এই লেখার বিষয়ঃ এই লেখাটি শুরু করবার আগেই সকল পাঠকদের এক বাক্যে জানিয়ে দেই এই লেখাটির মূল বিষয় বস্তু বাংলাদেশের চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলতে থাকা বিচার নিয়ে। যেই স্পেশাল ট্রাইবুনালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘঠিত হওয়া নানা ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধ সমূহের বিচার হচ্ছে। জানিয়ে রাখা ভালো এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে।
লেখার কারনঃ
এই লেখাটি মূলত মুক্তমনায় আমার আগের একটি লেখার প্রেক্ষিতে আসা প্রতি উত্তরের পাল্টা উত্তর হিসেবে দিচ্ছি। আপনারা হয়ত অনেকেই পড়ে থাকবেন কিংবা দেখে থাকবেন যে আমি সম্প্রতি মুক্তমনা ব্লগে কাদের মোল্লার ফাঁসী হবার পর পর এই ফাঁসী তথা বিচার নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ও অপঃপ্রচারের জবাব দিয়েছি একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে [ আমার সে লেখাটি পরা যাবে এখান থেকে]
মূলত সেই লেখাটি মুক্তমনার একজন ব্লগার আরিফ ভাইয়ের একটি লেখাতে সাফী নামের এক ব্যাক্তির মন্তব্যের জবাবের প্রেক্ষিতে হলেও এই লেখাটি আরো একজনকে জানাবার কিংবা উত্তর দেবার উদ্দেশ্যেও লিখিত হয়েছিলো। [আরিফ ভাইয়ের সে প্রবন্ধটি পাওয়া যাবে এখানে]
সেই ব্যাক্তির নাম ফারজানা মাহবুবা [ফামা] ফেসবুকে গত ৯-ই ডিসেম্বর তিনি কাদের মোল্লার ফাঁসী নিয়ে এবং এই পুরো বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে যত্তসব মনগড়া কথা বার্তা লিখেছিলেন এবং সতর্ক ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম তিনি আইন, আদালত, বিচার ব্যাবস্থা সব কিছু নিয়েই জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সুতরাং দেশের একজন সচেতন নাগরিক এবং আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে মনে করেছিলাম এইসব অপঃপ্রচারের যথাযথ আইনী এবং যৌক্তিক উত্তর দেয়া খুব প্রয়োজন।
তো, মুক্তমনার আমার সেই উল্লেখিত লেখাটি আমি ফামা’কে পাঠাই তার আগের অপঃপ্রচারের ফর্মাল উত্তর হিসেবে এবং সেই প্রেক্ষিতে আজ তিনি ফেসবুকের একটি পোস্টে আমার সেই ফরমাল লেখার উত্তর দিয়েছেন। আমার আইনী লেখাটি’র উত্তর তিনি যেভাবে দিয়েছেন সেটি আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত শিশুসুলভ। আবেগ আক্রান্ত হয়ে, যৌক্তিক আলোচনার বাইরে গিয়ে অনেকটা উষ্কানির মতই বলা চলে। আমার হিসেবে তার বক্তব্যে যুক্তি নেই বরং রয়েছে এক ধরনের গোয়ার্তূমি এবং পলায়নপর মানসিকতা। আমার এই বক্তব্যের এবং সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি দিতে গিয়ে আমি তারই সেই লেখার একটি লাইন আপনাদের দেখাচ্ছি। [তার পুরো লেখাটি আপনি পাবেন এখানে]।
ফামা বলেছেন-
“সাক্ষী মোমেনাকে নিয়ে মিঃ মজুমদার আরো যত ত্যানা পেঁচিয়েছেন, কিছু বলার নেই” এবং তিনি আরো বলেছেন, “মিঃ মজুমদারের লেখায় আইনি ভাষা/পরিভাষা/ম্যানিপুলেটিং লজিকের কোনো অভাব নেই”
উপরের দুইটি লাইন দিয়ে তিনি খানিকটা তাচ্ছিল্য করবার চেষ্টা করেছেন আমার আইনী ভাষায় দেয়া যুক্তি, রেফারেন্স, বক্তব্য ও আমার পর্যালোচনা নিয়ে। এটি এক কথায় অত্যন্ত নির্বোধের মত আচরণ। যুক্তির মূল বিষয় যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আইন, আদালত, এই বিচারের প্রসিজিওর সেখানে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমি আইন নিয়ে কথা বলব, যুক্তি দিয়ে কথা বলব। কিন্তু, ফারজানা আইনের বাক্স থেকে বের হয়ে তার নিজের একটা হাইপোথেটিকাল সিনথেসিস বের করবার প্রয়াস নিয়েছেন যেটি ইনফ্যাক্ট এই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অসাড়। আমার বক্তব্যকে বেঠিক কিংবা মিথ্যে প্রমাণিত করতে হলে ফামা’কেও ঠিক একই ভাবে আইনী যুক্তি, সেই যুক্তির প্রেক্ষিতে নিজস্ব পর্যালোচনা আসতে পারে। কিন্তু অযৌক্তিক এক পেশে আবেগের অর্গাজম হয়ে গেলে ব্যাপারটা খুব মুশকিলের হয়ে দাঁড়ায়। এঁড়ে বকনার মত নিজের ফেসবুকে আশেকান কিংবা মুরিদান নিয়ে ছটফট কয়রে তো লাভের কিছু নেই। বলবার মত ম্যাটারিয়াল, মাথায় গ্রে ম্যাটার আর তাকত থাকলে সবার সামনে আসেন। তর্ক করেন। প্রমাণ করেদিন নিঝুম মজুমদার ভুল। অযথাই একটা শূন্য ঘরে বসে থেকে কিছুক্ষণ পর পর হুক্কা হুয়া ডাক দিলে ওই ফাঁপা ঘর থেকে নিজের সেই হুক্কা হুয়ার প্রতিধ্বনি-ই শুনবেন এবং সেটাইতেই মনে হবে বাহ বাহ কত মানুষ আমার সাথে স্বর মিলাচ্ছে। এমন স্বমেহনিক সুখে ব্যাক্তি মজা লুটতে পারা যায়, স্বমেহনের নির্ধারিত যেই সুখের গন্ডী আছে তাও লাভ করা যায় সন্দেহ ছাড়াই কিন্তু তাতে করে কি ঘরের বাইরের প্রলয় বন্ধ হয় ফামা?
লেখার অবজেকটিভসঃ
অনেকেই আমাকে ফেসবুকের মন্তব্যে এবং ব্যাক্তিগত মেসেজে অনুরোধ করেছেন ফামা’র এই পোস্টের উত্তর দিতে গিয়ে আমি যেন মূল্যবান সময় নষ্ট না করি। আমি এই ব্যাপারটিতে একমত হইনি যদিও ফামা আবেগ আক্রান্ত হয়ে এবং আমার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যৌক্তিক বিচারের ধার না ধেরেই ক্রমাগত তার পার্সেপশান নিয়ে বলে গেছেন। আসলে এই লেখাটি যে কেবল ফামাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হচ্ছে তা কিন্তু নয় একেবারেই। বরং এই লেখার মাধ্যমে আমি যেই আলোচনা করব সেটি যারা যারা এই বিচার নিয়ে জানতে চান, কনফিউশনে রয়েছেন বা ভোগেন তাদেরকে জানাবার উদ্দেশ্যেও রচিত হচ্ছে। ফামার’র মত যারা ভাবছেন কিংবা ফামার কথা শুনে যারা বিভ্রান্ত তারাও যদি পড়ে সত্যটুকু জানতে পারেন তবে আমার এই কষ্ট কয়রে লেখাটুকু স্বার্থক হয়েছে বলে আমি ধরে নিব। এবং এই ব্যাপারটি বিবেচনা করেও মূলত আমি এই বিষয়ে লিখতে আগ্রহী হয়েছি। অনেকটা লেখার উসিলা পেয়েছি আর কি…এই টাইপ।
কে এই ফারজানা মাহবুবা [ফামা]?
যাকে উদ্দেশ্য করে এই লেখা তার সম্পর্কে একটা সচ্ছ ধারনা পাঠকদের থাকা খুব জরুরী বলে আমি মনে করি। এতে করে পাঠকেরা শুরুতেই সেই ব্যাক্তির চিন্তার প্যাটার্ন, তার গন্ডী, তার ক্রিটিকাল এনালাইসিস পাওয়ার কিংবা পুরো ব্যাক্তিটির থিংকিং প্রসেস সম্পর্কে একটা সম্যক ধারনা নিয়ে এগোতে পারেন। যেমন, তিনি কি একটা নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকে বলছেন কিনা, কতটা নিউট্রাল কিংবা কতটা বায়াসড কিংবা এই আইন সম্পর্কে তিনি কতদূর জানেন, এই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তার জানবার দৌড় কতটুকু ইত্যাদি।
ফামা থাকেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরে। তিনি পি এইচ ডি থিসিস খুব সম্ভবত জমা দিয়েছেন, সাবজেক্ট জানা নেই তবে তার ফেসবুক ওয়াল ঘেটে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে তিনি আইনের ছাত্রী নন। খুব পসিবলি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী। তার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমার এতটুকুই জানার দরকার ছিলো, এবং তাই জেনেছি আমি। ফামা একসময় ব্লগিং করতেন সামহোয়ার ইন ব্লগে [সামু]।
সামু থেকে তাকে ব্যান করা হয়েছে বলেই তার ব্লগের মাধ্যমে জানি, এখনও সেটি বলবৎ আচে কিনা জানা নেই। ভয়াবহ রকমের জামাত তোষনকারী হিসেবেই তার সর্বত্র পরিচিতি। স্লো পয়জনিং প্রক্রিয়াতে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কালচার, সমাজ, অর্থনীতি এসব নিয়ে অসেচতন একটা জনগোষ্ঠীকে ভিন্ন পথে চালিত করবার পথে অত্যন্ত সক্রিয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ফামার বাবা একজন রাজাকার তথা ঘাতক ছিলো বলে জানা যায়। বাবার নাম আবু তাহের, নীচে এই সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট দিচ্ছি। ফামা বাংলাদেশের পতাকা চোখে দেখলেই তার শংকা হয় এবং গা জ্বলে এমন কথাও অবলীলায় তার ফেসবুকে বলেছেন। একাত্তরের ঘাতক গোলাম আজমের সন্তান সালমান আল আজমী ফামার আংকেল হয় এবং তাকে ভয়াবহ রকমের শ্রদ্ধা করেন বলে তিনি তার ফেসবুকের মন্তব্যে জানান। নীচে আমার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রেফারেন্স দেয়া হোলো।
১) বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ফামার বিদ্বেষ
৩) রাজাকার সম্রাট গোলাম আজমের ছেলে সালমান আল আজমীর সাথে ফামার আত্নীয়তা
ফামা আমার প্রবন্ধে যেসব বিষয় উত্থাপন করেছে এবং আমি সেসবের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো এই প্রবন্ধে কাভার করবার চেষ্টা করব
১) জামাতের অসাড় দাবী/ বক্তব্য
২) বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা এবং রি ট্রায়াল
৩) কনসেপ্ট অফ ফেয়ার জাস্টিস
৪) কাদের মোল্লার বিপক্ষের সাক্ষী মোমেনাঃ প্রসিকিউশন উইটনেস-৩
৫) আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাংলাদেশ
৬) সর্বোচ্চ সাজার দাবীতে জনতার আন্দোলন
৭) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক [নট লিগাল] ইস্যু
মূল আলোচনাঃ
ফামা তার ফেসবুকে আমার প্রবন্ধের উত্তর দিতে গিয়ে শুরুতেই বলেছেন তিনি সময় নষ্ট করেছেন এটি পড়ে। এটি অনেকগুলো রাইটিং এপ্রোচের একটি এপ্রোচ। ডিফেন্সিভ, এটাকিং, লজিকাল, ইমোশোনাল এই ধরনের নানাবিধ লেখার প্যাটার্ন রয়েছে। আবার অনেকেই তাচ্ছিল্য কিংবা কম গুরুত্ব দিয়ে লেখা শুরু করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। ফামা অবশ্য নানা এপ্রোচের মিশ্রণে তার ফেসবুকে হামাগুড়ি দিয়েছেন। শুরুতেই ফামা তার পাঠকদের কাছে নিজেকে একজন আইনবিদ্যায় পারদর্শী এবং “এইটা কিছু হইলো” এপ্রোচ দিয়ে মূলত তার যে বিশাল পাঠক বহর রয়েছে তাদের সামনে একধরনের কনফিডেন্ট অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার অতি দুস্তর একটি প্রয়াস নিয়েছেন। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো যেতে পারে যে ফামা এই উত্তর দিতে গিয়ে একটা সিদ্ধান্তমূলক অবস্থান নিয়েই তার বক্তব্যকে অনেকটা খেলো কয়রে তুলেছেন এবং বক্তব্যের প্রতি প্যারায় প্যারায় আবেগের সর্বোচ্চ বীর্যপাতের ফলে এখানে আবাগের তাৎক্ষনিক মেলা বসে গেছে যদিও আলোচনাটি পুরোপুরি লিগাল, বুদ্ধিবৃত্তিক, রেফারেন্স বেইজড এবং কংক্রীট যুক্তি তর্কের দাবী রাখে।
১) জামাতের অসাড় দাবী/ বক্তব্য
ফামা প্রথমেই জামাতের বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়েছেন। স্বীকার করে নিয়েছেন জামাতের বক্তব্য অসাড়। যদিও তিনি আমার একই বক্তব্যকে “সিলি লজিক” বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন, কিন্তু ইন্টারেস্টিংলি, তিনি শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তে এসেই উপনীত হয়েছেন যা নিজের কথার কন্ট্রাডিকশান। তিনি তার পোস্টের শুরুতে প্রথমেই বলেছেন,
“জামাত এখানে আসামীর কাঠগড়ায়। সুতরাং জামাত কী বললো না বললো তাতে আসলে কিছু আসে যায় না। যে আসামীর কাঠগড়ায় সে তো নিজেকে ডিফেন্ড করবেই। সে অপরাধী হলেও ডিফেন্ড করবে, অপরাধী না হলেও ডিফেন্ড করবে। সুতরাং তার অবস্থানকে কেন্দ্র করে logic বানানোটাইতো ভুল। যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনাল প্রসংগে জামাত কী বলছে না বলছে তা নিয়ে আমার কখনো মাথাব্যাথা ছিলোনা”
উপরেই বলেছি এই বিষয়ে আগের প্রবন্ধে বলা আমার বক্তব্যকেও ফামা “সিলি লজিক” বলে অভিহিত করেছেন। তার এই বক্তব্যের পর আর বলবারই অবকাশ থাকে না যে ফামা জামাতের করা সকল আবদার, অনুরোধ, অভিযোগ এক কথায় খারিজ করে দিয়েছেন। জামাতের বক্তব্যে যে আসলে এই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো মূল্যই নেই এ কথা ফামা যেহেতু স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আমিও ফামার উপরের এই কথার সাথে একমত।
১(ক) যে কারনে আমার লজিক “সিলি লজিক” নয়ঃ
ফামা যে বলেছেন আমি তাদের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে “সিলি লজিক” বানিয়েছি এটাও মিথ্যে, আমার প্রবন্ধের শেষে আমিও ফামার মত একমত হয়েছি যে জামাতের বক্তব্যের কোনো লিগাল স্ট্যান্ড নেই, স্থিরতা নেই, যৌক্তিকতা নেই, বলে। ফামা কোনো যুক্তির ধার না ধরে এবং এঁড়ে বাছুরের মত চট করে ঢুস দেয়ার মলেরে এই কথা বল্লেও আমি চট করে এভাবে বলে দিতে পারিনা। ইনফ্যাক্ট আইনের ছাত্র হিসেবেই সেটি করতে পারিনা। আমি কাউকে খারিজ যখন করে দেই তখন সেটির পেছনে যথোপযুক্ত কারন দেখাই তারপর সেই কারন অনুযায়ী ঐ অবস্থান খারিজযোগ্য হলে খারিজ করি। কিন্তু আমার এই বক্তব্য সিলি নাকি জায়ান্ট নাকি সিগনিফিকেন্ট সেটি বুঝতে হলে আসলে এই ট্রাইবুনালের বিপক্ষে আসা সকল ধরনের সমালোচনা, সেটির গতি প্রকৃতি এসব বুঝতে হবে। সাথে সাথে এও বুঝতে হবে যে এই অভিযোগ কারা উত্থাপন করেছে, কেন করেছে, রিজন টা আসলে কি এবং তাদের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে লজিক বানানোটা কেন যথার্থ।
১(খ) জামাতের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে লজিক দেবার প্রয়োজন হোলো কেন?
জামাত এখানে অপরাধীর কাঠ গড়ায় কিংবা জামাতের নেতারা এখানে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের আইনজীবিরা এবং তাদের নিয়োগকৃত আন্তর্জাতিক লবিস্টরা যখন জামাতের করা অভিযোগটিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন এবং অর্থের মাধ্যমে সেটিই যখন সেসব লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন কর্তা ব্যাক্তিরা বলেন তখন সেটি আপনি যতই চালাকি করে বলেন না কেন আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই বলেছে বা সেই বলেছে, সেটা খুব আসলে হাস্যকর শোনায়। জামাত এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের বক্তব্য লবিস্টদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে, সুতরাং তারা কি বলেছে না বলেছে এটার রেফারেন্স দেয়া জরুরী পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো কর্তা ব্যাক্তি কি বলছে সেটি ওই জামাতের বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে দেখবার জন্য। সে কারনেই জামাতের বক্তব্যগুলো দিয়ে যুক্তি তৈরী করবার প্রয়োজনীয়তা আছে।
[বিশ্ব সম্প্রদায় কি করে এই ট্রাইবুনালের সমালোচনা করছে সেটি আমরা পরে “আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাংলাদেশ” শিরোনামের অধীনে আলোচনা করব]
২) বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা এবং রি ট্রায়ালঃ
বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ফামা জামাতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং তার নিজস্ব ঘিলু থেকে উৎপন্ন বুদ্ধি থেকেই নাকি তিনি প্রশ্ন করেছেন। [এভাবে চেনা আদু-বুদুরা জামাতকে ডিসওউন করলে হবে?] যাই হোক, এই কথা বিশ্বাস করেই আমি আমার পর্যালোচনাতে যাই।
মূলত, ফামা “বিচারপতিদের” শব্দটি দিয়ে ট্রাইবুনালের সকল বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যদিও তিনি এই বিষয়ে স্কাইপের কথোপকথন রেফার করেছেন মাত্র যেখানে তার কথা অনুযায়ী একজন বিচারপতির বক্তব্যকে রেফার করা হয়েছে। আর কিছু নয়। এখানে আসলে আলোচনা করতে গেলে তিনটি অবজার্ভেশন এবং সেই অব্জার্ভেশনের শাখা প্রশাখা নির্নয় করে আলোচনা করতে হবে।
ধারনা ৩ টি হচ্ছেঃ
ক) এই স্কাইপি কনভারসেশনটাই ভুয়া। এখানে অপিরিচিত দুইটি ব্যাক্তি আলোচনা করেছে এবং এখানে দুইজন সম্মানিত ব্যাক্তির নাম এনে এই ট্রাইবুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।
খ) এই স্কাইপি কনভারসেশন সত্য। এখানে সত্য সত্যই একজন বিচারপতি তার বেলজিয়াম প্রবাসী বন্ধুর সাথে একান্ত নিজস্ব আলাপ করেছেন এবং কিছু দূর্বৃত্ত অবৈধভাবে এই ব্যাক্তিগত আলাপচারিতা হ্যাক করে প্রকাশ করেছে।
গ) এটা একটা ইনফরমাল আলোচনা। একজন পুরোনো বন্ধুর সাথে বিচারপতির ক্যাজুয়াল আলাপ।
উপরের দুইটি সিদ্ধান্তের মধ্যে যদি ব্যাপারটা দাঁড়ায় প্রথমটি, তাহলে শুরুতেই ব্যাপারটি খারিজ করে দেয়া যায় কিন্তু সেটি হতে হবে আইনী তদন্ত সাপেক্ষে এবং কোর্টে। আবার সিদ্ধান্ত যদি হয় দ্বিতীয়টি একইভাবে সেটিও রিজলভড হবে কোর্টে।
২(ক) কেন এই কনভার্সেশনকে আমরা সাথে সাথেই গ্রহন করে সিদ্ধান্ত দিতে পারিনা?
