Saturday 19 December 2015

অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে ইচ্ছুক যারা

ভূমিকাঃ

আমার পরিচিত কিংবা অপরিচিত বিভিন্ন রেফারেন্সের সূত্র ধরে অনেকেই প্রায়শঃ জানতে চান যে তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে কিভাবে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে পারবেন। এরকম অনেক কৌতূহলের প্রেক্ষিতেই মনে হোলো এই বিষয়ক একটি সাধারণ ধারনা যদি আমি পাঠকদের দিতে পারি তবে যারা অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে চান তাঁদের জন্য খুব সুবিধা হবে।

আগেই বলে নেয়া ভালো যে এই লেখাটি একেবারে খুব বিস্তারিত আলোচিত হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যারিস্টার এবং সলিসিটর হওয়া খুব দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। প্রচুর বিধি রয়েছে, নিয়ম রয়েছে, ফরমালিটিস রয়েছে। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে এই কোর্স করতে হলে আপনাকে প্রচন্ড ধৈর্য্যশীল এবং পরিশ্রমী হতে হবে। পড়ালেখাতে সামান্য যদি গাফিলতি করেছেন তাহলে সেটির দায় পুরো কোর্স জুড়ে আপনাকেই বহন করতে হবে এবং এমনকি এই কোর্স থেকে আপনি ছিটকেও পড়তে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ায় আইন প্র্যাক্টিস বেশ প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিবছর-ই অনেক নবীন আইনজীবি কোর্স শেষ করে বের হচ্ছেন কিন্তু বাস্তব জীবনে কে কতটুকু ভালো করবেন সেটি আসলে নির্ভর করে ব্যক্তির আইন বুঝবার ক্ষমতা, কতটুকু পরিশ্রম করতে পারছেন, কোন সিনিয়রের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন, কমিউনিকেশন দক্ষতা কেমন, ইংরেজীতে বলতে পারবার দক্ষতা কেমন কিংবা আইনের সুনির্দিষ্ট কোন অংশে কাজ করছেন বা করবেন এইরকম নানাবিধ সিদ্ধান্তের উপর।

প্রতি বছর সারা পৃথিবী থেকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী অস্ট্রেলিয়ার ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হবার জন্য সে দেশে যান কিংবা একেবারেই সেখানে স্থায়ী হবার পরিকল্পনা করেন। অস্ট্রেলিয়াতে আইনজীবি হতে পারাটা স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত সম্মানের ও একই সাথে এটি বেশ ব্যায়বহুল একটি প্রক্রিয়াও বটে। 

অস্ট্রেলিয়া থেকে আইনজীবি হবার সবচাইতে সম্মানজনক ব্যাপারটি হচ্ছে আইনজীবি হবার সাথে সাথেই আপনি এখানকার সর্বোচ্চ আদালত মানে সূপ্রীক কোর্টে সরাসরি আইনজীবি হিসেবে মামলা লড়তে পারবেন ( যদিও প্রথম দুই বছর কিছু রেস্ট্রিকশান থাকবে)

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

আরেকটি কথা এই অংশে শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে, এই লেখাটি শুধুমাত্র তাঁদের জন্য যারা অস্ট্রেলিয়া বাদে অন্যান্য দেশের থেকে আইনে স্নাতক, মাস্টার্স কিংবা সেসব দেশে আইনজীবি হিসেবে ইতিমধ্যেই প্র্যাকটিস করছেন। অস্ট্রেলিয়াতে যাঁরা এই মুহুর্তে আইন পড়ছেন বা পড়বেন এই লেখাটি তাঁদের জন্য নয় কেননা ধরে নিচ্ছি তারা পুরো প্রক্রিয়াটি এরই মধ্যে জানেন। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে যে, যেহেতু লেখাটি আমি বাংলায় লিখছি সেহেতু ধরে নেয়া যেতে পারে যে মূলত আমি বাংলাভাষাভাষী ব্যাক্তিদের জন্য, যারা অস্ট্রেলিয়াতে আইনজীবি হতে ইচ্ছুক তাঁদের জন্যই সুনির্দিষ্টভাবে লিখছি।

আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্যান্য দেশের থেকে আইনে স্নাতক, মাস্টার্স, পি এইচ ডি করে থাকেন কিংবা অন্য কোনো দেশের আইনজীবি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, এমন যে কোনো অবস্থায় থেকে থাকেন তাহলে আপনি অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হবার জন্য প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

