Friday 5 September 2014

ক্যাম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের তুলনামূলক আলোচনাঃ জিয়া হাসানের লেখার প্রেক্ষিতে আমার উত্তর



শুরুর কয়েকটি কথাঃ

গত ৮-ই অগাস্ট জিয়া হাসান ভাই ফেসবুকে একটি নোট লিখেন। নোটের শিরোনাম ছিলো “মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের একটা তুলনা”। ব্যক্তিগত ভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ব্যাপারে আমার একধরনের তীব্র আগ্রহ রয়েছে এবং বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়ে যেহেতু আমি নিয়মিত লিখবার চেষ্টা করি এবং গবেষনা করবার চেষ্টা করি সেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই জিয়া ভাইয়ের উল্লেখিত শিরোনামে লেখাটি আমাকে আগ্রহী করে তোলে। ইনফ্যাক্ট বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক আদালত নিয়ে যে কোনো লেখাই আমাকে সব সময় টানে এবং পড়বার, চিন্তা করবার আগ্রহ যোগায়।

সন্দেহ নেই বাংলাদেশ ও ক্যাম্বোডিয়া এই দুইটি দেশে একই বিষয়ের উপর চলমান বিচার নিয়ে গবেষনা করে একটি তুলনামূলক ও বিশ্লেষনমূলক লিখবার ইচ্ছেটা অসাধারণ। এতে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্র তো আলোচনা হয়-ই উপরন্তু দুইটি বিচার ব্যবস্থাকে সামনাসামনি এনে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার ক্ষেত্রও সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। এতে করে এই বিষয়ের উপর নানামুখী আলোচনার ফলে পুরো বিচারব্যাবস্থাকে আরো বেশী স্পস্ট করে দেখা সম্ভবপর হয়। তবে কথা থাকে যে, লেখক কতটা বুঝে কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের উপর কতটা দখল রেখে এইসব আলোচনা করছেন। এই দখলের কিংবা এই বিষয়ের উপর জানবার পরিধি’র প্রশ্ন এই কারিনেই আসছে কারন জিয়া ভাইয়ের লেখায় এমন কিছু বেসিক জায়গায় আমার খটকা লেগেছে যেটি দেখে অতি সহজেই অনুমেয় হয় যে তিনি লেখাটি লিখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন হয়ে এবং কিছু আর্টিকেল কিংবা ইন্টারনেটে কিছু লেখার ফলশ্রুতিতে নিজের এক ধরনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং একটা নিজস্ব বানানো কাঠামোতে দাঁড় করাবার চেষ্টা চালিয়েছেন।

জিয়া ভাইয়ের উল্লেখিত লেখাটি আমি বেশ কয়েকবার মন দিয়ে পড়েছি এবং পড়বার পর আমার মনে হয়েছে জিয়া হাসান ভাই ক্যাম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের এই দুইটি চলমান বিচারের প্রেক্ষিতে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন কিংবা যে একটি নতুন চিন্তা পাঠকদের সামনে প্রসারিত করতে চেয়েছেন সেটি অনেক ক্ষেত্রেই ত্রুটিময়। বিনীতভাবে আমি বলতে চাই জিয়া হাসান ভাইয়ের লেখাটি এবং সেখানে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোর অনেক কিছুতেই আমি ভিন্নমত পোষন করি। আর এই ভিন্নমত পোষন করবার কারনেই আমি এই লেখাটি লিখছি।


আমার বক্তব্যঃ

প্রথমেই বলে নেই যে জিয়া হাসান ভাই তাঁর লেখায় যেই শিরোনাম ব্যবহার করেছেন সেটি একাডেমিক আলোচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বড়-সড় একটি ভুল। তার লেখার শিরোনাম হচ্ছে- “মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের একটা তুলনা”। ঐ একই শিরোনামের সূত্র ধরেই তিনি পরবর্তীতে আরো লিখেছেন- “উভয় বিচারই ছিল গণহত্যায় এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তির জন্যে। যদিও, আমাদের বিচারের ইস্যুটা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের সময়ে ঘটে যাওয়া অত্যাচার এবং টর্চার এবং গণহত্যার বিচার চেয়ে”

ভুল বলছি এই কারনে যে, এই দুইটি দেশের একটি বিচারও আসলে কেবলমাত্র মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কিংবা গণহত্যার বিচার এমনটি বলে পুরো ক্ষেত্রটিকে কোথাও সংকুচিত করা হয়নি, ইনফ্যাক্ট যে বিচার হয়েছে সেটির নামই এটি নয়। এই দুইটি বিচারই হচ্ছে ঐ দুইটি দেশে সুনির্দিষ্ট সময়ে ঘটে যাওয়া  আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার এবং এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের কনসেপ্ট এবং এই কনসেপ্ট উপজীব্য করে এটির যে সকল আইনী উপাদান, কানুন রয়েছে সেটিরও প্রয়োগ এই ধরনের বিচারের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিংবা বলা যায় এই ধরনের বিচারে ব্যাবহৃত হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি অপরাধ মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের-ই এক একটা প্রকারভেদ। সুতরাং ক্যাম্বোডিয়া কিংবা বাংলাদেশ, এই দুইটি দেশেই আসলে বিচার হচ্ছে কিংবা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ সমূহের। আবার এই অপরাধের বিচার করতে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যার যেমন অপরাধ সে তেমন ক্যাটাগোরির অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন তথা তার বিরুদ্ধে সেই অনুযায়ী চার্জ আনা হয়েছে।

জিয়া হাসান ভাই এই দুইটি দেশের যে ঘটনাগুলো কিংবা ঘটনা দ্বয়ের আদর্শিক আলাদা যায়গার কথা বলেছেন এবং বলতে গিয়ে বলেছেন

“একটায় এই দেশের মানুষের স্বাধিকারের ইচ্ছাটাকে দমন করার জন্যে শাসকেরা গণহত্যা চালাইছে। এবং এই দেশ থেকে হিন্দু নির্মূল করাও তাদের কার্যক্রমের একটা উদ্দেশ্য ছিল।  অন্যদিকে কম্বোডিয়ার গণহত্যা হইছে একটা আদর্শিক জায়গা থেকে,মাওবাদের একটা চরমপন্থি আইডিয়া দেশের মানুষের উপর চাপাতে গিয়ে একটা সিস্টেমেটিক দমন নীতি, যার প্রেক্ষাপটে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে গণহত্যা চালানো হয়।  ইতিহাস যদি কমিউনিস্টরা লিখতো এবং কম্বোডিয়ার জনগণ যদি মেনে নিত বা এর সুফল পেত- একে হয়ত গণহত্যা বলাও হতো না। ফলে, কম্বোডিয়ার জনগণের ২৫% এর মৃত্যু গোলমেলে একটা সময়ের ঘটনা, যেই খানে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পক্ষ বিপক্ষ আলোচনায় অনেক আর্গুমেন্ট কাউন্টার আর্গুমেন্ট করা সম্ভব”

আমি জিয়া ভাইয়ের উপরের বক্তব্যে একমত নই। পাকিস্তান এবং জামাত এই দুই গোষ্ঠীর আদর্শিক অবস্থানই হোলো অন্যের স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করা এবং সেটিকে ধর্মের নানা মোড়কে আপ্যায়িত করে একটি যুক্তির কাঠামো তৈরী করা। উপরে যে বলেছেন হিন্দু নির্মূলের কথা, সেই নির্মূল চিন্তাও এই উল্লেখিত গোষ্ঠীর আদর্শিক অবস্থান থেকেই। গত ৭০-৮০ বছরের ইতিহাস ধরে পাকিস্তানকে, পাকিস্তানের শাষকদের শাষন, তাদের চিন্তা-চেতনা, তাদের জনগণের চিন্তা-চেতনা সুগভীর ভাবে পর্যালোচনা করলে একটি সত্যই সু-স্পস্টভাবে বের হয়ে আসবে সেটি হচ্ছে কারো স্বাধীন চিন্তার নির্মূলের মাধ্যমে নিজস্ব চিন্তার পরিস্ফুটন এবং প্রকারন্তরে তা সঠিক বলে চালিয়ে দেয়া। ১৯৭১ উত্তর পাকিস্তানকে পর্যালোচনা করলেও কিন্তু দেখা যায় যে পাকিস্তানের শাষক গোষ্ঠী হত্যায়, খুনে তথা নির্মূলের রাস্তাকেই তাদের আদর্শিক অবস্থান হিসেবে চিত্রায়িত করে এটিকে স্থায়ী একটি রূপ প্রদান করেছে উপরন্তু এটি নিয়ে জাগতিক প্রশ্ন বা প্রতিবাদকে দাবিয়ে রাখাও হয় পরকালের কথা তুলে তথা ধর্মকে ব্যবহার করে। এই একই কথা শব্দ টু শব্দ জামাতের উপরেও বর্তায়। আদর্শিক অবস্থানের গতি প্রকৃতি যদি মানসিক চিন্তা চেতনার বাস্তবায়নের রূপ রেখাকেই চিত্রিত করে এবং সে অর্থে যদি ক্যাম্বোডিয়ায় খেমাররুজদের তান্ডব আদর্শিক অবস্থান থেকে হয়েছে বলা হয় তবে পাকিস্তানী শাষক গোষ্ঠী আর জামাতের তান্ডব আমার মতে কোনোভাবেই আলাদা নয়। যে ক্ষেত্রের অমিলের কথা বলেছেন আপনি লেখায় সেটি আলাদা স্বীকার করি। অতি অবশ্যই প্রেক্ষাপট ভিন্ন, স্থান ভিন্ন, কারনও হয়তবা ভিন্ন। কিন্তু জামায়াত বা পাকিস্তান আদর্শিক অবস্থান থেকে এতবড় গণহত্যা করেনি, এটা মানতে পারিনা কোনোভাবেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন যদি জামায়াতের নেতৃবৃন্দের নানাধরনের বক্তব্যের রেকর্ড আমরা সামনে আনি তবে আমরা বার বার দেখব যে, সেখানে বলা হয়েছে যে মুক্তিবাহিনী মূলত হিন্দুবাহিনী, মুক্তিবাহিনী আসলে হিন্দুদের দ্বারা ও ভারতের দ্বারা সৃষ্ট একটি বাহিনী। উপরন্তু, যেই আদর্শিক স্থান থেকে জামাত বার বার ভারত বিরোধিতা করে এসেছে, সেই একই যায়গা থেকেও তারা মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের সাহায্যে করা একটি যুদ্ধ এমন তকমা দিয়ে এই ভয়াবহ গণহত্যা কিংবা সকল আন্তর্জাতিক অপরাধকে জায়েজ করবার চেষ্টা করেছে। সুতরাং আদর্শিক অবস্থানের বিচ্যুতি আমি দেখিনা কখনোই। যাই হোক, আপনি নিজেও যেহেতু এই ব্যাপারে আর কথা বলতে চান নি, সুতরাং আমিও এখানে আর কথা না বাড়াই। আমরা বরং সামনের আরো কিছু বক্তব্য কিংবা আপনার বলা কথার সারমর্মগুলোর দিকে তাকাই।

কেন ক্যাম্বোডিয়া ট্রায়ালের সাথে বাংলাদেশের ট্রায়ালের মিল কিংবা অমিল খোঁজা হচ্ছে?

আমার প্রথমেই একটা ব্যাপার মাথাতেই আসেনি ইনফ্যাক্ট এখনো আসেনি যে, ঠিক কোন যুক্তিতে ক্যাম্বোডিয়ার সাথে বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের মিল কিংবা অমিল খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে? এর আসলে কারন টা কি? আপনার সাথে এর আগেও আমার একবার আইন বিষয়ক একটা তর্ক-বিতর্ক হয়েছিলো যেখানে আপনি কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় এমন একটি আইন নিয়ে আমাকে উদাহরণ দেয়া শুরু করেছিলেন যেটা ওই ঘটনাতেই যায়না। আপনাকে বার বার এই কথা বলবার পরেও আপনি ওই একই আইন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এনেছেন এবং একটা পর্যায়ে বলেছেন যে আপনি আইনের ছাত্র নন, ভুল হতেই পারে। এসব বলে ডিফেন্স করেছেন।
আমার একটা কথা কোনোভাবেই মাথায় ঢোকে না যে, আইনের ছাত্র না হয়ে আপনি কিভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের মত এত গভীর একটা বিষয় নিয়ে এইভাবে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে তর্ক শুরু করে দিতে পারেন যেখানে বড় বড় লেখক, পন্ডিতরা কথা বলতেও ভয় পায়? আমি আপনাকে কোনোভাবেই খাটো করে কিংবা আপনার অপমান হয় এমন কিছু চিন্তা করে লিখছি না। বলবার কারন আসলে আমার বিষ্ময়বোধ থেকেই মাত্র। কম্বোডিয়ার মত একটা বিচার যেটা মূলত এড-হক ভিত্তিতে জাতিসংঘের সহায়তায় গঠন করা হয়েছিলো। একটা বিচারের বেসিক সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা না করে কিংবা পাঠকের জন্য অনুধাবনযোগ্য না করে একটা বিচারের সাথে আরেকটা বিচারের মিল-অমিল খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন এটা আমার জন্য সত্যকার অর্থেই বিষ্ময়কর।

