Saturday 24 February 2018

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাচীন ন্যারেটিভঃ বাড়া ভাতে ছাই





[আমি লেখাটি উৎসর্গ করলাম আমার প্রিয় ভাই লেফটেন্যান্ট নিয়াজ হাসান আনন্দ-কে। বাবা-মা-পরিজন ছেড়ে যিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করবেন বলে মনস্থির করেছেন]

প্রথম ঘটনাটি বলছি। বহু বছর আগে লন্ডনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটা আলোচনায় অংশ নেবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। আমি খুব ভুল না করে থাকলে সালটা ২০০৯ অথবা ২০১০।

সেই আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী থেকে শুরু করে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সকলেই বলা চলে সিভিল সোসাইটির অংশ। স্কুল শিক্ষক, অধ্যাপক, গবেষক ইত্যাদি গুনীজন।

আলোচনার একটা পর্যায়ে এক আপা (নাম বলছিনা) চট করে বলে বসলেন, (অনুলিখন) "নিঝুম আপনি জানেন না সেখানে বাংলাদেশ আর্মি মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন করে, মাদকের ব্যবসা করে"

আমি খুব দ্রুত চারিদিকে তাকালাম। আমার সাথে থাকা **** ভাই ছাড়া আর বাকী সবাই খুব সম্ভবত এই অভিযোগে মাথা নাড়াচ্ছিলো। সবাই একমত। আমি আমার সকল বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, (অনুলিখন)

"বাংলাদেশ আর্মির মত এমন একটা ফোর্স নিয়ে আপনি যে কথা বলেছেন এটা গুরুতর অভিযোগ। এমন হলে অবশ্যই এটিকে এড্রেস করতে হবে। আপনার কাছে প্রমাণ রয়েছে?"

আমার এই কথার পর তিনি বেশ রেগে গেলেন এই বলে যে এটি সবাই জানে। আমি কেন জানিনা?

আগেই বলেছি আমার ঘাড়ের কয়েকটা রগ একটু অধিক মাত্রায় ত্যাড়া। অভদ্র ভাষায় অযৌক্তিক কথা বলে আমার সামনে পার পেয়ে গেছে এমন রেকর্ড আজ পর্যন্ত নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরনের কথার জবাব কিভাবে দিতে হয় আমার জানা আছে। শুরু হয়ে গেলো উত্তেজনা এবং আয়োজকরা থামালেন পরিস্থিতি।

লক্ষ্য করে দেখুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে তাঁরা পাহাড়ে ধর্ষন করেন এবং মাদকের ব্যবসা করেন। এটার প্রমাণ চাইতেই কিন্তু বচসার ঘটনাটি ঘটে গেলো। অর্থ্যাৎ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণের দরকার নেই। এসব বিশ্বাস করতে হবে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি গতকাল রাতের। অনন্ত বিকাশ ধামাই নামের এক ভদ্রলোক আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলেন এবং তিনি আমাকে বললেন-

আমি একজন জানোয়ার প্রকৃতির লোক, একজন দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি। আমি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে মিথ্যে কথা বলছি। আমাকে তিনি সেই সাথে বললেন আমি যদি তার কথার উত্তর না দেই তাহলে একদিন তাঁর সাথে আমার দেখা হবে এবং আমার সাথে সেইদিন পূত্র-কন্য-স্ত্রী যা-ই থাকুক না কেন আমাকে তিনি প্রশ্ন করবেন।

তাঁর এই মেসেজের পর পর আমি তাঁর সাথে আরো কথা বলতে থাকি। আমি তাঁকে জানাই পাহাড়ের সাধারন অধিবাসীদের প্রতি আমার অনুভূতি রয়েছে। আমি তাদের অনুভব করি।

কিন্তু ভদ্রলোক আমার এসব কোনো কথাই শুনতে চাইলেন না। ক্রমাগত বলে যেতে লাগলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাঁরা কতটা খারাপ, কত অন্যায় করে ইত্যাদি, ইত্যাদি। তিনি একই সাথে দাবী করলেন যে যে দুটী নারীর কথা বলা হচ্ছে তাঁরা ধর্ষিত হয়েছেন, তাঁদের দুইদিন ধরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, ইত্যাদি।