উদাহরন হিসেবে বলা যায় যে ধরা যাক আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোনো সরকারী বা বেসরকারী বিশ্ববিধ্যালয় থেকে আইন পড়েছেন কিংবা হতে পারে আপনি ইংল্যান্ড থেকে আইন পড়েছেন, আমেরিকা থেকে পড়েছেন কিংবা ভারত থেকে পড়েছেন। মোট কথা অস্ট্রেলিয়া ব্যাতীত অন্য যে কোনো দেশ থেকে আপনার আইনী ডিগ্রী থাকলেই আপনি অস্ট্রেলিয়া থেকে আইনজীবি হবার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আইনী ডিগ্রী রয়েছে এমন ব্যাক্তিদের কি কি ধাপ সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়াতে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে হয়?

আপনার আইনী ডিগ্রী যদি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে সম্পন্ন করা থাকে তাহলে আপনাকে কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে হবে। সেটির প্রথম ধাপ হচ্ছে একাডেমিক অংশ এবং দ্বিতীয় ধাপ বা মূল অংশ হচ্ছে প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং। আবার এই প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং এর তিনটি আলাদা আলাদা স্তর রয়েছে। এই সবগুলো স্তর সম্পন্ন করতে পারলেই আপনি অস্ট্রেলিয়াতে একজন ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হিসেবে প্র্যাকটিস করতে পারবেন।

অস্ট্রেলিয়াতে একজন ব্যাক্তি যখন আইন পড়েন তখন সেখানকার জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী সাধারণত তাকে নুন্যতম ৪০ তা থেকে ৪৪ টা বিষয় সমাপ্ত করতে হয়। এখন আপনি যদি অস্ট্রেলিয়াতে আইনজীবি হতে চান তাহলে সেখানকার এই বিষয়ক আইনী অথরিটি প্রথমেই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বিবেচনা করে দেখবেন যে আপনার এই পর্যন্ত কি কি বিষয় পড়া হয়েছে এবং আরো কি কি বিষয় আপনাকে সম্পন্ন করলে আপনি একজন অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যাজুয়েটের সমপর্যায়ে বিবেচিত হবেন কিংবা উপরে যে বলেছি মূল ধাপ "প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং" এর কথা সেটি শুরু করতে আপনার আর কি কি বিষয় সম্পন্ন করতে হবে।

মোট কথা আপনি পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকেই আইনবিদ হোন না কেন, গ্র্যাজুয়েশন করেন না কেন বা পি এইচ ডি ডিগ্রী-ই নেন না কেন অস্ট্রেলিয়ার আইনী বোর্ডের কাছে আপনি যদি তাদের “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং” শুরু করবার জন্য বিবেচিত না হন, তাহলে এখান থেকে আপনি ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে পারবেন না।

উপরের কথাতে আপনার মনে হতে পারে যে যদি কোনো ব্যাক্তি হার্ভার্ড থেকে আইন পড়ে আসেন কিংবা ক্যামব্রিজ থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আসেন তাহলেও কি তিনি অস্ট্রেলিয়ার একজন গ্র্যাজুয়েটের সমপর্যায়ে বিবেচিত হবেন না কিংবা “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং” শুরু করবার জন্য বিবেচিত হবেন না? 

আসলে “সমপর্যায়ের” শব্দটিকে এইভাবে বিবেচিত না করে অন্যভাবে দেখা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতে একজন ব্যাক্তি যখন আইন পড়েন তখন তিনি সেই দেশের সাংবিধানিক আইন, আইনী নীতিমালা, সেই দেশের সম্পত্তি আইন, ইকিউটি, কমার্শিয়াল আইন ইত্যাদি অধ্যয়ন করেই আইনজীবি হন। সুতরাং অস্ট্রেলিয়ার এই পার্টিকুলার বিষয়গুলো না জানলে এখানকার আইনী প্র্যাকটিস আপনার জন্য অত্যন্ত দূরহ হয়ে পড়বে। আপনার ভালোর জন্য কিংবা আপনার প্র্যাক্টিস জাতে এইদেশে সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে এগিয়ে যায় সে কারনেই এই ব্যাপারগুলো এখানকার নিজ নিজ প্রাদেশিক আইনী বোর্ড প্রথমেই বিবেচনা করে নেয়। আর সে কারনেই অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অন্য কোনো দেশের আইনী দক্ষতা থাকবার পরেও আপনার এই পর্যন্ত সম্পন্ন করে আসা সাবজেক্ট/ডিগ্রী অনেকটা ম্যাগনিফ্লাইং গ্লাসের ভেতর দিয়ে সুক্ষ্ণভাবে বিবেচিত হয়ে আসে।