আপনি আপনার লেখার ডিফেন্সে বলেছেন ভুল হলে সব বিধানদা’র। জিয়া ভাই, উইথ ডিউ রেস্পেক্ট, এই বিচারটা এমনিতেই নানা কারনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, নানা কারনে এই ট্রায়াল নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে জামাত আর তাদের চ্যালারা। আপনি যেহেতু আইনের ছাত্র নন কিংবা এই বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই, আমি জানিনা কেন আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা গন্ডীর একাডেমিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে এমন সফিস্টিকেটেড, এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং এমন জটিল একটা অধ্যায় নিয়ে এইভাবে লিখতে গেলেন। আমি আপনার শুভাকাংখী হিসেবেই আসলে বলছি যে এই ধরনের মিল কিংবা অমিল ধরনের লেখা যখন লিখবেন তখন মূলত দুইটি বিচার ব্যবস্থার ব্যুৎপত্তি, সেই বিচারের গভীর কার্যকরণ, আইন, কারন, চৌহদ্দী, সংকীর্ণতা, বিচারের সাথে রাজনৈতিক নানা কার্যকরণসমূহ ইত্যাদির গভীর অনুসন্ধান খুব প্রয়োজন। তা না হলে আপনার একটা ছোট একটা ভুলের কারনে যারা আপনার পাঠক কিংবা পাঠিকা রয়েছেন তাঁরা বিভ্রান্ত হবেন এবং তাঁরা ত্রুটিপূর্ণ একটা কনসেপ্ট দাঁড় করাবেন নিজের ভেতর যেটা আদতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিকর। এত বছর এই বিচার নিয়ে কাজ করে দুই লাইন লিখতে ঘাম বের হয়ে যায় পাছে ভুল লিখলাম কিনা এই ভেবে, আর যখন দেখি এই বিষয়ে বলবার মত অনুসন্ধান করবার, লিখবার ইতিহাস না থাকা সত্বেও কেউ চট করে একটা লেখা লিখে বসেছেন যেটির অসংখ্য সমালোচনা, দূর্বলতা, অপূর্ণতা আলোচিত হয়নি [থাকবার পরেও] তখন এক ধরনের কষ্ট অনুভূত হয়। মনে হয় এই ট্রাইবুনালকে একটা কিছু বলতে হবে, একটা লাথি, গুঁতো মারতে হবে, একটা অহেতুক সমালোচনা করতে হবে বলেই যেন এসব করা। পুরো ব্যাপারটাই তখন এক ধরনের “সেট-আপ” জাতীয় লেখা মনে হয়।

আপনার মনে হয়েছে ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনাল ডমেস্টিক আইনে হচ্ছে আবার বাংলাদেশের ট্রাইবুনালও নিজস্ব আইনে হচ্ছে, আপনি এই ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দিয়ে লিখে বসলেন শুধু এই টুকু মিল আছে “মনে করে”। ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনালের সংকীর্নতা এত ব্যাপক যে সেটি জানলে আপনি হয়ত এই লেখাটি লিখতেন না। আর ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনালের যদি তুলনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আসেও, সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের ব্যাপকতার ক্ষেত্র অনেক গুন বেশী। নীচে সংক্ষেপে সেই পয়েন্টগুলো তুলে ধরবার চেষ্টা করব। 

আপনি ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনালে কয়জন জাজ ক্যাম্বোডিয়ার বাইরের মানে সেই দেশী কিংবা কয়জন জাজ ভেতরের মানে বিদেশী এসব নিয়ে পরিসংখ্যান দিয়েছেন। কে তদন্ত করবে, কার সাহায্যে তদন্ত হবে, ক্ষমতা কার কাছে থাকবে এসব নিয়ে আপনি মিল কিংবা অমিল খুঁজছেন। এই মিল কিংবা অমিল দিয়ে কি নির্দেশিত হয় আমি জানিনা, তবে এই মিল অমিলে কি প্রমাণিত হয়েছে আমি সেই ব্যাপারেও নিশ্চিত নই।
আপনার এই লেখায় যেখানে আপনি বলেছেন-

“ওপেন কোর্টে প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সময়ে ট্রায়ালের হেয়ারিং শুনতে অংশ গ্রহণ করে। কিছু কিছু বিচার প্রায় 200 দিনের উপরে পর্যন্ত চলে। ফলে, কম্বোডিয়ান জনগন এই পুরো প্রক্রিয়াতে ব্যাপক ভাবে অংশগ্রহন করে। বিশেষত, গ্রামের দিকের মানুষের ব্যাপক অংশ গ্রহণ দেখায় যায়, ইসিসিসি এর বিচারের কার্যক্রমে”

এসব বক্তব্য বেশ হাস্যরসাত্নক মনে হয়েছে আমার কাছে। জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণ কিংবা সারা দেশে ক্যামেরা দিয়ে সিনেমার মত বিচার দেখানোর মধ্যে আসলে নিরপেক্ষতা প্রমাণ হয়না। এগুলো দিয়ে জনসম্পৃক্ততা প্রমাণ করবারও কিছু নেই। অপরাধ হয়েছে, বিচার হবে। কথা এতটুকুই যথেষ্ঠ। জন্তা চাক কিংবা না চাক। আর সেই হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ কতটা এই বিচারের সাথে এটাচড সেটা শাহবাগ-ই প্রমান করে দিয়েছে। পৃথিবীর অনেক আদালত ইতিমধ্যেই এই জাতীয় অপরাধের বিচার করবার জন্য গঠিত হয়েছে সেগুলোতেও আসলে এভাবে ২ লক্ষ, ৩ লক্ষ কিংবা ৫ লক্ষ লোকের জন সমাগম হয়নি। যেই ব্যাপারটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষক, বিচার নিয়ে কনসার্ন্ড বিভিন্ন গোষ্ঠী, মিডিয়া, সাংবাদিক, অভিযুক্ত পক্ষ, বাদী পক্ষ এই বিচারকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন এমন ব্যবস্থা এই ট্রাইবুনালে রয়েছে কি না। উত্তর হচ্ছে রয়েছে। যেমন যেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই ট্রাইবুনালের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেই ত্রুটির কথা বলেছে তাদের প্রতি আদালত কি বলেছে আসুন একটু দেখে নেই-

“ট্রায়াল চলাকালে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দুই পক্ষের অাত্মীয় স্বজনরাই এখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে বিচার পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ট্রাইব্যুনালে দেশি-বিদেশি নানা পর্যবেক্ষক বিভিন্ন সময়ে এসেছে, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা কোনও নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই প্রতিদিন নিউজ করেন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে অথচ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কোনও প্রতিনিধি ছিল না। তারপরও তারা মনগড়া প্রতিবেদন করেছে। তারা বিচার প্রক্রিয়া না জেনে অবিরত সমালোচনা করে গেছে, যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশে এবং বিদেশে একটি মডেল ওয়ার্ক হি‌‌‌সেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে”

জিয়া ভাই আরো বলেছেনঃ

“তাতে কোন সমস্যা ছিলনা যদি না ,যদিনা আমাদের জাতীয় খাসলতের মধ্যে, স্বজনপ্রীতি,রাজনৈতিক প্যাঁচ এবং স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ না থাকতো এবং বিচার বিভাগ ঐতিহাসিক ভাবে  স্বনির্ভর এবং স্বাধীন হতো”

আপনি এই কথা বলে আবার সাথে এও বলেছেন যে-

“এর ফলে আমরা দেখেছি, স্কাইপ ক্যালেঙ্কারিতে যেই সব প্রশ্ন লজ্জাজনক ইস্যু এসেছে গালি দেয়া বাদে, প্রপার উত্তর সরকারের কাছ  থেকে আসে নাই।  স্কাইপে শোনা গ্যাছে- সাক্ষী কি ভাবে কি কি বলবে, বিচারপতি সেইটা শিখিয়ে দিচ্ছেন। শোনা গ্যাছে, বিচারপতি সাহেব নিজের মুখে বলছেন,  রায় দেয়ার বিনিময়ে,আপিল বিভাগে প্রমোশন দেয়া হবে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বিচারক, কিংবা, শোনা গ্যাছে চিফ প্রসিকিউটর বিচারপতির রুমে গিয়ে বলছেন, “আমি দাড়াই যাবো, আপনি আমাকে বসায় দিবেন। লোকে দেখুক, আমাদের মাঝে কোন খাতির নাই। এই সব লজ্জা জনক ঘটনাগুলো একটা  আন্তর্জাতিক ট্রায়াল হলে কোন মতেই হতো না। সেই খানে, একটু হলেও মান নিয়ন্ত্রণ হতো। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশে এতো রাজনীতি এবং মুভমেন্ট হইছে। এর পরে, আমরা জাতি হিসেবে সত্যি ডিজারভ করেছিলাম, একটা ট্রায়াল যেইটাতে এই ধরনের লজ্জা জনক অভিযোগ উঠবেনা। কারন এই বিচার, আমাদের জন্মের ইতিহাসের বিচার। বাংলাদেশের এই জাতির জন্ম যেই যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে, যে যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে- তার বিচারে রাজনৈতিক গোল দেয়ার জন্যে এই ধরনের অসততার আশ্রয় নেয়া- আমাদের জাতির জন্যে কত বড় কলঙ্কজনক উদাহরণ হিসেবে রয়ে  গেলো সেইটা সহস্র বছর ,লক্ষ বছর পরেও রয়ে যাবে”

অনেকগুলো অভিযোগ আপনি এখানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। যেমন বিচারালয়ের স্বাধীনতা, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্যাঁচ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্কাইপি কনভার্সেশন, জন্মের ইতিহাসের বিচার [ সাউন্ডস ইকোনোমিস্টের কলাম দ্বারা প্রভাবিত], লজ্জাজনক অভিযোগ ইত্যাদি।

রাজাকার আর আলবদরদের বিচার করতে নিলেই বিচারালয়ের স্বাধীনতার কথা উঠে আসে। কেন আসে আমি জানিনা। আমি সামগ্রিকভাবে বিচারালয়ের স্বাধীনতার কথা উঠালেন অথচ মামলা ধরে ধরে স্পেসেফিক হতে পারেন নি। কোন মামলায় বিচারপতিরা পরাধীনতা দেখিয়েছেন, কোন মামলায় বিচারপতিরা পরাধীন হয়ে মামলাকে সম্পৃক্ত করেছেন সেই আলোকে এসবের কিছুই আপনি বলেন নি। আপনি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিচারালয়কে পরাধীন বলে এবং সেই আলোকে একটা ট্রাইবুনাল, যেই ট্রাইবুনালের আসামী গ্রেফতার থেকে শুরু করে বিচারের শেষ দিন পর্যন্ত চূড়ান্ত সতর্কতা নেয়া হয়েছে এবং খোদ আসামীরা আপীলেট ডিভিশানে সু-বিচার পাবে বলে বার বার মিডিয়াকে বলেছে, সেখানে আপনি বলছেন বিচারালয়ের পরাধীনতার কথা। গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় হয়েছে যেসব আপনার কথামত বাংলাদেশের জন্মের সাথেই আসলে জড়িত। সেসব বিচার কিন্তু বাংলাদেশের চলমান বিচারিক কাঠামো এবং বিচারবিভাগ যে অবস্থানে রয়েছে সেই অবস্থান থেকেই সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আপনার অবগতির জন্য এও বলা যায় যে, বাংলাদেশ নাম দেশটির একেবারে শুরুর দিকে, মানে, ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কিন্তু দালাল আইনে এই বাংলাদেশেই এক দফা একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার সুচারু রূপেই সম্পন্ন হচ্ছিলো যতদিন পর্যন্ত না তৎকালীন সরকারের নির্দেশে [পড়ুন জিয়ার প্রভাবে] এই বিচারকে রদ করা না হয়েছিলো। সে সময় কিন্তু ৭৫২ জন অপরাধী দন্ডিত হয়েছিলো।

৭৫ এর পর থেকেও আমাদের বিচারবিভাগ নানামুখে সংকট, চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। আমাদের দেশের জাজমেন্ট পৃথিবীর অনেক বড় বড় কোর্টেও রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। বিচারপতি গোলাম রব্বানির দেয়া একটি রায় আমি ইংল্যান্ডে গ্র্যাজুয়েশন করবার সময়ই রেফারেন্স হিসেবে ডিটেইল পড়েছিলাম। এখন কথা হচ্ছে এই যে গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশের আদালত থেকে লক্ষ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে আপনার কথা অনুযায়ী বিচারবিভাগ পরাধীন থাকা অবস্থাতেই এইসব বিচার হয়েছে। ১৯৯৪ সালে গোলাম আজম নাগরিকত্ব পেয়েছে বিচার বিভাগের পরাধীনতার ফলেই, ৮১-৮২ এর দিকে রাজাকার সাজ্জাদ হোসাইন, খালেক মজুমদার, চিকন আলী ইত্যাদিদের সাজা মওকুফ হয়েছিলো বিচারবিভাগের পরাধীনতার কারনেই। হালের তারেক রহমানের একটা মামলায় তার পক্ষে যে রায়টি গিয়েছিলো সেটিও বিচার বিভাগের পরাধীনতায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, কর্ণেল তাহের হত্যা মামলা ইত্যাদি মামলা তাহলে বিচার বিভাগ পরাধীন থাকা অবস্থাতেই হয়েছে বলে আপনার কথা বুঝলাম। খুব জানতে ইচ্ছে করে যে উল্লেখিত মামলাতে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে তবে কি রায় হোতো? আমি বিষ্মিত হয়ে রই আপনার এসব কথা শুনে। শুধু রাজাকার আর আলবদরদের বিচারের কথা আসলেই ঐতিহাসিক ভাবে আমাদের বিচারালয়, আইন, কাঠামো, ব্যাবস্থা এগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠান। ওই যে বল্লেন জন্মের বিচার, সেই জন্মের বিচার করতে গেলেই আপনাদের এত প্রশ্ন। অথচ এই বিচার বিভাগের প্রতি-ই কিন্তু আদতে আস্থা রেখেছে এইসব রাজাকার-আলবদরেরা। আপনার সেই স্কাইপি ঘটনার পর আসামী পক্ষ রি-ট্রায়াল করবার দাবী কিন্তু এই চলমান বিচারিক কাঠামোর ভেতর, এই আদালতের কাছেই চেয়েছিলো। আস্থা আছে বলেই চেয়েছে, এমনটি-ই তো ধরে নিতে পারি, তাই না? বার বার আপীলেট ডিভিশানে গেলে সু-বিচার পাবে বলে বলেছিলো আসামী পক্ষের আইনজীবি আব্দুর রাজ্জাক, একজন বিচারপতি অবসর নেবার পর কিন্তু এই আসামী পক্ষের আইনইজীবি তাজুল ইসলাম গলা ফাটিয়েছিলো বিচারপতির অবসর নাকি রাজনৈতিক চাপ থেকে, এমন কথা বলে। অথচ আপনি ঐতিহাসিক পরাধীনতার কথাই বলেন কেবল। আসেন এই ট্রাইবুনালে বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আরো কিছু জানি-