আমরা যেহেতু একটা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে বাজারী কথা বার্তা, বাঁশের কেল্লার মত অসভ্য, কুরুচীপূর্ণ প্রোপাগান্ডার উপর বিশ্বাস রেখে আলোচনা করলে হবে না। আমাদের হতে হবে কংক্রীট যুক্তির অধিকারী, যা বলতে চাই বা প্রমাণ করতে চাই সেটির দিকে ফোকাসড। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মূল ছাগলের তিন নাম্বার ক্রমিকের সন্তানের মত চিৎকার করলে হবে না, প্রশ্নের উত্তর চাইলে হবেনা। এটা চাইতে হবে আদালতের কাছে। আদালতের উপরেই শেষ পর্যন্ত আমাদের আস্থা রাখতে হবে। এই আসাথা ফামা রাখতে পারুক কিংবা না পারুক, তাতে কিছু যায় আসে না। [মূল অভিযুক্তদের আইনজীবিরা অবশ্য ক্রমাগতই এই আদালতের উপর আস্থা রেখেছেন এবং মামলা পরিচালনা করছেন। আমি পরের আলোচনাতে এই বিষয়টি নিয়ে আরো বিশদ বলব]
[আবার এখানে এও উল্লেখ্য যে স্কাইপির কনভারসেশন বিশ্বাস করে বসে থাকলেও সারাজীবন ইসলাম বিক্রি করে সেক্স কনভারসেশন করা, পরকীয়া করা জনাব আল্লামা সাঈদী মতান্তরে দেইল্যার কনভারসেশন শুনেই সব জামাতীরা চিৎকার শুরু করে ভুয়া বলে কিংবা ফটোশপ দিয়ে এডিট করা হয়েছে বলে। আফসোস…]
এই ধরনের অভিযোগ যখন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে কিংবা এই বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ঠ কারো ব্যাপারেই উঠে তখন সেটি হুট করে সিদ্ধান্তের ব্যাপার হয়ে যায় না আসলে। কেন যায়না আসেন একটা টিউটোরিয়াল দিয়ে বুঝিয়ে দেই-
২(খ) টিউটোরিয়ালঃ
আমরা যদি একটি কাল্পনিক একটি কনভারসেশন ঠিক স্কাইপির মত করে কখনো ইউ টিউব কিংবা অনলাইনে পাই যেখানে ধরা যাক দুইজন ব্যাক্তি রয়েছেন ক এবং খ। এখন ক এমন একজন ব্যাক্তি যিনি এই ট্রাইবুনালের সাথে খুবই ক্লোজলি জড়িত। যার বাবা এই ট্রাইবুনালে ৭১ সালের নানান অপরাধে অভিযুক্ত। তো সে সময় যদি আমরা দেখতে পাই এই ক ব্যাক্তি খ ব্যাক্তিটিকে বলছেন যে,
ক- আমি তো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে লাইনে আনতে পারছিনা, এরা আরো টাকা চায়। ক্যাসিডি এন্ড এসোসিয়েটস কে তিন দফায় টাকা দিলাম কিন্তু তারপরেও আরো টাকা চায়।
খ- টাকা যত চায় দাও। এখন টাকার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। এই বিচারকে আটকাতেই হবে।
ক- কয়েকজন বিচারপতির সাথে কথা বলবার চেষ্টা করছি, কিন্তু লাইনে আনতে পারছিনা। কিন্তু নানা ভাবে প্রেশার দিচ্ছি, দেখা যাক কি হয়। ত আর থ কে ম্যানেজ করতে পারব বলে মনে করি। বাকীটা আল্লাহ পাকের দোয়া।
খ- দাও প্রেশার দাও। ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে। শোনো সালমান আংকেলের সাথে কথা হয়েছে। ওরা নাকি একটা ঘটনা ঘটাবে নেক্সট উইকে। তুমি ঢাকায় থেকোনা এসময়। আমি প কেও বএলছি এসময় না থাকতে।
ক- হ্যাঁ শুনেছি। ঘ আমাকে বলেছে। দেখা যাক কি করতে পারি। ইমরান খান আর নাসির সাহেবও নাকি টাকা চাচ্ছে তাদের বক্তব্যের জন্য, সালমান আংকেল বল্লেন। কত বড় বজ্জাত দেখেছো?
খ- বাদ দাও এসব। আন্তর্জাতিক লবিস্ট, একামেডিশিয়ান, পত্রিকা, ম্যাগাজিন এদের সবাইকে কিনতে হবে, যেটা আমরা আগেই কিনেছি। নতুন নতুন এরিয়া খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পত্রিকা।
যেহেতু আমি আগেই বলেছি এই কনভার্সেশনের অন্তর্ভুক্ত ব্যাক্তি ক, ট্রাইবুনালের আসামী পক্ষের একজন ব্যাক্তি এবং তিনি বেশ পরিচিত এবং প্রভাবশালী। এখন যদি এই কনভার্সেশন ইউ টিউবে প্রকাশিত হয় দু’জনের কথোপকথন হিসেবে কিংবা তাদের ব্যাক্তিগত ফেসবুকের চ্যাটিং হিস্টোরির মাধ্যমে [হ্যাক করবার মাধ্যমে], তাহলে কি ব্যাপারটা এমন দাঁড়াবে যে শুরুতেই আমি কোনো দিক না বিবেচনা করে এই কনভার্সেশনটিকে সত্য বলেই ধরে নিব এবং দাবী তুলব,
১) উল্লেখিত বিচারপতিদের অপসারন
২) এই ক কে এখুনি শাস্তি দিতে হবে
৩) যার সাথে কথা বলছে তাকেও শাস্তি দিতে হবে
৪) এই বিচার নিরপেক্ষ না, রি ট্রায়াল লাগবে
৫) এই বিচারে সব বিচারপতি আসলে এমন
নাকি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি চাইব বা মতামত দিব-
১) এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত
২) তদন্তের উপর নির্ভর করে আমার মতামত দিব
৩) তদন্তের আগে আমি এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবনা নিজের অনুমান নির্ভর কল্পনা দিয়ে
৪) জড়িত ব্যাক্তিদের শাস্তি
যদি সচেতন মানুষ হিসেবে আমরা উপরের শেষ ৪ টি পয়েন্টের উপর আলোকপাত করি, তবে সেটিই মূলত হয়ে উঠবে সত্যকারের সচেতন মানুষের মত আচরন। নিজেই চিন্তা করে বের করে নিলাম এভাবে যে- “আরে এই বিচার মানিনা, এই বিচার হবেনা” “আমি এই বিচার আসলে চাইনা, সেটা যেমনই হোক কিংবা যাই হোক আমি সমালোচনা করব” কিংবা “এই সরকারের আমলে বিচার নিরপেক্ষ হতে পারে না” এমন জাতীয় মোনোভাব নিয়ে যদি কেউ এগিয়ে যান বা বিচারকে ব্যাবচ্ছেদ করেন, তবে এই সিদ্ধান্তটি কতটা প্রপোরশনেট কিংবা র্যশনাল?
মোট কথা উপরের কনভারসেশন যদি সত্যই হয়ে থাকে তবে সেটি রাস্তায় এসে গাধার বাচ্চার মত চিৎকার করার ব্যাপারনা। তখন এটাকে আইনী কার্যক্রমের আওতায় ছেড়ে দিয়ে সচেতন নাগরিকের মত আইনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এটি যদি একটা ফেইক কনভারসেশন নাও হোতো, তবে কি আমি এই কনভারসেশন দেখার সাথে সাথেই দুইজন বিচারপতির অপসারণ চাইতাম? আমি কি বিচার ব্যাবস্থা থেকে আস্থা হারাতাম? নাকি পুরো ব্যাপারটার একটা প্রমাণ এবং তদন্তের প্রয়োজনের পরে সিদ্ধান্ত নিতাম?
এই প্রশ্নটুকু আমি এই লেখার সকল পাঠকদের কাছে রেখে গেলাম।
২(গ) ট্রাইবুনালের বিচারপতিরা কতটুকু নিরপেক্ষ কিংবা উদার?
আমি এই ট্রাইবুনালকে যতটুকু পর্বেক্ষন করেছি, এই ট্রাইবুনাল নিয়ে যতদূর পাঠ করবার কিংবা ক্রিটিকালী এসেস করবার প্রয়াস নিয়েছি ততবারই আমার মনে হয়েছে এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিরা বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বরণকালের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা এবং উদারতার প্রমাণ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। এই বিচার চলাকালীন সময়ে আসামীপক্ষ প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারলোকেটরী আপীল করেছে বিভিন্ন বিষয়ে। এই নিয়ে শুনানী, সেই নিয়ে শুনানী সহ শত শত আবেদন করেছে যেগুলোর প্রাইমা ফেসী মেরিট না থাকার পরেও বিচারপতিরা শুনানীর দিন নির্ধারন করেছেন, শুনেছেন এবং তাদের মতামত জানিয়েছেন বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিচারপতিকে তার পদ থেকে অপসারিত করবার জন্য আবেদন করেছেন ডিফেন্সের আইনজীবিরা এবং সেটির শুনানীও হয়েছে। এর থেকে নিরপেক্ষ আচরন কি আশা করতে পারে মানুষ একটা ট্রাইবুনাল থেকে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। বাংলাদেশের মূল আইনী কাঠামোতেই আসলে সেপারেশন অফ পাওয়ারের আমি চিহ্ন দেখিনা। এখানে প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হয় রাষ্ট্রপতির দ্বারা। দেখুন বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ। আবার অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগকৃত হয় প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। বিস্তারিত আলাপে না গিয়েই সহজে বলে দেয়া যায় যে এখানে এক্সিকিউটিভ এবং জুডিশিয়ারীর মধ্যে ইন্টারফেয়ারেন্স হচ্ছে বলে প্রাইমা ফেসী মনে হতে পারে। এবং বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করতে পারেন রাষ্ট্রপতিকে যেহেতু নির্বাচন করেন প্রধানমন্ত্রী সুতরাং তিনি একজন দলীয় আজ্ঞাবাহীই হবেন আবার ঐদিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন, তবে সেই বিচারপতিও হয়ত সেই একই দলীয় আদর্শের আজ্ঞাবাহী হবেন। আবার এই প্রধান বিচারপতি যেহেতু অন্যান্য বিচারপতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন তবে সেইসব বিচারপতিও তাহলে ওই একই দলের আজ্ঞাবাহী হবেন। কিন্তু আদতে এই যুক্তি বা এই পারসেপশান খাটেনা। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) কেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই দেখে যে বিচারপতিরা স্বাধীন ভাবে কাজ করবেন আসলে।
যদি এইভাবে বিচার করা হয় তাহলে বি এন পি আমলে ধরে নেয়া হবে সব বি এন পি’র বিচারপতি এবং আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগের বিচারপতি। এভাবে কি একটি দেশের বিচার ব্যাবস্থা চলে? কিন্তু আদতে এইভাবে স্টেরিওটাইপড চিন্তা করলে চলবে না। আমি আমাদের বিচার ব্যাবস্থার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখি বর্তমানে। যেভাবে এই বিচার চলছে কিংবা যেভাবে এই বিচার পরিচালিত হচ্ছে তা এক কথায় ঐতিহাসিক।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় এই বিচারের ক্ষেত্রে এই যে বিচারপতিদের নিরপেক্ষ বলছে না ফামা, এটা কি তার পারসেপশান নাকি এর পেছনে স্ট্রং যুক্তি রয়েছে? না, ফামা’র এই বিষয়ে কোনো কংক্রীট যুক্তি নেই। স্কাইপি কনভারসেশন উল্লেখ করে এবং একজন বিচারপতির কথা উল্লেখ করে চট করে পুরো ট্রাইবুনালকে দোষী সাব্যাস্ত করলে উপরের স্ক্রীনশট অনুযায়ী যে ফামা’কেও আদালতে নিতে হয় কোনো প্রমাণ ব্যাতিরকে এটা কি ফামা বোঝে?
স্কাইপি কনভারসেশনে দুইজন ব্যাক্তি আলাপ করছে। বলা হচ্ছে একজন ব্যাক্তি বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আরেকজন বিচারপতি নাসিম। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বিচারপতি নাসিমের ভয়েস আসলে কেমন তার প্রমাণ নেই, প্রবাসী জিয়াউদ্দিনের ভয়েস কেমন তার প্রমাণ নেই, তারা আদৌ কথা বলেছেন কিনা সেটির প্রমাণ নেই। কোনো রকমের প্রমাণ ছাড়া একজনকে চট করে ফেসবুকের পাতায় দোষী সাব্যাস্ত করে দেয়াটা কতটুকু যৌক্তিক। সে হিসেবে কি আমরা ফামাকে রাজাকারের মেয়ে বলে অভিহিত করতে পারিনা?
