Thursday 22 January 2015

প্রসঙ্গঃ ৭২ এর দালালদের বিচার। আমাকে বিষ্মিত করলেন আবুল মনসুর আহমদ

রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিখ্যাত লেখক আবুল মনসুর আহমদকে পরিচয় করিয়ে দেবার মত আমি যোগ্য লোক নই। জীবনের যতদিন বেঁচে থাকবার আপাতঃ সম্ভাবনা রয়েছে সেই সময়েও এই ভদ্রলোকের সমান যোগ্যতা হবে কিনা সেটা তীব্র সন্দেহের ও সম্ভাবনাসূচক গ্রিড বিবেচনায় অসম্ভব। উনি আমার অন্যতম একজন প্রিয় লেখক। স্যাটায়ার যে একটা শিল্প এবং এই শিল্প যে কতটা রূপমাধুর্যে হাজির হবার যোগ্য পাঠকের সামনে সেটা আবুল মনসুর আহমেদের বই পাঠ না করলে আমার বুঝা হোতো কিনা আমি জানিনা। বাংলাদেশে গিয়ে শাহবাগ, নিউমার্কেট আর অন্যান্য স্থানের বইয়ের দোকান গুলো ঘেঁটে আবুল মনসুর আহমেদের বইগুলো খুঁজে বের করে আনতে পারবার মধ্যেও আমি আনন্দ খুঁজে পাই। এই কথাগুলো বলবার প্রধানতম কারন আর কিছুই না, এটা বোঝানো যে লেখক আবুল মনসুর আহমদ আমার কাছে কতটা প্রিয় ও শ্রদ্ধার।

একেবারে কৈশোরে আমার বাবার বইয়ের শেলফ থেকে আমার খন্ড খন্ড আকারে পড়া হয়েছিলো তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর”। সেসময় ওই গ্রন্থের অনেক প্রেক্ষাপট, ঘটনা এবং ব্যাখ্যা আমার কাছে দুর্বোধ্য ছিলো কেননা ঐসব ঘটনাগুলোর অনেক প্রাথমিক প্রেক্ষাপটের ব্যাপারে আমার ধারনা ছিলো অপ্রতুল। সে কারনেই কৈশোরে যা পড়েছি ও যা বুঝতে পেরেছি সেটার সাথে এই সময়ের পাঠ ও তার বুঝবার মধ্যে একটা তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য আমি অনুধাবন করতে পারি।

 গত প্রায় ৭-৮ বছর ধরেই আমি স্পেসেফিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর আইনী দিক নিয়ে আমি গবেষনা করবার চেষ্টা করছি। এই অপরাধ সংঘটনের দায়ভার যাদের উপর মূলত বর্তায় তাদের বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শুরু হয় ১৯৭২ সালে। যে আইনে এই বিচারটুকু সম্পাদিত হচ্ছিলো সেই আইনের একটা প্রচলিত নাম হচ্ছে ৭২ এর দালাল আইন যদিও তার কেতাবী নাম হচ্ছে Bangladesh Collaborators (Special Tribunal) Order 1972, এই বিচার প্রক্রিয়া মূলত স্থগিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে খুন করবার মাধ্যমেই। যার ধারাবাহিকতায় দেখা যায় যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ঠিক ৪ মাস ১৬ দিনের মাথায় অর্থ্যাৎ ৩১ শে ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে এই দালাল আইনটি রহিত করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। আপনারা এটা সকলেই জানেন যে ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে এইসব দালালদের বিচার বাংলাদেশ সরকার পুনরায় শুরু করে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইন-১৯৭৩ এর মাধ্যমে। এইসব দালালদের বিচার কেন দালাল আইনে না হয়ে ১৯৭৩ এর আইনে হচ্ছে সেটির আইনী ব্যাখ্যা নানান সময়ে নানান যায়গায় দিয়েছি সুতরাং আজকে সেই আলোচনাতে যাচ্ছিনা এবং এই লেখায় সে আলোচনা প্রাসঙ্গিক বলে আমি মনে করিনা।


আমি আগেও বলেছি, আজও বলি, আমি মুক্তিযুদ্ধের দশকের ঠিক শেষে জন্ম নেয়া একজন যুবক। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমাকে সরাসরি না ছুঁয়ে গেলেও আমি সেটি অনুভব করতে পারি পারিবারিক নানা ঘটনার কারনেই। বাবার মুখ থেকে শোনা ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের উপর বই-পত্র, দলিল-দস্তাবেজ পাঠ সহ এই ব্যাপারে যৎসামান্য আমার যা পড়াশোনা আছে আমি সেই আলোকেই মূলত মুক্তিযুদ্ধকে নিজের ভেতর আত্নস্থ করেছি কিংবা করবার চেষ্টা করেছি ও করছি। একজন আইনের ভুবনের সামান্য মানুষ ও আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বরাবর আগ্রহী ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর কেন রাজাকার-আলবদরদের বিচার শেষ পর্যন্ত আর হয়ে উঠেনি সেই ব্যাপারটি নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে আমি আমার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি, আমি প্রশ্ন করেছি, আমি অনুসন্ধান করেছি। অনেক কিছু জেনেছি আমি আবার অনেক কিছু আজও জানিনা।