কিভাবে শুরু করবেনঃ

অস্ট্রেলিয়া অনেক গুলো প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এই প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নর্দান টেরিটোরি, কুইনসল্যান্ড ইত্যাদি।

প্রথমেই আপনাকে নির্ধারন করতে হবে যে আপনি মূলত অস্ট্রেলিয়ার কোন প্রদেশের আইনজীবি হতে চান। এটা বলে রাখা ভালো যে আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ার একটি সুনির্দিষ্ট প্রদেশের ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হন তাহলে অন্যান্য প্রদেশে গিয়েও আপনি আইনী প্র্যাক্টিস করতে পারবেন ঐ সুনির্দিষ্ট প্রদেশের প্র্যাক্টিসিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করে এবং নির্ধারিত ফিসের মাধ্যমে। আন্তঃপ্রদেশীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে এক প্রদেশের আইনজীবি অন্য প্রদেশে সহজেই আইন প্র্যাক্টিস করতে পারবেন কোনো রকমের বাঁধা ছাড়াই।

আপনি যখন নির্ধারন করবেন যে আপনি কোন প্রদেশে আইনী প্র্যাকটিস করবেন তখন আপনাকে সেই প্রদেশের যে প্রধান আইনী বোর্ড রয়েছেন যারা এই পুরো আইনজীবি হবার সকল প্রক্রিয়া ব্যাবস্থাপনা করেন তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইবেন এবং উপরেই বলেছি যে আপনার এই শিক্ষাগত যোগ্যতা তাঁরা পুংখানোপুংখো ভাবে বিবেচনা করবেন। তাদের এই বিবেচনার প্রক্রিয়ার জন্য প্রত্যেকটি প্রদেশেরই আলাদা আলাদা আবেদন ফর্ম রয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট অর্থের (ফিস) বিনিময়ে তারা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবেচনা করে আপনাকে জানাবেন। 

এই বিবেচনা করবার পর আপনাকে তাঁরা যা জানাবেন সেটি হচ্ছে যে “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং” শুরু করবার আগে আর কি কি অস্ট্রেলিয়ান আইনী সাবজেক্ট আপনাকে সম্পন্ন করে আসতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত একজন ব্যাক্তি যখন অনার্স বা মাস্টার্স পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করে আসেন তখন তাকে আসলে মোটামুটি ৩০-৪০ টা সাব্জেকট শেষ করে আসতে হয়। আবার ভারতে যিনি পড়াশোনা করেন তিনিও তার অনার্স শেষ করেন মোটামুটি এই পরিমান বিষয় সম্পন্ন করেই। ইংল্যান্ডে একজন অনার্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী সাধারণত ১২-১৪ টার মত বিষয় সম্পন্ন করেন।

এখন আপনি যখন আপনার এই পর্যন্ত শেষ করে আসা ডিগ্রী আর সেখানে কি কি বিষয় পড়েছেন এটি অস্ট্রেলিয়ার আপনার পছন্দের বোর্ডের কাছে আবেদন করে জানাবেন তখন এই আপনার সম্পন্ন করে আসা বিষয়ের উপর আরো কিছু বিষয় তাঁরা আপনাকে সম্পন্ন করতে বলবেন। এখন আপনাকে আরো কয়টি সাবজেক্ট সম্পন্ন করতে হবে এটির কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। হতে পারে ২ টি, হতে পারে ১০ টি, হতে পারে ১৫ টি, হতে পারে ২০ টি। এই নির্ধারন প্রক্রিয়া নির্ভর করবে আপনি কি কি সাবজেক্ট এই পর্যন্ত আপনার অর্জিত আইনী ডীগ্রিতে সম্পন্ন করেছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছেন, সেই সেই সাবজেক্টগুলোতে আপনি কি কি বিষয় কাভার করেছেন ইত্যাদি।

আপনাকে যখন আপনার পছন্দকৃত অস্ট্রেলিয়ার এই আইনী বোর্ড এইসব বিষয়ে জানাবেন তখন তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেবেন যে তাঁরা আপনার কোন কোন সাবজেক্টগুলোতে এক্সেম্পশন দিয়েছেন এবং আর কোন কোন বিষয়গুলো আপনাকে করতে হবে। 