২(ঘ) স্কাইপি কনভার্সেশনের ব্যাপারে সম্পূরক ভাবনাঃ
যদি ধরে নেয়া হয় যে এই কনভার্সেশনের তথ্য সঠিক, তবে এই বিষয়ে আমি কোট করছি এই প্রবন্ধটিকে
(ক) এটি এক সুপরিকল্পিত এবং দীর্ঘ প্রস্তুতির পর সংঘটিত সাইবার অপরাধ যার ফলে ব্যপক আকারে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কম্পিউটারের নিরাপত্তা, ইমেইল এর এবং কথাপকথনের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট- বিচার প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটানো এবং প্রশ্নবিদ্ধ করা।
(খ) হ্যাকিং হওয়া প্রচারিত ইমেইল গুলোর স্ক্রীনশট থেকে এটা স্পষ্ট যে বিচারকের কম্পিউটারে সংরক্ষিত সকল ইমেইল, যাবতীয় পত্রালাপ, তথ্যাদি, সমস্ত ফাইল ইত্যাদি হ্যাকিং এর মাধ্যমে অপরাধী’র হস্তগত হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে ।
(গ) এক্ষেত্রে তদন্তে বিলম্ব হওয়া খুবই উদ্বেগের বিষয় বলে আমরা মনে করছি, আর সব অপরাধের মতোই এখানেও বিলম্বের কারণে আলামত ও তথ্য প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(ঘ) প্রকৃত অপরাধীকে অবিলম্বে চিহ্নিত করা না গেলে, এবং তার/তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা গেলে একই অপরাধ আরো বিস্তৃত আকারে হবার সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে আরো বড়ো হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। যথাপোযুক্ত এবং প্রযুক্তিগতভাবে মানসম্মত তদন্তের মাধ্যমে এই অপরাধের ভয়াবহতা, গভীরতা, বিস্তৃতি ইত্যাদি নিরূপন এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা এখনো সম্ভব।
ঙ) বিচারের বিরুদ্ধ পক্ষ থেকে হ্যাকিংকৃত তথ্যকে পূঁজি করে যে সব প্রচারণার চেষ্টা চলছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। কারণ, হ্যাকিংকৃত তথ্যে এমন কোনো কিছুই নেই যা এই বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা বা গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বরং, তা সংশ্লিষ্ট বিচারকের ঋজুতা, নিরপেক্ষতা এবং মানসম্মত বিচারের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতাকেই আবারও মূর্ত করেছে।
২(ঙ) বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা ও উদারতার কিছু উদাহরণঃ
এই বিচারের ক্ষেত্রে কত রকমের অন্যায় কাজ করেছে আসামী পক্ষ সেগুলোর ইয়ত্তা নেই। ব্যাক্তিগত উদারতা, ক্ষমা করবার অপূর্ব মানসিকতা, নিরপেক্ষতা, বিচক্ষনতা সব কিছুই প্রয়োগ করে বিচারপতিরা অনেক ব্যাপারকে ওভারলুক করেছেন কিংবা মেনে নিচ্ছেন। নীচে শত শত উদাহরনের মধ্যে মাত্র কয়েক্টি দিলামঃ
১) ২০১২ সালের মার্চ এপ্রিলে ডিফেন্সের আইনিজীবি আব্দুর রাজ্জাক এবং তাজুল ইসলাম তাদের বিচার কাজ ফেলে, আদালতকে না বলে সেশন থাকার পরেও লন্ডনে চলে আসেন। এই বিষয়ে আদালত আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে পারলেও শুধু মাত্র মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দেন।
২) অসংখ্যবার ডিফেন্সের মূল আইনিজীবিরা আদালতের সেশন ফেলে জুনিয়ার আইনজীবিদের পাঠিয়ে মামলা পেছাবার আবেদন করেছেন এগুলোর হিসেব নেই। বিচার প্রলম্বিত হয়েছে এবং ভিক্টিমদের জন্য এটি ক্ষতির কারন হলেও বিচারপতিরা ডিফেন্সের আইনজীবিদের-ই সুযোগ দিয়েছেন। এটাকে আসামীদের পক্ষে ফেবার হিসেবে না ধরে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিচারকদের পদক্ষেপ ধরে নেয়া যেতে পারে।
৩) সাঈদীর ফাঁসির বিরুদ্ধে করা আপীলের ১৯তম শুনানির দিন পিছিয়েছে ১২ বার। প্রথম তারিখ ছিল ২৬শে নভেম্বর। ১২ বার পিছিয়ে নতুন তারিখ হয়েছে জানুয়ারী ২ এ। এভাবে তারিখ পেছালো ৫ সপ্তাহ। রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে ঘৃণ্য যুদ্ধপরাধীর এরকম সুবিধা নেবার সুযোগ নিচ্ছেন জানবার পরেও বিচারপতিরা বার বার ডিফেন্সের আইনজীবিদের সুযোগ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের স্বার্থে।
৪) ভুয়া সাক্ষী এনে ধরা খাবার পরেও আদালত ব্যাপারটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখছেন। উদাহরন হিসেবে বলা যায়-
বাংলামেইল ২৪ এর 21-10-2013 এর একটি প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে-
সোমবার সকালে (২১-১০-২০১৩) ট্রাইব্যুনালের কার্যীক্রম শুরুতে নিজামীর সাফাই সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন অ্যাডভোকেট কে.এম হামিদুর রহমান। পরে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী তাকে জেরা শুরু করেন।এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের কাছে জানতে চান যে, অন্য সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে হাজির আছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেন, না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, গতকালই (রোববার) বলে দেয়া হয়েছে আপনারা একাধিক সাক্ষীকে হাজির রাখবেন। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গতকাল ছিলাম না, ভুল হয়ে গেছে।’এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী আদালতে অভিযোগ করে বলেন, ‘জবানবন্দি দিয়েছেন কে.এম হামিদুর যার নাম আসামির সাক্ষীর তালিকায় নেই। তখন আদালত প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসামীর আইনজীবীকে উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার আইনজীবী, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি, আপনি ডিফেন্স সাক্ষী নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ফ্রড (প্রতারণা)করেছেন ‘ এ সময় আদালত ট্রাইব্যুনালের এজলাশ থেকে ডিফেন্সের সাক্ষী অ্যাডভোকেট কেএম হামিদুর রহমানকে সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নেমে যেতে বলেন। ওই সময় সাক্ষী কাঠগড়া থেকে নেমে যান। এ সময় আদালত মিজানুল ইসলামকে বলেন, ‘আপনি একজন সিনিয়ার ল’ইয়ার, আপনার কাছ থেকে এমনটি আশা করিনি। আইনজীবী বলেন, আই এম ভেরি সরি, ইট ইজ ক্লারিক্যাল মিসটেক।’ আদালত বলেন, ‘আপনারা আদালতের সাথে মিথ্যা কথা বলেছেন, আপনাদের তালিকায় আছে আব্দুল হামিদ আর আপনি দিলেন কে.এম হামিদুর রহমান, এটা আইনজীবী হিসেবে আদালতের সাথে প্রতারণা।’
৫) আদালতে ডিফেন্সের আইনজীবিরা সাক্ষীর তালিকা হিসেবে উল্লেখ করছেন মিস্টার এক্স, মিস্টার ওয়াই এইভাবে। এই বিষয়টা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি হলেও আইনী ব্যাবস্থা না নিয়ে বিচারকরা মৃদু সতর্ক করে দিচ্ছেন ডিফেন্স আইনজীবিদের। যেমন ঘটেছে নিজামীর মামলার বেলায়।
নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আপনি একজন ব্যারিস্টার, আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু পেশার শুরুতে এটা কি করলেন? তখন নিজামীর ছেলে আদালতকে বলেন, এটা ক্লারিক্যাল মিসটেক, আমি বুঝতে পারিনি যে ট্রাইব্যুনালের কাছে দেয়া পাঁচ জনের তালিকায় ওনার নাম নেই।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা সাক্ষীর তালিকায় মিস্টার এ, মিস্টার বি, মিস্টার এক্স, মিস্টার ওয়াই এসব নাম উল্লেখ করেছেন, এটা কোন সাক্ষীর তালিকার নাম হতে পারে না। এমন নাম আমরা জীবনেও দেখিনি। আপনারা কে. এম হামিদের বিষয়ে আদালেতে আগেও বলতে পারতেন। কিন্তু তা বলেননি কেন? রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একেক সময় একেক নাম আসামীপক্ষ উপস্থাপন করছেন। সাক্ষীর তালিকায় যে নাম দেয়া হয়েছে সেই ব্যক্তি এখানে নেই। তাই এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আসামীপক্ষ আদালতের সময় নষ্ট করতেই সাক্ষীর নাম নিয়ে এ ধরনের আচরণ করছেন।
৬) বিচারপতিদের সামনেই অভিযুক্ত সাকা চৌধুরী অভব্য আচরন করলে আইনী ব্যাবস্থা ব্যাতিরেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বিচারকরা।
৭) সাকার রায় পাঠের সময় অভব্য ভাষায় সাকা বলছিলো “বল তোর বোনকে আমি কি করেছি বল…বল…” এই জাতীয় অশ্লীল কথা বলবার পরেও বিচারপতিরা এই নোংরা ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাকাকে কোন শাস্তি দেয়নি।
৮) আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী এবং সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযুক্তরা রায় পুনঃর্বিবেচনার কোনো সুযোগই আইন অনুযায়ী পায়না, কিন্তু তারপরেও আপীলেট ডিভিশান এই পুনঃর্বিবেচনার আবেদন শুনেছেন কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে।
৯) কাদেরমোল্লার মামলার ক্ষেত্রে চেম্বার বিচারক মাহমুদ হোসেন রাত ১০টায় রায় স্থগিতের আদেশ দিয়েছিলেন যেটি বাংলাদেশের আইনী ইতিহাসে অবিষ্মরনীয়।
১০) ডিফেন্সের আইনজীবি তাজুল বার বার আদালতের সাথে বেয়াদপি করেছেন, অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন কিন্তু তারপরেও আদালত তার ব্যাপারে আইনী ব্যাবস্থা নেন নি।
১১) এই আইনে বন্দী থাকা অবস্থায় কারাবিধির বাইরে গিয়ে, ঘর থেকে খাবার আনার ব্যাবস্থা ছিলোনা। অথচ এই বাইরে থাকে গোলাম আজমের জন্য খাবার আনার ব্যাপারে আদালতে শুনানী হয় এবং বিচারপতিরা সেটা মঞ্জুর করেছেন নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকবার পরেও।
১২) এই বিচার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না এই মর্মে রুল জারি হলে আদালতের সামনে গিয়ে তারা দু’জনই ক্ষমা চেয়েছেন। বিচারকরা কে কোন দলের রাজনীতি করেন এসব বিবেচনায় আনেন নি। [সূত্রঃhttp://bit.ly/YBgAWM, http://bit.ly/YBgVca, http://bit.ly/15NHJWH]
আওয়ামীলীগের আরেক প্রভাবশালী সাংসদ ও মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীকেও কারন দর্শাতে বলেছে আদালত, মুখোমুখি করেছে জবাবদিহিতার জন্য, এই ব্যাপারগুলো তো হয়েছে সকলের চোখের সামনেই। এখানে এসব খবরের রেফারেন্সও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এর পরেও কি বলা যায় যে এই ট্রাইবুনাল কোনোভাবেই পরাধীন কিংবা সরকারের কোনো প্রভাবে প্রভাবিত, নাকি সরকারকে বিন্দু মাত্র এই বিচারের ক্ষেত্রে পরোয়া করে চলে? ট্রাইবুনাল যে শুধু মাত্র সরকারী দলীয় ব্যাক্তিদেরই জবাবদিহিতা কিংবা কারন দর্শাবার জন্য রুল জারি করেছে তা নয়। বরং বিরোধী দলীয় নেতা এম কে আনোয়ার[সূত্রঃhttp://bit.ly/ZrlHIL],
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, নুরুল কবীর ট্রাইবুনাল অবমাননার দায়ে জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
১৩) সাকার মামলা চলাকালীন সময়ে সাকার বিপক্ষে আসা ২য় সাক্ষীকে ওপেন আদালতে হুমকি দেয় সাকার আইনজীবি ফখরুল এই বলে যে, “ভবিষ্যতে কি হবে চিন্তা করে কথা বইলেন”, এই কথা বিচারপতি শুনতে পান এবং তিনি সতর্ক করে দেন যে এই জাতীয় কথা তিনি যেন আর না বলেন। অথচ বিচারপতি কিন্ত এই আইনিজীবির প্রতি ফৌজদারী আইনে কিংবা ট্রাইবুনালের নিজস্ব আইনেই ব্যাবস্থা নেবার জন্য নির্দেশ দিতে পারতেন।
শুধু এইসব উদাহরন দিয়েই নয় বরং এই ট্রাইবুনালের বিচারপতিদের উপর জামাতের আইনজীবিদের যে আস্থা ছিলো তাও প্রমাণিত হয় জামাতের আইনজীবিদের-ই কথায়। যদিও সেটি বিচারপতি জহির আহমেদের পদত্যাগের পর। আগে করেনি কারন আগে প্রশংসা করলে দূর্নাম রটিয়ে এই ট্রাইবুনালের বারোটা বাজাবার চেষ্টা করবে কে? এই সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এখানে।
২(ঘ) ফামা’র রি-ট্রায়াল করবার চিৎকারঃ
ফামার রি ট্রায়ালের ব্যাপারে ক্রমাগত ম্যাৎকার ও চিৎকার আসলেই তার নিজের বলা বক্তব্যকেই হাস্যকর করে তুলেছে। একদিকে স্পস্ট ভাবে বলছেন ফেয়ার জাস্টিস দূরের কথা, জাস্টিস-ই হচ্ছে না আবার সেই একই ব্যাক্তি বলছেন ফেয়ার ট্রায়ালের কথা। ফামা আবার বলেছেন,
“Now the question is- what kind of trial is this??? সোজা কথা সোজা ভাবে বললেই তো হয়, জামাত নেতাদেরকে ফাঁসি দিতে হবে, ব্যাস! প্লীজ কেউ আর কখনো আমাকে ইনবক্স বা স্ট্যাটাসে ভুলেও জিজ্ঞেস করবেন না, আব্দুল কাদের মোল্লা কী আসলেই কসাই কাদের না? আরে, আমি কী করে বলবো? এটা তো court এর দায়িত্ব সিদ্ধান্ত নেয়া। এখন আমাদের কাছে তো court-ই নাই! আমাদের court গুলো এখন আওয়ামী লীগের সবচে বড় আর সবচে এক্টিভ দলীয় কার্যালয়। যেখানে ‘নিরপেক্ষ’ জাজই নাই, সেখানে বিচার হবে ক্যামনে???”
যেই ট্রাইবুনালের প্রতি ফামা’র আস্থাই নেই, যেখানে ফামা মনে করছে কোর্ট-ই নেই সেই ট্রাইবুনালের কাছেই আবার রি ট্রায়ালের আবেদন!!! নতুন বিচারপতি নেবার কথা বলছে ফামা। তা নতুন বিচারপতি নিলে কি আপনাদের আস্থা বেড়ে কলাগাছে উঠবে? কতটা ভয়াবহ কন্ট্রাডিকশন লক্ষ্য করে দেখেছেন কি? এর মধ্য দিয়ে কি প্রমাণিত হয়?
১) যেই ট্রাইবুনালের প্রতি আস্থাই নেই, কিংবা যেখানে কোর্ট-ই নেই বলে বলছেন ফামা কিংবা যেখানে ফেয়ার জাস্টিস দূরের কথা জাস্টিস-ই নে বলছে সেই ট্রাইবুনালের কাছেই আবার রি ট্রায়ালের প্রত্যাশা করা মানে তো এই নয় যে ফামার পারসেপশান এই ট্রাইবুনালের প্রতি পাল্টে যাওয়া, ঠিক না? সেই যুক্তিতে বলা যেতেই পারে-
ক) এই ট্রাইবুনালের প্রতি আসলে ফামা’র আস্থা আছে যেটা তিনি বলেন না ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করতে।
খ) আস্থাহীনতার কথা বলা এটা ফামা’র বাবার দল জামাতের মতই একটা স্ট্যান্ড বিচারকে প্রলম্বিত করবার একটা ধান্দা।
২(ঙ) রি-ট্রায়াল ইস্যুঃ আইন কি বলে?
অনেকেই বলে থাকেন যে স্কাইপি কনভারসেশন যদি সত্য নাই হবে বা কিছু সত্যতা নাই থাকবে তাহলে বিচারপতি নাসিম পদত্যাগ করলেন কেন?
আসলে বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে ভদ্রলোকের দাম নেই। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপরাধের বা দূর্নীতির অভিযোগ এলে সেই মন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ মনে করে যে আসলেই ওই মন্ত্রী চোর, একারনেই সরে গেছেন। অথচ চিন্তার প্যাটার্ন না হওয়ার দরকার ছিলো এমন যে, এই দূর্নীতির অভিযোগ আসবার কারনে তিনি বিব্রত হয়েছেন এবং তিনি তার ঐ ডিপার্টমেন্টে থাকলে তদন্ত বায়াসড, ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা নিরপেক্ষ না হবার ঝুঁকি থেকে যায় যে কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আসলে বাংলাদেশের মানুষ এইভাবে না ভাবতে পারার কারনেই আমাদের মন্ত্রী- এম্পিরা নানান দূর্নীতির অভিযোগেও পদত্যাগ করেন না। কারন এখানে নিয়ম মানা কিংবা ঋজুতাকে দেখা হয় দূর্বলতা হিসেবে।
এই একই ব্যাপার আসলে খাটে বিচারপতি নাসিমের বেলাতে। তিনি যদি তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখন তাঁর সেই স্থানেই থাকতেন (আইন অনুযায়ী থাকতে পারতেন) তাহলে আসলে মনে হয় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভালো হোতো। ভদ্রতা এবং অমায়িকতা দেখাতে গিয়ে তিনি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পদত্যাগ করলেন, ব্যাস আর যায় কোথায়। শুরু হয়ে গেলো কানাকানি, গুজব। ফামাও তার লেখায় দুটো মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
এখন বিচারপতি নাজমুল স্কাইপিতে ধরা খেয়ে জনগনের সামনে নেংটুপুটু হয়ে যাওয়ার পর সরকার বাধ্য হয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন জাজ বসালো
এই দুটো কথার প্রথমটি তো ফামার নোংরা মনের পরিচায়ক আর ২য়টিও মিথ্যে। কেননা নাসিম সাহেব নিজেই পদত্যাগ করেছেন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে।
আর বিচারপতি পদত্যাগ করলেই কি মামলা নতুন করে শুরু করতে হয়? যতসব অর্বাচীনের মত কথা বার্তা। এরা আসলে এই বিচারের আইনটি সম্পর্কেই জানেনা। এই বিচারের আইনের ৬ ধারার ৬ উপধারাতে স্পস্ট বলা রয়েছে যে-
6(6) A Tribunal shall not, merely by reason of any change in its membership or the absence of any member thereof from any sitting, be bound to recall and re-hear any witness who has already given any evidence and may act on the evidence already given or produced before it
আশা করি উপরে বলা আইনের ধারা থেকেই পুরো ব্যাপারটি বোধগম্য হয়েছে। আর যদি এইভাবে কথায় কথায় বিচারপতি পরিবির্তিত করা লাগে তাহলে আসলে বাংলাদেশের জুডিশিয়ারীর সব বিচারপতিদের রোগ, বালাই, সমস্যাহীন হতে হবে। শারীরিক অসুস্থতা, ব্যাক্তিগত কারনে কেউ পদত্যাগ করলেই রি ট্রায়াল। কি ভয়াবহ উদ্ভট আরজি!!