এরকম একটা প্রেক্ষাপটে আমাকে স্বাভাবিক ভাবেই ইতিহাসের সলুক সন্ধান করতে হয়, সে সময়ের মানুষদের সাথে কথা বলতে হয়। সে প্রেক্ষিতে আমি সাময়িক ভাবে নানান প্রতিথযশা ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলেছি, বুঝবার চেষ্টা করেছি যে কেন গত ৩৯ বছরে ( ১৯৭২-২০১০) বিচার পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি কিংবা হতে পারেনি। এমন একটা কৌতূহলী যাত্রায় আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি  আমার বাবার সাথে, লন্ডন প্রবাসী বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা, প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, লন্ডনের সাবেক হাই কমিশনার মিজারুল কায়েস, ইত্যাদি সর্বমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে। প্রত্যেক ব্যাক্তিরই দৃষ্টিভঙ্গি ও ঘটনা বিশ্লেশনের আলাদা আলাদা পন্থা ও স্টাইল থাকে। সুতরাং মূল ঘটনায় নানান যায়গায় একটি একই সুর থাকবার পরে এই বিচারের ক্ষেত্রে ভিন্ন মতামত আমি লক্ষ্য করেছি এবং যেটিকেই আমি স্বাভাবিক বলে মনে করেছি।

আমার এই গবেষনার যাত্রা পথে গত কিছুদিন যাবত আবার পাঠ করা শুরু করেছিলাম আবুল মনসুর আহমদের আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর বইটি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করতে চান কিংবা করছেন কিংবা যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাদের জন্য এটি একটি অবশ্য পাঠ্য বই।পড়তে পড়তে এই বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠায় আমার চোখ আটকে গেলো, যেই পৃষ্ঠাতে লেখক আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭২ আইনে দালাল আইনে দালালদের বিচারের সরাসরি বিরোধিতা করে এই বিচারের পক্ষে তিনি যে ছিলেন না সেটা স্পস্ট ভাবেই প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আমি রেফার করছি আবুল মনসুর আহমদের “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” বইটির ৬০৭ নাম্বার পৃষ্ঠা। যে অংশের শিরোনাম হচ্ছে “চাঁদে কলংক”। এই অংশটি যদি আমরা পাঠ করি তবে জানতে পারব যে আবুল মনসুর আহমদ খুবই স্পস্ট ভাবে এই মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচারের পক্ষে ছিলেন না। ইনফ্যাক্ট এই আইন করে বিচার করাকে তিনই অভিহিত করেছেন সর্বগ্রাসী ও মারাত্নক হিসেবে। দালাল আইনে বিচারটাই যেখানে তিনই চান নি সেখানে তিনি আবার এই আইনের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন দালাল আইনে ফাঁক ছিলো অপঃপ্রয়োগের। এই অংশ পড়ে আমার বিষ্ময় জাগে।

প্রথমতঃ একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার হতে হবে তাদের অন্যায়ের জন্য, এই অংশে আগে যখন ঐক্যমত্যে পৌঁছাবেন তখন হবে পরের আলোচনা যে যে আইনে বিচার হবে সেটার কতটুকু সঠিক কিংবা কতটুকু বেঠিক। কিন্তু একজন মানুষ যেখানে এতবড় পাশবিক হত্যাকান্ডের বিচারটাই সর্বগ্রাসী মনে করছেন সেখানে তাঁর বাকি কথার কতটুকু মূল্য থাকে? আবুল মনসুর আহমেদ বলছেন যে বঙ্গবন্ধু যখন ১০-ই জানুয়ারী দেশে ফিরলেন তখন সারাদেশ নাকি একটি সুতোয় বাঁধা ছিলো, সারা দেশ নাকি তখন এক বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই আবিষ্ট ছিলো কিন্তু বিচার শুরু করবার পর থেকে দেশ দুই খন্ডে খন্ডিত হয়ে গেলো। এই কথার সরল মানে কি দাঁড়ায়? এই কথার কি মানে এই দাঁড়ায় না যে একাত্তরের দালালদের বিচার করাটা দেশকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা, ঠিক যেমন আজকের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা যে কথা বার বার করে আমাদের কানের কাছে, মুখের কাছে এসে আমাদের বার বার বুঝাতে চাইছেন?