যেসব সাবজেক্টগুলো আপনাকে করতে হবে বলে জানানো হবে সেগুলো সম্পন্ন করলে ধরে নেয়া হবে আপনি প্রথম ধাপ অর্থ্যাৎ একাডেমিক স্টেজ পার করেছেন। তারপর আপনাকে শুরু করতে হবে দ্বিতীয় ধাপ, মানে “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং” ধাপ।

প্রথম ধাপ বা একাডেমিক ধাপ কিভাবে শুরু করবেন বা কোথায় শুরু করবেন?

প্রত্যেকটি আইনী প্রদেশের মূল আইনী বোর্ড অর্থ্যাৎ যারা একজন ব্যাক্তির আইনজীবি হবার পুরো প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করেন তাঁরা তাদের নীতিমালা কিংবা গাইডলাইনেই বলে দেবেন যে আপনাকে প্রদত্ত সাবজেক্টগুলোকে অস্ট্রেলিয়রা কোন কোন ইউনিভার্সিটি থেকে সম্পন্ন করতে হবে। সাধারণত তাঁরা ৮-১০ টা অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটির নাম নির্ধারিত করে দেন যেখান থেকে আপনি এই একাডেমিক বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে পারবেন।

এখন অনেকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন যে এই বিষয়গুলোর জন্য কি একজন ব্যাক্তিকে অস্ট্রেলিয়াতেই যেতে হবে কিনা। এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, “নট নেসেসারিলি”। উপরে যে বলেছি ৮-১০টা ইউনিভার্সিটির কথা তেমন ইউনিভার্সিটির মধ্যে ২-৩ টা ইউনিভার্সিটি সব সময়ই অনলাইনে টিউশন প্রোভাইড করে থাকেন। এর মানে হচ্ছে তারা আপনাকে তাদের বই-পত্র, নোটস, সিলেবাস সবকিছুই অনলাইনে দিয়ে দেবেন আর আপনি সেখান থেকে সেগুলো নিয়ে, প্রিন্ট করে পড়াতে পারবেন। তবে মুশকিল হচ্ছে আপনি যখন রিটেন/লিখিত পরীক্ষা কিংবা ভিভা (বাংলাদেশে এই শব্দটা “ভাইভা” হিসেবে পরিচিত) দিতে যাবেন তখন কিভাবে দেবেন। ভিভা সাধারণত স্কাইপিতে এরেঞ্জ করা যায় কিন্তু লিখিত পরীক্ষা দিতে আপনাকে এক্সাম হলে যেতেই হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথে কথা বলতে হবে এবং জানতে হবে যে তারা এটা কিভাবে এরেঞ্জ করবেন। 

এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত ইউনিভার্সিটিগুলো ছাত্র-ছাত্রীরা যে দেশে রয়েছেন সে দেশের প্রমিনেন্ট এক্সাম প্রোভাইডারদের সাথে যোগাযোগ করেন। যেমন বাংলাদেশ হলে ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইংল্যান্ড হলে ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট লন্ডন কিংবা প্রমিনেন্ট অন্যান্য এক্সাম হল প্রোভাইডার। যদি বাংলাদেশে অবস্থানরত একজন শিক্ষার্থীকে অস্ট্রেলিয়ার এই ইউনিভার্সিটিগুলো বাংলাদেশে পরীক্ষা গ্রহনের অনুমতি না দেয় তাহলে তাঁকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে এবং সেখান থেকেই তাঁকে সব ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা সহজ। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলো ইংল্যান্ডের অনেক এক্সাম হল, ইউনিভার্সিটি ইত্যাদির সাথে চুক্তিবদ্ধ। এই ধরনের অবস্থায় তাঁরা এসব স্থানে পরীক্ষার এরেঞ্জমেন্ট করে থাকেন।

এইভাবে আপনি যখন আপনাকে প্রদত্ত সবগুলো সাবজেক্ট সম্পন্ন করবেন তখন সেই আইনী বোর্ডকে আপনি তা অবহিত করবেন। আইনী বোর্ড আপনার এই সম্পন্ন হওয়া যাচাই করে দেখবেন এবং তারপর শুরু হবে আপনার দ্বিতীয় ধাপ যাকে বলে “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং”।