স্বাভাবিক ভাবেই আমি তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলাম যে, আপনার কাছে কোনো প্রমাণ-পত্রাদি রয়েছে? তিনি আমাকে জানালেন এই ঘটনা দিন-দুপুরের আলোর মত পরিষ্কার।

কেন পরিষ্কার ও কেন তিনি এই সিদ্ধান্তে এলেন সেটির প্রেক্ষিতে যে কথাগুলো তিনি বলেছেন সেটি হচ্ছে (১) অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যা’র বাড়িতে কেন পুলিশ থাকবে এতেই প্রমাণিত হয় সেনাবাহিনী ধর্ষন করেছে (২) যে ডাক্তার মেয়েদের রিপোর্ট দিয়েছিলো, তিনি শুনেছেন সে ডাক্তারকে হেনস্থা করা হয়েছিলো (৩) দুইদিন ধরে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

এই তিনটি শুনা কথার উপর অনন্ত বিকাশ ধামাই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে সেনাবাহিনী ঐ দু’টি মেয়েকে ধর্ষন করেছে এবং তিনি রি ব্যাপারে নিশ্চিত। কিন্তু তিনি বললেন, তিনি আমাকে প্রমাণ দেবেন না তাঁর ফাইন্ডিংসের কেননা সেটির দরকার নেই।

আমি ভদ্রলোককে চট করে জিজ্ঞেস করলাম মুকুল কান্তি চাকমা নামে এক ব্যাক্তি দেড় বছর আগে পাহাড়ে খুন হয়েছেন বলে জানা গেছে। আপনি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন?

আমার এই প্রশ্ন শুনে তিনি বললেন- “শুনেন, পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠী এক একটা ইস্যু তৈরি করে, তাদের এজেন্ট দিয়ে হত্যা করায় যেমন মিথুন চাকমা'কে কারা হত্যা করেছে, তাদের এজেন্ট ঠিক সেভাবেই মুকুল কান্তিকেও শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে”

মানে দাঁড়াচ্ছে তিনি বলছেন মুলুল কান্তি চাকমাকে আসলে সরকারের লোকেরাই হত্যা করেছে।

আমি পালটা প্রশ্ন করলাম, এই যে বললেন সরকারের এজেন্ট মুকুল কান্তি চাকমা কে মেরে ফেললো, আপনি তার প্রতিবাদ করেছিলেন?

উত্তরে তিনি বললেন- “প্রতিবাদ? আমাদের প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি.... প্রতিটি ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকি কিন্তু কোন একটি সুষ্ঠু তদন্ত হয় না, বিচার পাই না”

মানে দাঁড়ালো মুকুল কান্তি চাকমা’র হত্যাকান্ডের পর তিনি অন্য সকল ঘটনার মত প্রতিবাদ করেছিলেন কিন্তু কোনো তদন্ত হয়নি।

আমি তারপরেও খুব নির্দিষ্ট ভাবে তাঁর কাছে আবারো জানতে চাইলাম যে মুকুল কান্তি চাকমা কে যে মেরে ফেলেছে আপনার মতামত অনুযায়ী সরকারের এজেন্ট, সে ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছিলেন কিনা।

উত্তরে তিনি আমাকে যা বললেন তাঁর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।

তিনি আমাকে পালটা প্রশ্ন করলেন, মুকুল কান্তি চাকমা কোথায় থাকে? উনার থাকার স্থানটা যাতে আমি তাঁকে বলি। একই সাথে তিনি আমাকে জানালেন যে মুকুল কান্তি চাকমা কবে খুন হয়েছেন সেটা যাতে তাকে বলি।

মানে দাঁড়ালো যে, মুকুল কান্তি চাকমা কোথায় থাকেন সেটি অনন্য বিকাশ ধামাই সাহেব জানেন না, কবে খুন হয়েছেন জানেন না কিন্তু তিনি এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে এই খুনটি করেছে সরকারের এজেন্ট এবং এটির জন্য ইতিমধ্যেই তিনি প্রতিবাদও করে ফেলেছেন।

এরপর তাঁকে আমি জানালাম যে আমি তাঁর এই মহান বক্তব্যগুলো প্রকাশ করব সাধারন জনতার উদ্দেশ্যে।

এরপর তিনি আমাকে বললেন আমি একজন এই এস এজেন্ট, একজন জঙ্গী, একজন সরকারের এজেন্ট, একজন ষড়যন্ত্রকারী।

এবার আসি আমার নিজের কিছু বক্তব্যে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে একটা ন্যারেটিভ তৈরী করা হয়েছে গত প্রায় চার দশক ধরে।

প্রশ্ন হচ্ছে ন্যারেটিভটি কি?