আমি এই ট্রাইবুনালকে যতটুকু পর্বেক্ষন করেছি, এই ট্রাইবুনাল নিয়ে যতদূর পাঠ করবার কিংবা ক্রিটিকালী এসেস করবার প্রয়াস নিয়েছি ততবারই আমার মনে হয়েছে এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিরা বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বরণকালের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা এবং উদারতার প্রমাণ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। এই বিচার চলাকালীন সময়ে আসামীপক্ষ প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারলোকেটরী আপীল করেছে বিভিন্ন বিষয়ে। এই নিয়ে শুনানী, সেই নিয়ে শুনানী সহ শত শত আবেদন করেছে যেগুলোর প্রাইমা ফেসী মেরিট না থাকার পরেও বিচারপতিরা শুনানীর দিন নির্ধারন করেছেন, শুনেছেন এবং তাদের মতামত জানিয়েছেন বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিচারপতিকে তার পদ থেকে অপসারিত করবার জন্য আবেদন করেছেন ডিফেন্সের আইনজীবিরা এবং সেটির শুনানীও হয়েছে। এর থেকে নিরপেক্ষ আচরন কি আশা করতে পারে মানুষ একটা ট্রাইবুনাল থেকে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। বাংলাদেশের মূল আইনী কাঠামোতেই আসলে সেপারেশন অফ পাওয়ারের আমি চিহ্ন দেখিনা। এখানে প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হয় রাষ্ট্রপতির দ্বারা। দেখুন বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ। আবার অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগকৃত হয় প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। বিস্তারিত আলাপে না গিয়েই সহজে বলে দেয়া যায় যে এখানে এক্সিকিউটিভ এবং জুডিশিয়ারীর মধ্যে ইন্টারফেয়ারেন্স হচ্ছে বলে প্রাইমা ফেসী মনে হতে পারে। এবং বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করতে পারেন রাষ্ট্রপতিকে যেহেতু নির্বাচন করেন প্রধানমন্ত্রী সুতরাং তিনি একজন দলীয় আজ্ঞাবাহীই হবেন আবার ঐদিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন, তবে সেই বিচারপতিও হয়ত সেই একই দলীয় আদর্শের আজ্ঞাবাহী হবেন। আবার এই প্রধান বিচারপতি যেহেতু অন্যান্য বিচারপতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন তবে সেইসব বিচারপতিও তাহলে ওই একই দলের আজ্ঞাবাহী হবেন। কিন্তু আদতে এই যুক্তি বা এই পারসেপশান খাটেনা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) কেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই দেখে যে বিচারপতিরা স্বাধীন ভাবে কাজ করবেন আসলে। যদি এইভাবে বিচার করা হয় তাহলে বি এন পি আমলে ধরে নেয়া হবে সব বি এন পি’র বিচারপতি এবং আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগের বিচারপতি। এভাবে কি একটি দেশের বিচার ব্যাবস্থা চলে? কিন্তু আদতে এইভাবে স্টেরিওটাইপড চিন্তা করলে চলবে না। আমি আমাদের বিচার ব্যাবস্থার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখি বর্তমানে। যেভাবে এই বিচার চলছে কিংবা যেভাবে এই বিচার পরিচালিত হচ্ছে তা এক কথায় ঐতিহাসিক।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় এই বিচারের ক্ষেত্রে এই যে বিচারপতিদের নিরপেক্ষ [ঐতিহাসিকভাবে পরাধীন] বলছেন না আপনি এটা কি আপনার পারসেপশান নাকি এর পেছনে স্ট্রং যুক্তি রয়েছে? এই বিষয়ে কোনো কংক্রীট যুক্তি দেখিনি।

স্কাইপি কনভারসেশনে দুইজন ব্যাক্তি আলাপ করছে। বলা হচ্ছে একজন ব্যাক্তি বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আরেকজন বিচারপতি নাসিম। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বিচারপতি নাসিমের ভয়েস আসলে কেমন তার প্রমাণ নেই, প্রবাসী জিয়াউদ্দিনের ভয়েস কেমন তার প্রমাণ নেই, তারা আদৌ কথা বলেছেন কিনা সেটির প্রমাণ নেই। এখানে আসলে আলোচনা করতে গেলে তিনটি অবজার্ভেশন এবং সেই অব্জার্ভেশনের শাখা প্রশাখা নির্নয় করে আলোচনা করতে হবে।
ধারনা ৩ টি হচ্ছেঃ

ক) এই স্কাইপি কনভারসেশনটাই ভুয়া। এখানে অপিরিচিত দুইটি ব্যাক্তি আলোচনা করেছে এবং এখানে দুইজন সম্মানিত ব্যাক্তির নাম এনে এই ট্রাইবুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

খ) এই স্কাইপি কনভারসেশন সত্য। এখানে সত্য সত্যই একজন বিচারপতি তার বেলজিয়াম প্রবাসী বন্ধুর সাথে একান্ত নিজস্ব আলাপ করেছেন এবং কিছু দূর্বৃত্ত অবৈধভাবে এই ব্যাক্তিগত আলাপচারিতা হ্যাক করে প্রকাশ করেছে।

গ) এটা একটা ইনফরমাল আলোচনা। একজন পুরোনো বন্ধুর সাথে বিচারপতির ক্যাজুয়াল আলাপ। উপরের দুইটি সিদ্ধান্তের মধ্যে যদি ব্যাপারটা দাঁড়ায় প্রথমটি, তাহলে শুরুতেই ব্যাপারটি খারিজ করে দেয়া যায় কিন্তু সেটি হতে হবে আইনী তদন্ত সাপেক্ষে এবং কোর্টে। আবার সিদ্ধান্ত যদি হয় দ্বিতীয়টি একইভাবে সেটিও রিজলভড হবে কোর্টে।
কেন এই কনভার্সেশনকে আমরা সাথে সাথেই গ্রহন করে সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা?

আমরা যেহেতু একটা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে বাজারী কথা বার্তা, বাঁশের কেল্লার মত অসভ্য, কুরুচীপূর্ণ প্রোপাগান্ডার উপর বিশ্বাস রেখে আলোচনা করলে হবে না। আমাদের হতে হবে কংক্রীট যুক্তির অধিকারী, যা বলতে চাই বা প্রমাণ করতে চাই সেটির দিকে ফোকাসড। আদালতের উপরেই শেষ পর্যন্ত আমাদের আস্থা রাখতে হবে। আগেই বলেছি যে মূল অভিযুক্তদের আইনজীবিরা অবশ্য ক্রমাগতই এই আদালতের উপর আস্থা রেখেছেন এবং মামলা পরিচালনা করছেন। আমি পরের আলোচনাতে এই বিষয়টি নিয়ে আরো বিশদ বলব]

ট্রাইবুনালের বিচারপতিরা কতটুকু নিরপেক্ষ কিংবা উদার?

আমি এই ট্রাইবুনালকে যতটুকু পর্বেক্ষন করেছি, এই ট্রাইবুনাল নিয়ে যতদূর পাঠ করবার কিংবা ক্রিটিকালী এসেস করবার প্রয়াস নিয়েছি ততবারই আমার মনে হয়েছে এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিরা বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বরণকালের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা এবং উদারতার প্রমাণ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। এই বিচার চলাকালীন সময়ে আসামীপক্ষ প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারলোকেটরী আপীল করেছে বিভিন্ন বিষয়ে। এই নিয়ে শুনানী, সেই নিয়ে শুনানী সহ শত শত আবেদন করেছে যেগুলোর প্রাইমা ফেসী মেরিট না থাকার পরেও বিচারপতিরা শুনানীর দিন নির্ধারন করেছেন, শুনেছেন এবং তাদের মতামত জানিয়েছেন বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিচারপতিকে তার পদ থেকে অপসারিত করবার জন্য আবেদন করেছেন ডিফেন্সের আইনজীবিরা এবং সেটির শুনানীও হয়েছে। এর থেকে নিরপেক্ষ আচরন কি আশা করতে পারে মানুষ একটা ট্রাইবুনাল থেকে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। বাংলাদেশের মূল আইনী কাঠামোতেই আসলে সেপারেশন অফ পাওয়ারের আমি চিহ্ন দেখিনা। এখানে প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হয় রাষ্ট্রপতির দ্বারা। দেখুন বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ। আবার অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগকৃত হয় প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। বিস্তারিত আলাপে না গিয়েই সহজে বলে দেয়া যায় যে এখানে এক্সিকিউটিভ এবং জুডিশিয়ারীর মধ্যে ইন্টারফেয়ারেন্স হচ্ছে বলে প্রাইমা ফেসী মনে হতে পারে। এবং বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করতে পারেন রাষ্ট্রপতিকে যেহেতু নির্বাচন করেন প্রধানমন্ত্রী সুতরাং তিনি একজন দলীয় আজ্ঞাবাহীই হবেন আবার ঐদিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন, তবে সেই বিচারপতিও হয়ত সেই একই দলীয় আদর্শের আজ্ঞাবাহী হবেন। আবার এই প্রধান বিচারপতি যেহেতু অন্যান্য বিচারপতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন তবে সেইসব বিচারপতিও তাহলে ওই একই দলের আজ্ঞাবাহী হবেন। কিন্তু আদতে এই যুক্তি বা এই পারসেপশান খাটেনা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) কেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই দেখে যে বিচারপতিরা স্বাধীন ভাবে কাজ করবেন আসলে।

যদি এইভাবে বিচার করা হয় তাহলে বি এন পি আমলে ধরে নেয়া হবে সব বি এন পি’র বিচারপতি এবং আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগের বিচারপতি। এভাবে কি একটি দেশের বিচার ব্যাবস্থা চলে? কিন্তু আদতে এইভাবে স্টেরিওটাইপড চিন্তা করলে চলবে না। আমি আমাদের বিচার ব্যাবস্থার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখি বর্তমানে। যেভাবে এই বিচার চলছে কিংবা যেভাবে এই বিচার পরিচালিত হচ্ছে তা এক কথায় ঐতিহাসিক।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় এই বিচারের ক্ষেত্রে এই যে বিচারপতিদের নিরপেক্ষ বলা হচ্ছেনা, এটা কি কেবল পারসেপশান নাকি এর পেছনে স্ট্রং যুক্তি রয়েছে? 

স্কাইপি কনভারসেশনে দুইজন ব্যাক্তি আলাপ করছে। বলা হচ্ছে একজন ব্যাক্তি বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আরেকজন বিচারপতি নাসিম। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বিচারপতি নাসিমের ভয়েস আসলে কেমন তার প্রমাণ নেই, প্রবাসী জিয়াউদ্দিনের ভয়েস কেমন তার প্রমাণ নেই, তারা আদৌ কথা বলেছেন কিনা সেটির প্রমাণ নেই। কোনো রকমের প্রমাণ ছাড়া একজনকে চট করে ফেসবুকের পাতায় দোষী সাব্যাস্ত করে দেয়াটা কতটুকু যৌক্তিক। 

বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা  উদারতার কিছু উদাহরণঃ

এই বিচারের ক্ষেত্রে কত রকমের অন্যায় কাজ করেছে আসামী পক্ষ সেগুলোর ইয়ত্তা নেই। ব্যাক্তিগত উদারতা, ক্ষমা করবার অপূর্ব মানসিকতা, নিরপেক্ষতা, বিচক্ষনতা সব কিছুই প্রয়োগ করে বিচারপতিরা অনেক ব্যাপারকে ওভারলুক করেছেন কিংবা মেনে নিচ্ছেন। নীচে শত শত উদাহরনের মধ্যে মাত্র কয়েক্টি দিলামঃ

১) ২০১২ সালের মার্চ এপ্রিলে ডিফেন্সের আইনিজীবি আব্দুর রাজ্জাক এবং তাজুল ইসলাম তাদের বিচার কাজ ফেলে, আদালতকে না বলে সেশন থাকার পরেও লন্ডনে চলে আসেন। এই বিষয়ে আদালত আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে পারলেও শুধু মাত্র মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দেন।

২) অসংখ্যবার ডিফেন্সের মূল আইনিজীবিরা আদালতের সেশন ফেলে জুনিয়ার আইনজীবিদের পাঠিয়ে মামলা পেছাবার আবেদন করেছেন এগুলোর হিসেব নেই। বিচার প্রলম্বিত হয়েছে এবং ভিক্টিমদের জন্য এটি ক্ষতির কারন হলেও বিচারপতিরা ডিফেন্সের আইনজীবিদের-ই সুযোগ দিয়েছেন। এটাকে আসামীদের পক্ষে ফেবার হিসেবে না ধরে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিচারকদের পদক্ষেপ ধরে নেয়া যেতে পারে।

৩) সাঈদীর ফাঁসির বিরুদ্ধে করা আপীলের ১৯তম শুনানির দিন পিছিয়েছে ১২ বার। প্রথম তারিখ ছিল ২৬শে নভেম্বর। ১২ বার পিছিয়ে নতুন তারিখ হয়েছে জানুয়ারী ২ এ। এভাবে তারিখ পেছালো ৫ সপ্তাহ। রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে ঘৃণ্য যুদ্ধপরাধীর এরকম সুবিধা নেবার সুযোগ নিচ্ছেন জানবার পরেও বিচারপতিরা বার বার ডিফেন্সের আইনজীবিদের সুযোগ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের স্বার্থে।

৪) ভুয়া সাক্ষী এনে ধরা খাবার পরেও আদালত ব্যাপারটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখছেন। উদাহরন হিসেবে বলা যায়-
বাংলামেইল ২৪ এর 21-10-2013 এর একটি প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে-

সোমবার সকালে (২১-১০-২০১৩) ট্রাইব্যুনালের কার্যীক্রম শুরুতে নিজামীর সাফাই সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন অ্যাডভোকেট কে.এম হামিদুর রহমান। পরে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী তাকে জেরা শুরু করেন।এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের কাছে জানতে চান যে, অন্য সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে হাজির আছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, গতকালই (রোববার) বলে দেয়া হয়েছে আপনারা একাধিক সাক্ষীকে হাজির রাখবেন। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গতকাল ছিলাম না, ভুল হয়ে গেছে।’এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী আদালতে অভিযোগ করে বলেন, ‘জবানবন্দি দিয়েছেন কে.এম হামিদুর যার নাম আসামির সাক্ষীর তালিকায় নেই। তখন আদালত প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসামীর আইনজীবীকে উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার আইনজীবী, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি, আপনি ডিফেন্স সাক্ষী নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ফ্রড (প্রতারণা)করেছেন ‘ এ সময় আদালত ট্রাইব্যুনালের এজলাশ থেকে ডিফেন্সের সাক্ষী অ্যাডভোকেট কেএম হামিদুর রহমানকে সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নেমে যেতে বলেন। ওই সময় সাক্ষী কাঠগড়া থেকে নেমে যান। এ সময় আদালত মিজানুল ইসলামকে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার ল’ইয়ার, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি। আইনজীবী বলেন, আই এম ভেরি সরি, ইট ইজ ক্লারিক্যাল মিসটেক।’ আদালত বলেন, ‘আপনারা আদালতের সাথে মিথ্যা কথা বলেছেন, আপনাদের তালিকায় আছে আব্দুল হামিদ আর আপনি দিলেন কে.এম হামিদুর রহমান, এটা আইনজীবী হিসেবে আদালতের সাথে প্রতারণা।’

