Friday 12 June 2015

জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা আর আইনমন্ত্রীর অদ্ভুত তিন কারন

গতকালই প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য। যেখানে তিনি বলেছেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা আপাতত সম্ভব নয়।” এই বক্তব্যের পেছনে তিনি যে তিনটি কারন দেখিয়েছেন সে কারনগুলোও নীচে দিয়ে দিচ্ছি-


প্রথম কারন,
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই।

দ্বিতীয় কারন,
জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে৷ এই পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ এখন এসব অন্যান্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে৷’

তৃতীয় কারন,
অন্যান্য আইনে বলা আছে, যদি কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অপরাধ করে, তবে ওই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তাঁদের ইতিমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো তাঁদের আবার শাস্তি হলে তা আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা বিবেচনা করতে হবে।






আইন মন্ত্রীর উপরের বলা তিনটি কারন-ই মূলত হাস্যকর এবং অযৌক্তিক। কেননা


প্রথমতঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ টড়াইবুনালস আইন-১৯৭৩ এই স্পস্ট করে বলা রয়েছে যে, এই আইনের মাধ্যমে সংগঠনের বিচার সম্ভব। আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তবে সেই আইনটিই এখানে তুলে দিচ্ছি-


3. 3[ (1) A Tribunal shall have the power to try and punish any individual or group of individuals, 4[ or organisation,] or any member of any armed, defence or auxiliary forces, irrespective of his nationality, who commits or has committed, in the territory of Bangladesh, whether before or after the commencement of this Act, any of the crimes mentioned in sub-section (2).]


সুতরাং উপরের আইনের আলোকেই স্পস্ট দেখা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস আইন-১৯৭৩ দিয়েই সংগঠনের বিচার করা সম্ভব। আইনে থাকার পরেও আইনমন্ত্রী কেন বলছেন আইনে নেই, এটি আমার অজানা।


জাতীয় সংসদে ২০১৩ সালেই কিছু সংশোধনের পর পাশ করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালস বিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনের বিচারের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনের বিলটি পাস করেছিলো জাতীয় সংসদ। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামির পাশাপাশি সরকারেরও আপিলের সমান সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল)(সংশোধন) আইন ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকেই প্রযোজ্য হবে, এমনটিই বলা রয়েছে।


সে সময়ে পত্রিকার সংবাদে আরো বলা হয়ঃ

সংশোধিত আইনে বাদি-বিবাদীর আপীলের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিলে আপিল করার ক্ষেত্রে বাদী-বিবাদীর সমান সুযোগ রাখা হয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনালস)(অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৩’ উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি উত্থাপনের সময় সংসদে উপস্থিত সকল সদস্য টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান। পরে বিলটি ১ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত আইনে, সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষ বা দন্ড প্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারলেও আসামি যে অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন, কেবল ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধেই সরকার আপিল করতে পারে। বিলে অপর্যাপ্ত শান্তি বা খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি সংশোধন হলে পুরো রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, বাদী-বিবাদী ও সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল করতে পারবেন। এছাড়া বিদ্যমান আইনে আপিল নিষ্পত্তির কোনো সময়সীমা ছিল না। সংশোধনীতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৪৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে উপযুক্ত কোনো কারণ থাকলে এ সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বিলে রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ” সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকর নাগরিককে আইনের সমান আশ্রয় লঅভের যে অধিকার প্রদান করা হয়েছে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল আইনে এই বিধান প্রতিফলিত হয়নি।


এত কিছুর পরেও বর্তমান আইন মন্ত্রী কিভাবে আইনের দোহাই দিয়ে বলছেন সংগঠনের বিচার করবার জুরিসডিকশান এই আইনের নেই, সেটি আইনমন্ত্রীকেই স্পস্ট ব্যাখ্যা করতে হবে।