ন্যারেটিভ টি হচ্ছে - পাহাড় চাকমা, মারমা মগ, মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা, খাশিয়া ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর আবাস। এখানে আর কেউ যেতে পারবে না। থাকতে পারবে না। এই অঞ্চলে সেনাবাহিনী রয়েছে যা অন্যায়। তারা সেখানে সব মেয়েদের ধরে ধর্ষন করে। সবাইকে ধরে ধরে খুন করে। ওরা পশুর মত অত্যাচার করে। মানুষের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।

আমাদের সমতলের র‍্যাডিকাল তথাকথিত মানবতাবাদী ব্যাক্তিদের এবং পাহাড়ের সামন্ত প্রভুদের তৈরী করা ডিসকোর্স এটি। ধীরে ধীরে, বছরের পর বছর এই ছোটখাট কিন্তু ভয়ানক একটা ন্যারেটিভ বা গল্প বা বর্ণনা পাহাড়ে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তৈরী করা হয়েছে। এগুলোর সত্য, এগুলোর মিথ্যা, এগুলোর পেছনে যুক্তি কিছুই দরকার নেই। শুধু দরকার হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের মত চোখ বুঁজে এগুলো বিশ্বাস করে ফেলা।

আপনি এগুলোর বাইরে এক কদম যাবেন, এক শব্দ বলবেন ব্যাস হয়ে গেলো। মানবতাবাদীদের ভেক ধরা ব্যাক্তিরা আপনাকে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলবে। আপ্নাকে নিঃশেষ করে দেবে। এই যেমন আমাকে নিয়ে গত তিন চারদিন ধরে যা হচ্ছে, তেমন।

আমার অপরাধ কি? আমি কি অন্যায় করেছি?

(১) আমার অন্যায় হচ্ছে পাহাড়ে দুই নারীকে ধর্ষন করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে আমি সেটির প্রমাণ চেয়েছি।

(২) আমি পাহাড়ে আঞ্চলিক যে আন্ডারগ্রাউন্ড দলগুলো রয়েছে যেমন ইউ পি ডি এফ, জে-এস-এস (সন্তু), জে-এস-এস (সংষ্কার) ইত্যাদি দলগুলোকে সন্ত্রাসী দল বলে অভিহিত করেছি, তাদের চাঁদাবাজ বলেছি।

(৩) আমি পাহাড়ের সাধারণ পাহাড়ী (ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী) জনতার পরিপূর্ণ বিকাশ চেয়েছি। আমি চেয়েছি তাঁরা যেন জীবনের সকল পর্যাপ্ত সুযোগ ও সুবিধা পান।

(৪) আমি পাহাড়ে সামন্ত প্রভুদের বিনাশ চেয়েছি। সেখানে এই এলিট প্রভুদের ধ্বংস চেয়েছি। তথাকথিত রাজা-গজাদের ক্ষমতাকে রহিত করতে বলেছি।

(৫) স্বঘোষিত "রাজা"-গজা (নিধিরাম সর্দার)-কে খাজনা দেবার তীব্র সমালোচনা করেছি।

(৬) সেখানে বসবাসরত বাঙালীদের সেটেলার বলে ব্যাঙ্গ করবার তীব্র আপত্তি জানিয়েছি। তাঁদের পরিপূর্ণ বিকাশ ও সুযোগ সুবিধা হোক, সেটি চেয়েছি।

উপরে উল্লেখিত আমার ৬ টি দাবীগুলোই হচ্ছে আমার সমস্ত অপরাধ। এই অপরাধে আমি ফেসবুক ট্রায়ালে দোষী সাব্যাস্ত হয়েছি। যেহেতু এই ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালে আক্ষরিক অর্থে কারো ফাঁসী দেয়া যায়না, কারাদন্ড দেয়া যায়না বা সেটি বাস্তবিক নয় সে কারনেই চলছে আমার পরিবারকে নিয়ে নোংরামি, আমার জীবন নিয়ে নোংরামি, আমাকে গালাগাল।