ফামা’র হয়ত জানা নেই যে, মামলা চলাকালীন সময় একাধিক স্টেনোগ্রাফার থাকেন আদালত কক্ষে। যারা আদালতের প্রতিটি শব্দ সাথে সাথেই লিপিবদ্ধ করেন। অনেক সময় দেখা যায় এই ট্রাইবুনালের (১ কিংবা ২) সকল বিচারপতি অংশ নেয়নি। দুইজন রয়েছেন বা একজন নেই। এতে করে কি বিচার ব্যাহত হয়? উত্তর হচ্ছে, না হয়না। কেননা যদি কোনো বিচারপতি কোনো ব্যাক্তিগত কারনে বিচারকার্যে অংশ না নিতে পারেন [কিংবা পারলেও] তবে তিনি প্রতিদিনি বিচার দিবসের সকল ডকুমেন্ট হাতে পান। বিচারপতি যেহেতু প্রাপ্ত আর্গুমেন্ট ও এভিডেন্স দেখেই মামলার রায় দেন সুতরাং এতে করে বিচারিক ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা রাখতে সমস্যা হয়না।
সুতরাং, বিচারপতি নাসিমের পদত্যাগের ফলে শধু তাঁর আসনটি-ই সেখানে খালি হয়েছে মাত্র। কিন্তু পুরো বিচারের সকল নথি, পত্র, আর্গুমেন্ট, প্রমাণ, সাক্ষ্য সকল কিছুই নতুন বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে যেই কাগজ পত্রের উপর নির্ভর করে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন। এখানে প্রথমত, আইন অনুযায়ী রি-ট্রায়ালের তো প্রশ্নই আসেই না প্লাস দ্বিতীয়ত, সেটির কারনও নেই, যার কারন আমি উপরে ব্যাখ্যা করেছি।
সুতরাং নিজেকে কন্ট্রাডিক্ট করে ফামার রি-ট্রায়ালের ধুয়ো তোলা শধু হাস্যকরই নয় বরং ধাপ্পাবাজি।
২(ঙ) বিচারের আইন নিয়ে জামাতের আইনজীবিদের মতামত আহবানঃ ফলাফল নিরবতা
এই বিচার শুরুর প্রাক্কালে এই বিচারের আইনটি, মানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন তথা সংযোজন, বিয়োজন কিংবা এর রুলস কিংবা রেগুলেশনেও কোনো ধরনের পরিবর্তন লাগবে কিনা এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এই উক্ত আইনের পরবর্তী পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনার জন্য গত ২১-০৫-২০০৯ সালে একটি অনুরোধ পাঠায় আইন কমিশনের কাছে।
আইন কমিশন এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৩৩জন বিশেষজ্ঞের কাছে এই আইনের উপর মতামত চায়। আসুন দেখি কাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল। আইন কমিশন বাংলাদেশের শীর্ষ আইনবিদ, একামেডিশিয়ানদের কাছে মতামত চেয়ে পাঠায়। মোট ৩৩ জন ব্যাক্তির কাছে পাঠানো আইন কমিশনের এই চিঠিতে যারা যারা উল্লেখিত ছিলেন তাঁরা হলেন-
১. বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন
২. বিচারপতি এ টি এম আফজাল
৩. বিচারপতি হাবিবুর রহমান
৪. বিচারপতি মোস্তফা কামাল
৫. বিচারপতি গোলাম রব্বানি
৬. বিচারপতি কাজি এবাদুল হক
৭. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৮. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৯. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১০. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
১১. চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
১২. সভাপতি, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন
১৩. সাধারণ সম্পাদক, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন
১৪. সভাপতি, ঢাকা বার এসোসিয়েশন
১৫. সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বার এসোসিয়েশন
১৬. ওয়ালিউর রহমান, পরিচালক, বিলিয়া
১৭. ব্যারিষ্টার টি এইচ খান
১৮. ব্যারিষ্টার রফিক উল হক
১৯. ড. এম এ জহির
২০. ব্যারিষ্টার খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ
২১. ড. কামাল হোসেন
২২. ব্যারিষ্টার আমির-উল-ইসলাম
২৩. ব্যারিষ্টার মাহমুদুল ইসলাম
২৪. ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ
২৫. ব্যারিষ্টার আবদুল বাসেত
২৬. ব্যারিষ্টার আজমালুল হোসেন
২৭. ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন
২৮. ব্যারিষ্টার আখতার ইমাম
২৯. ব্যারিষ্টার শেখ রাজ্জাক আলী
৩০. ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক
৩১. ব্যারিষ্টার তওফিক নেওয়াজ
৩২. ব্যারিষ্টার আবদুর রাজ্জাক খান এবং
৩৩. ব্যারিষ্টার খান সাইফুর রহমান।
[ এই লিস্টটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন জনাব শওকত এবং এই বিষয়ে আমরা বন্ধু ব্লগে তাঁর একটি লেখাও পাবেন এই লিঙ্কে]
লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যায় উপরের এই লিস্টে নাম রয়েছে জামায়াতের আইনজীবি জনাব আব্দুর রাজ্জাকের এবং বি এন পি পন্থী আইনজীবি জনাব টি এইচ খানের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হোলো সে সময় তারা আইন নিয়ে আইন কমিশনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কোনো রকমের মতামত দেন নি। অথচ এই আইনজীবিরাই পরবর্তীতে এই আইন নিয়ে দেশে এবং বিদেশে নানান সেমিনার, সভায় ক্রমাগত বিরুপ মন্তব্য করেছিলেন। আমার প্রশ্ন হোলো, যে সময় উনাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিলো সে সময় যদি মতামত দিতেন তবে হয়ত সে মতামতের ভিত্তিতে আইন কমিশন একটি রিপোর্ট জমা দিতেন বাংলাদেশ সরকারকে এবং তখন হয়ত এই মতামতের ভিত্তিতেই আইনটি নিয়ে ভাববার সুযোগ থাকত। কিন্তু অপিনিয়ন চাইবার সময় আইন নিয়ে কথা না বলে, পরে এই আইন নিয়ে সমালোচনা করাটা তো এক ধরনের দূরভিসন্ধি মূলক কার্যক্রমের-ই আভাস।
নীচে সেই আইন কমিশনের রিপোর্টের মূল লিঙ্ক এবং কিছু ছবি দেয়া হোলোঃ [মূল রিপোর্ট এইখানে]
৩) কনসেপ্ট অফ ফেয়ার জাস্টিস
ফামা বার বার তার লেখায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যদিও তিনি আবার এই একই ট্রাইবুনালের কাছে রি-ট্রায়াল চান। ফামা বলছেন,
“আমার মাথাব্যাথা যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনাল fair justice, আচ্ছা এমনকি fair কেও বাদ, নূন্যতম মাত্রাতেও justice হচ্ছে কিনা তা নিয়ে”
এই যায়গাতে এসেই প্রশ্ন দাঁড়ায় ফেয়ার জাস্টিস নিয়ে ফামার ভাবনা কিংবা জানাশোনা আসলে কতদূর। কেননা একজন শিক্ষিত ব্যাক্তির কাছ থেকে নিশ্চই আমরা বাজারী টাইপ কমেন্ট বা বক্তব্য আশা করতে পারিনা। সে কারনেই এই পার্টিকুলার বিষয়ে ফামার জ্ঞান তত্বের অনুধাবন ক্ষমতা এবং জানবার সীমারেখাটি আমি খুব ক্রিটিকালী এসেস করতে চেয়েছি কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য সেই প্রশ্নের উত্তর আসলে আমরা পাইনা ফামার লেখায়। বরং নিজস্ব হতাশা এবং পিতার ইয়ার দোস্তোদের ধরার ফলে পুরো ব্যাপারটা নিজের পরিবারের কাঁধে চলে আসে কিনা এইরকম একটা আতংগ্রস্থতার কাঁপা কাঁপা আবেগী হাহাকার তার লেখার ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে বারংবার।
৩(ক) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালঃ “পার্সেপশন অফ ফেয়ারনেস” এবং “ফেয়ার জাস্টিস ইন রিয়েলিটি”
আমাদের এই ট্রাইবুনালের সাথে একটা স্পেসিফিক ধারনা জুড়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে ট্রাইবুনাল শুরু হবার অনেক আগ থেকেই। এই ধারনার নাম হচ্ছে “ফেয়ার ট্রায়াল” হচ্ছে না। এটা জামাতের ক্যাম্পেইনের ট্যাগ লাইন ছিলো এবং আছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিটা মূলত হোম ওয়ার্ক করে রাখতে চেয়েছে ট্রাইবুনাল শুরুরও অনেক আগে। তারা পৃথিবীর সব বড় বড় পি আর ফার্ম গুলোকে নিযুক্ত করেছে, সব চাইতে বেস্ট আইনী ফার্ম গুলোর সাথে কথা বলে রেখেছে, একাডেমিক, রাজনীতিবিদ, বুরোক্রেট, শিক্ষক তথা সমাজের সব স্তরের সাথে একটা সমন্বয় করেছে। সেটা দেশী এবং বিদেশী দুই ভাবে প্রোযোজ্য। সেদিক থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি কিংবা ঐ একি ভাবে পাল্লা দেবার জন্য যে আগ্রহ সেটি একেবারেই ছিলো না বললেই চলে। এর একটা কারন অবশ্য আছে। বাংলাদেশ সরকার যেই পার্টিকুলার ধারনার বশবর্তী হয়ে শুরুতে এবং আজ পর্যন্ত রয়েছে সেটি হচ্ছে আমাদের চলমান বিচার ব্যাবস্থার যে ধারা, ট্র্যাডিশন কিংবা যে ঘ্রাণ সেটিতেই নির্ভর করেছে। এটা সরকারের একটা ইগোইস্টিক প্রবলেমও ছিলো এই ভেবে যে, যদি দেশে বছরে হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে দেশীয় চলমান বিচার ব্যাবস্থায়, প্রসেস কিংবা প্রক্রিয়ার তবে এই ট্রাইবুনালো সেভাবে চলতে পারে। আর বিদেশী লবিইং, পি আর ফার্ম, লেখা লেখি এগুলো জবাব দেবার প্রয়োজন সরকার খুব একটা বোধ করে বলে মনে হয়না। খুব সম্ভবত দেশীয় ব্যাবস্থায় বিচার হবে আন্তর্জাতিক ভাবে রেকোগনাইজড অপরাধগুলোর, এই চিন্তার বা সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়েই। কিন্তু সরকার একটা ব্যাপার হয়ত বিবেচনায় আনলেও ট্রাইবুনালে সেটির প্রকাশ দেখাতে খুব একটা আগ্রহী হয়নি যে যাদের বিচার হচ্ছে এরা ৪২ বছর আগের তাদের নড়বড়ে অবস্থাটিকে ভেঙ্গে দেশের রাজনীতিতে কিছুটা হলেও স্থান করেছে এবং দেশের একটা অংশকে তারা ইতিহাসের ভুল পাঠ দিয়ে এই দেশেই লালন করে তুলেছে।
সুতরাং এদের একটা সুনির্দিষ্ট সমর্থক আছে, অর্থের ক্ষমতা আছে। এই ব্যাপারটা বিবেচনায় রাখতে পারত সরকার। তবে সরকার হয়ত সমর্থক, প্রভাবশালী, এসব বিষয় মাথায় না রেখে অভিযুক্তের বিচার হবে বা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবে আর ১০ জন অভিযুক্তের মতই এভাবেই ট্রিট করবার প্রয়াস পেয়েছেন। এটা ভালো কি মন্দ আমি সে তর্কে যাবোনা। সরকারের সমালোচনা কিংবা তারা কি করলে কি করতে পারত এটা নিয়ে আমার একটা নির্দিষ্ট ভাবনা আছে। আমি অন্য প্রবন্ধে এটি শেয়ার করব। ঐ যে শুরুতেই যে বলেছি যে এই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা একটা ট্যাগ লাইন নিয়ে এগিয়েছে “ফেয়ার ট্রায়াল” হচ্ছে না। এই ট্যাগ লাইনের সাথে যারা যারা হাত তুলেছেন সেটির প্যাটার্ন আমি কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি।
৩(খ) বিচার সম্পর্কে যারা ভাবছেন তাদের চিন্তার প্যাটার্ন এবং সে অনুযায়ী প্রকার ভেদঃ
(১) একটা অংশ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যে এই বিচার ফেয়ার না। এদের আইন বা কানুন বুঝবার দরকার হয়না। এদের রাজনীতির প্রতি আস্থা নেই। এরা সরাসরি জামাত-শিবির কিংবা পাকিস্তানপন্থী বা উগ্র ইসলামী মৌলবাদী কেউ এদের রাজনীতির সমর্থক, কেউ অভিযুক্তের আত্নীয়, ছেলে, মেয়ে, স্বজন ইত্যাদি।
(২) একটা অংশ হচ্ছে যারা স্বাধীনতা বিরোধী না কিন্তু আওয়ামী রাজনীতি পছন্দ করেনা। যেমন বি এন পি, এল ডি পি। এরা মনে করে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ফেয়ার ট্রায়াল হতে পারে না। আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক একটা স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় রত। ১৯৯৬ সালে জামাতের সাথে লীগ আন্দোলন করেছে বলে একটা যুক্তি তুলে ধরে কিংবা ধরবার চেষ্টা করে। এই অংশ ফেয়ার ট্রায়াল মনে করেন না আওয়ামীলীগের সাথে আদর্শিক, ব্যাক্তিক, বৈষয়িক, রাজনৈতিক ইত্যাদির দ্বন্দে। এই দ্বন্দের একটা লুপ আছে যেটাতে এরা বার বার ফেরত আসে এবং সেটি উত্তীর্ণ হতে পারে না শত চেষ্টা করেও। এটাও আওয়ামীলীগের প্রতি আস্থাহীনতার কারনে।
(৩) একটা অংশ ফেয়ার ট্রায়াল মনে করেনা পিওরলি আইনের দৃষ্টিকোন থেকে নিজস্ব বিচার, বিবেচনায় ও খুব সুক্ষভাবে পরিমাপের পর। যদিও এতা তাদের ব্যাক্তিগত ধারনা মাত্র। তারপরেও এই অংশটিকে আমি ট্রাইবুনালের সত্যকারের সমালোচক মনে করি এবং এদের মধ্যেই সত্যকারের ফেয়ার ট্রায়াল হোক, এমন চাওয়ার মানুষ পাওয়া যায়।
(৪) একটা অংশ ফেয়ার ট্রায়াল মনে করেনা পুরোই অর্থনৈতিক স্বার্থের কারনে। এদের ফেয়ার ট্রায়াল মনে করা আর না করা নির্ভর করে অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হচ্ছে। এরা মূলত বিদেশী লবি-ইস্ট, আইনজীবি ইত্যাদি। এই জাতীয় একটা অংশ দেশেও আছে। যেমন পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল ইত্যাদি।
সুতরাং পুরো প্যাটার্নটা লক্ষ্য করলে মূলত ৩ নাম্বার অংশটিকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে এবং তাদের ধারনায় ভুল থাকলে কিংবা তাঁরা এই প্রক্রিয়াটিকে বুঝতে না পারলে সেটি নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। সুতরাং ফেয়ার ট্রায়ালের ব্যাপারটি বলে কেউ নিজের ক্রেডিবিলিটির কোন অংশে আছেন সেটি হয়ত এখান থেকে যাচাই হতে পারে। অবশ্য এটা বলে নেয়া সমিচীন যে এই বক্তব্য সম্পূর্ণ আমার এবং আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই প্রসুত।
একটা ট্রাইবুনালের ফেয়ার ট্রায়াল কিংবা ইন্টারন্যশানাল স্ট্যান্ডার্ড বলতে আসলে কি বোঝায়? এটা কি বুঝে নেবার কিংবা ঘ্রাণ নেবার মত একটা ব্যাপার, কিংবা আমি মনে করে নিলাম, অমুক মনে করে নিলো, এমন কিছু? কিংবা আদৌ কি এই জাতীয় কোনো টার্ম একটা ধ্রুবকের মত কোথাও অবস্থান করে? এমন কোনো পরিমাপক কি আদৌ কোথাও রয়েছে যেখানে বলা হবে এই আইন মেনে চললে সেটি ফেয়ার, ঐ আইন মেনে চলে সেটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড? উত্তর হবে, না নেই।
ফেয়ার ট্রায়াল মূলত নির্ভর করে অভিযুক্তের অধিকার কতটা রক্ষিত হচ্ছে, একটা ট্রাইবুনালের যে নিয়মগুলো রয়েছে সেটা কতটুকু পুংখানুপুংখ ভাবে রক্ষিত হচ্ছে, এমন কোনো নিয়ম রয়েছে কি না যেটিতে কারো অধিকার খর্ব হবার সম্ভাবনা বিরাজ করে সর্বৈব ভাবে সেটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সর্বজনগ্রাহ্য যে মানবাধিকার চর্চা রয়েছে সেটির সাথে চলতে পারে। এখন এই উপাদানগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবয়বে ভিন্ন ভিন্ন দেশের এই জাতীয় ট্রাইবুনালে বিরাজ করে। কেননা অনেক সময় এসকল উপাদান একটি আইনে থাকলেও সেটির প্রকাশ ভঙ্গি কিংবা ব্যাবহার সেই দেশের প্রচলিত প্রক্রিয়ায় হয়। এটাতে দোষের কিছু নেই বলেই মনে করা হয়। আরেকটু ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে “কার্ডিনাল প্রিন্সিপাল ও ফেয়ার ট্রায়াল”, ন্যাচারাল জাস্টিস এগুলোর কথা যেগুলোর মূল সারমর্ম প্রিন্সিপাল হচ্ছে “ইকুয়ালিটি অফ আর্মস”।
এটার মানে হচ্ছে বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষেরই সমান সুযোগ থাকতে হবে তাদের অধিকার রক্ষায়। এটা হতে পারে বিভিন্ন অর্গানে। তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষী পরিচালনা সহ মামলার সকল ক্ষেত্রে। তারপরেও এতদিনের চর্চায় মূলত ফেয়ার ট্রায়াল হচ্ছে কি হচ্ছেনা, এই ব্যাপারটির সামান্যতম ধারনা পেতেও International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এর কিছু সুনির্দিষ্ট ধারাকে অনেকটা ধ্রুবকের মত ধরা হয়। আসুন সেই ধ্রুবকের সাথে আমরা আমাদের আইনটিকে একটু মিলিয়ে দেখি-
৩(গ) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে আমাদের ট্রাইবুনালের একটি তুলনামূলক উদাহরণ নীচে দেয়া হলোঃ [ লেখার এই অংশটুকুর মূল উৎস হচ্ছে ট্রাইবুনালের প্রিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তাঁর লেখা প্রবন্ধ “লেট দেয়ার বি লাইট” প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আমি সেটি অনুলিখন করেছি। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে।
১) এই আইনে অপরাধীকে দোষী প্রমাণের দায়ভার প্রসিকিউশনের যা বলা আছে ১৯৭৩ সালের আইনে ৬ নাম্বার চাপ্টার এর সাক্ষ্য অংশের ৫০ নাম্বার ধারায় । সুতরাং “the accused is presumed to be innocent until proven guilty” আইনের এই বিখ্যাত কথাটি সমুন্নত রয়েছে। সমগ্র আইনের কোথাও এই উক্তিটির বিরুদ্ধচারন করে কোনো ধারা নেই । এই কথা Article 14(2) of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এও বলা আছে।
২)Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR)এ যে অধিকারগুলোর উল্লেখ রয়েছে তা ICTA-1973 এর ক্ষেত্রেও খুব সুন্দর ভাবে রয়েছে । আসুন দেখা যাক-
ক) ICCPR এর আর্টিকেল ১৪(১) এ বলা আছে ফেয়ার এবং পাব্লিক হিয়ারিং এর কথা যা কি না যোগ্য , স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে হতে হবে । ICTA-1973 এর ক্ষেত্রে, ধারা ৬(২ক) এর ক্ষেত্রেও যোগ্য, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ট্রায়ালের কথা বলা হয়েছে । আবার ধারা ১০(৪) এ বলা রয়েছে , এই প্রসিডিংস হতে হবে পাবলিকলি এবং ট্রাইবুনাল যদি ঠিক মনে করে তবে ক্যামেরাও ব্যাবহার করা যেতে পারে ।
খ) ICCPR এর ১৪(৩) ধারায় বলা আছে যে, “Right to be informed promptly and in detail in a. language which he understands of the nature and cause of the charge against him” আবার এই কথা গুলোই বলা আছে ICTA-1973 এর ১০(১)(ক) , ১০(৩) এবং ১৬(২) ধারায়।
গ) ICCPR এর আর্টিকেল ১৪(৩)(খ) ধারায় বলা আছে যে , “Right to have adequate time and facilities for the preparation of his defence and to communicate with counsel of his own choosing . একনন আমরা যদি ICTA-1973 এর দিকে নিজর দেই, তাহলে দেখব যে, এই আইনের ১৭(২) ধারায় বলা আছে , “An accused person shall have the right to conduct his own defence before the Tribunal or have the assistance of counsel”
ঘ) ICCPR এর ১৪(৩)(গ) ধারায় বলা আছে যে, “Right to be tried without undue delay. ঠিক আমাদের আইন ICTA-1973 এর ১১(৩) এর (ক) ও (খ) ধারায় এই কথাগুলোই আরো ব্যখ্যা করে বলা আছে।
ঙ) ICCPR এর ১৪(৩)(ঘ) ধারায় বলা আছে , “Right of representation” এইদিকে আমাদের ICTA-1973 এর ১৭(২) ও ১২ ধারাতে স্পষ্ট করে এই কথাগুলো বলা আছে ।
চ) ICCPR এর ১৪(৩)(ঙ)ধারায় বলা আছে, “Right to produce and examine/cross examine witness”. ঠিক আমাদের ICTA-1973 এর ১০(ঙ) ধারা , ১০(চ),১০(ছ) এবং ১৭(৩) ধারাতে ঠিক ওই ICCPR বর্ণিত অধিকারগুলোর কথাই বলা রয়েছে।
ছ) ICCPR এর ১৪(৩)(চ) ধারায় বিনাখরচে অনুবাদকের কথা বলা হয়েছে । যা আমাদের ICTA-1973 এর ১০(২) ও ১০(৩) ধারাতে বর্ণিত রয়েছে।
জ) ICCPR এর ১৪(৩)(ছ) ধারায় “Right not to be compelled to testify against himself or to confess guilt” বলা হয়েছে । যা আমাদের ICTA-1973 এর ৮(৫) ও ১৮ ধারা দুইটি পড়লেই দেখা যাবে যে, এই অধিকার রক্ষিত হয়েছে ।