৫) আদালতে ডিফেন্সের আইনজীবিরা সাক্ষীর তালিকা হিসেবে উল্লেখ করছেন মিস্টার এক্স, মিস্টার ওয়াই এইভাবে। এই বিষয়টা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি হলেও আইনী ব্যাবস্থা না নিয়ে বিচারকরা মৃদু সতর্ক করে দিচ্ছেন ডিফেন্স আইনজীবিদের। যেমন ঘটেছে নিজামীর মামলার বেলায়। নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আপনি একজন ব্যারিস্টার, আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু পেশার শুরুতে এটা কি করলেন? তখন নিজামীর ছেলে আদালতকে বলেন, এটা ক্লারিক্যাল মিসটেক, আমি বুঝতে পারিনি যে ট্রাইব্যুনালের কাছে দেয়া পাঁচ জনের তালিকায় ওনার নাম নেই।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা সাক্ষীর তালিকায় মিস্টার এ, মিস্টার বি, মিস্টার এক্স, মিস্টার ওয়াই এসব নাম উল্লেখ করেছেন, এটা কোন সাক্ষীর তালিকার নাম হতে পারে না। এমন নাম আমরা জীবনেও দেখিনি। আপনারা কে. এম হামিদের বিষয়ে আদালেতে আগেও বলতে পারতেন। কিন্তু তা বলেননি কেন? রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একেক সময় একেক নাম আসামীপক্ষ উপস্থাপন করছেন। সাক্ষীর তালিকায় যে নাম দেয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি এখানে নেই। তাই এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আসামীপক্ষ আদালতের সময় নষ্ট করতেই সাক্ষীর নাম নিয়ে এ ধরনের আচরণ করছেন।

৬) বিচারপতিদের সামনেই অভিযুক্ত সাকা চৌধুরী অভব্য আচরন করলে আইনী ব্যাবস্থা ব্যাতিরেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বিচারকরা।

৭) সাকার রায় পাঠের সময় অভব্য ভাষায় সাকা বলছিলো “বল তোর বোনকে আমি কি করেছি বল…বল…” এই জাতীয় অশ্লীল কথা বলবার পরেও বিচারপতিরা এই নোংরা ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাকাকে কোন শাস্তি দেয়নি।

৮) আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী এবং সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযুক্তরা রায় পুনঃর্বিবেচনার কোনো সুযোগই আইন অনুযায়ী পায়না, কিন্তু তারপরেও আপীলেট ডিভিশান এই পুনঃর্বিবেচনার আবেদন শুনেছেন কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে।

৯) কাদেরমোল্লার মামলার ক্ষেত্রে চেম্বার বিচারক মাহমুদ হোসেন রাত ১০টায় রায় স্থগিতের আদেশ দিয়েছিলেন যেটি বাংলাদেশের আইনী ইতিহাসে অবিষ্মরনীয়।

১০) ডিফেন্সের আইনজীবি তাজুল বার বার আদালতের সাথে বেয়াদপি করেছেন, অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন কিন্তু তারপরেও আদালত তার ব্যাপারে আইনী ব্যাবস্থা নেন নি।

১১) এই আইনে বন্দী থাকা অবস্থায় কারাবিধির বাইরে গিয়ে, ঘর থেকে খাবার আনার ব্যাবস্থা ছিলোনা। অথচ এই বাইরে থাকে গোলাম আজমের জন্য খাবার আনার ব্যাপারে আদালতে শুনানী হয় এবং বিচারপতিরা সেটা মঞ্জুর করেছেন নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকবার পরেও।

১২) এই বিচার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না এই মর্মে রুল জারি হলে আদালতের সামনে গিয়ে তারা দু’জনই ক্ষমা চেয়েছেন। বিচারকরা কে কোন দলের রাজনীতি করেন এসব বিবেচনায় আনেন নি। [সূত্রঃhttp://bit.ly/YBgAWM, http://bit.ly/YBgVca, http://bit.ly/15NHJWH]

আওয়ামীলীগের আরেক প্রভাবশালী সাংসদ ও মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীকেও কারন দর্শাতে বলেছে আদালত, মুখোমুখি করেছে জবাবদিহিতার জন্য, এই ব্যাপারগুলো তো হয়েছে সকলের চোখের সামনেই। এখানে এসব খবরের রেফারেন্সও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এর পরেও কি বলা যায় যে এই ট্রাইবুনাল কোনোভাবেই পরাধীন কিংবা সরকারের কোনো প্রভাবে প্রভাবিত, নাকি সরকারকে বিন্দু মাত্র এই বিচারের ক্ষেত্রে পরোয়া করে চলে? ট্রাইবুনাল যে শুধু মাত্র সরকারী দলীয় ব্যাক্তিদেরই জবাবদিহিতা কিংবা কারন দর্শাবার জন্য রুল জারি করেছে তা নয়। বরং বিরোধী দলীয় নেতা এম কে আনোয়ার[সূত্রঃhttp://bit.ly/ZrlHIL],
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, নুরুল কবীর ট্রাইবুনাল অবমাননার দায়ে জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

১৩) সাকার মামলা চলাকালীন সময়ে সাকার বিপক্ষে আসা ২য় সাক্ষীকে ওপেন আদালতে হুমকি দেয় সাকার আইনজীবি ফখরুল এই বলে যে, “ভবিষ্যতে কি হবে চিন্তা করে কথা বইলেন”, এই কথা বিচারপতি শুনতে পান এবং তিনি সতর্ক করে দেন যে এই জাতীয় কথা তিনি যেন আর না বলেন। অথচ বিচারপতি কিন্ত এই আইনিজীবির প্রতি ফৌজদারী আইনে কিংবা ট্রাইবুনালের নিজস্ব আইনেই ব্যাবস্থা নেবার জন্য নির্দেশ দিতে পারতেন।
শুধু এইসব উদাহরন দিয়েই নয় বরং এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিদের উপর জামাতের আইনজীবিদের যে আস্থা ছিলো তাও প্রমাণিত হয় জামাতের আইনজীবিদের-ই কথায়। যদিও সেটি বিচারপতি জহির আহমেদের পদত্যাগের পর। আগে করেনি কারন আগে প্রশংসা করলে দূর্নাম রটিয়ে এই ট্রাইবুনালের বারোটা বাজাবার চেষ্টা করবে কে? এই সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এখানে।


আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি যে আমাদের এই ট্রাইবুনাল একটা ওপেন ট্রাইবুনাল এবং এখানে শত শত সাংবাদিক, বিদেশী পর্যবেক্ষক, ডেলিগেটস, এই বিচার নিয়ে কনসার্নড অর্গানাইজেশন, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই এই ট্রাইবুনালে এসেছেন যথাযথ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক সংবাদ যেটির শিরোনাম ছিলো “হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সতর্ক করলেন ট্রাইবুনাল” সেখানে লেখা ছিলো-

অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ তিন দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে অাসেন এবং বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে বলেন, এখানকার বিচারপতিরা কোনও ধরনের চাপ ছাড়া, রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া এবং হুমকি ছাড়াই বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।

আপনার অবগতির জন্য আরো জানিয়ে রাখি যে-

এই বিচার শুরুর প্রাক্কালে এই বিচারের আইনটি, মানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন তথা সংযোজন, বিয়োজন কিংবা এর রুলস কিংবা রেগুলেশনেও কোনো ধরনের পরিবর্তন লাগবে কিনা এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এই উক্ত আইনের পরবর্তী পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনার জন্য গত ২১-০৫-২০০৯ সালে একটি অনুরোধ পাঠায় আইন কমিশনের কাছে।

আইন কমিশন এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৩৩জন বিশেষজ্ঞের কাছে এই আইনের উপর মতামত চায়। আসুন দেখি কাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল। আইন কমিশন বাংলাদেশের শীর্ষ আইনবিদ, একামেডিশিয়ানদের কাছে মতামত চেয়ে পাঠায়। মোট ৩৩ জন ব্যাক্তির কাছে পাঠানো আইন কমিশনের এই চিঠিতে যারা যারা উল্লেখিত ছিলেন তাঁরা হলেন-

১. বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন ২. বিচারপতি এ টি এম আফজাল ৩. বিচারপতি হাবিবুর রহমান ৪. বিচারপতি মোস্তফা কামাল ৫. বিচারপতি গোলাম রব্বানি ৬. বিচারপতি কাজি এবাদুল হক ৭. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৯. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১০. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ১১. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ১২. সভাপতি, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ১৩. সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ১৪. সভাপতি, ঢাকা বার এসোসিয়েশন ১৫. সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বার এসোসিয়েশন ১৬. ওয়ালিউর রহমান, পরিচালক, বিলিয়া ১৭. ব্যারিষ্টার টি এইচ খান ১৮. ব্যারিষ্টার রফিক উল হক ১৯. ড. এম এ জহির ২০. ব্যারিষ্টার খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ২১. ড. কামাল হোসেন ২২. ব্যারিষ্টার আমির-উল-ইসলাম ২৩. ব্যারিষ্টার মাহমুদুল ইসলাম ২৪. ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ২৫. ব্যারিষ্টার আবদুল বাসেত ২৬. ব্যারিষ্টার আজমালুল হোসেন ২৭. ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ২৮. ব্যারিষ্টার আখতার ইমাম ২৯. ব্যারিষ্টার শেখ রাজ্জাক আলী ৩০. ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক ৩১. ব্যারিষ্টার তওফিক নেওয়াজ ৩২. ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক খান এবং ৩৩. ব্যারিষ্টার খান সাইফুর রহমান।


লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যায় উপরের এই লিস্টে নাম রয়েছে জামায়াতের আইনজীবি জনাব আব্দুর রাজ্জাকের এবং বি এন পি পন্থী আইনজীবি জনাব টি এইচ খানের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হোলো সে সময় তারা আইন নিয়ে আইন কমিশনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কোনো রকমের মতামত দেন নি। অথচ এই আইনজীবিরাই পরবর্তীতে এই আইন নিয়ে দেশে এবং বিদেশে নানান সেমিনার, সভায় ক্রমাগত বিরুপ মন্তব্য করেছিলেন। আমার প্রশ্ন হোলো, যে সময় উনাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিলো সে সময় যদি মতামত দিতেন তবে হয়ত সে মতামতের ভিত্তিতে আইন কমিশন একটি রিপোর্ট জমা দিতেন বাংলাদেশ সরকারকে এবং তখন হয়ত এই মতামতের ভিত্তিতেই আইনটি নিয়ে ভাববার সুযোগ থাকত। কিন্তু অপিনিয়ন চাইবার সময় আইন নিয়ে কথা না বলে, পরে এই আইন নিয়ে সমালোচনা করাটা তো এক ধরনের দূরভিসন্ধি মূলক কার্যক্রমের-ই আভাস।

আমাদের এই ট্রাইবুনালের সাথে একটা স্পেসিফিক ধারনা জুড়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে ট্রাইবুনাল শুরু হবার অনেক আগ থেকেই। এই ধারনার নাম হচ্ছে “ফেয়ার ট্রায়াল” হচ্ছে না। এটা জামাতের ক্যাম্পেইনের ট্যাগ লাইন ছিলো এবং আছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিটা মূলত হোম ওয়ার্ক করে রাখতে চেয়েছে ট্রাইবুনাল শুরুরও অনেক আগে। তারা পৃথিবীর সব বড় বড় পি আর ফার্ম গুলোকে নিযুক্ত করেছে, সব চাইতে বেস্ট আইনী ফার্ম গুলোর সাথে কথা বলে রেখেছে, একাডেমিক, রাজনীতিবিদ, বুরোক্রেট, শিক্ষক তথা সমাজের সব স্তরের সাথে একটা সমন্বয় করেছে। সেটা দেশী এবং বিদেশী দুই ভাবে প্রোযোজ্য। সেদিক থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি কিংবা ঐ একি ভাবে পাল্লা দেবার জন্য যে আগ্রহ সেটি একেবারেই ছিলো না বললেই চলে। এর একটা কারন অবশ্য আছে। বাংলাদেশ সরকার যেই পার্টিকুলার ধারনার বশবর্তী হয়ে শুরুতে এবং আজ পর্যন্ত রয়েছে সেটি হচ্ছে আমাদের চলমান বিচার ব্যাবস্থার যে ধারা, ট্র্যাডিশন কিংবা যে ঘ্রাণ সেটিতেই নির্ভর করেছে। এটা সরকারের একটা ইগোইস্টিক প্রবলেমও ছিলো এই ভেবে যে, যদি দেশে বছরে হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে দেশীয় চলমান বিচার ব্যাবস্থায়, প্রসেস কিংবা প্রক্রিয়ার তবে এই ট্রাইবুনালো সেভাবে চলতে পারে। আর বিদেশী লবিইং, পি আর ফার্ম, লেখা লেখি এগুলো জবাব দেবার প্রয়োজন সরকার খুব একটা বোধ করে বলে মনে হয়না। খুব সম্ভবত দেশীয় ব্যাবস্থায় বিচার হবে আন্তর্জাতিক ভাবে রেকোগনাইজড অপরাধগুলোর, এই চিন্তার বা সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়েই। কিন্তু সরকার একটা ব্যাপার হয়ত বিবেচনায় আনলেও ট্রাইবুনালে সেটির প্রকাশ দেখাতে খুব একটা আগ্রহী হয়নি যে যাদের বিচার হচ্ছে এরা ৪২ বছর আগের তাদের নড়বড়ে অবস্থাটিকে ভেঙ্গে দেশের রাজনীতিতে কিছুটা হলেও স্থান করেছে এবং দেশের একটা অংশকে তারা ইতিহাসের ভুল পাঠ দিয়ে এই দেশেই লালন করে তুলেছে।