দ্বিতীয়ত, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের ব্যাপারে যে মামলাটি এখন আপীল বিভাগে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভাবেই জামাতের যে গঠিন প্রণালী বা দলীয় আইন-কানুন-রুলস রয়েছে সেটির সাথে বাংলাদেশের সংবিধান কিংবা দলীয় নিবন্ধন আইনের কতটুকু অমিল বা অসামঞ্জস্য রয়েছে সেই পার্টিকুলার গ্রাউন্ডে। রায় থেকেই আমি কোট করছি মামলার বিষয় বস্তু-


the case of the petitioners rests in the ground that the constitution of BJI is not in conformity with qualification clause and hit by disqualification clause laid down under Articles 90B (1) (b) (ii) and 90C (1) respectively of the RPO. Article 90(C)(1) of the RPO disqualifies a political party from being registered if, amongst others, the objectives laid down in its constitution are contrary to the Constitution of Bangladesh and there are manifestations of discrimination regarding religion, race, caste, language or sex. The objectives of BJI- constitution being thus violative of the Constitution BJI stands disqualified to be registered as a political party as per express provision of the RPO. The registration given to BJI as a political party which was basically disqualified to be registered under law is, therefore, void ab initio and liable to be struck down. More so, the registration was given as of political expediency in order to ensure participation in election of a major political alliance of the time which is illegal and beyond power of the Election Commission.


জামাতের নিবন্ধনের ব্যাপারে মামলাটির প্রাথমিক রায় পাওয়া যাবে এখানে


যদিও এই মামলায় প্রাসঙ্গিক ভাবেই জামাতের ১৯৭১ সালের ভূমিকা উদ্ধৃত হয়েছে, তথাপিও এই মামলার মূল বিষয় বস্তু উপরে স্পস্ট ভাবে বলা রয়েছে। সুতরাং একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ব্যাপারে মামলা চলতে থাকলে সেই একই দলের পূর্ব অপরাধের বিচার করা যাবেনা কিংবা সেটি নিবন্ধনের মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বলে অন্য অপরাধের বিচার করা যাবেনা এমনটি বাংলাদেশের কোনো আইনেই নেই। সুতরাং এই পয়েন্টে এসে আইনমন্ত্রী আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি একেবারেই বোধগম্য নয়। বরংচ, তিনি নিজেকে এতটুকু বোধগম্য করে তুলেছেন যে, স্পস্টতই, তিনি আইনমন্ত্রী থাকা কালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ক্রিমিনাল সংগঠন জামায়াতের ইসলামীর নানাবিধ অপরাধের বিচার অধরাই থেকে যাবে এবং সেই বার বার বলা আইনের শাষনই ক্রমাগত ভুলন্ঠিত হতে থাকবে।


তৃতীয়ত, এই পর্যন্ত যত গুলো ব্যাক্তির বিচার এই দুইটি ট্রাইবুনালের অধীনে হয়েছে তার প্রত্যেকটি-ই মূলত হয়েছে একজন ব্যাক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন তার বিভিন্ন পর্যায়ের/ধরনের অপরাধের। ব্যাক্তি যে অপরাধ করেছে সেটির দায় তাকেই নিতে হয়েছে। কিন্তু যে সংগঠন কিংবা সংগঠনগুলো কেন্দ্র করে এই অপরাধীরা অপরাধ সংগঠিত করেছে সেসব সংগঠনের বিচার এখনও পর্যন্ত হয়নি। বলা বাহুল্য সে সময়কার সেসব ক্রিমিনাল সংগঠন আল-বদর, আল শামস কিংবা শান্তি বাহিনীর আজকে অস্তিত্ব নেই। থেকে গেছে কেবল জামাতে ইসলাম এবং প্রাসঙ্গিক ভাবেই এই সংগঠনকে কেন্দ্র করে হওয়া সংগঠিত অপরাধ, এই সংগঠনের বিশ্বাস, কার্য পরিক্রমা এই সকল নানাবিধ ব্যাপারও আলোচ্য হয়ে উঠবে। আইন মন্ত্রী যদিও বলেছেন যে জামায়াতের উচ্চ স্থানীয় নেতা যারা সে সময় ঐ সংগঠনকে পরিচালিত করেছে তাদের শাস্তি হয়েছে সুতরাং সংগঠনের বিচার হলে একই ব্যাক্তির একই অপরাধে দুইবার সাজা হতে পারে যা বিদ্যমান আইনে নিষিদ্ধ। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে একটি কথা স্পস্ট যে তিনি এটি স্বীকার করে নিয়েছেন যে জামায়াত একটি ট অপরাধী সংগঠন। যদি তার মতে অপরাধী সংগঠনের কর্তা ব্যাক্তিদের শাস্তি দেয়ার মধ্যেই বিচারের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয় তবে প্রাসঙ্গিক ভাবেই সেই সংগঠনেরও বিলুপ্তি হওয়া উচিৎ। কেননা, একটি অপরাধী সংগঠন কখনোই সভ্য সমাজে টিকে থাকতে পারেনা। এটা নৈতিক দিক থেকে যেমন ধ্রুব ঠিক আইনী দিক থেকেও যৌক্তিক প্রশ্ন। কিন্তু আমাদের আইনমন্ত্রী ইন্ডিভিজুয়ালকে বিচার করেই আদর্শ সংস্থাওকে বেঁচে থাকতে দিচ্ছেন বা বাঁচিয়ে রাখতেই বা চাইছেন কেন তা পরিষ্কার নয়।