সবচাইতে আশ্চর্য জনক যে কথাগুলো আবুল মনসুর আহমেদ লিখেছেন তাঁর এই বইয়ে সেগুলোর একটু সামারাইজ করে বলি। তিনই বলতে চাইছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করা অপরাধ না এবং শুধুমাত্র এই স্বাধীনতার বিরোধিতার ফলে কাউকে অপরাধী বলে বিচার করা যায়না। প্রিয় পাঠক, আপনারা কি আবুল মনসুর আহমদের সাথে আজকের দিনের প্রোপাগান্ডা গুলোর মিল খুঁজে পান? আমি পাই। আজকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা বার বার বলেন যে জামাত, নেজামী পার্টি, মুসলিম লীগের রাজাকাররা নাকি শুধু স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে বলেই তাদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু আবুল মনসুর আহমদের মত একজন লেখক কিভাবে এটি এড়িয়ে গেলেন যে এই বিরোধীতার নাম করে পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে সঙ্গ দিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষদের এরা একসাথে কচুকাটা করেছে? স্বাধীনতার নাম করে তবে কি খুন, ধর্ষন, লুটপাট, দেশ ত্যাগে বাধ্যকরা, ঘুর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া জায়েজ? এদের বিচার রাষ্ট্র করলেই কি তবে দেশ দিখন্ডিত হয়েছে বলে অভিহিত করা হবে? তবে কি দেশের সকল চোর ডাকাত রাহাজানি ছিনতাই এর বিচার করা মানে বাংলাদেশকে দিখন্ডিত করা? দেশের মানুষকে দ্বিখন্ডিত করা?

লেখক বার বার তাঁর এই অধ্যায়ে এই দালাল আইনে বিচারকে তীব্র ভাবে বিরোধিতা করে গেছেন। তিনি বলেছেন বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরবার পর তাঁর পক্ষে ছিলেন সবাই, আর তার ছিলোনা কোনো বিরুদ্ধপক্ষ কিংবা শত্রু। কিন্তু এই বিচার শুরু হবার পর বঙ্গবন্ধুর অনেক শত্রু হয়েছে, দেশ ভাগ হয়েছে। কি ভয়াবহ আশ্চর্য ও বিষ্ময়ের কথা!! বঙ্গবন্ধুকে একজন খুনী কিংবা ডাকাত যদি পছন্দ করেও থাকে তবে কি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত বলে সেই অন্যায়কারী খুনী আর ডাকাতকে তিনি মাফ করে দেবেন? এই খুনী আর ডাকাতের সমর্থনের জন্য বঙ্গবন্ধু অন্যায়কে মেনে নেবেন? আবুল মনসুর আহমেদ কি তবে এই অন্যায়কারীদের মেনে নিয়ে তাদের সাথে একসাথে বিচারহীন একটা পরিবেশে বসবাস করতে বলছেন? তবে কি আমার বাবার খুনী আর আমি একই সাথে একই দেশে বেঁচে থাকব, ঘুরে বেড়াব? এটা কেমন বর্বর চিন্তা? এটা কোন মধ্যযুগের চিন্তা? এই ধরনের অদ্ভুত চিন্তা নিয়ে তিনই বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করলেন কিভাবে? কিভাবে রাজনীতি করেছেন তিনি?

১৯৭২ সালে দালাল আইনে কেন সঠিকভাবে বিচার হতে পারেনি কিংবা কেনই বা বিচার হতে ৩৯ বছর লেগেছে সেটা নিয়ে এর আগেও আমি একটা লেখা লিখেছিলাম। সেখানে আমি দেখিয়েছিলাম সে সময়কার মেজিস্ট্রেট, পুলিশ, প্রশাষন, রাজনীতিবিদেরা নানাভাগে কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে পাগল করে তুলেছিলো এই বিচার বন্ধে। আমি দেখিয়েছিলাম কিভাবে প্রচন্ড অসহোযোগিতার মুখে পড়েছিলো বঙ্গবন্ধু প্রশাষন। এই বিচার বন্ধ করবার জন্য সে সময় অনেক কলামিস্ট কলম ধরেছিলেন। নির্মল সেন তো একের পর এক লেখা লিখে গেছেন এই বিচার বন্ধে। এই বিচার যাতে বন্ধ করা হয় সে জন্য মাওলানা ভাষানী অসহযোগ আন্দলোনের ডাক দিয়ে সুনির্দিষ্ট সময় দিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারকে আল্টিমেটাম পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন “স্বাধীনতাত্তোর দালালদের বিচার প্রক্রিয়াঃ একটি পর্যালোচনা” শীর্ষক তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধে লিখেন – “যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনে আওয়ামীলীগ সরকারের দূর্বলতার সুযোগে পাকিস্থান আমলই ভালো ছিলো এই প্রচার চালানো হয় এবং এ পর্যায়ে “মুসলিম বাংলা আন্দোলন” নামে একটি আন্দোলন বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশ-বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হয় । ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো পিকিংপন্থী দলগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে দালালদের মুক্তির দাবী তোলে। 