সুতরাং এদের একটা সুনির্দিষ্ট সমর্থক আছে, অর্থের ক্ষমতা আছে। এই ব্যাপারটা বিবেচনায় রাখতে পারত সরকার। তবে সরকার হয়ত সমর্থক, প্রভাবশালী, এসব বিষয় মাথায় না রেখে অভিযুক্তের বিচার হবে বা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবে আর ১০ জন অভিযুক্তের মতই এভাবেই ট্রিট করবার প্রয়াস পেয়েছেন। 

একটা ট্রাইবুনালের ফেয়ার ট্রায়াল কিংবা ইন্টারন্যশানাল স্ট্যান্ডার্ড বলতে আসলে কি বোঝায়? এটা কি বুঝে নেবার কিংবা ঘ্রাণ নেবার মত একটা ব্যাপার, কিংবা আমি মনে করে নিলাম, অমুক মনে করে নিলো, এমন কিছু? কিংবা আদৌ কি এই জাতীয় কোনো টার্ম একটা ধ্রুবকের মত কোথাও অবস্থান করে? এমন কোনো পরিমাপক কি আদৌ কোথাও রয়েছে যেখানে বলা হবে এই আইন মেনে চললে সেটি ফেয়ার, ঐ আইন মেনে চলে সেটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড? উত্তর হবে, না নেই।

ফেয়ার ট্রায়াল মূলত নির্ভর করে অভিযুক্তের অধিকার কতটা রক্ষিত হচ্ছে, একটা ট্রাইবুনালের যে নিয়মগুলো রয়েছে সেটা কতটুকু পুংখানুপুংখ ভাবে রক্ষিত হচ্ছে, এমন কোনো নিয়ম রয়েছে কি না যেটিতে কারো অধিকার খর্ব হবার সম্ভাবনা বিরাজ করে সর্বৈব ভাবে সেটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সর্বজনগ্রাহ্য যে মানবাধিকার চর্চা রয়েছে সেটির সাথে চলতে পারে। এখন এই উপাদানগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবয়বে ভিন্ন ভিন্ন দেশের এই জাতীয় ট্রাইবুনালে বিরাজ করে। কেননা অনেক সময় এসকল উপাদান একটি আইনে থাকলেও সেটির প্রকাশ ভঙ্গি কিংবা ব্যাবহার সেই দেশের প্রচলিত প্রক্রিয়ায় হয়। এটাতে দোষের কিছু নেই বলেই মনে করা হয়। আরেকটু ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে “কার্ডিনাল প্রিন্সিপাল ও ফেয়ার ট্রায়াল”, ন্যাচারাল জাস্টিস এগুলোর কথা যেগুলোর মূল সারমর্ম প্রিন্সিপাল হচ্ছে “ইকুয়ালিটি অফ আর্মস”।

এটার মানে হচ্ছে বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষেরই সমান সুযোগ থাকতে হবে তাদের অধিকার রক্ষায়। এটা হতে পারে বিভিন্ন অর্গানে। তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষী পরিচালনা সহ মামলার সকল ক্ষেত্রে। তারপরেও এতদিনের চর্চায় মূলত ফেয়ার ট্রায়াল হচ্ছে কি হচ্ছেনা, এই ব্যাপারটির সামান্যতম ধারনা পেতেও International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এর কিছু সুনির্দিষ্ট ধারাকে অনেকটা ধ্রুবকের মত ধরা হয়। আসুন সেই ধ্রুবকের সাথে আমরা আমাদের আইনটিকে একটু মিলিয়ে দেখি-
৩(গ) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে আমাদের ট্রাইবুনালের একটি তুলনামূলক উদাহরণ নীচে দেয়া হলোঃ [ লেখার এই অংশটুকুর মূল উৎস হচ্ছে ট্রাইবুনালের প্রিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তাঁর লেখা প্রবন্ধ "লেট দেয়ার বি লাইট" প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আমি সেটি অনুলিখন করেছি। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে।

১) এই আইনে অপরাধীকে দোষী প্রমাণের দায়ভার প্রসিকিউশনের যা বলা আছে ১৯৭৩ সালের আইনে ৬ নাম্বার চাপ্টার এর সাক্ষ্য অংশের ৫০ নাম্বার ধারায় । সুতরাং “the accused is presumed to be innocent until proven guilty” আইনের এই বিখ্যাত কথাটি সমুন্নত রয়েছে। সমগ্র আইনের কোথাও এই উক্তিটির বিরুদ্ধচারন করে কোনো ধারা নেই । এই কথা Article 14(2) of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এও বলা আছে।

২)Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR)এ যে অধিকারগুলোর উল্লেখ রয়েছে তা ICTA-1973 এর ক্ষেত্রেও খুব সুন্দর ভাবে রয়েছে । আসুন দেখা যাক-

ক) ICCPR এর আর্টিকেল ১৪(১) এ বলা আছে ফেয়ার এবং পাব্লিক হিয়ারিং এর কথা যা কি না যোগ্য , স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে হতে হবে । ICTA-1973 এর ক্ষেত্রে, ধারা ৬(২ক) এর ক্ষেত্রেও যোগ্য, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ট্রায়ালের কথা বলা হয়েছে । আবার ধারা ১০(৪) এ বলা রয়েছে , এই প্রসিডিংস হতে হবে পাবলিকলি এবং ট্রাইবুনাল যদি ঠিক মনে করে তবে ক্যামেরাও ব্যাবহার করা যেতে পারে ।
খ) ICCPR এর ১৪(৩) ধারায় বলা আছে যে, “Right to be informed promptly and in detail in a. language which he understands of the nature and cause of the charge against him” আবার এই কথা গুলোই বলা আছে ICTA-1973 এর ১০(১)(ক) , ১০(৩) এবং ১৬(২) ধারায়।
গ) ICCPR এর আর্টিকেল ১৪(৩)(খ) ধারায় বলা আছে যে , “Right to have adequate time and facilities for the preparation of his defence and to communicate with counsel of his own choosing . একনন আমরা যদি ICTA-1973 এর দিকে নিজর দেই, তাহলে দেখব যে, এই আইনের ১৭(২) ধারায় বলা আছে , “An accused person shall have the right to conduct his own defence before the Tribunal or have the assistance of counsel”
ঘ) ICCPR এর ১৪(৩)(গ) ধারায় বলা আছে যে, “Right to be tried without undue delay. ঠিক আমাদের আইন ICTA-1973 এর ১১(৩) এর (ক) ও (খ) ধারায় এই কথাগুলোই আরো ব্যখ্যা করে বলা আছে।
ঙ) ICCPR এর ১৪(৩)(ঘ) ধারায় বলা আছে , “Right of representation” এইদিকে আমাদের ICTA-1973 এর ১৭(২) ও ১২ ধারাতে স্পষ্ট করে এই কথাগুলো বলা আছে ।
চ) ICCPR এর ১৪(৩)(ঙ)ধারায় বলা আছে, “Right to produce and examine/cross examine witness”. ঠিক আমাদের ICTA-1973 এর ১০(ঙ) ধারা , ১০(চ),১০(ছ) এবং ১৭(৩) ধারাতে ঠিক ওই ICCPR বর্ণিত অধিকারগুলোর কথাই বলা রয়েছে।
ছ) ICCPR এর ১৪(৩)(চ) ধারায় বিনাখরচে অনুবাদকের কথা বলা হয়েছে । যা আমাদের ICTA-1973 এর ১০(২) ও ১০(৩) ধারাতে বর্ণিত রয়েছে।
জ) ICCPR এর ১৪(৩)(ছ) ধারায় “Right not to be compelled to testify against himself or to confess guilt” বলা হয়েছে । যা আমাদের ICTA-1973 এর ৮(৫) ও ১৮ ধারা দুইটি পড়লেই দেখা যাবে যে, এই অধিকার রক্ষিত হয়েছে ।
ঝ) ICCPR এর ১৪(৪) ধারায় আন্ডার এইজের ব্যাক্তির কথা বলা হয়েছে । যা বাংলাদেশের The Children Act-1974 খুব ভালো করেই রক্ষা করে । এই আইন নিয়ে ICTA-1973 তে কোনো বাঁধা নেই।
ঞ) ICCPR এর ১৪(৫) ধারায় “right to review the conviction and sentence” এর কথা বলা হয়েছে। যা আমাদের ICTA-1973 এর ২১ ধারাতে বর্ণিত রয়েছে।
ট) ICCPR এর ১৪(৭) ধারায় “right not to be tried for offences which has been tried before” এর কথা বলা হয়েছে । যা আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে ও উক্ত অধিকার সমুন্নত রয়েছে ।

উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে চেষ্টা করলাম যে , আন্তর্জাতিক ভাবে , Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এ বর্ণিত অধিকারগুলোই আসলে একজন মানুষের অধিকার যে কোনো ট্রায়ালে নিশ্চিত করে এবং International Bar Association যখন আমাদের ১৯৭৩ সালের আইন সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলো তখন এই অধিকার গুলো আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনে নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছিলো।

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে বুঝতে পারলাম যে , ICTA-1973 এর মাধ্যমে মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত হচ্ছে।

উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে চেষ্টা করলাম যে , আন্তর্জাতিক ভাবে , Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এ বর্ণিত অধিকারগুলোই আসলে একজন মানুষের অধিকার যে কোনো ট্রায়ালে নিশ্চিত করে এবং International Bar Association যখন আমাদের ১৯৭৩ সালের আইন সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলো তখন এই অধিকার গুলো আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনে নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছিলো।

এই প্রিসাম্পশন অফ ফেয়ারনেসের উত্তরটা এখানে শেষ করবার আগে আরো কিছু অধিকারের কথা বলে নেই- যেটা আমাদের আইনেই রক্ষিত আছে। এই রিসার্চটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের নিজের করা। আমি কেবল তা তুলে আমার করা অনুবাদ সহ- দেখে নেই এই ট্রাইবুনাল কি করে একটি ন্যায্য বিচারের ট্রাইবুনাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে। এর আগে আমরা দেখে নেই বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবি জনাব রফিক উল হক এই বিচার নিয়ে কি বলেছেন। তিনি বলেছেন-

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ নয় যারা এ কথাটি বলছেন তারা বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন পর মানবতাবিরোধীদের বিচার হচ্ছে। আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। যত দ্রুত বিচার হবে ততই দেশ ও জাতির জন্য ভাল হবে। বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীদের কঠোর সমালোচনা করে সুপ্রীমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক জনকণ্ঠকে এ কথা বলেছেন। এদিকে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে তদন্ত সংস্থা। তার বিরুদ্ধে ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীসহ তাদের নেতৃবৃন্দ বলে আসছেন, ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের ঐ বক্তব্য প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল হক আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল যে নিরপেক্ষ নয় তারা সে কথাটি কিভাবে বলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিকমানেরও। দুটি ট্রাইব্যুনালে যে ৬ জন বিচারক রয়েছেন তারাও নিরপেক্ষ বলে আমি ভাবি। বিএনপি জামায়াত এ কথা বলছে না কেন ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ না। ৪০ বছর পর বিচার শুরু হয়েছে। অনেকেই চাইছে বিচারটা বিলম্বিত বা বন্ধ করা।

এই বিচারের আইনে রক্ষিত অধিকার সমূহঃ

১) উল্লেখিত আইনের [International Crimes Tribunal Act-1973 (ICTA-1973)] 6(2A) ধারায় বলা রয়েছে যে এই আইনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাইবুনালকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হতে হবে। (1) Trial to be held in a fair, impartial and independent tribunal [Section 6(2A) of the ICTA],
২) বিচার দ্রুত সময়ে হতে হবে 11(3) (a) এবং উন্মুক্ত শুনানী হবে [Section 10(4) ICTA] ,(2) Expeditious [Section 11(3)(a)] and public hearing [Section 10(4) of the ICTA],

৩) অভিযুক্ত তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হবেন [Section 16], (3) Accused to know of the charges [Section 16] against him,
৪) মিথ্যা কিংবা হয়রানী মূলক অভিযোগ আনা থেকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরত থাকবেন [Rule 29(1)], (4) Prohibition of prosecution on frivolous charges [Rule 29(1)]
৫) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি যদি অপর্যাপ্ত মনে হয় বিচারকের কাছে তবে তিনি অভিযুক্তকে এই সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দিবেন। (5) Discharge an accused if the tribunal finds insufficient grounds to continue the trial [Rule 37]
৬) স্বেচ্ছারচারী মূলক ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। শুধু মাত্র বিধি ৯ এর ৫ অনুযায়ী ট্রাইবুনালের নির্দেশের মাধ্যমে একজন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে এই আইনের অধীনের কোনো অভিযোগে। (6) Prohibition of arbitrary arrest, as one can only be arrested or be detained only by the Order of the Tribunal issued under the ICTA and Rules of Procedure [Rule 9]

৭) জামিন চাইবার অধিকার রয়েছে। (7) Right to seek bail. [Rule 34(2)]
৮) সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি ব্যাক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হয় তবে সেইক্ষেত্রে অভিযুক্তের জামিন চাইবার অধিকার থাকবে।  Right to bail if investigation is not completed within a specified period [Rule 9(5)]
৯) নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন এমন বক্তব্যের ব্যাপ্যারে ব্যাক্তির সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। (9) Protection against self-incrimination [Rule 43(7)]
১০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ক্ষেত্রে ব্যাক্তির রক্ষাকবচ রয়েছে। (10) Safeguards related to confessional statements [Rule 25(2) & Section 14(2)],
১১) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় বিচারক সত্বা/ প্রতিষ্ঠান/আদালতের কাছে দিবেন। (11)Confessional statements must be voluntary and made before a judicial entity [Section 14(2)]

১২) ব্যাক্তি নির্যাতন, চাপ, ভয়ভীতি, হুমকির সম্ভাবনা রয়েছে এমন অবস্থা থেকে রক্ষাকবচ পাবেন বলা রিয়েছে বিধি ১৬(২) তে। (12) Safeguards against possibilities of torture or coercion, duress or threat of any kind. [Rule 16(2)]
১৩) প্রদত্ত সাক্ষ্য উভয় পক্ষের কাছে উন্মুক্ত হতে হবে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফরমাল অভিযোগ, সেইসাথে তদন্তকালীন সময়ের কাগজ-পত্র অভিযুক্ত পাবার অধিকারী হবেন। (13) Disclosure of evidence [Section 18(4)] and entitlement of having copy of formal charge together with documents collected during investigation,
১৪) নতুন কোনো সাক্ষ্য যদি রাষ্ট্রপক্ষ যোগ করতে চান তবে সেটি বিবাদী পক্ষকে জানাতে হবে। (14) Notice to the defense in case of inclusion of additional witnesses by the prosecution [Section 9(4)]

