Saturday 17 October 2015

সাকার পক্ষে ৭ পাকিস্তানীর সাক্ষীঃ যে কারনে গ্রহনযোগ্য হবে না

সাকার পক্ষে নিয়োজিত লবিস্ট ডক্টর কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান আদা জল খেয়ে নেমেছেন এবং প্রশ্ন করছেন যে একাত্তরের ঘাতক সাকার চৌধুরীর পক্ষে পাকিস্তান থেকে দেয়া ৭ জন ব্যাক্তির এর এফিডেভিট কেন আমলে নেয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গে প্রশ্নটা যেভাবে উত্থাপিত হয় সেটি এরকম-



আদালতে সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ না পাওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা সাতজন সাক্ষীর এফিডেবিট আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন, যারা নিশ্চিত করেছেন যে যুদ্ধচলাকালীন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। সেই এফিডেবিটগুলোকে ট্রাইবুনাল খারিজ করে দেয়নি, কিন্তু যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি এই অযুহাতে সেগুলো আমলে নেয়নি। কেন?

আমি আমার এর আগের অনেক লেখার মধ্যে আগেই বলেছি, আইনে যে পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া বলা রয়েছে সেভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থিত করতে হবে, মানে আইনের ৯(৫) ধারা মোতাবেক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইনের ৯ এর উপধারা ৫ এ বলা রয়েছে-


(5) A list of witnesses for the defence, if any, along with the documents or copies thereof, which the defence intends to rely upon, shall be furnished to the Tribunal and the prosecution at the time of the commencement of the trial.


উপরের কথাগুলোর সহজ মানে দাঁড়াচ্ছে যে ডিফেন্স পক্ষ যদি তার পক্ষে কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে চান তবে তাদের নাম সাক্ষ্য শুরুর আগেই, মানে বিচারের প্রাথমিক স্তরেই দিতে হবে। এই একই রীতি কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের জন্যও প্রযোজ্য যেটি আইনে স্পস্ট করে বলা আছে।


কিন্তু এই যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সাধারন মানুষের মধ্যে কিংবা এই যে সন্দেহ তৈরী করা হচ্ছে সাধারন মানুষের মধ্যে এই বলে যে সাকাচৌ এর পক্ষে ৬ জন পাকিস্তানী নাগরিক এফিডেভিট করে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেটা আসলে পদ্ধতিগতভাবে কতটা সঠিক? ট্রাইবুনাল তার রায়ের ২৫১ নাম্বার প্যারায় বলেন-

The defence in violation of the provision of section 9(5) of the Act submitted some documents before the Tribunal at the fag end of defence argument and intentionally refrained from proving those documents by recalling defence witnesses. As such the defence has miserably failed to prove its plea by documentary evidence that the accused stayed in West Pakistan during whole period of the Liberation War of Bangladesh.


যারা এ লেখা পড়ছেন তাঁদের কাছেই আমি সদয় বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি যে এইভাবে কোনো কথা বার্তা ছাড়া হুট করে কিছু লোকের এফিডেভিট নিয়ে জমা দেয়াটা কতটুকু আইনসম্মত। আমি যদি আইনের কথা বাদও দেই, মানবিক বা নৈতিক ভাবেই বা কতটা সঠিক এই জাতীয় প্র্যাকটিস? আমি আগেই বলেছি যে এই ধরনের একটি মামলার ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়াই হচ্ছে আপনি প্রথমেই সাক্ষী হিসেবে কাদের কাদের আনতে চান তাদের লিস্ট দেবেন আপনার প্রতিপক্ষ ও বিচারকদের এক কপি করে। সেই সাথে আরো দেয়া হয় যে সাক্ষীকে ডকে আনা হবে তার জবানবন্দী কিংবা যে সাবুদ আপনি উপস্থাপন করবেন সেগুলোর সবগুলোর একটি কপি। কেননা ডিফেন্স যখন একজন সাক্ষীর নাম দেন এবং পরবর্তীতে সে সাক্ষীর স্টেটমেন্ট দাখিল করেন এবং আরো যা যা প্রমান-পত্র হাজির করেন তখন সেগুলো নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটররা সেসব তথ্য প্রমান পুংখানুপুংখভাবে যাচাই ও বাছাই করে তাদের জেরা করবার জন্য প্রশ্ন তৈরী করেন, তাদের বক্তব্য যাচাই করবার কৌশল নির্ধারন করেন।