নুরেম্বার্গ ট্রাইবুনালে নাজি পার্টির কর্তা ব্যাক্তিদের-ই শুধু বিচার হয়নি বরং এই পার্টির পুরো কার্যক্রমই নিষিদ্ধ হয়েছিলো। আইনীভাবে এই পার্টির আদর্শ, ধ্যান-ধারনা, মৌলিক বিশ্বাস ইত্যাদিকে চিরকালের মত মাটিচাপা দেবার প্রয়াস থেকেই তা করা হয়েছে। নিও নাজিজমের যে আশংকা তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞজনেরা করেছেন, যে চিন্তা নুরেম্বার্গ ট্রায়ালের সাথে যুক্ত মিত্র বাহিনীর মানুষেরা করেছেন সে চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে নাজি পার্টি, ব্যাক্তি উভয়ের সলিল সমাধি করেই। এক্ষেত্রে জড় বস্তু হিসেবে নাজি পার্টির হয়েছে আদর্শের বিলোপ আর ব্যাক্তি পেয়েছে শারিরীক আঙ্গিকে শাস্তি।

আমাদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অর্বাচিন নন বলেই এতকাল মনে করতাম। কিন্তু তিনিও কি করে ক্রিমিনাল সংগঠন জামাতের এই বিলোপ প্রশ্নে কলকাঠি নাড়ছেন সেটি এখনও রহস্যময়। জামায়াতে ইসলামী যে একটি ক্রিমিনাল সংগঠন সেটি স্বাধীনতার পর এই দীর্ঘ ৪৩ বছরে বাংলাদেশের মানুষকে আর বলে দিতে হয়না। সামাজিক, রাজনৈতিক তথা চাক্ষুস প্রমাণাদির পর জামায়াতের চেহারা আর কারো অচেনা নয়। যেই নিও নাৎসীজমের আতংকে নাৎসি ধ্যান ধারনাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিলো সেই একই প্যাটার্নে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর পরই জামাতকে নিষিদ্ধ করেছিলেন তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার। নিও জায়ায়াতজমের ভয়টা আইদার দীর্ঘস্থায়ী ছিলোনা কিংবা বঙ্গবন্ধু নিহতের পরের ডানপন্থীদের ক্রমশ উত্থান এই নিও জামাতজমের সাথে মিলেমিশে একাত্ন হয়ে গেছে বলে এই প্রভাব আমরা কখনই বুঝতে পারিনি। এসব ব্যাতিরেকেও এই ট্রাইবুনালের প্রতিটি মামলাতে জামাতকে ক্রিমিনাল সংগঠন হিসেবেই বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা কি ট্রাইবুনালে, কি আপীল বিভাগে। সবখানেই। কিন্তু এই ইঙ্গিত থেকে মূল সারমর্ম ধরতে সরকার বরাবরই ঐচ্ছিক অপরাগতার কিংবা সরাসরি অনিচ্ছার চিহ্নই রেখে গেছে আমাদের সামনে দিয়ে। এবং সেটি প্রকাশ্যে। আর এখনতো আইন্মন্ত্রী দাম্ভিক উচ্চারণে বলছেন-ই।

এই প্রসঙ্গেই নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালের চীফ প্রসিকিউটর রবার্ট এইচ জ্যাকসন “The law under which nazi organizations are accused of being criminal” প্রবন্ধে সুন্দর ভাবেই বলে গেছেন-

The Procedure for Condemning Organizations: It was obvious that the conventional litigation procedures could not, without some modification, be adapted to this task. No system of jurisprudence has yet evolved any satisfactory technique for handling a great multiplicity of common charges against a multitude of accused persons. The number of individual defendants that fairly can be tried in a single proceeding probably does not greatly exceed the number now in your dock. Moreover, the number of separate trials in which the same voluminous evidence as to common plan must be repeated is very limited as a practical matter. Yet adversary hearing procedures are the best assurance the law has evolved that decisions will be well considered and just. The task of the framers of the Charter was to find a way to overcome these obstacles to practicable and early decision without sacrificing the fairness implicit in hearings. The solution prescribed by the Charter is certainly not faultless, but not one of its critics has ever proposed an alternative that would not either deprive the individual of any hearing or contemplate such a multitude of long trials as to be impracticable. In any case, it is the plan adopted by our respective governments and our duty here is to make it work.