১৫) বিবাদী পক্ষকে তার অবস্থান বিষয়ে প্রস্তুতি নেবার জন্য যথেষ্ঠ সময় দিতে হবে। (15) Adequate time for preparing defense [Rule 38(2)]
১৬) কাগজ-পত্র অনুসন্ধানের অধিকার রয়েছে। (16) Right to inspect documents [section 16(2)]
১৭) আইনী পরামর্শক নিয়োগের অধিকার রয়েছে (17) Engaging legal counsel [Section 17(2)] ১৮) বিবাদী পক্ষের আইনী পরামর্শক না থাকলে রাষ্ট্র নিজ খরচে আইনী পরামর্শক নিয়োগ দেবেন। (18) Appointing defense counsel at state’s expense [Rule 43(1) and Section 12 of ICTA]
১৯) অভিযুক্ত নিজেই নিজের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। (19) Right to conduct own defense [section 17(2)]
২০) বাংলাদেশ বার কাউন্সিল রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ট্রাইবুনাল বিদেশী আইনজীবিকে এই ট্রাইবুনালে তার ক্লায়েন্টের পক্ষে লড়বার অনুমতি দিতে পয়ারে। (20) The tribunal may allow appearance of foreign counsel defense if Bangladesh Bar Council (i.e., The regulatory authority for practicing lawyers) permits so (Rule 42)
২১) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসবে সেটির ব্যখ্যা তিনি চাইতে পারেন। এই অধিকার তার রয়েছে। (21) Right of the accused to explain charges [Section 17(1)]

২২) ভাষা বুঝতে সমস্যা হলে দোভাষীর সুযোগ রয়েছে। (22) Availing services of an interpreter [Section 10(3)],
২৩) বিবাদী তার মামলা উপ্সথাপন করতে পারবেন এবং সেই সাথে তিনি বাদী পক্ষের আনীত সাক্ষীকে পালটা জেরা করতে পারবেন। (23) Full opportunity to present the case of the defense including the right to cross examine prosecution witnesses [section 17(3)],
২৪) বিবাদী পক্ষ তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী আনতে পারবেন। (24) Right to call their own defense witnesses [Section 10(1)(f)]
২৫) বিবাদী তার পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন। (25) Right of the accused to produce evidence in support of his defense [section 17(3)],
২৬) ট্রাইবুনাল প্রদত্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পুনঃসিদ্ধান্তের আবেদন করতে পারবেন। (26) Review of the decisions of the Tribunal [Rule 26 (3)],
২৭) ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। (27) Right to appeal against both conviction and sentence [section 21(1)]
উপরের অধিকার ও সুযোগ গুলো ছাড়াও অনেক সুযোগ সুবিধা এই আইনে রয়েছে।

যেমনঃ
২৮) অভিযুক্ত মামলা চলাকালীন সময়ে নির্দোষ বলেই বিবেচিত হবেন। (28) Presumption of innocence (Rule 43(2)
২৯) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করবার দায় বাদীর/ রাষ্ট্রপক্ষের। (29) Burden of Proof on prosecution beyond reasonable doubt (Rule 50)
৩০) বিচারিক কার্যক্রম যাতে দ্রুত হয়, সেই অধিকার রয়েছে অভিযুক্তের। (30) Right to speedy trial [Rule 43(5)]
৩১) নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন এমন বক্তব্য ও জবানবন্দীর ব্যাপ্যারে ব্যাক্তির সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। (31) Prohibition of self-incrimination or making confession [Rule 43(7)]

৩২) একই অপরাধে দুইবার শাস্তি না দেয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষা রয়েছে। (32) Protection against double jeopardy [Rule 43(3)]
৩৩) সাক্ষী এবং ভিকটিমের জন্য সুরক্ষার ব্যাবস্থা রয়েছে। (33) Provision of witness and victim protection [Rule 58A]
৩৪) বিচারিক কার্যক্রম প্রয়োজনবোধে গোপনে করবার ব্যাবস্থা রয়েছে। (যেসব ক্ষেত্রে সাক্ষীরা নিজেদের পরিচয় পরকাশ করতে চান না)(34) Provision for proceedings in camera [Rule 58A (3)]

৩৫) Failure to prove the plea of alibi and or the documents and materials by the defence shall not render the accused guilty.
উপরের আলোচনা থেকে খুবই স্পস্ট ভাবেই প্রতীয়মান হয় যে এই বিচার যে কতটা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু উপায়ে হচ্ছে। মূলত এর পর আর প্রশ্ন থাকাই উচিৎ নয় বলে আমি মনে করি। এই বিচারের ব্যাপারে আস্থার ব্যাপারে কয়েকটি “ট্রিকি” পর্যবেক্ষন করেছি আমি। সেখানে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের আইনজীবি ট্রাইবুনালের রায়ের পর উচ্চ আদালতে যাবার প্রাক্কালে বার বার বলেছেন, “আমরা আশা করি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাব”, মজার ব্যাপার হচ্ছে ফামা যেই বিদেশী সংস্থার কথা বলছেন সেসব বিদেশী সংস্থার এক্টি ইন্টারন্যশনাল বার এসোসিয়েশান এই বিচারের আইনের কিছু সংশোধন দরকার বলে রিকমেন্ড করবার পরেও তারা এটা স্পস্ট করে উল্লেখ করেছে যে- ‘broadly compatible with current international standards.’ [Conclusions’, IBA Legal Opinion, 29 December 2009,] [ এই ইংরেজী হরফে লেখা তথ্যটুকু নেয়া হয়েছে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের "লেট দেয়ার বি লাইট" প্রবন্ধ থেকে]

জিয়া ভাই বিচারপতিদের ইন্টিগ্রেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, আপনি অভিযুক্তদের মিস্টেইকেন আইডেন্টিটি নিয়ে কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে মিস্টেকেন আইডেন্টিটি কি জিনিস? আপনি কি এলিবাই ডিফেন্সকে রেফার করছেন?

কি অবস্থা ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনালের? 

এই ট্রাইবুনালের একমাত্র উদ্দেশ্য খেমার রুজদের আমলে শুধু খেমার রুজ শাষকদের বিচার করা। বিচারের আগেই নির্দিষ্ট হয়ে গেছে এই বিচারের গন্ডী, অপরাধ। সংকীর্ণ হয়েছে এই বিচারের অবস্থান। আপনি বিচার বিভাগের উপর সরকারী প্রভাবের কথা বলছেন। নীচের আমার পুরো লেখা পড়বার আগে নীচের এই আর্টিকেল গুলো পড়বার অনুরোধ করে যাচ্ছি। গুগলে এই আর্টিকেলের নাম কপি পেস্ট করে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন। উত্তর হয়ত সেখানেই পেয়ে যাবেন।

১] Cambodia’s Khmer Rouge Trials Are a Shocking Failure
২] Justice Squandered: Cambodia’s Khmer Rouge Tribunal
৩] Too little too late: the cambodian genocide trial
৪] Cambodia and the Khmer Rouge Trials in 2012 in review: Will the Court survive 2013? 
৫] At Opening of Cambodia War Crimes Trial, Anger, Doubt and Suspicion Linger
৬] CAMBODIA: Critics Fear War Crimes Court to Drop New Khmer Rouge Cases
৭] Cambodia’s Khmer Rouge Tribunal Draws New Criticisms
৮] Political Interference at the Extraordinary Chambers in the Courts of Cambodia

এই ট্রায়াল এতই হাস্যকর আর এতই অপরাধীদের জন্য স্বর্গ যেখানে মূল অপরাধীদের দেশের ভেতর পেয়েও ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। জীবনের যাবতীয় আরাম আর আয়েশে তাদের জীবনকে মন্ডিত করে দেয়া হচ্ছে। এমনিতেই ক্যাম্বোডিয়ার সরকার দুইটা-তিনটা বিচারে হাত দিয়েই আর বিচার আগাতে চাচ্ছেন না, তার উপর এই বিচারকে নানাবিধভাবেই তারা অসহযোগিতা করে যাচ্ছে।

Although case 002 started out with four defendants, only two would make it to the end of the trial. Khmer Rouge leaders Ieng Sary, who was deputy prime minister in charge of foreign affairs, and his wife, Ieng Thierith, who was the minister of social affairs, managed to escape justice. Ieng Sary was directly responsible for the death of several thousand Cambodian intellectuals whom he had lured from abroad to return home, in the name of helping to rebuild the nation after the Khmer Rouge took power in 1975. But until his arrest in 2007, Ieng Sary and his wife had long lived undisturbed in a luxury villa in Phnom Penh. Due to the length of the trial, Ieng Thirith, 80, was diagnosed with Alzheimer's, judged unfit to stand trial and released from the ECCC’s custody. Ieng Sary died before the court rendered a verdict. Rather than dying in disgrace, he was honored with an elaborate funeral ceremony in Malai, Banteay Meanchey, the former Khmer Rouge stronghold, and cremated with dignity. It was a devastating insult to the Cambodian victims who were brutally killed like beasts and pushed into mass graves during his Khmer Rouge regime. 

এই ক্যাম্বোডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে জাতিসংঘের আর্থিক সহায়তা এবং নানাবিধ সমর্থনে পুষ্ট একটা ট্রাইবুনাল। এর আগেও আমরা দেখেছি এই ধরনের ট্রাইবুনালে মূলত কি হয় শেষ পর্যন্ত। এই ধরনের ট্রাইবুনালে যে পরিমান অর্থ লাগে সেটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। এই পর্যন্ত ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনালে একজন কি দুইজনের বিচার পুরোপুরিভাবে শেষ করা হয়েছে তাতেই প্রায় ২০০-২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে। আর এই বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা তো অনেক পুরোনো খবর। উপরে ৮ নাম্বার পয়েন্টে যেই আর্টিকেলের লিঙ্ক টি দিয়েছি [ ওপেন সোসাইটি ইন্সটিউট] এটি মূলত একটি রিপোর্ট/ গবেষনলব্ধ প্রবন্ধ। এখানে ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনালের উপর রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে কি বলা আছে দেখে নিন-

Since the court’s launch, Cambodian court officials have come under considerable pressure to comply with indirect or direct government mandates—including hampering additional investigations and preventing the interviewing of certain witnesses. Cambodian officials within the ECCC have made efforts to resist political interference within the limited range of actions they believed were available to them. There are clearly members of the Cambodian legal profession working in the court who are deeply committed to seeing the ECCC act independently but who also see their options to effectuate that within the current system as extremely restricted. Nonetheless, the exercise of political influence by government actors at all levels in Phnom Penh has tainted the court’s operation and infringed upon its judicial independence. In the end, the ability of individual Cambodian actors to resist interference by senior political figures and still maintain a position within the Cambodian legal system is limited.

আর ক্যাম্বোডিয়া সরকার যেসব কারনে ইউনাইটেড নেশন্সকে ইনভলবড করেছে সেটিরও নানাবিধ আন্তর্জাতিক কারন রয়েছে। রয়েছে রাজনীতির কূটচাল। ক্যাম্বোডিয়ার বিচারিক কাঠামো, জুডিশিয়ারীর করুন দৃশ্য ফুটে উঠেছে Political Interference at the Extraordinary Chambers in the Courts of Cambodia শীর্ষক গবেষনা প্রবন্ধটি। সেখানে লেখা রয়েছে-

No period of Cambodia’s medieval or modern history can claim the existence of a strong judicial system. Hierarchical and authoritarian regimes, some more benign than others, governed Cambodia during the reign of the Angkor rulers from the ninth to the 15 th centuries. The periods of French colonial rule (1863 -1953) and subsequent independence (1953 to the early 1970s) saw little development of a modern independent judiciary. From 1975 to 1979, Cambodia’s judiciary, like other state institutions in the country, was decimated by the Khmer Rouge. Although a system of courts was provided for in Khmer Rouge documents, the regime made no efforts to establish it. Cambodians working as lawyers or judges when the Khmer Rouge came to power in 1975 were generally killed, like other elites or educated groups, if they were unable to flee or conceal their background.

In the years following the downfall of the Khmer Rouge, progress in building a strong and independent judicial system has been slow and beset with interruptions and inaction.From 1979 until 1993, neither law nor practice embraced an independent judiciary. The political system was modeled on Vietnamese communism, with the judiciary operating as a tool of the ruling government. In addition, Cambodia was experiencing various levels of civil war during this period and state institutions were barely operating. In 1993, following the 1991 Paris Peace Accords and the deployment of the United Nations Technical Assistance to Cambodia (UNTAC), a new constitution was adopted based on liberal democratic principles. The Constitution of Cambodia provides that “[t]he judicial power shall be an independent power” and “shall guarantee to uphold impartiality and protect the rights and freedoms of citizens.” Since 1993, some steps have been taken to give reality to the mandate of an independent judiciary,5 but much of this progress has been superficial. Recent evaluations by local NGOs, the UN, and the US State Department conclude that the Cambodian judicial system is marked by lack of political independence, limited capacity, and corruption.6 As summarized by the report of the Office of the High Commissioner for Human Rights in Cambodia in 2005: “The challenge which has faced the Cambodian authorities in the period since 1993 has been how to transform a weak, untrained, and impoverished judiciary, with a history of operating under political direction, into an independent judiciary as envisaged in the 1993 Constitution and as required by international law.” The problems facing the judicial system in Cambodia are multifaceted and much has been written describing them.8 Two general categories of failures emerge. First, there are problems related to a lack of resources, training, and development—evidenced by low salaries for judges, inadequate funding of judicial operations, and a permissive culture of bribery by parties wishing to influence judicial outcomes. While this experience influences the attitudes of Cambodian judges on the court, its impact has been somewhat attenuated by the exceptional funding that the court receives (compared to a domestic court) and the training and exchange of ideas that occurs between the national and international judges.

The second and more difficult problem is the lack of a meaningful separation of powers in Cambodia between the judiciary and the executive branch. Judges are hired and promoted at the discretion of the executive. The Cambodian judiciary is part of a hierarchical political system that prioritizes ongoing obedience and loyalty to the ruling elite as essential to economic and professional success. Judges in Cambodia who displease the government are punished or transferred and do not progress professionally. This ongoing system of patronage and political interference was of greatest concern to the UN as it evaluated whether Cambodian judges would be able to operate independently in any court established to try the Khmer Rouge. While Cambodian judges are under a technical legal obligation to act with independence, this principle gives way easily when political interests conflict.