১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে নির্বাচনের প্রাক্কালে দালাল ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সমর্থন পেতে ন্যাপ (ভাসানী) এবং আতাউর রহমানের জাতীয় লীগসহ আওয়ামী বিরোধী পিকিংপন্থী জোট নির্বাচনের আগেই দালালদের মুক্তি দাবী করে । এ সময় মাওলানা ভাসানী হুমকি দেন যে, ১৯৭২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে দালাল আইন বাতিল না করলে তিনি দূর্বার আন্দলোন গড়ে তুলবেন”। শুধু এখানেই ভাষানী ক্ষান্ত হননি, একের পর এক তিনি কর্মসূচি দিয়ে গিয়েছিলেন এই বিচার বন্ধ করবার জন্য। এই বিচারকে তিনি অভিহিত করেছিলেন প্রহসন হিসেবে। উল্লেখ্য যে এই দালাল আইনে তখন ভাষানীর দলের অনেক নেতা কর্মী মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা অপকর্মে আটক ছিলো।

আর আজকে আমরা দেখতে পেলাম সেই সময়ে লেখক আবুল মনসুর আহমদ কিভাবে লেখনী দিয়ে এই বিচারের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত ব্যাক্ত করেছেন। আজকে আমরা বাংলাদেশে যে আইনের শাষনহীনতার কথা বলি, আজকে যে অরাজকতার কথা বলি, তার পেছনে একটা বড় ভূমিকা ছিলো এইসব বুদ্ধিজীবি আর কিছু রাজনীতিকদের। ১৯৭১ সালের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের জন্য বিচার হবে অপরাধীদের এটাই একটা সভ্য সমাজের দাবী হওয়া উচিৎ। অথচ সেই কাঁচা অবস্থাতেই, দগদগে স্মৃতি থাকা অবস্থাতেই যেখানে বিচার না হবার জন্য কলম হাতে তুলে নেয় বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক সাংবাদিকেরা সেটি একটা জাতির জন্য কতটা ভয়াবহ আর দুঃখের? কেউ কি আমাকে তা বলতে পারেন? কোথায় রাখি এই দুঃখ? কোথায় রাখি এই ক্ষোভের কথা আর বঞ্চনার কথা?

অনেকেই আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে দোষ চাপান। অনেকেই বলেন বঙ্গবন্ধু এই বিচার নিয়ে নাকি টালবাহানা করেছেন। আজকে শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে আমরা এই সময়ের সন্তানেরা যখন ইতিহাসকে আতি-পাতি করে খুঁজে বের করে আনছি, আজকে যখন আমরা এই তরুন প্রজন্ম এই দেশের ইতিহাস নিয়ে পড়ছি তখন বুঝতে পারছি বঙ্গবন্ধুর উপর কত রকমের কলঙ্ক লেপন করে দেয়া হয়েছে। যেই লোকগুলো এই বিচার বন্ধের জন্য কলম আঁচড়ে গতর খেঁটেছেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর প্রশাষনের করা বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মাটিতে লুটাতে চেয়েছেন সেই তাদের পূত্র ও পৌত্ররা আবার এতকাল পর চেঁচিয়ে বলেন বঙ্গবন্ধু ঠিকমত বিচার করেন নি। একদিকে এই লোকটাকে নানান রকম কথা বলে বিচার থেকে বিরত রাখার চাপ, তার মাথা খারাপ করে দেবার মত অবস্থা তৈরী করা আবার বিচার কেন হচ্ছেনা সেই দিকেও চাপ।

আসলে আমরা বাংলাদেশের মানুষরাই জিনগত ভাগে খারাপ। আমার বন্ধু কাওসার ভাই আমাকে বার বার বলেন, বাঙালী হচ্ছে সভ্যতার বাই প্রোডাক্ট। আজকাল আমার সত্যিই তাই মনে হয়। আমাদের কলা ছিলে দিলে দোষ, কলা বুঁজে দিলেও দোষ। এই জাতি আসলে নিজেও জানেনা সে কি চায়। সে কারনেই এই জাতির মাথার উপর ছড়ি ঘুরাতে পারেন এইসব লেখক, বুদ্ধিজীবিরা। তারা আছেন ধর্ষনে আবার তারা আছেন কোরানেও। কি ভয়াবহ নৃশংস কন্ট্রাডিকশন!!

No comments:

Post a Comment