ঝ) ICCPR এর ১৪(৪) ধারায় আন্ডার এইজের ব্যাক্তির কথা বলা হয়েছে । যা বাংলাদেশের The Children Act-1974 খুব ভালো করেই রক্ষা করে । এই আইন নিয়ে ICTA-1973 তে কোনো বাঁধা নেই।
ঞ) ICCPR এর ১৪(৫) ধারায় “right to review the conviction and sentence” এর কথা বলা হয়েছে। যা আমাদের ICTA-1973 এর ২১ ধারাতে বর্ণিত রয়েছে।
ট) ICCPR এর ১৪(৭) ধারায় “right not to be tried for offences which has been tried before” এর কথা বলা হয়েছে । যা আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত রয়েছে ও উক্ত অধিকার সমুন্নত রয়েছে ।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে চেষ্টা করলাম যে , আন্তর্জাতিক ভাবে , Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এ বর্ণিত অধিকারগুলোই আসলে একজন মানুষের অধিকার যে কোনো ট্রায়ালে নিশ্চিত করে এবং International Bar Association যখন আমাদের ১৯৭৩ সালের আইন সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলো তখন এই অধিকার গুলো আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনে নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছিলো।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে বুঝতে পারলাম যে , ICTA-1973 এর মাধ্যমে মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত হচ্ছে।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখতে চেষ্টা করলাম যে , আন্তর্জাতিক ভাবে , Article 14 of International Covenant on Civil and Political Rights,1966 (ICCPR) এ বর্ণিত অধিকারগুলোই আসলে একজন মানুষের অধিকার যে কোনো ট্রায়ালে নিশ্চিত করে এবং International Bar Association যখন আমাদের ১৯৭৩ সালের আইন সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলো তখন এই অধিকার গুলো আমাদের ১৯৭৩ সালের আইনে নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছিলো।
এই প্রিসাম্পশন অফ ফেয়ারনেসের উত্তরটা এখানে শেষ করবার আগে আরো কিছু অধিকারের কথা বলে নেই- যেটা আমাদের আইনেই রক্ষিত আছে। এই রিসার্চটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের নিজের করা। আমি কেবল তা তুলে আমার করা অনুবাদ সহ- দেখে নেই এই ট্রাইবুনাল কি করে একটি ন্যায্য বিচারের ট্রাইবুনাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে। এর আগে আমরা দেখে নেই বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবি জনাব রফিক উল হক এই বিচার নিয়ে কি বলেছেন। তিনি বলেছেন-
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ নয় যারা এ কথাটি বলছেন তারা বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন পর মানবতাবিরোধীদের বিচার হচ্ছে। আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। যত দ্রুত বিচার হবে ততই দেশ ও জাতির জন্য ভাল হবে। বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীদের কঠোর সমালোচনা করে সুপ্রীমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক জনকণ্ঠকে এ কথা বলেছেন। এদিকে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে তদন্ত সংস্থা। তার বিরুদ্ধে ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীসহ তাদের নেতৃবৃন্দ বলে আসছেন, ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের ঐ বক্তব্য প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল হক আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল যে নিরপেক্ষ নয় তারা সে কথাটি কিভাবে বলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিকমানেরও। দুটি ট্রাইব্যুনালে যে ৬ জন বিচারক রয়েছেন তারাও নিরপেক্ষ বলে আমি ভাবি। বিএনপি জামায়াত এ কথা বলছে না কেন ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ না। ৪০ বছর পর বিচার শুরু হয়েছে। অনেকেই চাইছে বিচারটা বিলম্বিত বা বন্ধ করা।
৩(ঘ) এই বিচারের আইনে রক্ষিত অধিকার সমূহঃ
নীচের এই অংশটুকুর সব কিছুই মূলত দেয়া রয়েছে ট্রাইবুনালের মূল আইন এবং সেটির রুলস এন্ড প্রসিজিওরে। কিন্তু এই আইন ও কানুন ঘেটে এই পুরো ব্যাপারটি শ্রম দিয়ে বের করেছে ইন্টারন্যশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজির অসম্ভব মেধাবী সকল কর্মীরা। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বলেই আজ আমরা এত সহজে সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছি। তাঁদের এই গবেষনাটি ইংরেজীতে ছিলো, আমি খানিকটা বাংলায় অনুবাদ করে নিয়েছি সকলের বুঝবার স্বার্থে। আই সি এস এফ ফোরাম কে তাঁদের এই রিসার্চের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনেক ধন্যবাদ।
১) উল্লেখিত আইনের [International Crimes Tribunal Act-1973 (ICTA-1973)] 6(2A) ধারায় বলা রয়েছে যে এই আইনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাইবুনালকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হতে হবে। (1) Trial to be held in a fair, impartial and independent tribunal [Section 6(2A) of the ICTA],
২) বিচার দ্রুত সময়ে হতে হবে 11(3) (a) এবং উন্মুক্ত শুনানী হবে [Section 10(4) ICTA] ,(2) Expeditious [Section 11(3)(a)] and public hearing [Section 10(4) of the ICTA],
৩) অভিযুক্ত তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হবেন [Section 16], (3) Accused to know of the charges [Section 16] against him,
৪) মিথ্যা কিংবা হয়রানী মূলক অভিযোগ আনা থেকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরত থাকবেন [Rule 29(1)], (4) Prohibition of prosecution on frivolous charges [Rule 29(1)]
৫) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি যদি অপর্যাপ্ত মনে হয় বিচারকের কাছে তবে তিনি অভিযুক্তকে এই সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দিবেন। (5) Discharge an accused if the tribunal finds insufficient grounds to continue the trial [Rule 37]
৬) স্বেচ্ছারচারী মূলক ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। শুধু মাত্র বিধি ৯ এর ৫ অনুযায়ী ট্রাইবুনালের নির্দেশের মাধ্যমে একজন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে এই আইনের অধীনের কোনো অভিযোগে। (6) Prohibition of arbitrary arrest, as one can only be arrested or be detained only by the Order of the Tribunal issued under the ICTA and Rules of Procedure [Rule 9]
৭) জামিন চাইবার অধিকার রয়েছে। (7) Right to seek bail. [Rule 34(2)]
৮) সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি ব্যাক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হয় তবে সেইক্ষেত্রে অভিযুক্তের জামিন চাইবার অধিকার থাকবে। (8) Right to bail if investigation is not completed within a specified period [Rule 9(5)]
৯) নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন এমন বক্তব্যের ব্যাপ্যারে ব্যাক্তির সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। (9) Protection against self-incrimination [Rule 43(7)]
১০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ক্ষেত্রে ব্যাক্তির রক্ষাকবচ রয়েছে। (10) Safeguards related to confessional statements [Rule 25(2) & Section 14(2)],
১১) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ব্যাক্তি স্বেচ্ছায় বিচারক সত্বা/ প্রতিষ্ঠান/আদালতের কাছে দিবেন। (11)Confessional statements must be voluntary and made before a judicial entity [Section 14(2)]
১২) ব্যাক্তি নির্যাতন, চাপ, ভয়ভীতি, হুমকির সম্ভাবনা রয়েছে এমন অবস্থা থেকে রক্ষাকবচ পাবেন বলা রিয়েছে বিধি ১৬(২) তে। (12) Safeguards against possibilities of torture or coercion, duress or threat of any kind. [Rule 16(2)]
১৩) প্রদত্ত সাক্ষ্য উভয় পক্ষের কাছে উন্মুক্ত হতে হবে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফরমাল অভিযোগ, সেইসাথে তদন্তকালীন সময়ের কাগজ-পত্র অভিযুক্ত পাবার অধিকারী হবেন। (13) Disclosure of evidence [Section 18(4)] and entitlement of having copy of formal charge together with documents collected during investigation,
১৪) নতুন কোনো সাক্ষ্য যদি রাষ্ট্রপক্ষ যোগ করতে চান তবে সেটি বিবাদী পক্ষকে জানাতে হবে। (14) Notice to the defense in case of inclusion of additional witnesses by the prosecution [Section 9(4)]
১৫) বিবাদী পক্ষকে তার অবস্থান বিষয়ে প্রস্তুতি নেবার জন্য যথেষ্ঠ সময় দিতে হবে। (15) Adequate time for preparing defense [Rule 38(2)]
১৬) কাগজ-পত্র অনুসন্ধানের অধিকার রয়েছে। (16) Right to inspect documents [section 16(2)]
১৭) আইনী পরামর্শক নিয়োগের অধিকার রয়েছে (17) Engaging legal counsel [Section 17(2)]
১৮) বিবাদী পক্ষের আইনী পরামর্শক না থাকলে রাষ্ট্র নিজ খরচে আইনী পরামর্শক নিয়োগ দেবেন। (18) Appointing defense counsel at state’s expense [Rule 43(1) and Section 12 of ICTA]
১৯) অভিযুক্ত নিজেই নিজের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। (19) Right to conduct own defense [section 17(2)]
২০) বাংলাদেশ বার কাউন্সিল রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ট্রাইবুনাল বিদেশী আইনজীবিকে এই ট্রাইবুনালে তার ক্লায়েন্টের পক্ষে লড়বার অনুমতি দিতে পয়ারে। (20) The tribunal may allow appearance of foreign counsel defense if Bangladesh Bar Council (i.e., The regulatory authority for practicing lawyers) permits so (Rule 42)
২১) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসবে সেটির ব্যখ্যা তিনি চাইতে পারেন। এই অধিকার তার রয়েছে। (21) Right of the accused to explain charges [Section 17(1)]
২২) ভাষা বুঝতে সমস্যা হলে দোভাষীর সুযোগ রয়েছে। (22) Availing services of an interpreter [Section 10(3)],
২৩) বিবাদী তার মামলা উপ্সথাপন করতে পারবেন এবং সেই সাথে তিনি বাদী পক্ষের আনীত সাক্ষীকে পালটা জেরা করতে পারবেন। (23) Full opportunity to present the case of the defense including the right to cross examine prosecution witnesses [section 17(3)],
২৪) বিবাদী পক্ষ তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী আনতে পারবেন। (24) Right to call their own defense witnesses [Section 10(1)(f)]
২৫) বিবাদী তার পক্ষে সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারবেন। (25) Right of the accused to produce evidence in support of his defense [section 17(3)],
২৬) ট্রাইবুনাল প্রদত্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পুনঃসিদ্ধান্তের আবেদন করতে পারবেন। (26) Review of the decisions of the Tribunal [Rule 26 (3)],
২৭) ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। (27) Right to appeal against both conviction and sentence [section 21(1)]
উপরের অধিকার ও সুযোগ গুলো ছাড়াও অনেক সুযোগ সুবিধা এই আইনে রয়েছে। যেমনঃ
২৮) অভিযুক্ত মামলা চলাকালীন সময়ে নির্দোষ বলেই বিবেচিত হবেন। (28) Presumption of innocence (Rule 43(2)
২৯) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করবার দায় বাদীর/ রাষ্ট্রপক্ষের। (29) Burden of Proof on prosecution beyond reasonable doubt (Rule 50)
৩০) বিচারিক কার্যক্রম যাতে দ্রুত হয়, সেই অধিকার রয়েছে অভিযুক্তের। (30) Right to speedy trial [Rule 43(5)]
৩১) নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন এমন বক্তব্য ও জবানবন্দীর ব্যাপ্যারে ব্যাক্তির সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। (31) Prohibition of self-incrimination or making confession [Rule 43(7)]
৩২) একই অপরাধে দুইবার শাস্তি না দেয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষা রয়েছে। (32) Protection against double jeopardy [Rule 43(3)]
৩৩) সাক্ষী এবং ভিকটিমের জন্য সুরক্ষার ব্যাবস্থা রয়েছে। (33) Provision of witness and victim protection [Rule 58A]
৩৪) বিচারিক কার্যক্রম প্রয়োজনবোধে গোপনে করবার ব্যাবস্থা রয়েছে। (যেসব ক্ষেত্রে সাক্ষীরা নিজেদের পরিচয় পরকাশ করতে চান না)(34) Provision for proceedings in camera [Rule 58A (3)]
৩৫) Failure to prove the plea of alibi and or the documents and materials by the defence shall not render the accused guilty.
উপরের আলোচনা থেকে খুবই স্পস্ট ভাবেই প্রতীয়মান হয় যে এই বিচার যে কতটা নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু উপায়ে হচ্ছে। মূলত এর পর আর প্রশ্ন থাকাই উচিৎ নয় বলে আমি মনে করি। এই বিচারের ব্যাপারে আস্থার ব্যাপারে কয়েকটি “ট্রিকি” পর্যবেক্ষন করেছি আমি। সেখানে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের আইনজীবি ট্রাইবুনালের রায়ের পর উচ্চ আদালতে যাবার প্রাক্কালে বার বার বলেছেন, “আমরা আশা করি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাব”, মজার ব্যাপার হচ্ছে ফামা যেই বিদেশী সংস্থার কথা বলছেন সেসব বিদেশী সংস্থার এক্টি ইন্টারন্যশনাল বার এসোসিয়েশান এই বিচারের আইনের কিছু সংশোধন দরকার বলে রিকমেন্ড করবার পরেও তারা এটা স্পস্ট করে উল্লেখ করেছে যে- ‘broadly compatible with current international standards.’ [Conclusions’, IBA Legal Opinion, 29 December 2009,] [ এই ইংরেজী হরফে লেখা তথ্যটুকু নেয়া হয়েছে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের “লেট দেয়ার বি লাইট” প্রবন্ধ থেকে]
যাই হোক, ফেয়ার জাস্টিস হচ্ছে কি হয়নি সেটির প্রমাণ আমি যুক্তি, আইনী ব্যাখ্যা সব কিছু দিয়েই দিলাম। আবেগের বসে চিৎকার, চেঁচামেচি করবার সুযোগ এখানে একেবারেই নেই। যা বলার বলতে হবে এই ট্রাইবুনালকে পুরো-পুরি বিচার বিশ্লেষন করেই।
৪) কাদের মোল্লার বিপক্ষের সাক্ষী মোমেনাঃ প্রসিকিউশন উইটনেস-৩
কাদের মোল্লার বিপক্ষে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী প্রসিকিউশন উইটনেস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফামা আমাকে ডেভিড বার্গম্যানের কিছু গার্বেজ ধরিয়ে দিলো। ডেভিড বার্গম্যান মোটেও একজন নিরপেক্ষ ব্যাক্তি নন এবং আমি মনে করি তিনি তার জাজমেন্টে অসৎ। ফামা যেভাবে ডেভিডকে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক-টাদিক বলে একাকার করে ফেলেছেন তাতে করে আসলে ফামার অসহায়ত্বটাই আবার টের পেলাম। নিউ এইজের মত এক্টা থার্ড গ্রেড পত্রিকায় কাজ করে আবার আন্তর্জাতিক সাংবাদিক। হা হা। মনে রাখতে হবে যে, এই ট্রাইবুনাল নিয়ে উলটা পাল্টা কথা বলে ডেভিড ট্রাইবুনালের কাছে ক্ষমা চেয়ে কিন্তু একবার পার পেয়েছে। আর যেখানে আপীলেট ডিভিশান ৭৯০ পাতার মত দীর্ঘ রায় দিয়েছেন অফিসিয়াল সব ডকুমেন্ট সহ, সেখানে আমি ডেভিডের মত এমন একটা বায়াসড ব্যাক্তির ব্লগ দেখে জ্ঞান নিতে যাব কিসের দুঃখে। বরং আমি মনে করি, ডেভিড আমার লেখা দেখে কিছুটা শিখুক। যেমন আমার লেখা দেখে শিখেছে জামাতের আইনজীবি টবি ক্যাডমেন এবং তার নিজের ব্লগে গিয়ে আমাকে নিয়ে এক নাতি দীর্ঘ রচনা প্রসব করে ফেলেছিলো। সেগুলোর ডিটেইল পাওয়া যাবে এখানে-
আর এই ডেভিড বার্গম্যান যে সঠিক কথা তার ব্লগে লেখেন না সেটি আদালতই স্পস্ট বলেছেঃ নীচে সেই মামলার স্ক্রীন শট দেয়া হোলোঃ
সাক্ষী মোমেনার ব্যাপারে আমি দীর্ঘ প্রবন্ধ এরই মধ্যে মুক্তমনায় লিখেছি। নতুন করে সেসব আবার বলে এই লেখা দীর্ঘ করতে চাইনা। যারা মোমেনার ব্যাপারে আমার লেখাটি পড়তে চান, তারা এই লিংকে ক্লিক করে লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
৪(ক) তারপরেও এখানে মোমেনার ব্যাপারে আমি ব্রিফলি একটু বলি-
মোমেনার ইস্যুটি খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। মোমেনা মূলত তার জীবনে একবারই সাক্ষ্য দিয়েছেন তার পিতা-মাতা আর ভাই-বোন হত্যা মামলায়। আর সারা জীবন যদি কোন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তবে সেটি একটি প্রোপার বিচার ব্যাবস্থায় আইন কিংবা কানুন মানা সাক্ষ্য হয়েছে, এই বিবেচনায়। ধর্তব্য, আদারোয়াইজ, এই ধরনের কথার কোনো দাম পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো আদালতে নেই। মোমেনার যেই জবানবন্দীর কথা বলা হচ্ছে, যেটি তিনি মিরপুরের জল্লাদ খানার যে যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে কিংবা অভিযুক্তের আইনজীবি দাবী করছেন সেটি আদালত সম্পূর্ণ ভাবে অসাড় হিসেবে অভিহিত করেছেন। যখনই কেউ এই জাতীয় অভিযোগ করবেন তখন আপনার ঘাড়েই দায় বর্তায় আপনার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করবার, প্রসিকিউশনের উপর নয়। কাদেরের আইনজীবি একটা কাগজ নিয়ে এসেছে ছবি ফরম্যাটে[ফটোস্ট্যাট] যাতে কোনো কর্তৃপক্ষের সাক্ষর নেই, সাক্ষ্য দাতার সাক্ষর নেই, এটি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা নেই কিংবা বলতে পারেনি, এই বিচারের আইনের ধারা ৯, সাব সেকশন ৫ এর নিয়ম ফলো করা হয়নি, এটা সৌর্ন কোনো সাক্ষ্য নয়। [এই অংশের সত্যতা নিরূপনে আমি রেফার করছি ট্রাইবুনাল-২ এর মামলার রায়, পৃষ্ঠা ১১৯, প্যারা ৩৯১-৩৯২]
উপরের যে আইনী বাধ্যবাধকতা মূলক ল্যাকিংস গুলো আসামী পক্ষের থেকে রয়েছে, সেটি ব্যাতিরেকে এখন যদি আপনি দাবী তোলেন যে এই ধরনের সাক্ষ্য গ্রহন করতে তবে এন্ড অফ দা ডে আমি বলব, আপনারাই আসলে বাধ্য করছেন বা প্রেশার ক্রিয়েট করছেন যে এই কোর্ট ক্যাঙ্গারু কোর্ট হয়ে যাক, শুধু মাত্র আপনাদের স্বার্থের সময় আর বাকী সময় আইনের এই থ্রেশ হোল্ড না মানলেও চলবে। আজকে যদি সেইম ব্যাপারটা প্রসিকিউশনের কেউ করতে চাইত এবং বিচারক একই স্ট্যান্ড নিত, তবে কি আপনি বলতেন না যে আইন রক্ষিত হয়েছে? তবে কেন নিজেদের সুবিধা হয়, এমন মুহুর্ত গুলোতেই প্রোপাগান্ডা বা মিথ্যে ছড়ান?