এই প্রথম ধাপ মানে একাডেমিক ধাপের প্রত্যেকটা সাবজেক্ট শেষ করতে কেমন খরচ হবে সেটি নির্ভর করবে এক একটি ইউনিভার্সিটির উপর। যেমন সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটি ২০১০-২০১১ সেশনে এই পার সাব্জেক্টের ক্ষেত্রে ১২৭৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে ১৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চার্জ করত আর পরীক্ষার হলের ফিস বাবদ ১০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিতো। আবার ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইংল্যান্ড ২০১১/১২ সেশনে ১৫০০-১৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পার সাবজেক্টে চার্জ করত আর পরীক্ষার ফিস হিসেবে ১০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিতো।

এখন যদি আপনার পছন্দের প্রদেশের আইনী বোর্ড একাডেমিক স্টেজে আপনাকে ৮-১০ টা সাবজেক্ট দেয় সেক্ষেত্রে খরচ কত হবে সেটার একটা আনুমানিক হিসেব আপনি করতে পারেন উপরের যে একটা আনুমানিক হিসেব দিয়েছি সেটার উপর ভিত্তি করে।

দ্বিতীয় ধাপ বা “প্র্যাকটিকাল লিগাল ট্রেইনিং” কিভাবে শুরু করবেন বা কোথায় শুরু করবেন?

প্রথম ধাপ বা একাডেমিক ধাপ শুরু হলে চলে আসবে দ্বিতীয় ধাপের সময়। এটাই মূলত অস্ট্রেলিয়াতে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হতে হলে সবচাইতে বড় ধাপ। এই স্টেজের পড়ালেখার তিনটা অংশ। তিনটি অংশ হচ্ছে 

(ক) কোর্স ওয়ার্ক (খ) দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে ৭৫ দিন কোনো আইনী চেম্বারে আপনার কাজ করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে একজন আইনজীবির অধীনে সেই প্রমাণ (গ) ১০ টি আইনী বিষয়ে আপনি সেমিনারে অংশগ্রহন সুনিশ্চিত করন।

এই “প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং” করাবার জন্য অস্ট্রেলিয়াতে কয়েকটি ইউনিভার্সিটি নির্ধারিত করে দেয়া আছে। যদিও এক একট প্রদেশে একাডেমিক ও প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং এর জন্য তাদের নিজস্ব এক্রিডেটেড/এফিলিয়েটেড ইউনিভার্সিটি রয়েছে তারপরেও সবগুলো টেরিটোরি মিলিয়ে উল্লেখযোগ হচ্ছে “দি কলেজ অফ ল”, “সাউদার্ণ ক্রস ইউনিভার্সিটি” “ইউ টি এস” “উলংগং ইউনিভার্সিটি” “ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ক্যাসেল অস্ট্রেলিয়া” “ইউনিভার্সিটি অফ সিডনী” “মোনাশ ইউনিভার্সিটি” “লিও কুসেন ইন্সটিটিউট”।  একটা কথা এখানে উল্লেখযোগ্য যে একমাত্র কলেজ অফ ল-ই একটি প্রতিষ্ঠান যারা প্রত্যেকটি প্রদেশের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং কোর্স করিয়ে থাকেন।

প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং কোর্স করতে সাধারণত আপনাকে অস্ট্রেলিয়াতেই যেতে হবে। তবে যদি আপনি ইংল্যান্ডে বসবাস করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে এই স্টেজ পার করতে অস্ট্রেলিয়াতে যেতে হবেনা আপনি ইংল্যান্ডে বসেই এই কোর্স করতে পারবেন কেননা কলেজ অফ ল’এর একটি শাখা ইংল্যান্ডে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে শিক্ষকেরা এসে এখানে পুরো কোর্সটি করিয়ে দিয়ে যান। এই স্টেজটি দুই ভাবে করা যায়। এক ফুল টাইম, দুই-পার্ট টাইম। ফুল টাইম কোর্স তুলনামূলক ভাবে কঠিন। ভয়াবহ চাপ থাকে পড়ালেখার। প্রায় ৪-৬ মাসের মত লেগে যায় কোর্স ওয়ার্ক অংশ শেষ করতে। আর ৭৫ দিনের আইনী অভিজ্ঞতা এবং ১০টি সুনির্দিষ্ট সেমিনার সম্পন্ন করতে আরো ৬ মাসের মত লেগে যায়। সব মিলে এভারেজে ১০ মাসের মধ্যে ফুল টাইম প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং শেষ হয়ে যায়। আর পার্ট টাইম প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইং শেষ করতে ১৩ থেকে ১৪ মাসের মত লেগে যায়।