কিন্তু অত্যন্ত বিষ্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন এই বলে যে, ৬ জন পাকিস্তানী ব্যাক্তিরা সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দেবার উদ্দেশ্যে এফিডেভিট দাখিল করেছে সেটা নাকি গরহন করা হয়নি। মামলার শেষ পর্যায়ে এসে কোনো কথা বার্তা ছাড়া এফিডেভিট দাখিল করা, সাক্ষ্য হাজির করা এগুলো অত্যন্ত আইনী এটিকেট বহির্ভূত কাজ। আইন বাংলা সিনেমার মত শেষ দৃশ্যে এসে প্রমান হাজির হবার মত করে চলে না। আইন আদালত চলে রাষ্ট্র কতৃক প্রণীত আইনেই। কিন্তু একটি কথা এই মিথ্যেবাদীরা কখনই বলেনি যে কোর্ট গত ২৩ শে জুলাই ২০১৩ সালের একটি অর্ডারের মাধ্যমে কিন্তু এই ছটি এফিডেভিট সাবমিট করবার যে আবেদন সেটি গ্রহন করেছেন। আদালত বলেন-


It is an admitted fact that there is no provision to file additional documents on behalf of the defence during trial. Despite of this fact, for the ends of justice, we are inclined to give permission to the defence to submit additional documents and accordingly, the defence is permitted to submit the additional documents as mentioned in the application and these documents be kept with the documents filed earlier by the defence. 


এই বক্তব্যের পর আর কি আদৌ নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমীচিন? প্রসিজিওরাল রীতি বা আইন কাঠামো যদি মেনে নিতেই হয় তবে আইনী দৃষ্টিকোন থেকে বলা যেতেই পারে যে এইভাবে আসলে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপিত হবার রীতি নেই কোথাও। হোক সেটি দেশীয় আদালতে কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে। তারপরেও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত সে এফিডেভিট গ্রহন করেছিলেন।


প্রশ্ন উঠেছে আদালত কেন এই ছয়টি এফিডেভিটকে রায় ঘোষনার সময় বিবেচনায় আনেন নি। এই পার্টিকুলার স্থানে এসে আদালত যে বক্তব্য দিয়েছে বা আদালতের যে অবজার্ভেশন আমি সেটি আগেই উল্লেখ করেছি। ব্যাক্তিগতভাবে এই ছয়টি এফিডেভিট নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত কিছু অভিমত রয়েছে-


সাত জন সাক্ষীর এফিডেভিটঃ তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার পর্যালোচনা


(১) আম্বের হারুন সায়গলঃ


আম্বের এর এফিডেভিটে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলা নেই যে কত তারিখ থেকে কত তারিখে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাদের বাসায় ছিলো। ২৫ শে মার্চের আর্মির গণহত্যার পর তিন সপ্তাহর কথা বলা থাকলেও এই সঠিক করে বলা নেই কবে থেকে কবে সাকাচৌ সেই বাড়িতে থেকেছে বরং সেখানে বলা রয়েছে ওয়ান আফটারনুন। এই ওয়ান আফটারনুন ঠিক কবে থেকে আফটারনুন সেটা এফিডেভিটে সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই। পাকিস্তানী আর্মির গণহত্যার পরের তিন সপ্তাহর অনেক ধরনের মিনিং হতে পারে। এফিডেভিটে এও নিশ্চিত করে বলা নেই যে সাকাচৌকে আম্বের নিরবিচ্ছন্নভাবেই সে বাসায় সেই উদ্দিষ্ট সময়ে দেখেছেন কিনা সুতরাং এই এফিডেভিট অত্যন্ত দূর্বল।