The plan which was adopted in the Charter essentially is a severance of the general issues which would be common to all individual trials from the particular issues which would differ in each trial. The plan is comparable to that employed in certain wartime legislation of the United States (Yakus v. United States, 321 US, 414, 64 Sup. Ct. 660). The general issues are to be determined with finality in one trial before the International


Tribunal. In this trial, every accused organization must be defended by counsel and must be represented by at least one leading member, and other individual members may apply to be heard. Their applications may be granted if the Tribunal thinks justice requires it. The only issue in this trial concerns the collective criminality of the organization or group. It is to be adjudicated by what amounts to be a declaratory judgment. It does not decree any punishment, either against the organization or against the individual members.


The only specification as to the effect of this Tribunal’s declaration that an organization is criminal, is contained in Article 10 of the Charter, which provides:


“In cases where a group or organization is declared criminal by the Tribunal, the competent national authority of any Signatory shall have the right to bring individuals to trial for membership therein before national, military or occupation courts. In any such case the criminal nature of the group or organization is considered proved and shall not be questioned.”


Article 9 of the Charter also provides:


” At the trial of any individual member of any group or organisation the Tribunal may declare (in connection with any act of which the individual may be convicted) that the group or organisation of which the individual was a member was a criminal organisation.

” After receipt of the Indictment the Tribunal shall give such notice as it thinks fit that the prosecution intends to ask the Tribunal to make such declaration and any member of the organisation will be entitled to apply to the Tribunal for leave to be heard by the Tribunal upon the question of the criminal character of the organisation. The Tribunal shall have power to allow or reject the application. If the application is allowed, the Tribunal may direct in what manner the applicants shall be represented and heard.”






এর আগেও আমি আইনজীবি আনিসুল হক সম্পর্কে স্পস্টত আমার বিরুদ্ধ মতামত স্পস্ট ভাবেই প্রকাশ করেছিলাম। আপনারা হয়ত সবাই জানেন যে এই ট্রাইবুনালটির মূলত যখন শুরু হয় তখন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। যদিও আমি বলব না যে শফিক আহমেদের পরিচালনায় এই ট্রাইবুনাল অভূতপূর্ব কার্য সমাধা করেছে তথাপিও তিনি যতটুকু করেছেন সেটি এখনকার সাথে তুলনা করলে অনেক বেশী। ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে কিংবা এই বিচারের দাবীর সাথে আজকে থেকে নয়, বরং বলা যেতে পারে কয়েক দশক ধরে অবিচ্ছিন্ন ভাবে জড়িত। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন একাত্তরের ঘাতক গোলাম আজমের বিচার চেয়ে সারা দেশের সাধারণ জনতাকে একই কাতারে এনে একতাবদ্ধ ভাবে গণ আদালত বানিয়ে বিচার করবার যুদ্ধ করছিলেন সেসময়ে যেই ১০১ জন নিয়ে ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে গণ তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিলো সেই সদস্যদের ভেতর ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ছিলেন একজন সৈনিক। এটি ছাড়াও সেসময়কার রাজাকার বিরোধী আন্দলোন, ঘাতক গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিলের আন্দলোন সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল আন্দলোনেই ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ছিলেন একজন প্রধানতম সৈনিক। সুতরাং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তিনি জড়িয়ে আছেন, আইনমন্ত্রী হিসেবে ভূমিকা রাখছেন এসব বিষয়গুলো আমাদের বেশ আশান্বিত করেছিলো।