এই স্টেজে কোর্স ওয়ার্ক অংশে সাবজেক্ট রয়েছে মোট ৮ টা। যার মধ্যে ৬ টা হচ্ছে পূর্ব নির্ধারিত যেটির ক্ষেত্রে কোন বাছ বিচারের সুযোগ নেই, আপনাকে এগুলো করতেই হবে। আর বাকি দুটো আপনি অনেকগুলো সাবজেক্টের লিস্টের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারবেন। সাবজেক্টগুলো'র কয়েকটি উদাহরন হচ্ছে- সিভিল লিটিগেশন, কমার্শিয়াল এন্ড কর্পরেট প্র্যাক্টিস, প্রফেশনাল রেস্পন্সিবিলিটি, ট্রাস্ট এন্ড অফিস একাউন্টিং, প্রফেশনাল স্কিল, প্রপার্টি প্র্যাক্টিস, ক্রিমিনাল ল প্র্যাক্টিস, কঞ্জিউমার ল প্র্যাক্টিস, ইত্যাদি

এই স্টেজে আপনি শিখবেন কিভাবে একটা মামলা প্রস্তুত করতে হয়, ক্লেইম করতে হয়, মামলা শুরু করতে হয়, কিভাবে নেগোসিয়েশন করতে হয়, ক্লায়েন্ট ডিল করতে হয়, কনফারেন্সিং করতে হয়, কিভাবে জেরা করতে হয়, কিভাবে অপিনিয়ন লিখতে হয়, লিগাল রিসার্চ করতে হয়, কোর্টে কিভাবে বিচারপতির সামনে কথা বলতে হয়, ক্লায়েন্টের প্রদত্ত অর্থ কিভাবে লিপিবদ্ধ করতে হয় ট্রাস্ট একাউন্টে, কিভাবে এথিকাল বিষয়ের উপর নজর রাখতে হয় বা সতর্ক থাকতে হয়, ক্লায়েন্টের গোপনীয়তা কিভাবে রক্ষা করতে হয়, কিভাবে আইনী বিভিন্ন ধরনের চিঠি ড্রাফট করতে হয়, বেইল এপ্লিকেশন করতে হয়, গিলটি প্লি এপ্লিকেশন, ইঞ্জাংকশন এপ্লিকেশন, রেস্ট্রিকশান অর্ডার এর জন্য আবেদন করতে হয় ইত্যাদি নানা শত শত বিষয়। মোট কথা একজন আইনজীবি বাস্তব জীবনে কিভাবে একজন ক্লায়েন্টের মামলা ডিল করবেন-ম্যানেজ করবেন সেটির বাস্তব শিক্ষা-ই এই অংশে দেয়া হয়।

এই অংশের খরচ নির্ভর করে প্রত্যেক্টি প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং প্রোভাইডার এর নিজস্ব ফিসের নীতিমালার উপর। তবে ইন্টারন্যাশনাল ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য ১৩-১৬ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মত খরচ হয়ে যাবে।

এই অংশের এইসব স্তর পার হবার পর আপনাকে দেখাতে হবে যে আপনি একটা আইনী চেম্বারে ৭৫ দিনের জন্য কাজ করেছেন বা কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি আপনার এই অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে আরো কিছু এসাইনমেন্ট ও আরো অতিরিক্ত একটি বা দুইটি সাবজেক্ট সম্পন্ন করতে হবে এই অভিজ্ঞতার বদলে। এই ৭৫ দিনের অভিজ্ঞতার মধ্যে আপনি আপনি কি কি শিখেছেন সেটির একটি উপর একটি বিস্তারিত জার্নাল আপনাকে তৈরী করতে হবে যেটিকে ওয়ার্কবুক বলে। উল্লেখ্য যে এই যে ৭৫ দিনের অভিজ্ঞতা আপনি করছেন এবং যেই চেম্বারে আপনি সম্পন্ন করবেন সেটি কিন্তু আবার এই টিউশন প্রোভাইডারদের মাধ্যমে এপ্রুভড হতে হবে। এপ্রুভড হওয়া ছাড়া আপনার এই ৭৫ দিনের অভিজ্ঞতা কোনো কাজে আসবে না।

এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে, আপনি যদি কোনো দেশের আইনজীবি হয়ে থাকেন ও আপনার সেই দেশের আইন প্র্যাক্টিস করবার লাইসেন্স থেকে থাকে তবে আপনি প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং এর সময় কিছু বিষয়ের জন্য এক্সেম্পশনের আবেদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় কম করতে হতে পারে। এক্সেমশন পাবেন কি পাবেন না সেটি নির্ভর করবে সেই প্রাদেশিক মূল আইনী বোর্ডের উপর, টিউশন প্রোভাইডারদের উপর নয়।

আপনি যখন কোর্স ওয়ার্ক, ৭৫ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা শেষ করবেন তখন আপনাকে শেষ করতে হবে ১০ টিও বিষয়ের উপর সিপিডি মানে কন্টিনিউয়াস পরফেশনাল ডেভেলপমেন্ট। মানে হচ্ছে যে টিউশন প্রোভাইডার থেকে আপনি এই প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং কোর্স করছেন তারা আপনার জন্য প্রায় ২০ থেকে ৩০টা বিষয় নির্ধারণ করে দেবেন এবং সেই প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর আলাদা আলাদা আর্টিকেল থাকবে। আপনি এই আর্টিকেল থেকে ১০ টা আর্টিকেল পড়বেন, কি পড়েছেন তা বুঝবেন এবং এই প্রোভাইডারদের তা সুনির্দিষ্ট ফর্মে উল্লেখ করে জানাবেন। এটি পাঠাবার পর তারা যখন আপনাকে এপ্রুভাল দেবেন তখন আপনার এই স্টেজ সম্পন্ন হবে।

আপনি এই স্টেজ সম্পন্ন করলে যে ডীগ্রি পাবেন তার নাম হচ্ছে “গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন লিগাল স্টাডিজ”। ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হবার জন্য এটাই হচ্ছে আপনার সর্বশেষ পড়ালেখা। একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনাকে এই ডীগ্রির সার্টিফিকেট দেয়া হবে।

পরিশেষঃ

উপরের এই একাডেমিক আর প্র্যাক্টিকাল লিগাল ট্রেইনিং ধাপ সম্পন্ন করবার পর আপনি যে প্রদেশের ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হবার জন্য আবেদন করেছিলেন তাদেরকে অবহিত করবেন। এরপর শুরু হবে আপনার ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হবার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। এই আইনী বোর্ডের সুনির্দিষ্ট ফর্ম, তাদের চাওয়া সকল কাগজ পত্র, নির্ধারিত ফিস এগুলো দেয়া হলে এই আইনী বোর্ড আপনার ক্রিমিনাল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখবেন এবং দেখবেন আপনি কখনো ব্যাংক ক্রাপ্ট ছিলেন কিনা। এসব সব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আপনার পছন্দ মত তারিখে সুপ্রীম কোর্টে আপনাকে আইনজীবি হিসেবে শপথ নেবার জন্য আমন্ত্রন জানাবে।

আপনি নির্ধারিত তারিখে শপথ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ কোর্টে আইনজীবি হিসেবে অধিষ্ঠিত হবেন। তারপর লোকাল ল সোসাইটির কাছে প্র্যাক্টিসিং সার্টিফিকেটের জন্য এপ্লাই করবেন তাদের সুনির্দিষ্ট ফিস ও কাগজপত্র সহ। সেই ল সোসাইটি আপনাকে অস্ট্রেলিয়াতে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হিসেবে আইন প্র্যাক্টিস করবার জন্য অনুমতি প্রদান করবেন।


এই পুরো বিষয়ের উপর আরো কোনো প্রশ্ন বা তথ্য জানবার জন্য একটি সংস্থা রয়েছে। তাদের ঠিকানা-  www.legalguild.co.uk  / info@legalguild.co.uk



পরবর্তী যে লেখা লিখব-  (১) নিউজিল্যান্ডে কিভাবে ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হিসেবে এডমিশন নেবেন , (২) আমেরিকায় কিভাবে এটর্নী হিসেবে পেশা শুরু করবেন



লেখক পরিচিতিঃ


Nijhoom Majumder
DIL, LLB (Hons), MBA (UK), PGDLP (Australia)
Lawyer, Supreme Court of New South Wales, Australia
Enrolled Barrister & Solicitor, High Court of Wellington, New Zealand
Legal Research Analyst, International Crimes Research Foundation

No comments:

Post a Comment