আমি যদি ধরেও নেই মোমেনা বেগম যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে এই সাক্ষ্য দিয়েছে সেখানেও কথা থাকে। আমি এই জবানবন্দী পড়েছি। যদিও সঠিক বাক্য হবে এটি মোমেনার বক্তব্য এর প্রেক্ষিতে যাদুঘর কর্তৃপক্ষের অনুলিখন, [যদি বক্তব্য দিয়েছেন ধরে নেই] যেমন, উক্ত সময়ে বা উক্ত এলাকায় ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন ভিক্টিমের বক্তব্য কি ছিলো। এখানে মোমেনার উদ্ধৃতি দিয়ে যা বলছেন সেটা এমন নয় যে সেটি প্রথম পুরুষ ব্যাকরণে বলা হচ্ছে যেমন, “আমি মোমেনা এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে…”
আমি মোমেনার এই বক্তব্য দৈনিক সংগ্রামে পড়েছি। পড়েই বোঝা যায় যে এখানে কত রকমের দূর্বলতা আছে, এই দূর্বলতা বুঝবার জন্য আমাকে আপীলেট ডিভিশানের বিচারপতি কিংবা মহকুমার হাকিম হবারও প্রয়োজন পড়ে না আসলে। একজন সাধারণ ব্যাক্তিই বুঝবেন এটি দেখার সাথে সাথে। এই বক্তব্যে কাদের মোল্লার নাম বলা দূরে থাকুক, বিহারী আক্তার গুন্ডা, হাক্কা কিংবা নেহাল গুন্ডার নামও নেই যেই নামগুলো এই আলী লস্কর হত্যা মামলায় বার বার এসেছে কাদেরের সহযোগী হিসেবে। এই কারো নাম না বলাটাই আসলে অনেক কিছু প্রমাণ করে যে, যাদুঘর কর্তৃপক্ষ মূলত মূল ঘটনার বর্ণনা দিতে চেয়েছেন কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাক্তির নাম উল্লেখ ব্যাতীত। এটা তাদের একটা স্ট্র্যাটেজী হতে পারে হয়ত, যেহেতু তখন পর্যন্ত এই সুনির্দিষ্ট অপরাধ প্রমাণিত ছিলো না।
৫) আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাংলাদেশ
আমি আগেই বলেছি আমাদের এই ট্রাইবুনালের সাথে একটা স্পেসিফিক ধারনা জুড়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে ট্রাইবুনাল শুরু হবার অনেক আগ থেকেই। এই ধারনার নাম হচ্ছে “ফেয়ার ট্রায়াল” হচ্ছে না। এটা জামাতের ক্যাম্পেইনের ট্যাগ লাইন ছিলো এবং আছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিটা মূলত হোম ওয়ার্ক করে রাখতে চেয়েছে ট্রাইবুনাল শুরুরও অনেক আগে। তারা পৃথিবীর সব বড় বড় পি আর ফার্ম গুলোকে নিযুক্ত করেছে, সব চাইতে বেস্ট আইনী ফার্ম গুলোর সাথে কথা বলে রেখেছে, একাডেমিক, রাজনীতিবিদ, বুরোক্রেট, শিক্ষক তথা সমাজের সব স্তরের সাথে একটা সমন্বয় করেছে। সেটা দেশী এবং বিদেশী দুই ভাবে প্রোযোজ্য।
এই লবিং গুলো তারা করেছে সম্পূর্ণভাবে অর্থ দিয়ে। টাকার বিনিময়ে। এগুলোর প্রমাণ আমরা পাই মীর কাশেম যখন ক্যাসিডি এন্ড এসোসিয়েটস কে শত শত হাজার ডলার দেয় লবিং এর জন্য।
httpv://www.youtube.com/watch?v=GVYLy7nN_w8
এইদিকে ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশান এর মেম্বার হচ্ছে জামাতের আইনজীবি টবি ক্যাডমেন, সেই তারাই আবার এই এসোসিয়েশানের নাম করে এই ট্রাইবুনালের সমালচনা করে। হাস্যকর কর্মকান্ডের একটা লিমিট থাকা দরকার। ইকোনোমিস্টের জনাব বানিয়ান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্রাড এডামস কিসের জন্য আমাদের ট্রাইবুনালের সমালোচনা করে তা এখন দেশের আবাল-বৃদ্ধ বনিতা পর্যন্ত জানেন। যেই টবি ক্যাডমেন হচ্ছে ডিফেন্সের লইয়ার সেই একই ক্যাডমেন আবার ট্রাইবুনালের সমালোচক আবার তাকেই বিদেশী ট্যাগ দিয়ে বলা হচ্ছে এরাই নাকি সমালোচনা করছে। হাসি চেপে রাখাও তো দায়।
অন্যদিকে আমাদের ট্রাইবুনাল নিয়ে কোনো টাকা ছাড়াই সত্য কথা লিখেন সব বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। ওয়াশিংটন পোস্টে
Paulo Casaca [founder and executive director of the South Asia Democratic Forum] বলেন,
Many of those who opposed the tribunals when they started have honestly observed them as they have progressed and now have a positive impression of them and the honest, straightforward way they have done their work. Stephen J. Rapp, U.S. ambassador at large for war-crimes issues, duly concluded in 2011 after three visits to the country: “We have full trust in the good intentions of ICT prosecutors and judges. I think these are enough for fair justice.” Based on my own observations, it is fair to say the ICT compares favourably with other tribunals being conducted around the world, particularly the one in Iraq that followed the U.S.-led operation there.
The question is whether or not the crimes of which the accused has been convicted deserve the maximum penalty allowed under the law. In this regard, my position is definitely yes. Unfortunately, those who support those accused of perpetrating genocide against the Bangladeshi people have continued to try to derail the proceedings. They have done so by launching indiscriminate terrorism campaigns against civilians and targeted assassinations of court witnesses and members of the judicial system. During a recent meeting I had with one of the prosecutors of the tribunals, he said he was receiving death threats from these individuals. He told me these threats were widespread, but would not change his course of action.
তিনি ওয়েস্টার্ন প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে আরো বলেন যে,
In the West, however, they are waging a multimillion-dollar campaign of denial and propaganda trying to portray themselves as the innocent victims of political manoeuvring. Particularly active in this lobbying campaign has been Human Rights Watch. According to some inside the judicial system, it has waged the most aggressive and least scrupulous attacks against the Bangladeshi court proceedings. It is fascinating that this group would be standing up for those who have been convicted of murder and rape rather than their victims. Even more surprising, I understand that representatives of the organization have never actually visited the tribunals to establish a basis for its criticism.
এই কোর্টের মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি এও বলেন যে এটি সর্বোত্তোম মানের কোর্ট যা অন্য কোর্টকেও ছাড়িয়ে গেছে।
The Western world should not fall prey to this sort of campaign. Indeed, any comparison of Bangladesh tribunals with the principles, methods and results of recent international experiences of trials on crimes against humanity such as Cambodia, Cameroon, Iraq or Rwanda will demonstrate that the Bangladesh tribunals are comparable and even exceed the standards of these other proceedings. The Pakistani butchery committed in 1971 continues to haunt the Bangladeshi people. The tribunals are an important step toward bringing them the respect and humanity they were denied before.
শুধু তাই নয়, খোদ ইন্টারন্যশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি স্যাং হিউইন সং কি বলেন এই ট্রাইবুনাল নিয়ে- [ এই তথ্যটুকুর সন্ধান আমি মূলতঃ পেয়েছি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম এর এক্টি রিসার্চ পেপার থেকে যেই রিসার্চ পেপারটি মূলত তৈরী করা হয়েছিলো Stephen J. Rapp কে উদ্দেশ্য করে। [স্টিফেন জে র্যাপ যিনি একজন- American lawyer and the United States Ambassador-at-Large for War Crimes Issues in the Office of Global Criminal Justice। আই সি এস এফ এর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা]
In December 2009, ICC President Mr Justice Sang-Hyun Song expressed his full confidence in the ability of the Bangladeshi legal system to address crimes identified under ICTA. Justice Song stated, “The ICC has no room to intervene in war crimes committed in 1971. Furthermore, he reiterated that the ICC‟s jurisdiction covers crimes committed after the institution’s establishment in2002. Justice Song maintained that the ICC did not override national jurisdiction. It is therefore evident in this particular case that the provisions of the ICC shall not override the jurisdiction of the Bangladesh legal system.
[সূত্রঃ The Daily Star, Dhaka to ratify Rome Statute of international court before March‟ Foreign Minister tells ICC President‟ (Tuesday, December 8, 2009). এবং New Age, ICC envisages Bangladesh’s role in global campaign for rule of law Bangladesh’s justice system capable enough to hold trial of war crimes: Song Tuesday, December 8, 2009]
ফামা আমাকে বলছিলো,
“জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয়ান কম্যুনিটী থেকে শুরু করে এমনেষ্টি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস থেকে শুরু করে একটা, স্রেফ একটা ইন্টারন্যাশনাল (ওহ প্লীজ, ইন্ডিয়া ছাড়া) ভয়েস দেখান যে/যারা এই ট্রাইবুনালকে ডিসগাষ্টিং পলিটিক্যাল ড্রামা বলেনি”
আমি মনে হয় ফামা’র উত্তর দিতে পেরেছি যথাযথ রেফারেন্স দিয়েই। এর পরে এই বিষয়ে আসলে কি-ই আব বলব এভাবে কংক্রীট প্রমাণ দেবার পর?
৫(ক) পৃথিবীর এই জাতীয় অন্যান্য ট্রায়াল কি সমালোচনার বাইরে ছিলো?
সহজ কথা উত্তর হচ্ছে, না। কোনো ট্রাইবুনালই সমালোচনার বাইরে ছিলো না।
আপনারা জানেন যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বার বার এই বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে যে এই ট্রাইবুনাল বায়াসড এবং এই ট্রাইবুনাল তারা চায় না। তারা চায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অধীনে বিচার। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ১৯৯৮ সালের আগে সংঘঠিত কোনো অপরাধের বিচারই করতে সক্ষম নয় তারপরেও তারা এই দাবি করে। সে যাক, সম্প্রতি এই আন্তর্জাতিক আদালত একটি মামলার রায় দিয়েছেন যেটি সর্বাধিক পরিচয় পেয়েছে “লুবাঙ্গা ট্রায়াল” হিসেবে। (সূত্র:http://bit.ly/w1wB76)
আপনারা শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন এই মামলার রায় নিয়ে শুধু ডিফেন্স পক্ষ নয়, পৃথিবীর অনেক বড় বড় আইনবিদ, এই বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ বলেছেন এই আদালতের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। সেখানে প্রশ্ন অভিযোগ উঠেছে। সেখানে প্রশ্ন উঠেছে যে আসামী লুবাঙ্গার বিরুদ্ধে যে সাক্ষী আনা হচ্ছে সে সাক্ষীদের এবং এই সাক্ষীদের যিনি প্রশ্ন করেছেন (ইন্টারমিডিয়ারিস) তাদের সকলকে অর্থের বিনিময়ে কেনা হয়েছে, পরবর্তীতে যখন এই ইন্টারমিডিয়ারিস দের পরিচয় প্রকাশ করবার জন্য আদালত নির্দেশ দিলো তখন প্রসিকিউটররা সেটি প্রকাশ করতে অস্বীকার করে এবং দুই দুইবার মামলা বন্ধের উপক্রম হয়। এছাড়াও লুবাঙ্গার বিচার ৬ বছর ধরে চলছে এই ব্যাপারেও তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ আসে, একপক্ষীয় তদন্ত, প্রসিকিউশনের পারদর্শিতা কিংবা তারা সব অপরাধের বিরুদ্ধে চার্জ আনেনি ফলে তারা সত্যকারের ভিক্টিমদের সাথে প্রতারণা করেছে এমন সব অভিযোগ প্রকাশ হতে থাকে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এই মামলায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, যেটি আমাদের দেশের এই স্বাধীনতাবিরোধীদের সবচাইতে বড় আস্থার স্থান সেটি সম্পর্কেও এখন অভিযোগ উঠছে। সত্য কথা বলতে পৃথিবীর কোনো ট্রাইবুনালই আসলে সমালোচনার বাইরে ছিলো না।
৫(খ) আরো কিছু সমালোচনার চিত্রঃ
১) জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের উদ্যোগে রুয়ান্ডাতে ১৯৯৪ সালে সঙ্ঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের ট্রাইবুনাল শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সালে। মোটামুটি ভাবে বলা যায় এই বিচার শেষ হয়েছে ২০১২ সালে তবে কেউ কেউ বলছেন আরো কয়েক জনের বিচার করা হতে পারে যেটি শেষ হতে ২০১৪ সাল হয়ে যেতে পারে। এই বিচার অত্যন্ত স্লো হচ্ছে এই অভিযোগ বার বার তোলা হয়েছে। যদিও এটি ইউ এন-এর সরাসরি হস্তক্ষেপে বিচার চলেছিলো। অর্থও লেগেছে প্রচুর, সময়ও লেগেছে আবার সমালোচিতও হয়েছে।
২) কম্বোডিয়া সরকার এবং জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে খেমার রুজ তথা পলপট সরকারের সময় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সংঘঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার শুরু নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে এবং কাগজে কলমে বিচার আদালতে গড়ায় ২০০৭ সালের জুলাইতে। এই বিচার ইউনাইটেড নেশন্স এবং সরকারী সমন্বয়ে চল্লেও এই বিচার রাজণৈতিক হতক্ষেপে হয়েছে বলে বার বার সমালোচিত হয়েছে, খরচও হয়েছে প্রচুর আবার বিচার করেছে মাত্র ৫ জনের। যার মধ্যে বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতায় একজন অভিযুক্ত মরে গেছে।
৩) ১৯৯১ সাল থেকে ইয়াগোস্লোভিয়াতে সঙ্ঘঠিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অপরাধের জন্য নেদারল্যান্ডের হেগে জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ট্রাইবুনাল গঠিত হয় ১৯৯৩ এর মে মাস থেকে। ২০১৩ তেও ৭টি মামলা চলছিলো। এই পর্যন্ত গত ২০ বছরে বলার মত ৯৭ টি মামলা নিষ্পত্তি করতে পেরেছে এই কোর্ট। জাতিসঙ্ঘের অধীনে বিচার হবার পরেও এই ট্রাইবুনাল অসংখ্য সমালোচনা ফেস করেছে। যেমন- এই ট্রাইবুনাল রাজনৈতিক, প্রচুর খরুচে ট্রাইবুনাল, অকার্যকর, বন্দীদের টর্চার করা হয়, অমানবিক আচরন করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। মিলোসোভিচের মৃত্যু নিয়েই এই ট্রাইবুনাল অনেক সমালোচিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মিলোসোভচের আইনজীবি ছিলেন জনাব স্টিভেন কে কিউসি, যিনি কিনা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের অভিযুক্তদের পক্ষেও ওকালতি করেছেন এবং তার চেম্বারের একজন টবি ক্যাডমেন।
৪) ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিয়নে সঙ্ঘঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রেক্ষিতে ২০০২ সালে সিয়েরা লিওন সরকার এবং জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় গঠিত হয় স্পেশাল কোর্ট। প্রতি পদে পদে এই বিচার সমালচিত হয়েছে এটি আমেরিকার চাপে বিচার হয়েছে কিংবা হচ্ছে এই বলে। বলা হয়ে থাকে আমেরিকা সিয়েরা লিওনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করবার জন্যই এই বিচারের নাটক জাতিসঙ্ঘঘ দিয়ে সাজিয়েছে।
পৃথিবীতে গণহত্যার বিচারের জন্য কোনো বিচারই আসলে সমালোচনার বাইরে ছিলো না। হোক সেটি ইউনাইটেড নেশন্সের উদ্যোগে কিংবা নিজেদের দেশে গঠিত কোনো নিজস্ব ট্রাইবুনাল (যেমন বাংলাদেশ, কানাডা, ইসরাইল) নুরেমবার্গ, ম্যানিলা, টোকিও, আইকম্যান ট্রায়ালের সমালোচনার কথা তো সবাই জানেনই। উপরের আলোচনার পরে আরো সম্পূরক ভাবে বলা যেতে পারে যে, ইয়াগোস্লোভিয়া ট্রায়ালে একের পর এক সমালোচনা করেছেন প্রফেসর মাইকেল পি শার্ফ,জেমস স্লোয়ান,ট্যাভেরনিয়ার, জিওফ্রে রবার্টসন কিউ সি, ডেইলি মেইলের জন লাফল্যান্ড সহ আরো অসংখ্য ব্যক্তি। রুয়ান্ডা ট্রায়ালের সমালোচনাকারীদের মধ্যে আছেন প্রফেসর জেরেমি সারকিন, এরিন ডেইলি, ক্রিস্টোফার যে লি মন, ক্রিস্টিন এম ভেন্টার, ড.ফিল ক্লার্ক সহ অনেকেই। সিয়েরা লিওনের আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ভ্যালেরি উস্টারভেল্ট, শ্রীরাম চন্দ্রলেখা সহ বহু স্কলার। আর কম্বোডিয়ার ট্রায়াল নিয়ে সেইগফাইড ব্লাঙ্ক, OSF সহ অগণিত সমালোচনা চলছে ইচ্ছেমত। অথচ এই বিচার গুলো ছিলো জাতিসংঘের তত্বাবধান ও তাদের সাহায্যে গঠিত বিচার।
এতে করে কি সেই বিচার প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে? থেমে গিয়েছে? উত্তর হচ্ছে, না… যায়নি। আমাদের দেশে গঠিত ট্রাইবুনাল নিয়েও চলছে এমন ফালতু সমালোচনা ও জ্ঞানপাপীদের দৌঁড়-ঝাঁপ। আপনি যদি আজকে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে অভিযোগ আসবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যদি বসে থাকেন, তবে অভিযোগ আসবে বসে আছেন কেন? যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তবে অভিযোগ আসবে, “এত ভালো ভালো না কিন্তু”, মোট কথা সমালোচনাহীন কোনো কর্মই আজ পর্যন্ত সম্পাদিত হয়নি। সুতরাং এসব সমালোচকদের সমালোচনা ও অপরাধীদের বান্ধবদের অসার বক্তব্য আসতে থাকবেই। ট্রাইবুনাল যতক্ষণ তার রাস্তামত চলতে থাকবে আইন ও বিধি মেনে এবং রাষ্ট্র যতদিন আইনমাফিক ও প্রয়োজনমত তার দায়িত্ব পালন করবে ততক্ষণ কারো কিছু করবার ক্ষমতা নেই।
৬) সর্বোচ্চ সাজার দাবীতে জনতার আন্দোলনঃ
ফামা খুব তীর্যক ভাবেই এই বিচার এবং তার সাথে সংযোগ করে বলেছে
“আর আমরা কী দেখেছি? শাহবাগ তুমুল আন্দোলনে নামলো। তিন/চার বছরের বাচ্চার হাতেও প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে দেয়া হলো “ফাঁসি চাই”
এই বক্তব্য দিয়ে ফামা মূলত শাহবাগ আন্দোলনের মত একটি ন্যায় সঙ্গত অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে কার্যত নোংরা দৃষ্টি দিয়েই সূচিত করেছে। ফামার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে আমাকে কিছুটা বলতেই হয়
কারা রয়েছে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে?