(২) ইসহাক খান খাকওয়ানিঃ


এই সাক্ষীর এফিডেভিট খানিকটা চতুরতায় ভরপুর। ইসহাক তার এফিডেভিটে অনেক ঘটনার বর্ণনা ক্যালেন্ডারের পাতার মত দিন তারিখ উল্লেখ করে দিলেও সালাউদ্দিন কাদেরের সাথে তার যখন দেখা হয় বা পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে যখন সাকাচৌ ভর্তি হয় সে দিনটির ক্ষেত্রে ইসহাক শুধু এপ্রিল ১৯৭ কথাটি উল্লেখ করেছে। এপ্রিলের কত তারিখ সেখানে উল্লেখ নেই। সাকার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এপ্রিল মাসে রয়েছে সেটির ক্রম বিবেচনায় আমরা দেখতে পাই ৪/৫,১৩,১৭, এপ্রিলের কথা। কিন্তু ইসহাকের এফিডেভিটে উল্লেখ নেই যে ঠিক কত এপ্রিলের কত তারিখে সাকার সাথে তার দেখা হয় অথচ অন্য তারিখ বলতে গিয়ের তিনি সুনির্দিষ্টভাবে তারিখ উল্লেখ করেছেন ঐ একই এফিডেভিটে। এসব বিবেচনা করেই আমার কাছে এই এফিডেভিটকে দূর্বল ও মিথ্যে মনে হয়েছে পরিষ্কারভাবে।


(৩) ওসমান সিদ্দিকী


ওসমান সিদ্দিকী’র এফিডেভিট অনেকগুলো ঘটনা সন্নিবেশিত যেটি বিশ্বাস করতে গেলে সাকাচৌ এর পক্ষে আসা অনেক সাক্ষীই সরাসরি মিথ্যে প্রমাণিত হয়। যেমন ওসমান সাহেবের এফিডেভিটে বলা রয়েছে যে সাকা আর তিনি মিলে প্রায়ই একসাথে সালমান এফ রহমান, কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর সাথে মোলাকাত করতেন, দেখা করতেন। অথচ কাইয়ুম রেজা চৌধুরী তার জবানবন্দীতে বলেছেন সাকাচৌ এর সাথে তার পাকিস্তানে গিয়ে দেখাই হয়নি। তাহলে কোন কথাটি সত্য? কার কথা সত্য? এছাড়াও তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি যে কবে থেকে কবে পর্যন্ত সাকাচৌ এর সাথে তার এক্সাক্টলি দেখা হয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশ থেকে, একই ফ্লাইটে সাকা আর ওসমান পাকিস্তানে আসলেও ওসমান তার এই ভ্রমনের ক্ষেত্রে আর কোনো প্রমাণও সংযুক্ত করেন নি। কিছু মেজর ফ্যাকচুয়াল ঘটনার বৈপিরত্যের কারনেই ওসমান সিদ্দিকী’র এই এফিডেভিট বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই আমার মতামত।



(৪) মোহাম্মদ মিয়া সুমরুঃ





এই এফিডেভিট ও মুলত সাকার ৩য় সাক্ষী কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। এখানেও বলা রয়েছে যে সাকাচৌ যতদিন করাচিতে ছিলেন ততদিন তারা সব বন্ধুরামিলে মিট করতেন কাইয়ুম রেজা, সালমান ইত্যাদির সাথে। ঐদিকে কাইয়ুম রেজার সাথে সাকাচৌ এর পাকিস্তানে থাকতে দেখাই হয়নি বলে বলেছে কাইয়ুম রেজা তার জবানবন্দীতে। দুইটা দুই রকমের গল্পের রেশ আমরা পাই এই দুই স্টেটমেন্টে। উপরন্তু এই এফিডেভিটে তারিখও উল্লেখ নেই বরং শোনা কথার উপর ভিত্তি করে কিছু মন্তব্য করা হয়েছে। একদিকে আম্বের হারুন সায়গল বলছে সাকা তাদের সাথে তিন সপ্তাহ ছিলো সে হিসেবে সাকা তাদের সাথে ১৯ বা ২০ শে এপ্রিল পর্যন্ত থাকার কথা। এইদিকে এই এফিডেভিটে সাক্ষী বলেছে প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা যেটি এটবেস্ট ১৪-ই এপ্রিল পর্যন্ত হবার কথা। এই দুইটি বক্তব্যও এখানে আলাদা। আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই মামলার প্রতিটিদিন, প্রতিটি সময় গুরুত্বপূর্ণ। সাকা ৪/৫,১৩, ১৭ এপ্রিলে যে তান্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সে প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট সময় ধরে সাকার সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের নিশ্চয়তা কেউই কোনো এফিডেভিটে দিতে পারেন নি।


(৫) মুনিব আর্জমান্দ খানঃ

এই এফিডেভিট টিও সাকার সাক্ষী কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর সাক্ষ্যের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক। মুনিব সাহেবের এফিডেভিটে বলা রয়েছে যে সাকা আর তিনি মিলে প্রায়ই একসাথে সালমান এফ রহমান, কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর সাথে মোলাকাত করতেন, দেখা করতেন। অথচ কাইয়ুম রেজা চৌধুরী তার জবানবন্দীতে বলেছেন সাকাচৌ এর সাথে তার পাকিস্তানে গিয়ে দেখাই হয়নি। তাহলে কার কথা সত্য?











