আমি মুক্তিযুদ্ধের দশকের ঠিক শেষে জন্ম নেয়া একজন যুবক। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমাকে সরাসরি না ছুঁয়ে গেলেও আমি সেটি অনুভব করতে পারি পারিবারিক নানা ঘটনার কারনেই। বাবার মুখ থেকে শোনা ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের উপর বই-পত্র, দলিল-দস্তাবেজ পাঠ সহ এই ব্যাপারে যৎসামান্য আমার যা পড়াশোনা আছে আমি সেই আলোকেই মূলত মুক্তিযুদ্ধকে নিজের ভেতর আত্নস্থ করেছি কিংবা করবার চেষ্টা করেছি ও করছি। একজন আইনের ভুবনের সামান্য মানুষ ও আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বরাবর আগ্রহী ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর কেন রাজাকার-আলবদরদের বিচার শেষ পর্যন্ত আর হয়ে উঠেনি সেই ব্যাপারটি নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে আমি আমার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি, আমি প্রশ্ন করেছি, আমি অনুসন্ধান করেছি। অনেক কিছু জেনেছি আমি আবার অনেক কিছু আজও জানিনা।
ফেসবুকের একটি নোটের কলেবর দীর্ঘ করাটা অনুচিৎ। সে কারনেই হয়ত আমি খুব দীর্ঘ কিছু লিখতে পারব না এখানে অথবা এখানে হয়ত অতটা বিস্তারিত কিছুই লেখা যাবেনা কিন্তু তারপরেও আমি এই বিচারের শুরু নিয়ে আমার অনুসন্ধানের প্রথম পর্বের সূত্রপাত করতে চাই এই নোটের মাধ্যমে।[ মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ঘাতক-দালালদের বিচারের পুরো বিষয় নিয়ে একটি সেমি- আইনী বই প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আশা করি সেই দীর্ঘ কলেবরের বইয়ে আরো বিস্তারিত থাকবে] আমার জ্ঞান যেহেতু বই-পত্র, সে সময়ের মানুষের অভিজ্ঞতার বর্ণন, স্মৃতিচারণ কেন্দ্রিক সুতরাং এই লেখাটা “একেবারে সঠিক” এটা বলা যাবেনা কোনোভাবেই। তথাপিও আমি আমার নিজস্ব অনুধাবনের উপর আস্থা রেখেই লিখছি। প্রাপ্ত তথ্য আর উপাত্তকে সৎভাবেই বর্ণনা করবার চেষ্টা করেছি আমি।
যেহেতু বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ তারিখ থেকে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু করেছে সেহেতু আমি মূলত আলোচনা করব ২০১০ সালের আগের ৩৯ বছর নিয়ে। মূলত এই পর্বে সূচিত করবার চেষ্টাই থাকবে ১৯৭২ সালের দালাল আইন নিয়ে, দালাল আইনে বিচার শুরুর প্রাক্কালের ঘটনা এবং পরবর্তীতে নানাবিধ ঘটনা নিয়ে।