এই শাহবাগের আন্দোলনের বিরোধীদের মূলতঃ ৪ টি ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে।
(ক) এই অংশটি শুরু থেকেই এই ট্রাইবুনালের গঠনের বিরুদ্ধে। এরা মূলত স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ। এরা কোনোভাবেই চায়না এই বিচারটি ভালো ভাবে সম্পন্ন হোক। তাই এরা ক্রমাগত ভাবে এই বিচারের ফেয়ারনেস, স্বচ্ছতা, মান ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে তাদের নিজেদের অস্ত্বিত রক্ষার জন্য। মোট কথা, এই বিচার হলে সরাসরি যে পক্ষটি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, এরাই এই বিচার কিংবা এই বিচারের পক্ষে গড়ে ওঠা যে কোনো জনমতের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। এই অংশ থেকেই মূলত ধর্মীয় বিদ্বেষ বা সাম্প্রদায়িকভাবে চিহ্নিত করণের ক্ষেত্রে একটা হার্ড টেন্ডেন্সি লক্ষ করা যায়। এরা যে কোন মূল্যে এই ট্রাইবনালকে বন্ধ করতে চায়। হোক সেটি ধর্ম দিয়ে কিংবা অস্ত্রের বা নৈরাজ্য দিয়ে।
(খ) এই অংশটি এই বিচারের কারনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও, যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের সাথে রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন অঙ্গীকারে আবদ্ধ। এছাড়াও এই অংশটি মনে করে এই বিচারটি যদি হয়ে যায় তবে সরকারী দল ব্যাপক জনসমর্থন পাবে পরবর্তী নির্বাচনে। সুতরাং এই বিচার হয়ে গিয়ে যেন সরকার কোনোভাবেই প্লাস পয়েন্ট না পেয়ে যায়। এই অংশটি অতিমাত্রায় আওয়ামীলীগ বিরোধী। আওয়ামীলীগ কোনো ভালো কাজ করলেও তারা সেটির কৃতিত্ব সরকারকে দিতে নারাজ থাকে। এই দলে রাজনৈতিক নেতাদের বা দলের আধিক্য বেশী কিন্তু এখানে কিছু বুদ্ধিজীবি, পত্রিকার সম্পাদক রয়েছে যারা কোনো না কোনো ভাবে আওয়ামী রাজনীতির যে সুবিধার বলয় সেটি থেকে চ্যুত।
(গ) এই অংশটি উপরের দুইটি অংশের একটিও নয় কিন্তু এই দলটি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আস্থা রাখে না এবং বিভিন্ন ভাবেই এদের নানান বৈষয়িক, আর্থিক ইত্যাদি ব্যাপারে কোনো না কোনো ভাবে এরা আওয়ামীলীগ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন কিংবা এক সময় আওয়ামীলীগ সমর্থিত ছিলেন কিন্তু এখন সে দল ছেড়ে এসেছেন এমন একটি অংশ এই আন্দোলনের বিরোধী। এটি মূলত শাহবাগের আন্দোলনের বিরোধীতার চাইতেও আসলে সরকার বিরোধীতার রেশ এই শাহবাগে টেনে আনছেন। এই দলটির ভেতর কিছু সেমি এলিট, পুরো এলিট, নতুন বুর্জোয়া কিংবা উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তের একটা মিশ্রণ আছে। যারা আইন দিয়ে, যুক্তি দিয়ে এই শাহবাগকে একটা অবৈধ আন্দোলন হিসেবে দেখে কিংবা আইনের উপর একটা হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে মনে করে। এই অংশে কিছু বামপন্থীদের ভীড় রয়েছে যাদের বাংলাদেশী শব্দ চয়নে “চায়না বাম” বলে অভিহিত করা যায়।
(ঘ) এই অংশটি বেশ ধর্মপ্রবণ একটি ভাব ধরে থাকতে ও বলতে পছন্দ করে। এরা শুধু এই আন্দোলন নয়, যে কোনো আন্দলোনেই যদি ধর্মের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন উঠে যেটিকে ধরে নেয়া হয় ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননা তখন এই অংশটি কোনো কিছু না বুঝেই হিংস্র হয়ে ওঠে। এরা মনে করে ধর্মের সমালোচনা করা মানে অন্যায় এবং এটার প্রতিবাদ না করাটা মহা পাপ। এই অংশটি মূলত প্রচন্ড অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত শ্রেণী। এরা একমাত্র বেহেশতে যাবার জন্য দুনিয়ায় বেঁচে থাকে এবং এই বেহেশতে যাবার ও অন্যকেও বেহেশতে নিতেই হবে এটা দায়িত্ব মনে করে। এরা প্রবলভাবে সাম্প্রদায়িক হয়ে থাকে।
৬(ক) প্রাথমিক আলোচনাঃ
আমি এখন আমার লেখার মূল বিষয় নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি। এই আলোচনায় যাবার আগে উপরের ইনফরমেশন কিংবা পর্যালোচনা গুলো পাঠকের তথ্য জানবার কিংবা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি জানবার জন্য প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করি। উপরে যে চারটি অংশের কথা বলেছি সেই চারটি অংশের মধ্যে (ক), (খ) এবং (ঘ) অংশটি নিয়ে আমি চিন্তিত নই কোনোভাবেই। তিন নাম্বার মানে (গ) অংশটি নিয়েই আমার চিন্তা ছিলো না, তারপরেও আমি মনে করছি এই অংশ থেকে যে প্রশ্নটি এসেছে সেটিই আমার এই লেখাটি লিখতে উৎসাহ দিয়েছে। কেননা এখান থেকেই একটি প্রশ উত্থাপিত হয়েছে যে এই শাহবাগের আন্দোলনটি আসলে মাননীয় আদালতের রায়ের উপর হস্তক্ষেপ, এটি একটি অনৈতিক আন্দোলন। যেহেতু বৈধ, অবৈধ কিংবা আইনের কিছু কথা এখানে এসেই গেছে, সেহেতু এই অংশটির এই সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আমি সমীচিন মনে করছি।
একটা মজার ব্যাপার হলো এই অংশটি যদিও শাহবাগের আন্দোলনকে একটি অবৈধ কিংবা নীতিবিরুদ্ধ বলে মনে করে, অথচ এই অংশটি এই “ক” অংশের জ্বালাও-পোড়াও, রায় মানিনা, মানুষ খুন কর, নৈরাজ্য কর এসব বিষয়ে মুখে তালা দিয়ে বসে থাকে। এটি বেশ অদ্ভুত একটা ব্যাপার এবং ক্ষেত্র বিশেষে উপভোগ্যও বটে। সে যাই হোক, আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।
৬(খ) সংবিধান এবং শাহবাগঃ
আলোচনার শুরুতেই আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে এই ট্রাইবুনালের বিচার কোনো ফৌজদারী আদালতে অপরাধীদের বিচার নয় কিংবা এই বিচারের প্রেক্ষাপট সাধারণ কোনো বিষয় না। এই বিচারের প্রেক্ষাপট হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘঠিত অপরাধ এবং যার সাথে একটি জাতির সৃষ্টির সরাসরি সম্পর্ক। আজকে যারা যারা এই শাহবাগের আন্দোলন অবৈধ বলে এদিক সেদিক দিয়ে চাউর করছেন তাদের জন্ম, তাদের অস্ত্বিত্বের সাথেও মুলত এই মুক্তিযুদ্ধের ফলাফলের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আর এই মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের বিচারের জন্যই যেহেতু এই ট্রাইবুনাল সেহেতু রাষ্ট্রের সংবিধান, জুডিশিয়ারী, আইনসভা, এক্সিকিউটিভ তথা সকল অর্গান-ই এক ধরনের অস্ত্বিতের হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিলো।
বাংলাদেশ সংবিধানের একেবারে প্রস্তাবনা অংশ থেকেই শুরু করা যাক। শুরুতেই প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে
“১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষনা করে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি”
একটি জাতির জন্মের কারন এই প্রস্তাবনার শুরুতেই বলা রয়েছে। ঠিক আবার প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারার দ্বিতীয় লাইনেই বলা রয়েছে আইনের শাষনের কথা, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামাজিক সাম্যের কথা। এবার প্রস্তাবনার চতুর্থ প্যারার ২য় লাইন থেকে শুরু করেই মূলত বলা রয়েছে যে এই সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যাক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা পবিত্র দায়িত্ব।
এবার প্রস্তাবনা ছেড়ে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের দিকে নজর দেয়া যাক। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(১) এ বলা রয়েছে “প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে এই ক্ষমতার প্রয়োগ শুধু এই সংবিধানের অধীনে কর্তৃত্বে প্রয়োগ করা যাবে” আবার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(২)-এ বলা রয়েছে জনগনের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন”
সংবিধানের এই কয়েকটি ধারা যদি এখন পর্যালোচনা করি তবে দেখা যায় যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল হিসেবেই মূলত এই সংবিধানের জন্ম এবং এই সংবিধান অবশ্যই সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাষনের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এখন কথা দাঁড়ায় এই যে- কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত ৬ টি অভিযোগের মধ্যে ৫ টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়ে যাবার পরেও (এই প্রমাণের ভেতর প্রত্যক্ষ সাক্ষী রয়েছে যারা সরাসরি কাদের মোল্লার অপকর্মের সাক্ষী) যখন কাদের মোল্লার ফাঁসীর হুকুম হয়না তখন সেটি সংবিধান অনুযায়ী কতটা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে সেটি পাঠকের বিচারের উপরেই ছেড়ে দেই। এই সংবিধানকে যদি আমি পাশে রেখে শুধু এই ট্রাইবুনাল যেই আইনে পরিচালিত হচ্ছে সেই আইনটিকে নিয়েও সুনির্দিষ্ট করে বলি তাহলেও দেখা যাচ্ছে যে এই আইনের ২০(২) ধারাতে যে “proportionate to the gravity of crime” এর কথা বলা হয়েছে সেটার আলোকেই বিচারপতিদের নিজেদের ব্যখ্যা সম্পূর্ণভাবে কন্ট্রাডিক্টরী।
যখন এই জাতীয় একটা রায়ের ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের মনে হয় যে সে ন্যায়বিচার পায়নি কিংবা আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হয়নি আমাদের সংবিধান অনুযায়ী-ই সে প্রতিবাদ করবার ক্ষমতালাভ করে। শুধু এই ক্ষমতাই না, বরং এই যে অপরাধের সাথে শাস্তির এই বিরাট তফাৎ এটি তার বিবেবকেও নাড়া দেয়। ব্যাক্তির এই চিন্তা আর বিবেকের স্বাধীনতাটুকু নিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধানের ৩৯(১)-এ। আবার সংবিধানের ৩৯(২)(ক)-তে বলা রয়েছে “প্রত্যেক নাগরিকের বলার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হোলো”
কিন্তু আবার ৩৯(২) (ক) তে যে বলবার কিংবা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাটুকু রয়েছে সেটা বেশ কিছু কারনে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন করতে পারবে যার মধ্যে রয়েছে আদালত অবমাননা, মানহানির সম্ভাবনা, জনশৃংখলা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নৈতিকতা ইত্যাদি। যেহেতু এই আন্দোলনের দাবী গুলো জনগন শান্তিপূর্ন উপায়ে সরকারের কাছে তুলেছে এবং যেখানে আদালত মনে করেনি যে আদালতকে কোনোভাবেই অবমাননা করা হয়েছে (যেহেতু আদালত এই বিষয়ে কোনো রুল ইস্যু করেনি বা মন্তব্য করেনি) সেহেতু অনুচ্ছেদ ৩৯(২) (ক) এর অধিকারের পুরোটুকুই জনতা আইনগতভাবে পালন করেছে তার অধিকার হিসেবে।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই রায় হবার পর স্বাধীনতার বিপক্ষের যে শক্তিরা যে তাদের মনোভাব ব্যাক্ত করেছে সহিংস ভাবে এবং এই রায় প্রহসন কিংবা যেভাবে ট্রাইবুনাল দখল করবার হুমকি দিয়েছে, বিচারকদের প্রহত করবার হুমকি দিয়েছে, পুরো দেশকে অচল করবার হুমকি দিয়েছে সেটি বরংচ এই সংবিধানের উল্লেখিত অনুচ্ছেদ্গুলোর বরখেলাপ। এমনকি এদের পক্ষের সংবাদপত্রগুলো দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাবার জন্য যেভাবে পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করেছে ভুয়া নাম, ভুয়া ছবি, মিথ্যে সংবাদের মাধ্যমে সেটি বরংচ এই অনুচ্ছেদের ৩৯(২)(খ) কে সম্পূর্ণ ভাবে ভঙ্গ করেছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
একটি প্রদত্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করা কিংবা পাল্টাতে বলা কি বৈধ?
একটি প্রদত্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করা যেতেই পারে। এবং চ্যালেঞ্জ করা যায় বলেই এক কোর্টের রায়ের পর আপীলের প্রভিশন রাখা হয়েছে। অনেকেই এই ট্রাইবুনালের প্রদত্ত রায়কে সাব জুডিস ম্যাটার বলে এটিকে নিয়ে কোনো ভাবে কথা না বলবার পরামর্শ দেন। ব্যাপারটা আসলে নিতান্তই হাস্যকর। এই ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রে যখন একটা রায় হয় তখন এটা একটা অধ্যায়ের ফলাফল কিংবা সমাপ্তি। আইনগত ভাবে তখন দোষীকে দোষী বলা যায়। এই অধ্যায়ের সমাপ্তির সাথে সাথে সেটিকে নিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি তার মতামত জানাতে পারেন, তার চাওয়া কি ছিলো এবং কেনই বা ছিলো সেটি জানাতে পারেন। এতে করে পুরো ব্যাপারটিকে সাব জুডিস ম্যাটার বলে যদি মন্তব্য করার রেস্ট্রিকশনই থাকত তবে রায়ের পরে ডিফেন্সের আইনজীবি এই রায় নিয়ে সব চ্যানেলে বড় বড় সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াতে পারতেন না। আলোচ্য রায় যখন আবার পরবর্তী কোর্টে আপীল শুনানীর জন্য উপস্থাপিত হবে তখন হয়ত এই মামলাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকাই আইন অনুযায়ী কর্তব্য কিন্তু সাধারণ জনতা তার মত প্রকাশ করবেই। তবে শিরোনামে যে চ্যালেঞ্জের কথা বলা রয়েছে সেটি হয়ত প্রকাশ করা হবে ব্যাক্তির এই রায়কে ঘিরে ভাবনা, তার যুক্তি, তার চিন্তার আলোকে। কেননা এই পুরো আদালত অবমাননা কিংবা সাব জুডিস ম্যাটার বুঝবার আগে আমাদের আগে আইন প্রক্রিয়ার যে অন্যতম মূল তত্ব, সেটি বুঝতে হবে।
আমরা যখন আইন পড়ি তখন একটি বিষয় খুব ভালো করে আমাদের পড়তে হয়েছিলো। সেটির নাম “লিগাল এথিক্স”, এছাড়াও যখন “জুরিস্প্রুডেন্স” পড়েছিলাম তখন পড়তে হয়েছিলো আইন ও মোরালিটির নানান তত্ত্ব আর দর্শন। আমি আমার ব্যক্তিগত চিন্তায় সব সময় মনে করি সবার আগে সত্য মানুষ। এই মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী অন্যায় করে, অপরাধ করে। সে কারণেই এই মানুষই সমাজ, সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য তৈরি করেছে নিয়ম ও বিধি, আইন-কানুন কত কিছু। আইন আছে এবং তাকে রক্ষা করতে হবে বলেই মানুষ এই পৃথিবীতে বাঁচে না। বরং মানুষ যাতে সঠিকভাবে ও সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এই সমাজে, সে কারণেই আইন তৈরি হয়েছে।
সমাজতত্ত্ব, মানুষ, সামাজিকতা, দর্শন, আদর্শ, সব কিছুরই একটি ফাইন লাইন আছে শেষ পর্যন্ত। সভ্য সমাজের নিয়ম অনুযায়ী একটা প্রতিষ্ঠিত আদালতের রায় বা বক্তব্যকে জনতা সম্মান করবে ঠিকি কিন্তু সেটি যদি ওই আদালতের নিজের বক্তব্যের সাথেই সরাসরি কন্ট্রাডিক্টরী করে তোলে তবে জনতা সেটি নিয়েই কথা বলবার ও তার চিন্তা প্রকাশের অধিকার রাখে সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী-ই। আমরা যদি শাহবাগের থেকে উঠে আসা দাবী, ইচ্ছা, মতামত গুলোর দিকে তাকাই তাহলে কিন্তু খুব সহজেই একটি বিষয় চোখে পড়ে যেটি হোলো শাহবাগ এই ট্রাইবুনালকে আক্রমণও করেনি, বিচারকের প্রতি আক্রোশও দেখায় নি, স্বাধীনতাবিরোধীদের মত ট্রাইবুনাল ঘেরাও কিংবা এই ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করবার মত কোনো কাজও করেনি। বরং জনতা নির্বাচিত সরকারের কাছেই তাদের বক্তব্য খুব স্পস্ট ভাষায় তুলে ধরেছে।
আন্দোলনের ফলে আইনের পরিবর্তন কি বিচার ব্যাবস্থার জন্য হুমকি?