বিচার শুরু হবার প্রাক্কালে যে ব্যাক্তিটির ভূমিকা আমাদের আশ্চার্যান্বিত করেছিলো সেই ব্যাক্তিটি আইনজীবি আনিসুল হক। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ হিসেবেই যিনি সুপরিচিত। কেবল আইনজীবি নন বরং তাঁকে নিঃসন্দেহে একজন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ হিসেবেই বলা যায়। আনিসুল হকের পিতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় এডভোকেট সিরাজুল হক ছিলেন বাংলাদেশের প্রবাদ প্রতিম একজন আইনজীবি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাদী পক্ষের কৌঁসুলী যদিও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আনিসুল হক এ মামলার দেখাশোনা করেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে এডভোকেট আনিসুল হক এই ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বরাবর বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এই কথার সমর্থনে বলা যায় যে, ২০১২ সালে জামাতে ইসলামী এই ট্রাইবুনাল নিয়ে অনলাইনে একটি প্রোপাগান্ডামূলক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে। সেই ডকুমেন্টারিতে দেখা যায় আনিসুল হক এই ট্রাইবুনালে আসামীদের গ্রেফতার করবার প্রক্রিয়া নিয়ে তার ক্ষোভের কথা বলছেন এবং এও বলছেন যে এই গ্রেফতার সঠিক হয়নি। একজন স্বাধীনতার পক্ষের আইনজীবি যখন স্বাধীনতার বিপক্ষের একটি প্রোপাগান্ডামূলক ও উষ্কানিমূলক ডকুমেন্টারিতে বক্তব্য দেন তখন সেটা নৈতিক ভাবে মেনে নেয়া কষ্টের। সেটির উপর তিনি আবার বক্তব্যের পাশা পাশি এই ট্রাইবুনাল নিয়ে যে সমালোচনা করেছেন সেটি আইনগত ভাবে ভুল। আসুন দেখে নেই সেই ডকুমেন্টারীতে তার বক্তব্যটুকু-






এর মধ্যে আইনী জগতে একটি গুজব ভেসে বেড়াতে থাকে যে এডভোকেট আনিসুল হক এই ট্রাইবুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হতে চেয়েছিলেন এবং সেটি হতে না পেরেই তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হন। যদিও আনিসুল হক এই গুজবের বিপক্ষে বলেন যে তিনি এই ট্রাইবুনালের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত হতে চান নি কেননা তাঁর মা এই ট্রাইবুনালের সাথে সম্পৃক্ত হতে নিষেধ করেছিলেন। একজন প্রতিথযশা আইনজীবি এমন মাতৃভক্ত কিংবা প্রফেশনাল জগতে মা’র কথাকে বেদবাক্য মনে করে সামনে চলেন ব্যাপারটি অত্যন্ত ইউনিক বলেই আমার মনে হয়েছে এবং এই ব্যাপারে আসলে কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকেও বিরত রইলাম। কিন্তু মুশকিল হয়েছে আসলে বর্তমান প্রেক্ষিতে। যেই ট্রাইবুনালের ব্যাপারে সম্পৃক্ত হতে আনিসুল সাহেবের মা’র এই নিষেধাজ্ঞা সেই ট্রাইবুনালের ব্যাপারে তিনি একজন কনসার্ণ্ড মন্ত্রী, এই ব্যাপারটি এখন আনিসুল সাহেব কিভাবে দেখেন এটি অবশ্যই কৌতূহলের।


আমার উপরের লেখাগুলোর সংক্ষিপ্ত সারমর্ম করলে যে ব্যাপারটি দাঁড়ায় সেটি হচ্ছে আনিসুল হক নিজেই এই বিচারের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে এখন নিজেই এই ট্রাইবুনাল দেখভাল করছেন। শুধু এই ব্যাপারটিতেই যদি আমি ফোকাস করি তবে এটাই আসলে আনিসুল হকের ব্যাপারে অনাস্থা জানাবার একটা তীব্র কারন হতে পারে।


একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় আনিসুল হক আরো কয়েকটি মন্তব্য করেছেন যেগুলোর মধ্যে একটি বাক্যে আমার চোখ আটকে গেছে যৌক্তিকভাবেই। তিনি তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছেন-


“আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাল আইন পরিবর্তন করা হবে, আমি এর পক্ষে নই। আমাকে সারা পৃথিবীতে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কাদের মোল্লার ব্যাপারে”