এসবে লাভ নেই। আমি প্রচলিত কোনো প্রথা ও ন্যারেটিভকে ঠিক পুঁছি না। আমি যা সঠিক এবং আমার যুক্তিতে যা সত্য বলে বিবেচিত হয় সেটি নিয়ে বলে যাই। পেছনে কে কি বলেছে সেটি আমি মাথায় রাখতে চাইনা।

সেনাবাহিনীর অন্যায় পেলে লিখব তাদের বিরুদ্ধে, সরকার অন্যায় করেছে বলে মনে করলে লিখব তাদের বিরুদ্ধে, বিরোধী দল অন্যায় করেছে বলে প্রমাণ পেলে লিখব তাদের বিরুদ্ধে। আবার ভালো কাজের প্রমাণ পেলে সেই ভালো কাজ নিয়েও আমি লিখব।

দুটি মেয়েদের ধর্ষনের অভিযোগে আমি তদন্তে নামি। এটি নিয়ে আমি সব ধরনের লেখাই পড়ি। ভিকটিম বলে অভিহিত করা দুইটি মেয়ের বাবা উসি চিং মারমার সাথে কথা বলি, তাঁদেরকে আশ্রয় দেয়া অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যা’র সাথে কথা বলি। এই দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি-ই আমাকে স্পস্ট বাংলায় জানান যে মেয়ে দুটি ধর্ষিত হয়নি, যৌন নিপীড়িত হয়নি।

খুবই ক্রেডিবল দু’জন সাক্ষী। এর উপরে বলা হচ্ছে যে ডাক্তারি রিপোর্টে ধর্ষনের কোনো আলামত নেই। যদিও আমি রিপোর্ট দেখিনি কিন্তু যেহেতু দুই নারীর বাবা বলছেন ধর্ষন হয়নি সেই যুক্তিতে আমি ডাক্তারি রিপোর্ট বিশ্বাস করছি।

ব্যাস ঘটনাটি খুব সোজা ও পরিষ্কার। সামন্ত প্রভু স্বঘোষিত রাজা আর ড্রামা কুইন ইয়েন ইয়েন একটা ইস্যু তৈরী করতে চেয়েছেন জাতীয় নির্বাচনের আগে মানুষের সহমর্মিতা পাবার জন্য (ঘটনা থেকে সেটি মনে হচ্ছে)। সরকারকে বেকায়দায় ফালানো, সেখান থেকে সেনাবাহিনীকে উচ্ছেদের যে ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে চলছে এটি সে ইচ্ছের একটি নব ঘটনাময় প্রতিফল বৈ আর কিছুই মনে হয়নি আমার।

আমাদের একেবারে শৈশব থেকেই এইসব তথাকথিত মানবতাবাদীরা যে গল্প গাঁথা আমাদের জন্য তৈরী করেছে সে গল্প গাঁথায় পাহাড়ে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর খুন, ধর্ষন, যৌন নিপীড়নের কোনো উল্লেখ নেই।

তাদের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শত শত সেনাবাহিনী সদস্যদের খুন করবার কথা বলা নেই, সেখানে বলা নেই পাহাড়ের আনাচে কানাচে পপি চাষের কথা, মাদকের কথা, বলা নেই তাদের আলাদা রাষ্ট্র বানাবার গভীর ষড়যন্ত্রের কথা, বলা নেই তাদের চাঁদাবাজির কথা, বলা নেই সেখানে জোর করে বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবার কথা, বলা নেই জোর করে নারী সৈনিক বানাবার কথা।

শুধু বলা রয়েছে সেনাবাহিনী মানেই ধর্ষক। সেনাবাহিনী মানেই হত্যাকারী। সেখানে বসবাসরত বাঙালী মানেই খুনী ও হত্যাকারী।