অনেকেই বলে থাকেন যে এই যে শাহবাগ আন্দোলনের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন-১৯৭৩ পরিবর্তিত হোলো এটি অন্যায়। সাজা হয়ে যাবার পর নতুন করে প্রভিশন তৈরী করা অন্যায়। আমি খুবি বিনীত ভাবে এই জাতীয় প্রশ্নকরা সম্প্রদায়কে কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।
প্রথমত, আমাদের এই আইনটি কিন্তু রেট্রোস্পেকটিভ। ১৯৭১ সালের কৃত অপরাধের জন্য আইন করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে এবং যেটিতে রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্ট দেয়া হয়েছে ।
দ্বিতীয়ত, এই আইনটিকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে সংবিধানের ৪৭(৩) দিয়ে।
তৃতীয়ত, এই আইনটিকে বিচারের আগে একবার সংশোধন করা হয়েছিলো এবং বিচার চলাকালীন সময় ডিফেন্সের নানাবিধ চাপ এবং তাদের পাঠানো লবিস্টদের অনুরোধ ও পরামর্শক্রমে দুইবার বিভিন্ন ধারার সংশোধনী আনা হয়েছিলো। যখন ডিফেন্সের অনুরোধক্রমে সংশোধনী আনা হয় তখন এই কাজ খুব ভালো, আর যখন ন্যায় সঙ্গত ভাবে রায়ের পরে একটি অত্যন্ত জরুরী স্থানে পরিবির্তন ফেয়ার ট্রায়ালের জন্যই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় তখন আর সেটি ভালো থাকে না। সেটি মন্দ হয়ে যায় এক চক্ষু সমালোচকদের কাছে। এই পরিবর্তনের দুইটি দিক আমি আলোচনা করব। এর একটি দিক হচ্ছে, এই আইনের যে আপীলের প্রভিশনটুকু ছিলো সেটিতে কিন্তু এক তরফা ভাবে অভিযুক্তকে তুলনামূলক ভাবে অধিক সুবিধাই দেয়া হয়েছে। ফেয়ার ট্রায়ালের ক্ষেত্রে যে “ইকুয়ালিটি অফ আর্মস” প্রিন্সিপালটি রয়েছে সেটির চর্চা কিন্তু এক কথায় এই ক্ষেত্রে উহ্য-ই থেকে গেছে। কেননা এই আলোচ্য আইনের ২১ (২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ কেবল আসামীকে খালাস দেয়া হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করবার ক্ষমতা লাভ করত, কিন্তু খালাশ দেয়া ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি দেয়া হলে (সেটি যদি কম শাস্তি হয়) রাষ্ট্রপক্ষ কিন্তু সেই শাস্তি বাড়াবার জন্য আপীল করতে পারত না। আমাদের প্রচলিত ফৌজদারী আদালতে কিন্তু এই ব্যাপারে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের সমান সুযোগ রেখেছে। যেখানে বলা হচ্ছে-
THE CODE OF CRIMINAL PROCEDURE, 1898 [Appeal against inadequacy of sentence]
417A.(1) The Government may, in any case of conviction on a trial held by any court, direct the Public Prosecutor to present an appeal to the High Court Division against the sentence on the ground of its inadequacy.
(2) A complainant may, in any case of conviction on a trial held by any Court, present an appeal to the Appellate Court against the sentence on the ground of its inadequacy:
Provided that no appeal under this sub-section shall be entertained by the Appellate Court after the expiry of sixty days from the date of conviction.
(3) When an appeal has been filed against the sentence on the ground of its inadequacy, the Appellate Court shall not enhance the sentence except after giving to the accused a reasonable opportunity of showing cause against such enhancement and while showing cause, the accused may plead for his acquittal or for the reduction of the sentence
কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে এসে অবস্থা যা দাঁড়িয়েছিলো তাতে করে ৬ টি অপরাধের ভেতর ১ টিতে যদি খালাস না পেত তবে তো আর আপীলই করতে পারতা না রাষ্ট্রপক্ষ। একদিকে বিচারকদের নিজেদের রায়ে, নিজেদের বলা বক্তব্যের ভেতর কন্ট্রাডিকশন, আবার অন্যদিকে আপীলের সুযোগ না থাকা, সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকেই আসলে দূর্ভাগ্যজনক ভাবে ব্যাকফুটে ফেলা দেয়া হয়েছিলো এ আইনের মাধ্যমে। অথচ এত এত বিদেশী পন্ডিতরা এলেন, আইন নিয়ে কথা বললেন, বার বার বললেন তারা নিরপেক্ষ, আমাদের ভালোর জন্য বলছেন, কিন্তু দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো প্রসিকিউশনের আপীল রাইটের এই গোলমেলে ব্যাপারটা নিয়ে এরা কোনোদিন কথা বলেনি। অথচ অভিযুক্তের আপীল রাইট নিয়ে তারা ফেনা তুলে ফেলেছিলো।
এখন এই শাহবাগের আন্দোলনের ফলে যেহেতু সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছিলো এবং যেহেতু সরকার জনতারই প্রতিনিধি সেহেতু জনতার এই সম অধিকারের এই যৌক্তিক চাওয়া পূরণ করবে। এটা যেমন সংবিধানের উপরে আলোচিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দায়িত্ব তেমনি গন্তান্ত্রিক সরকারের যে শেইপ রয়েছে সেটিকে বাঁচিয়ে রাখবার দায়ের নিমিত্তেও কিন্তু এই দাবী প্রতিষ্ঠা করা অতীব প্রয়োজনীয় ছিলো। তা না হলে সংবিধানে যে আইনের শাষনের কথা রয়েছে সেটি লংঘিত হোতো, সম অধিকারের ধারনা নিস্প্রেষিত হোতো, গণতন্ত্র পরাজিত হোতো। কেননা বিচার চলাকালীন সময়ে যদি অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষায় আইন পরিবর্তিত হতে পারে সেখানে ভিকটিমদের অধিকার রক্ষায়ও বিচার চলাকালীন সময়ে আইন পরিবর্তিত হতে পারে।
আরেকটি কথা এখানে উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজনীয় বলেই মনে করি। সেটি হোলো শাহবাগের এই আন্দলোন থেকে কিন্তু পরবর্তী সময়ে আইন পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারকে আরো দক্ষ জনবল, আইনজীবি নিয়োগেরও কথা উঠেছে। মামলার একটা অংশ যেহেতু রাষ্ট্র নিজেই, সুতরাং জনতা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে এই দাবী করতেই পারে কেননা এই জনতাই কিন্তু শুধুমাত্র এই বিচার করবে বলেই লক্ষ কোটি জনতার ম্যান্ডেট পেয়েছিলো। সুতরাং সরকার আইনের মধ্য থেকে যতটুকু তার করণীয় সেটি করবে, এমন দাবী জনতা করতেই পারে।
এই বিচারের ক্ষেত্রে বার বার দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবিদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিলো, বলা হয়েছিলো এই আইনকে আরো সময়োপযোগী কিংবা আরো বেশী আধুনিক যদি করবার যায়গা থাকে তবে সেটির জন্য মতামত দেবার জন্য। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে আজকে যারা এই আইন নিয়ে সমালোচনা করেন তারা কেউই তখন এই মতামত দেন নি। এই ব্যাপারটি আমরা জানতে পারি বাংলাদেশ আইন কমিশনের ২০০৯ সালের ২৪ শে জুন প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখে।
অনেকেই আবার বলেন যে শাহবাগ থেকে দাবী উঠেছে যে তারা সকল অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান। এটাকে অনেকেই বলছেন “বিচার মানি তালগাছ আমার” ধরনের বক্তব্যে। এখানেও জনতার বক্তব্যকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। জনতার এই দাবী রাষ্ট্রের প্রতি। জনতা মনে করেছে প্রসিকিউশন দল কিংবা তদন্ত দলে আরো জনবল বাড়াতে হবে, আরো দক্ষভাবে প্রতিটি অভিযোগের চুলচেরা বিশ্লেষন করতে হবে যাতে করে অপরাধী কোনোভাবেই তার অপরাধ এড়াতে না পারে। চুড়ান্ত রায় তো শেষ পর্যন্ত ট্রাইবুনালই দিবে সেটা বলা বাহুল্য মাত্র। কিন্তু সেই রায়ের বা সে সিদ্ধান্তের উপর শাহবাগ কখনোই কোনো প্রভাব তৈরী করেনি। বরংচ তাদের প্রতিনিধির আরো যা যা করণীয় রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেটি-ই তারা বার বার নিশ্চিত করতে চেয়েছে।
রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কি পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে?
একটি আদালতের রায়ের ক্ষেত্রে জনতার অভিমত থাকতেই পারে। এই অভিমত কখনো আবেগী অভিমত হতে পারে, কখনো বা সেটি হতে পারে আইনকে চুল চেরা বিশ্লেষন করে ব্যাক্তির একান্ত নিজের বক্তব্য। এই যে রায়ের ব্যাপারে বক্তব্য কিংবা সেটি নিয়ে ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিবর্গ তুষ্ট না হলে প্রতিবাদ সেটি কিন্তু আজ পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। রায়ের বিরুদ্ধে পালটা অভিমত হিসেবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে শুরু করে মৌন প্রতিবাদ, বক্তব্য পশ্চিমা দেশগুলোতে অহরহ হচ্ছে। নিম্নে উল্লেখিত আদালতের রায়ের যেসব প্রতিবাদ হয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে আজ পর্যন্ত আমরা শুনিনি। তাহলে এসব সভ্য দেশে কি করে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এসব প্রতিবাদ মেনে নেয়া হোলো? কেউ কি সে জবাব দিতে পারবেন? নীচে সেসব প্রতিবাদের-ই কিছু প্রামাণ্য চিত্রই তুলে ধরছিঃ
৭) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক [নট লিগাল] ইস্যুঃ
ফামা তার বক্তব্যে কিছু রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে এসেছে তার টোটকা লেখাটিকে মশালাদার করবার জন্য। যেহেতু এটি পিওরলি লিগাল ইস্যু, সুতরাং আমি এই ধরনের আইনী লেখায় রাজনৈতিক উত্তর দিতে খুব একটা আগ্রহী নই। তারপরেও কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করা খুব প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি। ফামা বলেছে,
আরেকটা ভীষণ রকম silly/funny logic তো অলরেডী টিভিতেই প্রচার করা হচ্ছে “মুক্তিযুদ্ধ করলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার পরবর্তীতে ধারণ না করলে মুক্তিযুদ্ধ করলেও সে মুক্তিযোদ্ধা না” [যেমন বংগবীর কাদের সিদ্দিকী!!! আমার তো এখন মনে হচ্ছে, আসলে ভারত ছাড়া আর উপরের গং-এর এরা ছাড়া, এমনকি এদের অনেকের জন্ম একাত্তুরের পরে হওয়ার পরও, আর কেউ আসলে মুক্তিযোদ্ধা না!], এই লজিকে সেদিন চিন্তা করছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকেতো তাহলে মরণোত্তর যুদ্ধাপরাধ বিচার করতে হয়!! কারন তিনি তো যুদ্ধের পরে ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে (দেখুন, The Times, Feb 1, রিপোর্টারঃ Kuldip Nayar)
ওআইসি সম্মেলন থেকে ফিরে তার এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, “আমি মিঃ ভুট্টোর সিনসিয়ারিটিতে মুগ্ধ। পাকিস্তানের জনগন আমাকে যে ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এয়ারপোর্ট থেকে সম্মেলনে যাওয়ার রাস্তা পুরোটা হাজার হাজার পাকিস্তানী দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে সম্মান দেখিয়েছে, তারা আমার নাম ধরে শ্লোগান দিচ্ছিলো, মুজিব।” একাত্তরে গণহত্যা এবং তাতে ভুট্টোর অবস্থান নিয়ে বংগবন্ধুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি ওসব ভুলে যেতে চাই। আমি চাই আমার মানুষরাও [বাংলাদেশীরা] ওসব ভুলে যাক। আমাদেরকে নতুন করে ফ্রেশ শুরু করতে হবে। মানুষের স্মৃতি খুব ক্ষণস্থায়ী [সো, মানুষ এসব ভুলে যাবে]। আমি ভুট্টোকে হেল্প করতে চাই। ভুট্টো আমার পুরানো বন্ধু [ Wikileaks:http://www.wikileaks.org/plusd/cables/1974LONDON02652_b.html]
ফামা, এই প্রসঙ্গ এখানে কেন এনেছে আমার জানা নেই। এই জাতীয় ইস্যুর কোনো অবতারনা আমি করেছি কি করিনি সেটি আমার মুক্তমনার লেখাই প্রমাণ। যাই হোক, কাদের সিদ্দিকী বর্তমানে যেমন জামাতের মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে সেটা আমরা বাদ দিলাম, আমরা কিছু বল্লামই না। কাদের সিদ্দীকি’র আপন বড় ভাই তাকে কি বলেছেন একবার নিজ কানে শুনে নিন। আর কিছুই বলবার নেই।
httpv://www.youtube.com/watch?v=z-a5w-pLne4
আপন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী কাদের সিদ্দিকীকে নব্য রাজাকার বলে আখ্যায়িত হলে সেটিতে তিনি সায় দিয়েছেন, ধিক্কার দিয়েছেন, তার প্রতারণার কথা বলেছেন। উপরের ভিডিওটি নিজে শুনেই দেখুন…
আর বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের ব্যাপারে কি বলব, চোরাই উইকিলিক্স এর ডকুমেন্ট নিয়ে এসেছেন যথারীতি। ফামা আসলে চোরাই ডকু ছাড়া কথাই বলতে পারেনা। একবার আনেন চোরাই স্কাইপি একবার আনেন চোরাই উইকিলিক্স। আসলে যেই ব্যাক্তির পিতার নামে একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধের তকমা রয়েছে তিনি চোরাই জিনিসের প্রতি আস্থা রাখবেন সেটি বলা বাহুল্য মাত্র।
উপসংহারঃ
ফামা যেই উত্তর দিয়েছেন আমার পূর্বতন লেখার প্রেক্ষিতে, আমি সেই লেখার প্রতিটি প্যারা, লাইন ধরে ধরে উত্তর দেবার চেষ্টা করেছি। স্বাভাবিক ভাবেই আমি আইনীভাবে উত্তর দিয়েছি রেফারেন্স এবং ব্যাক্তিগত পর্যালোচনার প্রতি আস্থা রেখেই। লেখাটি বেশ দীর্ঘ হয়েছে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। কেননা ফামার উত্তর ছোট হলেও সে সব বক্তব্যের এলাকাগুলো বিশদ আলোচনার দাবে রেখেছিলো। অন্তত, আমি সেইটুকু অনুধাবন করেছিলাম। আর তাছাড়া এইখানে যে শুধু ফারজানাকেই আমি বলেছি তা নয়, বরং ফামাকে উত্তর দেবার সাথে সাথে এই বিষয় নিয়ে যারা অপঃপ্রচারে লিপ্ত, উত্তরটি তাদের জন্যও বটে।
এই প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শব্দের উত্তর লিখতে গিয়ে আমি মোটামুটি ক্লান্তই বলা যায়। কষ্ট টুকু আমি করেছি এই ট্রাইবুনাল নিয়ে ফারজানা মাহবুবার [ফামা’র] প্রোপাগান্ডার জবাব দেবার তাগিদে, মনের গহীন থেকে। সে কারনে এই ক্লান্তি আমার জন্য পরম শান্তির আসলে। দীর্ঘ ৪২ বছরের বুকে চেপে থাকা কষ্ট, বিচারহীনতার এক দেশে এবার সত্যই বিচার শুরু হয়েছে এবং এরি মধ্যে বিচার পেয়েছেও এই দেশের আপামর জনতা। কিন্তু, সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কর্তব্য রয়েছে এই বিচারের বিরুদ্ধ চারনকারী এবং এই বিচার নিয়ে অপঃপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন তৈরী করবার। সে লক্ষ্যেই আমরা সাধারণেরা কাজ করে যাচ্ছি এবং যাব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের পরম শক্তি আর আশার বাতিঘর। আমাদের স্বজনেরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। সেই রক্তের ঋণ শোধ করবার দায়িত্ব বাংলাদেশের মুক্তিকামী প্রতিটি নাগরিকের, প্রতিটি আত্নার।
ফারজানা মাহাবুবাদের আমি শুধু একটা কথাই বলি, বিচারহীনতায় বাংলাদেশের কেটেছে ৪২ বছরের। ৩০ লক্ষ স্বজন দূর হতে ডুকরে কেঁদেছে এতটা বছর। অনেকদিন ধরে আপনাদের মত এই রাজাকার দোসর রা আটকে রাখবার বিরামহীন চেষ্টা করেছিলেন বিচার, আজো মানুষকে বিভ্রান্ত করে সেটিই করছেন। কিন্ত গেম ইজ ওভার ফারজানা…গেম ইজ ওভার…
No comments:
Post a Comment