ক্যাম্বোডিয়ার নিজস্ব বিচারপতি এবং আন্তর্জাতিক বিচারপতি থাকবার কারনে এবং এই বিচারের রুল এন্ড প্রসিজিওর যেভাবে সেট করা হয়েছে সেটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবেই এই বিচারকে মন্থর করে দিতে পারে। এটিও এই বিচারের আইনী প্রক্রিয়ার একটি দূর্বলতা। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়-

This situation puts pressure on the judges to reach decisions that are not split along Cambodian/international lines and, in the best of circumstances, may encourage thorough deliberation. However, to the extent divisions between the judges are split along Cambodian/international lines because of political pressure on Cambodian judges, the system leads to deadlock—and hence to significant control of the trial process by the Cambodian judges. This can be illustrated by an example. Assume that the prosecutors or defense counsel suggest that witness X, an influential government official, be called to testify at trial. If government leaders instruct the Cambodian judges that witness X should not be called, they will probably vote to deny the request, because their careers likely depend on following orders. If the international judges believe the testimony of witness X is relevant and they have concerns that the Cambodian judges are being forced by political pressure to reject the witness, they can vote in favor of calling witness X. This three-two vote leaves the court with no supermajority and, thus, no “decision” on the request. The rules provide no guidance as to how to proceed but potentially the witness would not be called because there is no affirmative decision in favor of it.

Another potentially relevant example would be a request of the prosecutors, over the objection of the defense, that Joint Criminal Enterprise (JCE) be applied as a theory of liability against an accused.32 If the Cambodian judges vote “no” and the international judges vote “yes,” no supermajority decision is achieved. The court would be at a deadlock with no guidance as to how to proceed. Assuming the result is that the motion to proceed with JCE does not prevail because it did not receive a supermajority vote, the minority vote of the Cambodian judges prevails—even if it was the result of political instruction and despite the lack of support from even one international judge. A contrasting example also leads to a deadlock: If the Cambodian judges vote as a block in favor of JCE and the international judges vote against it, the deadlock results in no decision and no JCE. Even if the judges split three to two along lines other than Cambodian/international, a deadlock results and no affirmative decision is possible. On the most critical decisions of the Trial Chamber, the supermajority voting requirement is only partially effective in its goal of countering political interference. For instance, if the concern is that the Cambodian judges are improperly influenced to acquit an accused in spite of adequate evidence of guilt, they can easily accomplish this goal regardless of any actions taken by the international judges to counteract the interference. Under the presumption quoted above, without four votes for a conviction, an accused is acquitted. If the Cambodian judges decide to vote together to acquit an accused, the votes of the international judges are effectively meaningless. However, notwithstanding their formal powerlessness, the international judges can, through the power of written dissenting opinions, make clear their concerns about the acquittal. The potential public disclosure of such dissents may be a deterrent against political control in some circumstance

আগেই বলেছি এই বিচারব্যবস্থার দৈন্যদশা এবং এর সংকীর্ণতার কথা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে এখন সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি ছাড়া অন্যান্য সম্ভাব্য অপরাধীদের বিচার করতেই আগ্রহী নয় ক্যাম্বোডিয়া সরকার। এই এটিচুড যেমন একটি দেশে অপরাধকে শক্তি যোগায় ঠিক তেমনি অপরাধীদের সাথে রিকন্সিলিয়েশন প্রসেসের কথা বলে ভিকটিমদের আরো প্রতিশোধপরায়ন করে তোলে এবং সমাজে দেখা দেয় অশান্তি ও স্পস্ট বিভাজন। এই বিষয়ে ক্যাম্বোডিয়া সরকারের অবস্থানও অত্যন্ত ভয়াবহ। ইনফ্যাক্ট নতুন অভিযুক্তদের ব্যাপারে এতটাই অনিচ্ছা দেখাচ্ছে ক্যাম্বোডিয়া সরকার যে তারা আন্তর্জাতিক বিচারপতিদের দিকে নানাবিধ সন্দেহের আঙ্গুল তাক করতেও পেছপা হচ্ছে না।

The dispute resolution process of the Agreement was invoked on December 1, 2008 by International Prosecutor Robert Petit in an effort to secure the cooperation of his Cambodian colleague, Chea Leang, to submit the names of five additional suspects for charging and judicial investigation in Case 003/004. Chea Leang refused to participate in this submission, citing budget constraints and claiming that additional investigations are inconsistent with the Agreement and would undercut the continuing need for reconciliation in Cambodia. She did not dispute the sufficiency of the evidence to support proceeding against the named persons. The manner in which this disagreement developed illustrates the complexity of the process designed to protect against interference and the potential for delay and manipulation that this built into it.

Cambodian Government Response to the Disagreement Process In the months following the filing of the disagreement by the international prosecutor, high-level government officials issued a series of public statements making clear their intention to prevent any additional investigations from going forward. On March 18, 2009, Prime Minister Hun Sen, in a speech at the Ministry of Education, Youth and Sports, expressed concern that charging additional suspects would undermine peace in Cambodia. In the same context he expressed disappointment that the Japanese government had in March, 2009 pledged $200,000 to the Cambodian side of the court because he hoped the ECCC would run out of money so that Cambodia could finish the trial by itself. Government spokesman and Minister of Information Khieu Kanharith stated that foreign judges were “dragging their feet” over issues like charging more suspects and that “they should just go ahead with the first few [trials] to show that [the court] is working…Because [foreign judges] have a lot of money, they can afford to drag their feet…The longer they drag their feet the more money they get.” Such statements add confirmation to suspicions that the Cambodian prosecutor was objecting to the proposed additional prosecutions to appease political powers.

এই ট্রায়ালে সরকারী হস্তক্ষেপ আর প্রভাব এতটাই ভয়াবহ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে যে মামলার সাক্ষীরাও এখন প্রভাবিত হচ্ছে সরকারী নির্দেশে। উল্লেখিত প্রবন্ধ থেকে আরপো জানা যায় যে-

The Agreement’s inadequacy in protecting against political interference was evidenced in a second example involving Case 002. International Investigating Judge Marcel Lemonde authorized for public posting on October 7, 2009 information about summonses sent to six highranking government officials and issued over his single signature. The summonses sought the cooperation of these six officials in giving testimony to the investigating judges about facts at issue in Case 002. Compliance with court summonses is mandatory, yet none of the served individuals agreed to appear as requested. If a person fails to comply, the investigating judge is authorized to “issue an order requesting the judicial police to compel the witness to appear.”

The government of Cambodia has an express obligation under the Agreement to assist the investigating judges in actions, including the “service of documents” such as orders to bring a witness to provide testimony. Nonetheless, the response of government officials to the summonses was swift and explicit. A government spokesperson stated, “except for individuals who volunteer to go, the government’s position is ‘no’ to this, even if they are called as witnesses,” and that foreign officials involved in the tribunal “can pack up their clothes and return home” if they are not satisfied. This direct endorsement of the refusal of witnesses to cooperate with court orders is a direct violation of Cambodian government commitments under the Agreement. This example reveals yet another flaw in the operation of the provisions in the Agreement to protect against political interference. If when faced with evidence of interference, international officials of the court delay or are unwilling to invoke the protective provisions, they become complicit. Here, in spite of clear evidence of political interference with the appearance of witnesses, the international investigating judge chose not to take further action to seek enforcement of the summonses.

মোট কথা ক্যাম্বোডিয়ার অফিসিয়াল কর্মকর্তারা সু-স্পস্ট ভাবে জানিয়েই দিয়েছেন যে ৫ জন অভিযুক্ত ছাড়া বাকীদের বিচারে তারা একেবারেই আগ্রহী নয় এবং এই ব্যাপারে তারা কোনো রকমের সাহায্যই করছে না। ইতিমধ্যেই উপরে দেখিয়েছি যে ক্যাম্বোডিয়ার একজন মন্ত্রী কিভাবে এই বিচারে আরো অভিযুক্ত হওয়াটাকে বিচারপতিদের পকেট ভরবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মূলত শুরু থেকেই একটা সংকট এই বিচারের ক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছে এবং সেটি হচ্ছে ন্যাশনাল আর ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন প্রসিজিওর, আইনী ধারনা, নিজস্ব আইনী ভাবনা, আইনী প্যাটার্নের ইগোইস্টিক ক্ল্যাশ। এটা একেবারের বিচারের শুরু থেকেই ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিলো। ক্যাম্বোডিয়ার পক্ষে এত বড় বিচার একা করা সম্ভব হয়নি এবং বিচারিক কাঠামোর নানাবিধ দূর্বলতার কারনেই এই ধরনের মিশ্রিত বিচার করতে হয়েছে ক্যাম্বোডিয়ার। আর সেই হিসাবে বাংলাদেশ একটা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ হিসেবেই ১৯৭২ সাল থেকেই দালালদের বিচার শুরু করেছিলো তাদের সেই বিদ্যমান কাঠামোতেই। ইনফ্যাক্ট ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন যখন বাংলাদেশ প্রণয়ন করে তখন এই অপরাধের সম্পর্কে অনেক উন্নত দেশ জানতোই  না। বাংলাদেশ গত ৪৩ বছরে বিচারিক অবস্থান থেকে যেই উৎকর্ষ সাধন করেছে এটা আসলেই আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। ক্যাম্বোডিয়ার তৎকালীন ভঙ্গুর অর্থনীতি আর বিচারিক কাঠামোর অপ্রতুলতাই কিন্তু অন্যতম একটা কারন এই বিচার ইউনাইটেড নেশন্সের সাহায্যে যৌথভাবে করা। সেইসাথে মার্কিন, ইঙ্গ মদদ তো বরাবরের মত ছিলোই।

সরকারের সাথে ইউনাইটেড নেশন্সের স্নায়ু যুদ্ধ, দেশের আদালতের সূপ্রীমেসী, আইনের সূপ্রীমেসী তথা বিচারকদের ক্ষমতা, নানা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ডেডলক, রুলসের ব্যাখ্যাহীনতা, সরকারের হস্তক্ষেপ, বিচারকে পরিপূর্ণভাবে না হতে দেয়া, সব মিলিয়ে একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান এই ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনাল নিয়ে। উপরন্তু ২০০৯ সালের শেষের একটা হিসেবে দেখা গেছে এই বিচার করতে একটি মামলাতেই সে সময়ই ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে আর ২০১৪ তে এসে সেটির পরিমাণ কত তা পাঠক নিজেরাই অনুমান করে নিন।

সেই হিসেবে আমরা আমাদের নিজস্ব আইনে, নিজস্ব আইনী ব্যাবস্থায়, দেশের সংবিধান, আদালত, কাঠামোর উপর সকল আস্থা রেখে মাথা উঁচু করে একটা বিচার করছি। এইসব ক্ষেত্রে সমালোচনা তো থাকবেই। এই বিচারকে অনুসঙ্গ করে জাতিসংঘ আর তাদের পালিত বিচারপতিরা কিছু কামাতে পারেনি, এই বিচারকে কেন্দ্র করে মার্কিন আর ঈঙ্গ রক্তচক্ষু আমাদের দিকে ফিরতে পারেনি, এই বিচারকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক একটা ব্যবসা ফেঁদে বসেনি সুতরাং এই বিচারকে নিয়ে সমালোচনা তো হবেই। জামাত ভাতের মত টাকা ছিটিয়েছে সুতরাং আন্তর্জাতিক অর্গানাজেশনগুলো তাদের মিশনে নামবে, সমালোচনা করবে এটা নতুন কিছু নয়।

আমাদের ট্রাইবুনাল নিয়ে কোনো টাকা ছাড়াই সত্য কথা লিখেন সব বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। ওয়াশিংটন পোস্টে Paulo Casaca [founder and executive director of the South Asia Democratic Forum] বলেন,

Many of those who opposed the tribunals when they started have honestly observed them as they have progressed and now have a positive impression of them and the honest, straightforward way they have done their work. Stephen J. Rapp, U.S. ambassador at large for war-crimes issues, duly concluded in 2011 after three visits to the country: “We have full trust in the good intentions of ICT prosecutors and judges. I think these are enough for fair justice.” Based on my own observations, it is fair to say the ICT compares favourably with other tribunals being conducted around the world, particularly the one in Iraq that followed the U.S.-led operation there.

The question is whether or not the crimes of which the accused has been convicted deserve the maximum penalty allowed under the law. In this regard, my position is definitely yes. Unfortunately, those who support those accused of perpetrating genocide against the Bangladeshi people have continued to try to derail the proceedings. They have done so by launching indiscriminate terrorism campaigns against civilians and targeted assassinations of court witnesses and members of the judicial system. During a recent meeting I had with one of the prosecutors of the tribunals, he said he was receiving death threats from these individuals. He told me these threats were widespread, but would not change his course of action.

তিনি ওয়েস্টার্ন প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে আরো বলেন যে,

In the West, however, they are waging a multimillion-dollar campaign of denial and propaganda trying to portray themselves as the innocent victims of political manoeuvring. Particularly active in this lobbying campaign has been Human Rights Watch. According to some inside the judicial system, it has waged the most aggressive and least scrupulous attacks against the Bangladeshi court proceedings. It is fascinating that this group would be standing up for those who have been convicted of murder and rape rather than their victims. Even more surprising, I understand that representatives of the organization have never actually visited the tribunals to establish a basis for its criticism.

এই কোর্টের মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি এও বলেন যে এটি সর্বোত্তোম মানের কোর্ট যা অন্য কোর্টকেও ছাড়িয়ে গেছে।

The Western world should not fall prey to this sort of campaign. Indeed, any comparison of Bangladesh tribunals with the principles, methods and results of recent international experiences of trials on crimes against humanity such as Cambodia, Cameroon, Iraq or Rwanda will demonstrate that the Bangladesh tribunals are comparable and even exceed the standards of these other proceedings. The Pakistani butchery committed in 1971 continues to haunt the Bangladeshi people. The tribunals are an important step toward bringing them the respect and humanity they were denied before.

