মেয়েদের নিতে বাঁধা দিলো দিচ্ছে ইয়েন ইয়েন। রাস্তা আটকে, মেডিকেল আটকে, দল বল নিয়ে এসে পুরা হাসপাতাল অবরোধ করে বসে রইলো ইয়েন ইয়েন আর তার বাহিনী। তাও বেলা ৪ টা পর্যন্ত। আপনারাই বলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে অনেকটা গায়ে হাত দিয়ে বিরক্তির শেষ সীমায় এই ইয়েন ইয়েন পৌঁছে দিলো। জাস্ট একবার ভাবুন। দুটো মেয়েকে বাবা-মায়ের কাছে দিতেই দেবে না ইয়েন ইয়েন। কি ভয়াবহ!!! কি ভয়ংকর!!

জবানবন্দীতে  লেখা আছে-

৭.৩০টার দিকে সাদা পোশাকে মাস্ক ও কাপড় প্যাঁচানো ৮-১০ জন নারী এবং মুখে মাস্ক পরিহিত ৬ জন পুরুষ যারা নারীদের দলটিকে আদেশ দিচ্ছিল, রুমে প্রবেশ করে এবং ভিক্টিম, তাদের বাবা-মা ও ১০ বছর বয়সী ছোট ভাইয়ের সামনে রাণী ও মেয়ে ভলান্টিয়ারকে আক্রমণ করে। ধস্তাধস্তির সময় কয়েকজনের মুখের মাস্ক খুলে পড়ে, কিন্তু তাদের সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তারা রাণী য়েন য়েন ও মেয়ে ভলান্টিয়ারকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারে, তাদের মাটিতে ফেলে আরো উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। মেয়ে ভলান্টিয়ারকে শুধুমাত্র পেটানোই হয়নি, তাকে পুরুষরা যৌন হয়রানি করে যখন নারীরা তাকে ধরে রেখেছিল এবং নিচতলায় টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাণী ও মেয়ে ভলান্টিয়ারকে করিডোর ও পরে নিচতলায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। নিচতলায় সাদা পোশাক পরিহিত ৬ জনের একটি দল তাদের সাথে যোগ দেয়। রাণী ও মেয়ে ভলান্টিয়ারকে নিচতলায় টেনে নিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণকারী দলটি দুই ভাগ হয়ে যায়। একটি দল রাণীকে পিছনের দরজার দিকে ও অন্যটি মেয়ে ভলান্টিয়ারটিকে সামনের গেইটের করিডোর দিকে নিয়ে যায়। যখন রাণীকে মারা হচ্ছিল এবং পিছনের দরজার করিডোরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন রাণী আক্রমণকারীদের কথা শুনতে পান, ‘শেষ করতে হলে এখানে করা যাবে না, করলে হাসপাতালের বাইরে করতে হবে।‘ মাথার বাম পাশে একটি ঘুষি মেরে রাণীকে হাসপাতালের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়, সম্ভবত এটি ছিল তাঁকে অচৈতন্য করার একটি প্রচেষ্টা। তিনি বাইরে আরো সাদা পোশাকধারী দেখতে পান। যা হোক এটি ছিল আলোকিত একটি প্রাঙ্গন এবং হাসপাতাল আঙিনার মধ্যে বিভিন্ন বিল্ডিং এর সামনে লোকজন জড়ো হয়েছিল, তারা রাণী ও সাদা পোশাক পরিহিতদের দেখতে পাচ্ছিল যারা রাণীর উপর নজর রাখছিলরাণী এই সুযোগটা কাজে লাগালেন এবং কাছের সীমানা প্রাচীরের দিকে দৌড়ে গিয়ে এটি টপকে যান। অন্ধকারের মধ্যে প্রায় ১০-১৫ মিনিট দৌড়ানোর পর তিনি নিজেকে কাপ্তাই লেকের পাড়ে আবিষ্কার করেন। সে পানিতে তিনি মগ্ন অবস্থায় লুকিয়ে থাকেন এবং প্রায় আধা ঘন্টার মতো সেখানে ছিলেন। পরবর্তীতে, তিনি কাছাকাছি একটি বাড়িতে যেতে সমর্থ হন এবং আশ্রয় ও সাহায্য খুজেঁন। ওই পরিবারটি রাণীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে, তাঁর স্বজনরা সেখানে চলে আসে ও রাণীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। 


ইয়েনের জবানবন্দীর এই অংশটি-ই আসলে সবচাইতে দূর্বল অংশ। একদিকে ইয়েন বলছে যে তাকে শেষ করবার জন্য, অর্থ্যাৎ মেরে ফেলবার জন্য আইন শৃংখলাবাহিনী প্ল্যান করছে আবার অন্যদিকে তাকে হাসপাতালের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে বলছে।

আবার বলছে তার উপর নজর রাখছে, অন্যদিকে বলছে নজর রাখার এই সুবাদে কাছের প্রাচীরের দিকে দৌড় দিলো। নজর রাখলে সেটা কিভাবে সুযোগ হয়? এই নজর এড়িয়ে সে নাকি দৌড় দিয়ে সবার সামনে পালিয়েছে।

রানীর উপর নজর রাখা কিভাবে পালাবার সুযোগ হয়? কারো উপর নজর রাখাটা কি সেই ব্যাক্তির জন্য সুযোগ নাকি সমস্যার?