আর এসব সব কিছু চোখ বন্ধ করে আমাকে বিশ্বাস করে নিতে হবে কোনো রকমের প্রমাণ ছাড়া।

দেখুন না উপরের সেই অনন্ত বিকাশ ধামাই সাহেবের কথা। মুকুল কান্তি চাকমা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। সন্তুর সন্ত্রাসী দল তাকে গুম করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে এবং পরবর্তীতে তাঁকে খুন করে ফেলা হয়। তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে নমিসা চাকমা ও মনীষা চাকমা গোপনে আজও বেঁচে রয়েছে। আসতে পারছে না পাহাড়ে।

আপনি কি কখনো শুনেছেন নমিসা বা মনীষার জন্য মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল হতে কিংবা তাঁদের বাবা সেনা সদস্য মুকুল কান্তি চাকমা কে নিয়ে?

আপনি কি অভিলাশ তঞ্চঙ্গ্যার পক্ষে একটি কথাও কোথাও দেখেছেন? এই যে তিনি পাহাড়ে ফিরতে পারছেন না, তাঁর গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে?

আপনি কি কখনো শুনেছেন আয়না চাকমার কথা? যেই আয়নাকে সন্তুর দল যৌন নির্যাতন করেছিলো এবং থানায় মামলা দিয়েছিলো? আপনি কি সেই নির্যাতনকারী সুনীতিময় চাকমা, কৃষ্ণসুর চাকমা, পুলক চাকমা, সুজয় চাকমা, মানিক চাকমা, বীর উত্তম চাকমা, নেলসন চাকমা'র নাম শুনেছিলেন? প্রতিবাদ করেছিলেন?

আপনি কি কখনো শুনেছেন-

২৫ অক্টোবর ১৯৭৭ : বান্দরবানে নিহত হন নায়েক আবদুল গণি মিয়া, নায়েক আবদুস সাত্তার, নায়েক আরিফ, সিপাহী লুৎফর রহমান, সিপাহী আলী হোসেন এবং সিপাহী আবদুল খালেক মুন্সি।

২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ : সাঙ্গু নদীতে অ্যামবুশ, এক সেনাসদস্যকে হত্যা এবং প্রচুর গোলাবারুদ লুট।

৫ জুলাই ১৯৭৯ : কাপ্তাই নতুন বাজার থেকে ২ জন আনসার সদস্যকে অপহরণ করে হত্যা।

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ : দীঘিনালায় নায়েক এসএম রুহুল আমিনকে হত্যা।

১৪ অক্টোবর ১৯৭৯ : খাগড়াছড়িতে পাঁচ সেনাসদস্যকে হত্যা।

১৯ ডিসেম্বর ১৯৭৯, লংগদু : একই রাতে একযোগে কয়েকটি গ্রামে হামলা, ২০ অ-উপজাতীয়কে হত্যা, আহত ৪০, ১০৪টি বাড়ি অগ্নিদগ্ধ।

২৩ জানুয়ারি ১৯৮০ : খাগড়াছড়িতে তিন সেনাসদস্য খুন, আহত ৫।

২১ এপ্রিল ১৯৮০ : ফালাউংপাড়া নামের একটি স্থানে অ্যামবুশ করে ১১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ২০ জন জওয়ানকে হত্যা, প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লুট।

১ মার্চ ১৯৮০ : ঘন্টিছড়া নামের একটি স্থানে অ্যামবুশ করে হত্যা করা হয় মেজর মহসিন আলমসহ ২২ জন সেনাসদস্যকে।

২৫ মার্চ ১৯৮০, কাউখালী : বাঙালি বসতিতে হামলা, দুই পক্ষে নিহত ২৯, আহত ১১ জন।

১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮০, কাউখালী, বেতছড়ি ও কচুখালী : আকস্মিক আক্রমণে ৬ বাঙালি খুন, আহত ২৫ জন।

২৯ এপ্রিল ১৯৮৪ : খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় বাঙালি বসতিতে গণহত্যা। হতাহতের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি।

৩০ ও ৩১ মে ১৯৮৪, ভূষণছড়া ও বরকল : দিবাগত রাতে বাঙালি বসতিতে হামলা, ৮৮ জনকে গুলি করে হত্যা, আহত ৩৩ এবং ১৮ জন অপহৃত। আগুনে পুড়ে ছাই ২৬৪টি বাড়ি।

