মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের শিউরে উঠা নৃশংশতা আর অভিজ্ঞতার পরেও সাকা আর মুজাহিদের মত দুইজন জলজ্যান্ত একাত্তরের ঘাতকদের পক্ষে এই বাংলাদেশে একজন হলেও যদি সহমর্মিতা দেখায় তবে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে যে কেন সেটি হচ্ছে। সাময়িকভাবে আপনার হয়ত ক্ষোভ হতে পারে কিংবা ক্রোধে ক্রোধান্বিত হয়ে সেটি প্রকাশও করতে পারেন। সেটি করাই স্বাভাবিক কিন্তু কেন এটি হচ্ছে বা হোলো এগুলো নিয়ে কিছুটা হলেও গভীর ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। আমি হয়ত সেই গভীর ভাবনা কিংবা দূর্দান্ত এনালিটিকাল একটা লেখা লিখবার জন্য যোগ্য নই বা সে ক্ষমতাও রাখিনা কিন্তু সামান্য ভাবনার খোরাক আমি আমার পাঠক/পাঠিকাদের জন্য হয়ত যোগাতে পারি। এই ভাবনার খোরাক নিয়েই হয়ত তাঁরা আরো সুগভীরভাবে ভেবে দেখবেন পুরো ব্যাপারটি।
আমি আমার পূর্বের অনেক লেখাতেই ১৯৭২ সালে যখন সর্ব প্রথম দালাল আইনে রাজাকার-আলবদরদের বিচার হয়েছিলো সে বিচারের নানা প্রাসঙ্গিক কথন আপনাদের সামনে হাজির করেছিলাম। সে সময়কার বিচারটা ছিলো এমন একটা সময় যখন মুক্তিযুদ্ধের দগদগে স্মৃতি আর ভয়াবহতার কথা শরীরে আরো তাজা হয়ে লেগে ছিলো। তার মানে এই নয় যে এখন আর সেটি তাজা নয়, কিন্তু সময়ের ক্রম বিবেচনা করলেও সে সময়কার স্মৃতি অনেক বেশী কাছাকাছি ও নৃশংসতাকে আরো বেশী স্পস্ট করে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর এই দালাল আইনে বিচারের সময় জামাতী ইসলামী, নেজামী পার্টি, মুসলিম লীগ সহ যে যে দলের মধ্য থেকে রাজাকার, আলবদর তথা ঘাতকেরা মূলত উঠে এসেছিলো সেসব দল কিংবা দলের সদস্যরা দৌড়ের উপর ছিলো। মূলত সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশীদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশী এই বিচারের পক্ষে ছিলো এবং এটাই সে সময় স্বাভাবিক ছিলো। স্বাভাবিকের থেকে সবচাইতে বড় ব্যাপার ছিলো যে কোনো অপরাধ রাষ্ট্রের ভূ-খন্ডে হলে এটা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের উপরেই গিয়ে বর্তায় সে অপরাধের ন্যায্য বিচার করবার জন্য।