স্পস্টতই এই বাক্য থেকে প্রতীয়মান হওয়াটাই স্বাভাবিক যে কাদের মোল্লার ফাঁসীর ব্যাপারে আনিসুল হকের অবস্থান কতটা নেতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। সারা পৃথিবীতে একজন যুদ্ধাপরাধীর শাস্তির ব্যাপারে কেন আইনমন্ত্রীকে পেরেশান হতে হয় সেটির পেছনের মূল কথা হয়ত তিনি বলবেন না। নাহ, একজন অপরাধীকে শাস্তি দেয়া নিয়ে যতটা না কথা হয় তার থেকে বেশী কথা হয় জামাতের ছড়িয়ে দেয়া প্রোপাগান্ডা সরকার ট্যাকেল করতে পারেনি বিশ্বব্যাপী এবং সেটির কারনেই বিভ্রান্তি ছড়াতে পেরেছে এবং সে কারনেই আইনমন্ত্রীকে উত্তর দিতে হয় সবখানে। রাষ্ট্র ৩৯ বছর পর বিচার শুরু করবে কিন্তু প্রোপাগান্ডা মেকানিজম ট্যাকেল দেবার ব্যাবস্থা ব্যাতিরেকেই মাঠেই নেমে পড়বে আবার সুযোগ পেলেই খেদোক্তি ঝেরে বলবেন “আমাকে ব্যাখ্যা দিতে হয়, আমাকে অমুক করতে হয়, তমুক করতে হয়” সেগুলো আমরা আসলে একেবারেই গ্রাহ্য করিনা। রাষ্ট্র বিচার করতে চার দশক লাগিয়েছে, সুতরাং কথা থাকে শুনতেই হবে। রাষ্ট্র অপরাধীদের প্রোপাগান্ডা রুখতে পারেনি, সুতরাং কথা তাদের শুনতেই হবে। কিন্তু সেসব কথা শুনে এসে কিংবা কাউকে ব্যাখ্যা দিয়ে এসে একজন অপরাধীর শাস্তি নিয়ে এই জাতীয় কথা বলা শুধু নিজের অপরাধই মূলত ঢাকা বৈ অন্য কিছু নয় অথচ আইনমন্ত্রী অত্যন্ত সুনিবিড় ভাবে তার বক্তব্য দিয়ে এটিই বুঝিয়ে দিলেন যে কাদের মোল্লার ব্যাপারে আইনী প্রসিডিঙ্গস-এ সমস্যা ছিলো এবং সে কারনেই সারা পৃথিবীতে তাকে নানান ব্যখ্যা দিতে হয়। জামাতের বক্তব্য আর আনিসুল হকের বক্তব্যের অভিব্যাক্তির মধ্যে আমি আলাদা কিছু দেখি না।


সর্বশেষে আমার কেবল এতটুকুই বলার রয়েছে যেটি আমি উপরেও বলেছি যে একটা সময় নাৎসি ধ্যান ধারনার গায়ে সমাধি আঁকা হয়েছিলো। পুরো পৃথিবী দেখেছিলো যে একটি সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস পুরো পৃথিবীর ভিত কি করে কাঁপিয়ে দিতে পারে। কতটা নৃশংস আর অমানবিক হতে পারে একটি সংগঠনের ধারনা, চিন্তা আর কাজ করবার প্যাটার্ন। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর পুরো পৃথিবী আরো একবার চাক্ষুস দেখেছে ওই একই মৌলবাদ অধ্যুষিত চিন্তার ফলাফল। সেটা জামায়াতে ইসলামকেই ঘিরে। অবিভক্ত পাকিস্তানেও যেমন জামাত ছিলো নৃশংস তেমন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সময়ে তাদের সব চাইতে ভয়াবহ চেহারাই তারা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের সেই খুনে ধারাবাহিকতা তাদের প্রাক্তন আদর্শেরই শুধু নেতা বদলের ভেতরেই পার্থক্য সূচিত করেছে। আদর্শ, চিন্তা, ধ্যান-ধারনা, কর্মকান্ড সেই এক। রগ কাটা, ধরে নিয়ে গুম খুন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নির্বিচারে আগুন দেয়া, দেশের পরিস্থিতি অশান্ত করা সবই তারা বজায় রেখেছে।


সারা দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে টনক নড়লেও টনক নড়েনি আইন মন্ত্রীর। আইন মন্ত্রীর টনক তার শরীরের কোন জায়গায় অবস্থিত কিংবা আদৌ এই বস্তু ভদ্রলোকের আছে কিনা, এটাই এখন একমাত্র গবেষনার বিষয়। অবশ্য এখানে এও উল্লেখ্য যে, অর্থনৈতিক টনিকে টনক সাধারণত নড়েনা। জামাত এখন সেই টনিক যথাযথ স্থানে সাপ্লাই দিয়ে টনক হাপিশ করেছে কিনা, এটাও খুঁজে দেখবার ব্যাপার এখন।

No comments:

Post a Comment