১৯ জুলাই ১৯৮৬ : খাগড়াছড়িতে এক সেনাসদস্য নিহত, আহত ৭।

২২ জুলাই ১৯৮৬, দীঘিনালা : সশস্ত্র হামলায় ২৪ বাঙালি খুন, ৩২ জনকে অপহরণ।

৭ আগস্ট ১৯৮৬ : ২ জন আনসার সদস্যকে অপহরণ করে হত্যা।

২১ জুন ১৯৮৭ : নাড়াইছড়ির অদূরে অ্যামবুশ, সেনাসদস্য আবদুর রাজ্জাক, ইসমাঈল হোসেন ও মোহনলালকে হত্যা।

২৪ নভেম্বর ১৯৮৭ : শিলছড়িতে দুই সেনাসদস্যকে গুলি করে হত্যা।

১৮ এপ্রিল ১৯৮৯, বাশখালী : পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু।

২৭ জানুয়ারি ১৯৮৯ : বন কর্মকর্তা আবুল হোসেন, বজল আহমদ ও মাহবুবুল আলমকে অপহরণ করে হত্যা।

৪ মে ১৯৮৯, লংগদু : আকস্মিক আক্রমণে ১৫ বাঙালির মৃত্যু।

১৬ এপ্রিল ১৯৯০, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বলিপাড়া : ১৯ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা। এ বছরই থানচিতে ১১ জন সেনা জওয়ানকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।

১০ জানুয়ারি ১৯৯২, খিরাম : খিরাম বন কার্যালয়ে আক্রমণ, ৬ কর্মচারীকে হত্যা।

২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২, লংগদু : চলন্ত লঞ্চে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৭ বাঙালিকে হত্যা।

২৯ জুন ১৯৯২ : মহালছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে পাহারা চৌকির ওপর হামলা, দুজন সেনা সদস্য নিহত।

১৪ জুন ১৯৯৫ : শান্তিবাহিনীর ২০ সদস্যের একটি গ্রুপের হাতে ব্যাংক লুট। গার্ডকে হত্যা এবং দুই ব্যাংক কর্মচারীকে অপহরণ।

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬, পাকুয়াখালী (রাঙামাটি) : নৃশংস হামলা চালিয়ে ৩৫ জন নিরস্ত্র বাঙালি কাঠুরিয়াকে হত্যা।

আপনি কি কখনো সেই ন্যারেটিভ রচয়িতাদের এসব নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন? কথা বলতে শুনেছেন? শাহবাগে মানববন্ধন করতে দেখেছেন, প্রতিরোধ করতে দেখেছেন, গলার রগ ফুলিয়ে টক শো করতে দেখেছেন?

না। দেখেন নি। শোনেন নি। আপনি কোনদিন শুনবেনও না। কারন আপনাকে সেই টকমারানীরা তাদের রচিত সেই উপরে উল্লেখিত গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ আপনার কানে শীশার মত ঢেলে দিয়ে ছিপি আটকে দিয়েছে। আপনি যদি কষ্ট করে সেই ন্যারেটিভ থেকে বের হতে চান তাহলে আপনার দশা হবে আমার মতন।

আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার ছোট ভাই আনন্দ প্যান্ট খুলে ধর্ষন করে, আপনাকে বিশ্বাস করে আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় মেজর রাজীব ধর্ষন করে, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার বন্ধু কমান্ডার হাসান ধর্ষন করে, কমান্ডার নাহিদ ধর্ষন করে, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার ভাই মেজর জিয়াউল মিল্লাত প্যান্ট খুলে ধর্ষন করে, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার চাচা ব্রিগেডিয়ার বেলায়েত ধর্ষন করে, আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমার শিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কায়সার ধর্ষন করে।

আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে সেনাবাহিনী মানে খুনী, ধর্ষনকারী...

এই বিশ্বাস ছাড়া আপনার মুক্তি নেই। মুক্তি নেই।

2 comments:

  1. You told the truth,so u have nothing to be afraid.
    I salute Bangladesh Militery for their work in hill tracts, whatever that is-rape or save.i believe they did the right work inthe right time.
    Thank you too for your brave voice

    ReplyDelete
  2. ভাই, আমার সালাম থাকলো আপনার প্রতি।

    ReplyDelete