Wednesday 1 July 2015

হুমায়ুনের হাতে নিহত একজন


এক
সব রাতেই আমার নানান ধরনের স্বপ্ন দেখা হয়। এইসব স্বপ্নের কোনো কুল কিনারা নেই। কখনো তাহের ভাইয়ের দোকানের চা খাচ্ছি অনেক নাম না জানা মানুষের সাথে বসে, তারপর মুহুর্তেই লন্ডনের ট্রাফেলগার স্কোয়ারের অসংখ্য মানুষের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছি একা একা কিংবা পরীক্ষার হলে একটি পাটিগনিত কোনোভাবেই মিলাতে পারছিনা, কামরুল স্যার রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি প্রায় সময়ই আমার বন্ধু তাওহীদকে দেখি, যে বন্ধুটি ভালোবাসায় ব্যার্থ হয়ে স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিলো না ফেরার দেশে এক ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে। কোনো এক অজানা কারনে আমি তাওহীদের সাথে অর্ণবকেও দেখি। অর্নব ঠিক আমার পরিচিত কেউ নয়। তাকে আমি চিনিনা। পত্রিকায় পড়েছিলাম আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে। কোন শহর তা আর মনে নেই, কিন্তু অর্ণব নামে এক ৪ বছরের শিশুকে খুন করে ফেলে রেখে গিয়েছিলো খুনীরা। তাঁর ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিলো দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। কি এক অদ্ভুত কারনে এত অসংখ্য ঘটনা, দূর্ঘটনা, স্মৃতি, ভালোবাসা, আনন্দের ফাঁক গলিয়েও এই ১২ বছরে আমি অর্ণবকে ভুলে যাই নি।


সিগম্যান্ড ফ্রয়েডের “দি ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস” বইটির অনুবাদটি খুব আগ্রহ নিয়ে একবার পড়া শুরু করেছিলাম এইসব স্বপ্ন দেখবার মূল কারন গুলো জানতে। অবচেতন মন আর সজ্ঞান মনের অন্টোলজিকাল ভাষ্য। কত অজানা কথা, কত ভাবনা আর কল্পনার কি অসাধারণ ব্যাখ্যা। ফ্রয়েড যাকে নাম দিয়েছিলেন “সাইকোলোজিকাল টেকনিক” হিসেবে।

হুমায়ুন আহমেদ যে রাতে মারা গেলেন সেই রাতটি আমার জীবনে সবচাইতে দীর্ঘ রাত হবার কথা ছিলো। কথা ছিলো জীবনের সবচাইতে দুঃখময়, দুঃস্বপ্নময় ও বেদনার ক্লান্তিকর একটি রাতের। কিন্তু কোনো এক আশ্চর্য কারনে সে রাতটিতে আমার ভালো ঘুম হয়েছে। স্বপ্নহীন এক সধারণ রাতের মতই। কেন স্বপ্ন দেখিনি এটির ব্যখ্যা আমার জানা নেই। হয়ত যে ছায়াতে সারাটি জীবন একাকার হয়ে গিয়েছে কিংবা যে ছায়াতেই পথ চলেছি সমস্ত মুহূর্ত সেটি সরে যাবার পর সেই ফাঁকা জায়গাটি প্রবল বেদনায় অভিমানী হয়ে থেকেছে। কিছু বলতে চায়নি সম্ভবত। ক্যান্ডিফ্লজ খাবার পর সেটি যেমন মুখ গলিয়ে চলে যায় চট করে আর রেখে যায় হাতের ওপর কিছু আঠালো দ্রবণ ঠিক তেমনি হুমায়ুনের এমন অসংখ্য স্মৃতি আমার শরীরে, আমার মগজের প্রতিটি কোষ আর গ্রন্থিতে মিশে আছে একপক্ষীয় স্মৃতি হিসেবে এক তীব্র দ্রবণের মতন। তারপরেও হয়ত নামহীন কোনো অভিমানে সে রাতটি কেটেছে আমার স্বপ্নহীন।

দুই
শ্যামলীতে আমি যেখানে বড় হয়েছি সেখানে অনেক আগে আমাদের বাড়িটি ছিলো টিনের। বৃষ্টি এলে সেখানে ঝম ঝম আওয়াজ হত। আমাদের বাড়ীটির আশে পাশে ছিলো অসংখ্য গাছ, পাখি, ঘাস, ফুল, ফল। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় সেটি। হুমায়ুন আমাকে সেখানেই বেড়ে তুলেছেন। হুমায়ুনের কবি বইটির মত “সাজ্জাদ” হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কবিতা লিখি, কবিতা পড়ি। কবিতা এসে ভর করেছিলো আমার উপর। নীল মানুষের “রঞ্জু” হয়েছিলাম একবার। “অন্ধকারের গান” পড়ে কতবার মিজান সাহেবকে মনে হয়েছে আমার বাবার মতন। সংসারের ভারে নুয়ে পড়া একজন। ক্লান্ত অবষাদগ্রস্থ। মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছে হোতো বুলুর মত হারিয়ে যাই, তারপর অলীকের মত কেউ এসে আমাকে খুঁজুক। না পেয়ে বেদনাহতের মত ফিরে যাক। আমি মনের গহীনেই হয়ত পাশের বাসার সেই তরুনীকেই অলীক ভাবতাম। একটা লাল রঙ্গের টুকটুকে গাড়িতে করে যে চোখের সামনে দিয়ে যেত আর বাড়িয়ে দিত আমার দীর্ঘঃশ্বাস। 

আমার ঘর কতবার হয়েছে হলদে পৃথিবী, কতবার পা থেকে জুতো চলে গিয়েছে, দীর্ঘ দিন আমি নির্বাক ছিলাম “ময়ুরাক্ষীর” মজিদের মতন। ভেবেছিলাম গাছ হয়ে যাব। প্রথম প্রেমের ব্যার্থতায় অসংখ্যবার এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম হাসানের মতন। আহ, তিতলী...মেঘ বলেছে যাব যাবো’র তিতলী। কত রাত কেঁদেছিলাম আমি হাসানের জন্য? হাসান কি আমার বন্ধু ছিলো? ভাই কিংবা আপনজন? তারপরেও অনুমতির বালাই না করে হাসান হয়ে উঠেছিলো আমার আপনজন। আমার সুহৃদ।

এই যে উপরে লিখলাম প্রথম প্রেমের ব্যার্থতা, এটি একটি মিথ্যে কথা। আমি ব্যার্থ হতেই চেয়েছিলাম। হুমায়ুনের চরিত্ররা যেমন প্রবল কষ্ট পায়, তারপর বাঁচাতে আসে অলৌকিক ভালোবাসা, আবার যেমন হাত বাড়িয়ে দেয় রূপা’রা, আমি কি অবচেতন মনে তাই চেয়েছিলাম? আমি কি ভেবেছিলাম এমন করে প্রেমিকারা চলে যায়, তারপর প্রেমিক দুঃখ পায়, তারপর প্রেমিক কষ্ট পায়, তারপর একদিন প্রেমিকারা সংসার পাতে অন্যের সাথে, অন্য ঘরে এবং তারপর প্রাক্তন প্রেমিক ধুকে ধুকে হারিয়ে যায় অমানুষিক অভিমান নিয়ে? আমি কি তেমনি অভিমানী হতে চেয়েছিলাম হুমায়ুনের দুই মলাটের বইয়ের চরিত্রের মতন? আমি কি নিঝুম মজুমদার হতে চেয়েছিলাম নাকি চেয়েছিলাম হুমায়ুনের সাজ্জাদ, হাসান, রঞ্জু, বিলু, রাশেদ, আতাহার, বুলু, ফিরোজ, মামুন, মুহিব, হিমু, মজিদ, বাদল, শুভ্র হতে? আজ এত বছর পর সেসব প্রশ্ন হামাগুড়ি দিয়ে আমার দিকে এগুতে থাকে। 

আমাদের মধ্যবিত্ত জীবন, তার আদর্শ, পরিচয়ে, পরিণয়ে খুব সন্তর্পণে এসেছে হুমায়ুন। ঘর আর গেরস্থালির গল্পে হুমায়ুন আমার বাবার কথা বলেছে, বলেছে আমার ক্লান্ত ইশ্বর- আমার মায়ের কথা, আমার বোন, ভাই, প্রেমিকা, শত্রু, খুনী, মিত্র, স্ত্রী, আত্নীয়, পূত্রের কথা। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতি পরত আর মুহুর্ত হারিয়ে গিয়েছিলো হুমায়ুনের কলমের ঠিক মধ্য ভাগে এটি আমরা টের পেয়েছিলাম অসহায়ের মতন। অনেক আগেই। ওই যে বললাম অসহায়, তাই ফিরবার পথ ছিলো না কোনোভাবেই। 

তিন
হুমায়ুনের লেখা “অপন্যাস” আর “অ-সাহিত্য” এমন শুনে এসেছিলাম বহুকাল ধরে। এই চর্চাটুকু সবচাইতে বেশী হয়েছিলো হুমায়ুন আজাদ স্যারের মাধ্যমে। আমার আরেক সম্রাট। আমার আরেক আত্নজ। স্যারের কথায় আমি খুব একটা মন খারাপ করতাম না। আপনার যদি দুইটি হৃদয় থাকে, আপনি কার উপর ভার হয়ে থাকবেন? কার উপর আপনি স্থায়ী রাগ পোষন করে রাখবেন? আমরা যারা এই দুই হৃদয়কে ধারন করি তারা হয়ত দুই হৃদয়ের অমিলে ব্যাথিত হতাম, কিন্তু রাগ করা আমাদের অসম্ভব ছিলো। কিন্তু যারা হুমায়ুন আজাদের এমন বক্তব্যে চিরস্থায়ীভাবে হুমায়ুন আহমেদকের “অপন্যাসিক” বলে চাউর করে দিতে লাগলেন তাদের দেখে আমি খুব দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যেতাম। খোদ আজাদ স্যার “লাল, নীল, দীপাবলী বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী” গ্রন্থে স্পস্ট বলেছেন-

“উপন্যাস মানুষের কাহিনী, সাধারণ মানুষের কাহিনী। চারপাশের বাস্তব মানুষের গল্প। আগে সাহিত্য রচিত হোতো দেবতাদের নিয়ে, পরীদের নিয়ে, তাদের নিয়ে যারা অসাধারণ। মানুষের জীবনে গল্প আছে, এবং তা শোনার মত, একথা মনে হয়নি মানুষের শতোশতো বছরে। আধুনিক কালে এক সমউ মানুষ আবিষ্কার করে যে তারই মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে বেশী গল্প, এবং তা শোনার মত, বলার মত। এ চেতনা থেকে সৃষ্টি হয় উপন্যাস আধুনিক কালে” (উপন্যাসঃ আধুনিক মহাকাব্য অংশ থেকে)

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর তাঁর “বছর থেকে বছরে কি সাহিত্য বদলে যায়” নিবন্ধে লিখেছেন-

“লেখার মধ্যে এভাবে তৈরি হয় একটি ঐতিহাসিক অন্বেষণ, এই অন্বেষণ থেকে তৈরি হয় লেখার সামাজিক এবং জ্ঞানভিত্তিক স্টেটাস, একই সঙ্গে তৈরি হয় লেখার নির্দিষ্ট বুনোন, পরিণত কাজের ইঙ্গিতময়তা”

আবার রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- “ সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা, কিন্তু সে আনন্দটি গ্রহন করারও নিতান্ত সহজ নয়, তার জন্য শিক্ষা ও সাহায্যের প্রয়োজন।” 

আমার বোধের ভেতর ঢুকে যিনি আমাকে খুঁটে খুঁটে অনুবাদ করে আমাকে বিন্যাস্ত করেছেন, যিনি আমাদের শ্রেণী দর্শনের দিকটুকু আবেগ আর ভালোবাসায় মেলে ধরেছেন, যিনি আমাকে চালিত করেছেন আমাদের ঘরের চাতাল থেকে ঘুমহীন রাতের মুহূর্তগুলো পর্যন্ত, সেই তাঁর লেখা যদি সাহিত্য হবার মানদন্ড, সেগুলোর নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি, পদ্ধতি এগুলোকে না পেরিয়ে গিয়ে কোনো নির্বোধের ডিকশনারীতে আটকে থাকে, কিংবা ঈর্ষাপরায়ন কোনো বইভূক যদি এই থ্রেশহোল্ডের দরজা আটকে ঘুমিয়ে পড়েন তবে কি হুমায়ুন অবাস্তব, অ-সাহিত্য আর অপন্যাস হয়ে যায়? বছরে একটি উপন্যাস লেখাকে পরিপূর্ণ সাহিত্যিকের প্রতিচ্ছবি টাইপ মানদন্ড বানিয়ে যারা ৫ টি উপন্যাসের ছায়া দেখে ভিরমী খেয়ে পড়ে যায় কিংবা সেটি রোধ করতে না পেরে সে কথাগল্প, সে উপখ্যানকে প্রজনন সংক্রান্ত জটিলতায় দূর্বিষহ ষাঁড় বলে আখ্যায়িত করে তাকে আমার কিছু বলবার নেই। 

ঠিক যেমন হুমায়ুন এর জবাব দিয়েছিলেন একবার। কোনো এক অনুষ্ঠানে মইনুল আহসান সাবেরের মডারেশনে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিলো হুমায়ুনের। সাথে ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। শামসুল সাহেব জিজ্ঞেশ করেছিলেন “হুমায়ুন, আপনার সব লেখাই ফর্মা মেনেই কি করে হয়?”। এক গাল হেসে হুমায়ুন বলেছিলেন “আপনি তো সনেট লিখেন, আপনার সনেট লিখবার সময় আপনার অনুভূতি গুলো কি করে ১৪ লাইন আর ১৪ শব্দের ভেতর আবদ্ধ রাখতে পারেন?” শামসুল হক উত্তর খুঁজে পাননি সেদিন। পাওয়ার কথাও নয়। কেননা হুমায়ুন আজাদের উপন্যাসও যেমন ফর্মা মেনে হয়, তেমন হয় শওকত ওসমানেরটাও, তেমন হয় হুমায়ুন আহমেদেরও।

হুমায়ুনের আগের লেখার সাথে বর্তমানের লেখার মান নিয়ে অনেকেই সন্দেহ, ক্ষোভ, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ইত্যাদি শব্দ চয়নের মাধ্যমে যার যার মত মন্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন যায়গায়। আমিও অনেকবার এই নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলাম। হয়ত হুমায়ুন নিজেই নিজেকে প্রতিদ্বন্দী করে তুলেছিলেন।“অপেক্ষা” লিখে যেই প্রত্যাশা তৈরী করেছিলেন কিংবা “মেঘ বলেছে যাবো যাবো”’র ভেতর যেই আবেগ আমাদের ছুঁয়ে গিয়েছিলো সেই আবেগ হয়ত “আঙুল কাটা জগলু”’র ভেতর ছিলো না। যে অনুভূতি খুঁজে নিতে চেয়েছিলো মানুষ সে অনুভূতি হয়ত ছিলো না সেই বইটিতে। তাই ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে উত্তপ্ত হয়ে। আবার কারো কাছে “আঙ্গুল কাটা জগলু” অসাধারণ লেগেছে হয়ত। কয়জনের কথা মাই জানি বা জানতে পারি। যার কাছে ভালো লেগেছে তার কাছে হয়ত এটি “অপন্যাস” ছিলো না। ছিলো “উপন্যাস”। আসলে শেষ পর্যন্ত সাহিত্য কিংবা উপন্যাস নির্ধারণ করে পাঠকেরাই। 