আসুন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আশে পাশের প্রাচীরগুলো একটি দেখে নেই-

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের বাইরের প্রাচীর-১

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের বাইরের প্রাচীর-২

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের বাইরের প্রাচীর-৩


উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন মাউন্ট এভারেস্টের মত উঁচু প্রাচীর। যেটি পার হয়েছেন স্বঘোষিত রাণী ইয়েন ইয়েন।



প্রশ্নঃ ভাবুন...ভাবুন...মন দিয়ে ভাবুন...

ক) এত পুলিশ, এত সেনাবাহিনী, এত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনে এইভাবে আহত একজন দৌড়ে পালিয়ে গেলো?

খ) সবার সামনে হাসপাতালের পাঁচিল টপকে ভাগলো?

গ) পাঁচিল টপকে ভাগার পর আবার অন্ধকারে ১০-১৫মিনিট দৌড়ালো? 

ঘ) নিরাপত্তা বাহিনীর একটা মানুষও ইয়েন ইয়েনকে ধাওয়া দিলো না? ধরতে চেষ্টা করলো না? কেন করলো না?

ঙ) দৌড়ুতে দৌড়ুতে হঠাৎ করে কাপ্তাই লেকের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলো? কথা নাই, বার্তা নাই আন্তাজে দৌড় দিয়ে ডাইরেক্ট কাপ্তাই লেক?

চ) এরপর কাপ্তাই লেকে নেমে ৩০ মিনিট জলহস্তীর মতন পানিতে ডুব দিয়ে বসে থাকলো স্বঘোষিত রাণী ইয়েন ইয়েন?

এগুলো সম্ভব? REALLY? সিনেমার নাম কি?


পানিতে ৩০ মিনিট ডুবে থাকার ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পোস্টার বানিয়েছেন পিনাকী দেব অপু ভাই

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই জবানবন্দীটি তৈরী করা হয়েছে ইয়েন ইয়েন এবং একজন ভলাণ্টিয়ার এই দুইজনের ভাষ্য এক করে। আবার বলা হচ্ছে, এই ভলান্টিয়ার নাকি নিরাপত্তা বাহিনীর আঘাতে জর্জরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেই ভলান্টিয়ার নিজেই আঘাত পেয়ে আহত হয়েছে বলে দাবী করছে সেই ভলান্টিয়ার কাহিনীর একটার পর একটা বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই ধারনা করা যায়, আহত হয়ে ভলান্টিয়ার ঠিক ঐ মুহুর্তে স্বাভাবিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবে কিংবা সেখানে পড়ে থাকবে ব্যাথা পেয়ে কিংবা পালিয়ে যাবে কিংবা এদেরই কথা অনুযায়ী বন্দী থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে। কিন্তু এসবের কোনো ব্যাখ্যা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে অবিরাম গল্প চলছে তো চলছেই...

এই পুরো ঘটনাটি সত্য হলে সেটি হবে এক হৃদয় বিদারক কাহিনী। দু বোন যদি ধর্ষিত হয়ে থাকেন কিংবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে এই পুরো ব্যাপারটিকে অবশ্যই আইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। বাংলাদেশের আইন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে হতে পারত বিচার। কিন্তু সেটি না করে একটি মিথ্য গল্প সাজিয়ে, সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত রাণী ইয়েন ইয়েন ও দেবাশীষের যে রাজনীতি সেটি স্পস্ট।

সেনাবাহিনীর একটি সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে এতবড় নাটক এখন স্পস্ট। সে কারনেই আমি মনে করেছি আমার কাছে পুরো ঘটনা যেভাবে এসে ধরা দিয়েছে সেটা আপনাদের দেখাই।

এই হলো পুরো গল্প। ঘটনা, উপ ঘটনা, ঘটনার পরে ড্রামা কুইন ইয়েন ইয়েন-এর জবানবন্দী। পুরো ঘটনা জানবার পর সব মিলিয়ে ডিসিশন নেবার সকল দায় ও দায়িত্ব এখন আপনার। আমার কাজ ছিলো ফাঁক ফোঁকর গুলো দেখিয়ে দেয়া। আমি দেখিয়ে দিয়েছি।

এইবার সিদ্ধান্ত আপনার



1 comment:

  1. Excellant writing. I think u could show thecreal face of (so called) Queen (!) YENYEN

    ReplyDelete