শুধু তাই নয়, খোদ ইন্টারন্যশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি স্যাং হিউইন সং কি বলেন এই ট্রাইবুনাল নিয়ে-

In December 2009, ICC President Mr Justice Sang-Hyun Song expressed his full confidence in the ability of the Bangladeshi legal system to address crimes identified under ICTA. Justice Song stated, “The ICC has no room to intervene in war crimes committed in 1971. Furthermore, he reiterated that the ICC‟s jurisdiction covers crimes committed after the institution’s establishment in2002. Justice Song maintained that the ICC did not override national jurisdiction. It is therefore evident in this particular case that the provisions of the ICC shall not override the jurisdiction of the Bangladesh legal system.
[সূত্রঃ The Daily Star, Dhaka to ratify Rome Statute of international court before March‟ Foreign Minister tells ICC President‟ (Tuesday, December 8, 2009).এবং New Age, ICC envisages Bangladesh’s role in global campaign for rule of law Bangladesh’s justice system capable enough to hold trial of war crimes: Song Tuesday, December 8, 2009]

পৃথিবীর এই জাতীয় অন্যান্য ট্রায়াল কি সমালোচনার বাইরে ছিলো?

সহজ কথা উত্তর হচ্ছে, না। কোনো ট্রাইবুনালই সমালোচনার বাইরে ছিলো না। আপনারা জানেন যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বার বার এই বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে যে এই ট্রাইবুনাল বায়াসড এবং এই ট্রাইবুনাল তারা চায় না। তারা চায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অধীনে বিচার। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ১৯৯৮ সালের আগে সংঘঠিত কোনো অপরাধের বিচারই করতে সক্ষম নয় তারপরেও তারা এই দাবি করে। সে যাক, সম্প্রতি এই আন্তর্জাতিক আদালত একটি মামলার রায় দিয়েছেন যেটি সর্বাধিক পরিচয় পেয়েছে “লুবাঙ্গা ট্রায়াল” হিসেবে। (সূত্র:http://bit.ly/w1wB76)

আপনারা শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন এই মামলার রায় নিয়ে শুধু ডিফেন্স পক্ষ নয়, পৃথিবীর অনেক বড় বড় আইনবিদ, এই বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ বলেছেন এই আদালতের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। সেখানে প্রশ্ন অভিযোগ উঠেছে। সেখানে প্রশ্ন উঠেছে যে আসামী লুবাঙ্গার বিরুদ্ধে যে সাক্ষী আনা হচ্ছে সে সাক্ষীদের এবং এই সাক্ষীদের যিনি প্রশ্ন করেছেন (ইন্টারমিডিয়ারিস) তাদের সকলকে অর্থের বিনিময়ে কেনা হয়েছে, পরবর্তীতে যখন এই ইন্টারমিডিয়ারিস দের পরিচয় প্রকাশ করবার জন্য আদালত নির্দেশ দিলো তখন প্রসিকিউটররা সেটি প্রকাশ করতে অস্বীকার করে এবং দুই দুইবার মামলা বন্ধের উপক্রম হয়। এছাড়াও লুবাঙ্গার বিচার ৬ বছর ধরে চলছে এই ব্যাপারেও তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ আসে, একপক্ষীয় তদন্ত, প্রসিকিউশনের পারদর্শিতা কিংবা তারা সব অপরাধের বিরুদ্ধে চার্জ আনেনি ফলে তারা সত্যকারের ভিক্টিমদের সাথে প্রতারণা করেছে এমন সব অভিযোগ প্রকাশ হতে থাকে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এই মামলায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, যেটি আমাদের দেশের এই স্বাধীনতাবিরোধীদের সবচাইতে বড় আস্থার স্থান সেটি সম্পর্কেও এখন অভিযোগ উঠছে। সত্য কথা বলতে পৃথিবীর কোনো ট্রাইবুনালই আসলে সমালোচনার বাইরে ছিলো না।

আরো কিছু সমালোচনার চিত্রঃ

১) জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের উদ্যোগে রুয়ান্ডাতে ১৯৯৪ সালে সঙ্ঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের ট্রাইবুনাল শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সালে। মোটামুটি ভাবে বলা যায় এই বিচার শেষ হয়েছে ২০১২ সালে তবে কেউ কেউ বলছেন আরো কয়েক জনের বিচার করা হতে পারে যেটি শেষ হতে ২০১৪ সাল হয়ে যেতে পারে। এই বিচার অত্যন্ত স্লো হচ্ছে এই অভিযোগ বার বার তোলা হয়েছে। যদিও এটি ইউ এন-এর সরাসরি হস্তক্ষেপে বিচার চলেছিলো। অর্থও লেগেছে প্রচুর, সময়ও লেগেছে আবার সমালোচিতও হয়েছে।

২) ১৯৯১ সাল থেকে ইয়াগোস্লোভিয়াতে সঙ্ঘঠিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অপরাধের জন্য নেদারল্যান্ডের হেগে জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ট্রাইবুনাল গঠিত হয় ১৯৯৩ এর মে মাস থেকে। ২০১৩ তেও ৭টি মামলা চলছিলো। এই পর্যন্ত গত ২০ বছরে বলার মত ৯৭ টি মামলা নিষ্পত্তি করতে পেরেছে এই কোর্ট। জাতিসঙ্ঘের অধীনে বিচার হবার পরেও এই ট্রাইবুনাল অসংখ্য সমালোচনা ফেস করেছে। যেমন- এই ট্রাইবুনাল রাজনৈতিক, প্রচুর খরুচে ট্রাইবুনাল, অকার্যকর, বন্দীদের টর্চার করা হয়, অমানবিক আচরন করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। মিলোসোভিচের মৃত্যু নিয়েই এই ট্রাইবুনাল অনেক সমালোচিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মিলোসোভচের আইনজীবি ছিলেন জনাব স্টিভেন কে কিউসি, যিনি কিনা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের অভিযুক্তদের পক্ষেও ওকালতি করেছেন এবং তার চেম্বারের একজন টবি ক্যাডমেন।

৩) ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিয়নে সঙ্ঘঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রেক্ষিতে ২০০২ সালে সিয়েরা লিওন সরকার এবং জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় গঠিত হয় স্পেশাল কোর্ট। প্রতি পদে পদে এই বিচার সমালচিত হয়েছে এটি আমেরিকার চাপে বিচার হয়েছে কিংবা হচ্ছে এই বলে। বলা হয়ে থাকে আমেরিকা সিয়েরা লিওনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করবার জন্যই এই বিচারের নাটক জাতিসঙ্ঘঘ দিয়ে সাজিয়েছে।

পৃথিবীতে গণহত্যার বিচারের জন্য কোনো বিচারই আসলে সমালোচনার বাইরে ছিলো না। হোক সেটি ইউনাইটেড নেশন্সের উদ্যোগে কিংবা নিজেদের দেশে গঠিত কোনো নিজস্ব ট্রাইবুনাল (যেমন বাংলাদেশ, কানাডা, ইসরাইল) নুরেমবার্গ, ম্যানিলা, টোকিও, আইকম্যান ট্রায়ালের সমালোচনার কথা তো সবাই জানেনই। উপরের আলোচনার পরে আরো সম্পূরক ভাবে বলা যেতে পারে যে, ইয়াগোস্লোভিয়া ট্রায়ালে একের পর এক সমালোচনা করেছেন প্রফেসর মাইকেল পি শার্ফ,জেমস স্লোয়ান,ট্যাভেরনিয়ার, জিওফ্রে রবার্টসন কিউ সি, ডেইলি মেইলের জন লাফল্যান্ড সহ আরো অসংখ্য ব্যক্তি। রুয়ান্ডা ট্রায়ালের সমালোচনাকারীদের মধ্যে আছেন প্রফেসর জেরেমি সারকিন, এরিন ডেইলি, ক্রিস্টোফার যে লি মন, ক্রিস্টিন এম ভেন্টার, ড.ফিল ক্লার্ক সহ অনেকেই। সিয়েরা লিওনের আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ভ্যালেরি উস্টারভেল্ট, শ্রীরাম চন্দ্রলেখা সহ বহু স্কলার। আর কম্বোডিয়ার ট্রায়াল নিয়ে সেইগফাইড ব্লাঙ্ক, OSF সহ অগণিত সমালোচনা চলছে ইচ্ছেমত। অথচ এই বিচার গুলো ছিলো জাতিসংঘের তত্বাবধান ও তাদের সাহায্যে গঠিত বিচার।

এতে করে কি সেই বিচার প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে? থেমে গিয়েছে? উত্তর হচ্ছে, না… যায়নি। আমাদের দেশে গঠিত ট্রাইবুনাল নিয়েও চলছে এমন ফালতু সমালোচনা ও জ্ঞানপাপীদের দৌঁড়-ঝাঁপ। আপনি যদি আজকে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে অভিযোগ আসবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যদি বসে থাকেন, তবে অভিযোগ আসবে বসে আছেন কেন? যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তবে অভিযোগ আসবে, “এত ভালো ভালো না কিন্তু”, মোট কথা সমালোচনাহীন কোনো কর্মই আজ পর্যন্ত সম্পাদিত হয়নি। সুতরাং এসব সমালোচকদের সমালোচনা ও অপরাধীদের বান্ধবদের অসার বক্তব্য আসতে থাকবেই। ট্রাইবুনাল যতক্ষণ তার রাস্তামত চলতে থাকবে আইন ও বিধি মেনে এবং রাষ্ট্র যতদিন আইনমাফিক ও প্রয়োজনমত তার দায়িত্ব পালন করবে ততক্ষণ কারো কিছু করবার ক্ষমতা নেই।

পরিশেষঃ

জিয়া ভাই মূলত ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনাল আর বাংলাদেশে চলমান ট্রাইবুনাল যেই “ডোমেস্টিক” ট্রাইবুনাল এই থিম থেকে লিখবার প্রয়াস পেয়েছেন সেটা আসলে বেশ অদ্ভুত একটা অবস্থান। নিজস্ব আইনে কারো সাহায্য ছাড়া ট্রাইবুনাল এর আগেও হয়েছে এবং সেটি হয়েছে কানাডাতে মুনায়েঞ্জার বিচার আর ডেনইমার্কে রেফিক সেরিকের বিচার। এই দুইটি ট্রাইবুনাল এত উন্নত দেশে হয়েও সমালোচনার বাইরে কিন্তু কখনোই ছিলো না। জিয়া ভাই যেই ক্যাম্বোডিয়ার ট্রাইবুনালের কথা বলে এই ট্রাইবুনালকে একহাত দেখে নেবার চেষ্টা করেছেন এবং যেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে সেই পুরো অবস্থানটাই কতটা খেলো সেটা আমি আমার লেখাতেই দেখিয়েছি। জিয়াভাই আইনের ছাত্র নন বলেও যে সাহস দেখিয়েছেন এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখবার সেটিওর জন্য তাঁকে আমি আসলে কোনোভাবেই অভিনন্দন দিতে পারিনা, যেমন পারিনা সাঁতার না জেনে সমূদ্রে ঝাঁপ দিয়ে বীরত্ব দেখাবার ক্ষেত্রে। একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যেটি নিয়ে নানা কথা চাউর হয়েছে পক্ষে এবং বিপক্ষে তেমন একটা টপিক নিয়ে লিখতে হলে সামান্য বেসিক জানা দরকার। ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনাল একটা সংকীর্ণ, ক্ষুদ্র পরিসরের ট্রাইবুনাল। এটার ব্যাপ্তি এতই সুনির্দিষ্ট এবং এর পরে ক্যাম্বোডিয়া সরকার এই বিচার মাত্র কয়েকজনে করে কিংবা করবে বলে সীমাবদ্ধ করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। এর ফলে যে ট্রমা হিল করবার কিংবা যেই আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার কথা জোরে শোরে উঠছে সেটি নিতান্তই হাস্যকর। ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এবং ইউনাইটেড নেশন্সের কর্মকর্তাদের যেভাবে অসহযোগিতা করে দূর্নাম কুড়িয়েছে সেটি বেদনাদায়ক এবং এই জাতীয় বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অপরাধকেই মূলত আরো উৎসাহ প্রদান করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ব্যাপ্তি অত্যন্ত বিশাল। পৃথিবীর অন্য কোথাও থেকে অপরাধী আন্তর্জাতিক অপরাধ করে এসে বাংলাদেশে লুকোলেও এই আইন দিয়েই সেই ব্যক্তির বিচার সম্ভব আর এই এই আইনে সকল অপরাধীর বিচারের কথাই বলা হয়েছে হোক সেটি যে কেউ যেখানে ক্যাম্বোডিয়ার বিচার কাদের বিরুদ্ধে, কোন পক্ষের বিরুদ্ধে হবে তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে করে এক্টি সুনির্দিষ্ট দলের উপরেই কেবল মাত্র অপরাধ ফোকাসড হয় এবং অন্যান্য অপরাধীরা ওই দলে ওই সময় না থাকার কারনে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাবার সুযোগ পায়। ক্যাম্বোডিয়ার সরকার যে অভিযুক্তদের বিচার করবে বলে শুরুতেই স্থির করেছে তার বাইরে যাবার সাধ্য আর কারো নেই সুতরাং অন্যান্য অপরাধীরা ভিকটিমদের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে একটা ইম্ব্যালেন্স প্রক্রিয়াই তৈরী করে কেবল, আর কিছু নয়। এতে করে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠার নাম করে মূলত আইনের অপঃশাষনই প্রতিষ্ঠা পায়।

আমি মনে করি ক্যাম্বোডিয়া ট্রাইবুনালের সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল উপরের আলোচিত ওই বেসিক কারনে দাঁড়াতেই পারেনা আর কম্পেয়ার করা অনেক দূরের ব্যাপার। জিয়া ভাই হয়ত ডোমেস্টিক শব্দ শুনে করে ফেলেছেন না বুঝেই, এই জন্য হয়ত জিয়াভাইয়ের লেখাটাকে ইগনোর করা যেতো কিন্তু জিয়া ভাইয়ের লেখার সূত্র ধরে অনেক সাধারণ মানুষ একটা ভুল ধারনা পেলো, বিরূপ ধারনা পেলো এই ব্যাপারটি মেনে নিতে না পারবার কারনেই এত কথা বলতে হোলো।
আশা করি ভুল ভাঙবে মানুষের এবং অযাচিত কম্পেয়ার কম্পেয়ার খেলায় না মেতে বাংলাদেশের ট্রাইবুনাল যে একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন, তার কাঠামো, বিচারিক ব্যাবস্থা এবং সকল ধরনের অধিকার অক্ষুণ্ন রেখেই চলছে এটা মেনে নিতে আর কষ্ট হবে না।

No comments:

Post a Comment