(৬) ডক্টর আম্বরিন জাভিদ, চেয়ারপার্সন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

এই চিঠিটি আসলে কি কারনে দেয়া হয়েছে এটি আমার জন্য বোধগম্য নয় প্রথমেই। এই একটি চিঠি যেটি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ইস্যু করা হয়েছে যেখানে বলা রয়েছে যে সাকা অগাস্টে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল পরীক্ষায় যোগ দিয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে বলা নেই যে সাকা সুনির্দিষ্ট ঠিক কত তারিখে ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিয়েছে, কতদিন ক্লাস করেছে কিংবা তার উপস্থিতির হারটাই বা কেমন। অনেকটা দায় সারা গোছের একটা এফিডেভিট এবং এটি আদতে কোনো কিছুই প্রমাণ করেনা আসলে। পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গেলে এবং তাদের ওয়বসাইটে টেলিফোন নাম্বার লেখার যে প্যাটার্ন বা ঠিকানার যে প্যাটার্ন সেটির সাথে সংযুক্ত এই প্যাডের লেখাটি বানানো বলেই মনে হয়। যেখানে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির PO BOX নাম্বার 54590 লেখা রয়েছে তাদের সাইটে সেখানে যংযুক্ত প্যাডের মধ্যে চিঠিটির মধ্যে এই কথাটি লেখা নেই, বরং লাহোর 54590 লেখা রয়েছে যা পোস্ট বক্স কথাটি বা ধারনার সাথে একেবারেই যায়না। মোট কথা এই চিঠিটি যথেষ্ট সন্দেহের জন্ম দেয়।



(৭) রিয়াজ আহমেদ নুনঃ

এই এফিডেভিট টিও মূলত নানা ধরনের তারিখগত ও ফ্যাকচুয়াল ঘটনার বর্ণনের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ন। সালাউদ্দিনের নামে যে অভিযোগ রয়েছে ও সেসব ঘটনার যে সময়কাল বলা রয়েছে শুধু সে সব সময়কালের মাসের কথা রিয়াজ উল্লেখ করলেও অন্যন্য সময়ের বর্ণনায় রিয়াজ একেবারে সুনির্দিষ্ট দিনের কথা পর্যন্ত বলতে পারছে। এই বর্ণনাগুলো দেখলেই বুঝতে পারা যায় যে খুব চাতুরীর আশ্রয় নিলেও সুবিধা করতে পারেনি বরং মিথ্যের ছাপ শেষ পর্যন্ত থেকেই গেছে। এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় সালাউদ্দিন কাদের এর ব্যাপারে নিরবিচ্ছিওন সময়ের কোনো রেফারেন্সই রিয়াজ নুন দিতে পারেন নি।













আবার এই ৭ জন সাক্ষী নিয়ে এই মিথ্যে প্রোপাগান্ডাটির পর পর বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর নাম উল্লেখপূর্বক একটি নতুন মিথ্যে প্রোপাগান্ডাও চালানো হয়। এই প্রোপাগান্ডাটি হচ্ছে-


করাচীতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করা বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক সালমান এফ রহমান এবং বিচারপতি শামিম হাসনাইনের সাক্ষ্য কেন গ্রহণ করা হয়নি, যেখানে ছয়জন সাক্ষী বলেছেন যে তারা করাচীতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন?


প্রথমত, সালমান এফ রহমানের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়নি এই তথ্যটুকু অত্যন্ত মিথ্যে। সালমান এফ রহমান আদালতে সাক্ষ্য দিতেই যান নি সুতরাং সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়নি এই কথাটি সঠিক নয়।


দ্বিতীয়ত ঘটনাটি হচ্ছে বর্তমান হাই কোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইনের ব্যাপারে। বিচারপতিদের কোড এবং কন্ডাক্ট অনুযায়ী এই ধরনের মামলায় একজন বিচারপতি সাক্ষ্য দিতে পারেন না। এটাই হচ্ছে আইন, এটাই হচ্ছে নিয়ম।