জহির রায়হানের “বরফ গলা নদী” হয়ত আমাকে টানে নি, টানে নি মাহমুদুল হকের “খেলা ঘর”। কিংবা হতে পারে শহীদুল জহিরের “জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার গল্প”, আমাকে ছুঁতে পারেনি, যেমন পারেনি শহীদুল্লাহ কায়সারের “সারেং বৌ” কিংবা গল্প “তিমির বলয়” “রূপান্তর”, ইলিয়াসের “চিলেকোঠার সেপাই”, গল্প “দুধে ভাতে উতপাৎ” “দোজোখের ওম”, শওকত ওসমানের “ক্রীতদাসের হাসি”, “বনী আদম”। হুমায়ুন আজাদের “পাক সার জমিন বাদ”-ও আমাকে ছোঁয় নি, অনুভূতিতে স্পর্শ করেনি সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর “চাঁদের অমাবশ্যা”, সৈয়দ সামসুল হকের “ময়লা জামার ফেরেশতারা” এমন অনেক অসংখ্য গ্রন্থ। 

যা আমার বোধকে আমার মিলিয়ে রাখা প্রত্যাশাকে অতিক্রম করে আমার কাছে কালজয়ী বা সময়জয়ী কোনোটাই হয়ে উঠেনি। অথচ, আমি কোনো গল্প কিংবা উপন্যাস অথবা প্রবন্ধকে “অপন্যাস” “অ-সাহিত্য” কিংবা “অর্থভূক” “চটুল” বলে বলবার দুঃসাহস দেখাইনি কখনো। মন থেকে আসেনি কখনো। আমাকে ছুঁতে না পারলেই কি তবে আমি বিধ্বংসী হয়ে যাব? হয়ে যাবো নোংরা? হয়ে যাব যাবতীয় সাহিত্যের ঠিকাদার ও বুজুর্গ দালাল?

থাক সেসব কথা।

চার
গতকাল ম্যানর পার্ক রেল স্টেশন থেকে নেমে যখন বিষাদগ্রস্থ পায়ে ঘরে ফিরছিলাম তখন কি এক ফুলের তীব্র গন্ধ আমকে অবাক করে দিচ্ছিলো। আমি এই স্টেশনটিতে যে গন্ধটি সব সময় পেয়েছি সেটি হচ্ছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া মানুষের আদি ও অকৃত্রিম কর্মের শুকিয়ে যাওয়া গন্ধ কিংবা পঁচে যাওয়া ঘাসের গন্ধ। নাক চেপে প্লাটফর্ম ৪ থেকে বাসায় ফিরবার কথা ছিলো আমার। অথচ এই গ্রীষ্মের এত প্রচন্ড দাবদাহে বেলী ফুলের গন্ধ পাচ্ছিলাম আমি। হতে পারে এটি গন্ধরাজ ফুলের গন্ধ। বরাবরি আমি বেলী আর গন্ধরাজ এক করে ফেলি। আমার মেঝো ফুফা যেবার মারা গেলেন ঠিক এমন গন্ধ আমি পেয়েছিলাম আমাদের ঘরটিতে। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেশ করতেই সে বিষ্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ভেবেছিলো বেদনায় পাগল হয়ে গিয়েছি সম্ভবত। আমি সেই একই গন্ধ দ্বিতীয়বার পেয়ে আর কাউকে জিজ্ঞেশ করবার সাহস দেখাইনি। 


দ্বিতীয়বার মরে যাবার পর মানুষের আর কিছু বাকী থাকে না...









1 comment:

  1. পড়ে ভালো লাগলো ভাই । প্রিয় মানুষেরা মাঝে মাঝে আত্মায় দণ্ড সৃষ্টি করে, যেমনটি হুমায়ূন স্যর ও আজাদ স্যর করেছিলেন। কিন্তু যার হাত দিয়েই সব স্বপ্নের, কাব্যের শুরু তার প্রতি অন্যদের অনাদরে খুব কষ্ট পেতাম । ভালো থাকুক স্যর, ভালো থাকুক তার ঘোরলাগা সপ্ন গুলো ।

    ReplyDelete