শামীম হাসনাইন প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন যে তিনি বিবেকের তাড়না বোধ করছেন সাকাচৌ এর ক্ষেত্রে সাক্ষী দেবার জন্য। শামীম হাসনাইন যে চিঠিটি প্রধান বিচারপতির কাছে লিখেছিলেন সেটিতে প্রথমেই কয়েকটি ব্যাপার পরিষ্কার করে নেয়া যাক।

শামীম হাসনাইনের এই চিঠিটি মূলত সাকাচৌ এর পক্ষে দেয়া ৬ টি এফিডেভিট কিংবা সাকাচৌ এর পক্ষে আসা বাকী সাক্ষ্যদের বক্তব্যকে খারিজ করে দেয়। এই চিঠিতে তিনি স্পস্ট বলেছেন যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির লাহোর ক্যাম্পাসে মে মাসের প্রথম থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত ছিলো (১৯৭১)।

প্রথমেই যে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয় যে শামীম হাসনাইন সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে ১৯৭১ এর মে মাস থেকে সুতরাং এপ্রিল মাসে সাকার বিরুদ্ধে যে নতুন চন্দ্র সিংহ কে হত্যা করবার অভিযোগ রয়েছে সেটি কিন্তু বিচারপতি শামীমের বক্তব্যে কাভার হচ্ছেনা। আবার এইদিকে যেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে আসা এফিডেভিটে বলা হচ্ছে যে সাকা এপ্রিল মাসে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছে সেখানে শামীম বলছে যে সাকচৌ পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে মে মাস থেকে ছিলো। এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিচারপতি শামীম কি নিজেই মে মাস থেকে সেখানে ভর্তি হয়েছেন নাকি আরো আগে থেকেই সেখানে ছিলেন। এই ব্যাপারটি কিন্তু শামীম তার চিঠিতে উল্লেখ করেন নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে পড়ালেখা করে কাটানো এই বিচারপতি তার চিঠিতে এটি স্পস্ট করেন নি যে এই সময়ের মধ্যে সাকাচৌ কি প্রতিদিন ইউনিভার্সিটিতে বা ক্লাসের দিনে ক্লাস করেছিলো কিনা, কোনো ছুটিতে গেছে কিনা কোথাও ইত্যাদি।

এখানে আমার যে ব্যাপারটি সবচাইতে বেশী খটকা লেগেছে সেটি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে পড়ালেখা করে কাটানো বাংলাদেশের এই বিচারপতি যদি বিবেকের দংশনে এতটাই তাড়না অনুভব করে থাকেন এবং তার চাকুরীর কোড অফ কন্ডাক্টের কারনে সাক্ষী না দিতে পারেন তবে কেন তিনি এই চাকুরীটি ছেড়ে একজন ব্যাক্তিকে বাঁচাতে গেলেন না যাকে তিনি নির্দোষ মনে করছেন?


আরেকটি প্রশ্ন এখানে এসেই যায় যে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে দেয়া তার ব্যাক্তিগত চিঠিটি পাবলিকলি কি করে উঠে এলো? এটি তো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে পড়ালেখা করে কাটানো বিচারপতি শামীমের অত্যন্ত ব্যাক্তিগত পত্র প্রধান বিচারপতির কাছে। এই ব্যাপারে কি তিনি কোনো বিবৃতি দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তবে কেন দেন নি?


এই শামীম হাসনাইনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতের রেজিস্টার বলেন-

রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত পক্ষে তার বিজ্ঞ আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে ট্রাইব্যুনাল অনুমতি দেননি এবং এতে তার অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। এটি আদৌ সঠিক নয়। গত ২৭/৬/২০১৩ তারিখের ১৮৯ নং আদেশে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছেন যে,


Proposed witness No. 5 Mr. Justice Shamim Hasnain is the sitting Judge of the Supreme Court of Bangladesh and as such without obtaining his consent, no summons will be issued upon him.


কিন্তু দেখা যায় যে, পরবর্তীতে মাননীয় বিচারপতি শামীম হাসনাইন এর নিকট থেকে এ বিষয়ে সম্মতি সংশ্লিষ্ট কোন কিছু ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়নি।




লেখকঃ

Nijhoom Majumder
DIL, LLB, MBA, (UK) PGDLP (Australia)
Lawyer, The Supreme Court of New South Wales, Australia
Legal Research Analyst, International Crimes Research Foundation (ICR Foundation)




1 comment: