আপীলেট ডিভিশান-এর একটি রায়ে নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রঙ-হেডেড/wrongheaded এই শব্দ দিয়ে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো, এমন একটি গুজব আপনি অনলাইন কিংবা অফলাইনে প্রায়-ই শুনতে পাবেন। আমার এই লেখা যারা পড়ছেন তারা হয়ত অনেকেই এই গুজব অনেকবার শুনে থাকবেন।
আমাকে এই গুজবের সামনে প্রথমবারের মত পড়তে হয়েছিলো ২০১২ কিংবা ২০১৩ সালের যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলা টিভি চ্যানেল, চ্যানেল-এস এর এক টিভি টকশোতে। সেই টকশো তে আমার প্রতিপক্ষ ছিলেন বি এন পির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালিক সাহেব।
দীর্ঘদিন ধরে এই গুজবটি চলে আসলেও আমি আজ পর্যন্ত কোনো আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী-আইনজীবি কাউকেই দেখলাম না এই গুজবটা সম্পর্কে একটা শব্দ উচ্চারন করেছেন।
জনসাধারণের কাছে এই মিথ্যাচার তুলে ধরবার জন্য এই যে আওয়ামীলীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগে এত এত আইনজীবি রয়েছেন তাঁরা আসলে করেনটা কি?
আমি আওয়ামীলীগ এবং এর অংগ সংগঠনের দিকে আঙ্গুল তুলেছি একটা কারনেই যে, দেশের এত এত আইনজীবি কর্মী থাকার পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কেন একটা মিথ্যে অপবাদ নিয়ে এতটা বছর ঘুরতে হবে বা হয়েছে?
আজকের এই লেখাটার আগে আমি তন্ন তন্ন করে অনলাইনে খুঁজেছি, কিন্তু এই মিথ্যেকে খোলাশা করে একটি লেখাও কোনো আওয়ামী আইনজীবি বা কর্মী লিখেন নি। ব্যাপারটা হতাশার, কষ্টের এবং একই সাথে বিষ্ময়েরও বটে!
আমি থাকি যুক্তরাজ্যে। চাইলেই আমি বাংলাদেশের অনেক নথি-পত্র, মামলা ইত্যাদি এক্সেস করতে পারিনা। একটা মামলা বের করতে হলে বাবাকে ফোন দিতে হয়, বন্ধুদের ফোন দিতে হয়, পরিচিত-অপরিচিত মানুষদের ফোন দিতে হয়। ডি এল আর, বি এল ডি ইত্যাদি খুঁজতে হয়। আমার বাবা বৃদ্ধ মানুষ, তাঁকে বলাটাও আমার জন্য কষ্টের।
আমার গত পোস্টের একটা বিতর্কের সূত্র ধরে এই 'রঙ-হেডেড' গুজবটা আবার সামনে আসলো এবং এইবার ভাবলাম এই গুজবের একটা কবর রচনা করি। আমার এই লেখাটা সারাজীবন অনলাইনে রেফারেন্স হিসেবে থেকে যাক এবং একটা মিথ্যার অবসান হোক।
বীর উত্তম কর্ণেল তাহেরকে সামরিক আদালতে কতটা বর্বর উপায়ে খুন করা হয়েছে, এমন বিষয়ক একটি পোস্টে বিলুপ্ত বি এন পি সমর্থক মামুন নামের এক ভদ্রলোক আমাকে আবারো এই প্রশ্নের সামনে নিয়ে এসে জানিয়ে গেলেন আদালতে নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রঙ-হেডেড বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
আমি সেই ব্যাক্তিকে বললাম রায়টা দেখান। কিন্তু এইসব জামাত-বি এন পি-শিবিরের লোকজন কি আসলে প্রমাণ নিয়ে কথা বলে? এরা কথা বলে বাতাসের উপর। তলোয়ারও চালায় বাতাসে। ফলে অনেকবার অনুরোধ করেও সেই প্রমাণ কিংবা রায় আমি পাইনি।
তো কি আর কি করা... নিজেই নেমে গেলাম সেই রায় খুঁজতে এবং শেষ পর্যন্ত সেই রায়ের ঠিকানা-সাকিন সব পেয়ে গেলাম। বিস্তারিত দেবার পর আমার বাবা তাঁর চেম্বার থেকে সেই রায় জোগার করে দিলেন।
এই রায় রয়েছে ৫১ নাম্বার ডি এল আর ( ঢাকা ল' রিপোর্ট)-এর ৬৮ নাম্বার পৃষ্ঠায়। মোট ১৩ টি প্যারাগ্রাফের একটি শর্ট অবজার্ভেশন। এই মামলায় উপস্থিত বিচারপতিরা ছিলেন যথাক্রমে-
(মাননীয় বিচারপতি)
১) এ টি এম আফজাল (প্রধান বিচারপতি)
২) মুস্তাফা কামাল
৩) লতিফুর রহমান
৪) বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী
৫) এ এম মাহমুদুর রহমান
রায়টি দেয়া হয়েছিলো ৪-ই মার্চ ১৯৯৯ ইং তারিখে।
হাবিবুল ইসলাম ভুইঁইয়া নামের একজন সিনিয়ার আইনজীবি যিনি ছিলেন তৎকালীন সূপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশানের সভাপতি, তিনি একটি অভিযোগ আনেন তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
কি ছিলো জনাব ভুইঁয়ার অভিযোগ?
অভিযোগ ছিলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৯ শে জানুয়ারী ১৯৯৯ ইং তারিখে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গণভবনে একটি সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দেন সেটির কিছু অংশ আদালত অবমাননার সামিল।
ফলে তিনি উপযাজক হয়ে নিজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ দায়ের করে বসেন।
সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে আপীলেট ডিভিশান তাঁদের রায় প্রদান করেন।
গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন সেটি পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও মামলার ফরিয়াদী জনাব ভুইঁয়া কেবলমাত্র দৈনিক দিনকাল ও জামাতী মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত সংবাদ দিয়েই তার আবেদনটি করেন।
সেখান থেকেই আমরা জানতে পারি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুই দিনে হাইকোর্টে এত বেশি সংখ্যক জামিন হয়েছে, এই মর্মে মন্তব্য করেন এবং তাঁর বিষ্ময় প্রকাশ করেন যে কিভাবে মাত্র দুইদিনে প্রায় ১২০০ জনের জামিন হয়।
আর প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই মন্তব্য কেন করেছেন সেটিও আমরা প্রদত্ত রায়ে জানতে পারি যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভিতে নানাবিধ রিপোর্ট দেখে প্রধানমন্ত্রী সেই মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য আদালতে কোট করা হয় উপরে উল্লেখিত পত্রিকার সূত্রে, তা হচ্ছে-
Daily ‘Dinkal’ পত্রিকায় খবর লেখা হয়…. “গত ২৫ ও ২৬ আগষ্ট দুদিনে হাইকোর্টে ১২শ মামলার জামিন হয়েছিল। এটা কখনো হতে পারে না। এরপর কোর্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেননি।”
Daily ‘Sangram’পত্রিকায় খবর লেখা হয়….“বাংলাদেশের হাইকোর্টের এমন অবস্থা করে রেখে গেছে পূর্বের সরকার যে, দুই দিনে ১২শ মামলার জামিন হয়ে যায়। কিভাবে হলো, কেন হলো? এটা কোনদিন হয়? এটা প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে আনা হয়েছে। যদিও কোর্ট চেঞ্জ করা হয়েছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা তিনি নেননি। যদি তদন্ত করা হতো এবং ব্যবস্থা নেয়া হতো তবে জুডিসিয়ারী অনেক দায় দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেত। জুডিসিয়ারী সম্পর্কে মানুষের কোন সন্দেহ দেখা দিত না।”
আদালত তাঁর রায়ের ৪ নাম্বার প্যারায় বলেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরে উল্লেখিত বক্তব্য কেবলমাত্র ঐ দুটি পত্রিকায় এসেছে কিন্তু দেশের অন্য পত্রিকায় আসেনি এবং একই সাথে প্যারা ৬ এ গিয়ে আদালত তাদের সন্দেহও প্রকাশ করেন যে সংবাদ পত্রের উপর সব সময় আস্থা রাখাও কঠিন।
প্যারা ৬-এ আদালত এটাও বলেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় আগে থেকেই লেখা বা প্রিপেয়ার্ড বক্তব্য প্রদান করেন কিন্তু অফ-দা রেকর্ডে কিছু বললে সেটার রেকর্ড রাখা হয়না। এমন একটা ডিস্পিউট এই মামলায় জন্ম নেয়।
পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ই ১৫/০২/১৯৯৯ ইং তারিখে তাঁর নিজ স্বাক্ষরকৃত স্টেটমেন্টে পরিষ্কারভাবে বলেন-
'২৯ শে জানুয়ারী সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত সফর সম্পর্কে বক্তব্য রাখার পর সাংবাদিকগন আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন যার উত্তর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্নভাবে পরিবেশন করা হয়েছে।
প্রশ্ন উত্তরের এক পর্যায়ে দূর্নীতি মোকদ্দমা বিচারে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে আমি বলি যে, আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে, সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারেনা।
ইতিপূর্বে খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছিলো যে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে দুইদিনে ১২০০ জামিন দেওয়া হয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের সংবাদ/মন্তব্য আমার নজরে আসে।
সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, জাতীয় সংসদের আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটিতে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যা জাতীয় সংসদের গণসংযোগ শাখা সঠিক নয় বলে প্রকাশ করেছে।
একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় এমনও মন্তব্য করা হয়েছে- 'When the hate campaign was building, the Law Minister and the Attorney General met the helpless Chief Justice almost daily, reportedly trying to influence the latter' (weekly Holiday of 6-11-1998, page 1, caption: "Supreme Court Under clouds" by Akbar Imam).
মাস তিনেক আগে খবরের কাগজে আগাম জামিনের শুনানীর ব্যাপারে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে এক অপ্রীতিকর ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়। সেখানের একজন সিনিয়ার এডভোকেট বলেন যে, ঐ বেঞ্চে তার মক্কেলগন সুবিচার পাবেন না।
এ সকলের প্রেক্ষিতে যখন সাংবাদিক সম্মেলনে মোকদ্দমা বিচার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় তখন খবরের কাগজে প্রকাশিত, উপরোক্ত সংখ্যার উল্লেখ করে, আমার যতটুকু মনে পড়ে,আমি বলেছিলাম যে, ঐ ঘটনা প্রধান বিচারপতিকে জানানো হলে তিনি বেঞ্চ পরিবর্তন করে দেন আর কোন ব্যবস্থা নেননি, ব্যবস্থা নিলে জুডিশিয়ারী অনেক দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতো এবং জুডিশিয়ারী সম্পর্কে মানুষের মনে কোন সন্দেহ দেখা দিতো না। দেশে আইন-শৃংখলা ও সেই প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদ/মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি এ অভিমত প্রকাশ করেছিলাম।
এ অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বিচারকদের সততা সম্পর্কে কোন সন্দেহ প্রকাশ করিনি বা এই অভিমত প্রকাশ করার পেছনে আদালতের বা প্রধান বিচারপতির মর্যাদা ক্ষুন্ন করার বা বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করার কোন অভিপ্রায় আমার ছিলোনা'
এই ছিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজের সাক্ষরিত বক্তব্য যা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে পরিষ্কারভাবে তিনি জানিয়েছেন যে আদালতকে কোনোভাবেই অবমাননা করবার তাঁর উদ্দেশ্য ছিলোনা এবং সেটা তিনি করেনও নি।
আদালত এই পুরো ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা নিজস্ব অবজার্ভেশন টানেন যেখানে ৮ নাম্বার প্যারাগ্রাফে পরিষ্কার করে বলা হয় দেশের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত জামিনের ব্যাপারে তিনি অবশ্যই তার মতামত দিতে পারেন এবং সেই এখতিয়ার তাঁর আছে কিন্তু সংবাদ পত্রের সোর্সে তথ্য জেনে সেটি নিয়ে সঠিক ফিগার উল্লেখ না করে মন্তব্য করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আরো সতর্ক হওয়া দরকার বলে আদালত জানান।
রায়ের ৯ নাম্বার প্যারাতে আদালত আবারো একই কথা বলেন যে- there is nothing wrong on the part of the Executive to bring any matter, to the notice of the chief justice regarding a Court's performance and grievance, if any, entertained by it
রায়ের ১২ নাম্বার প্যারাগ্রাফে বলা হয় যে যেহেতু প্রধান বিচারপতির ইস্যুটি এখানে চলে এসেছে ফলে তিনি খুবই বিব্রত বোধ করেছেন ব্যাপারটি নিয়ে এবং তাঁর পক্ষে এই বিষয়ে আসলে প্রকাশ্যে পক্ষে বা বিপক্ষে বলাও সম্ভব হয় না।
এই কথা বলবার পর পর-ই আদালত বলেন যে, যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটা আদালত অবমাননা কিনা এই প্রশ্নে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা বেছে নিচ্ছেন ডিস্ক্রেশনকে। অর্থাৎ আদালত অবমাননা হয়নাই বলেই উনারা মতামত দেন। আর এই মতামত দিতে গিয়ে আদালত এই রকম বিষয়ের উপর একটা বিখ্যাত মামলার উদাহরণ টানেন।
সেই মামলা হচ্ছে Andre Paul vs Attorney General, AIR 1936 PC 141]
এই মামলাতে লর্ড এটকিন নামের একজন বিচারপতির কথাকে এখানে কৌট করে বলা হয় এমন-
'......The path of criticism is a public way : the wrongheaded are permitted to err therein : provided that members of the public abstain from imputing improper motives to those taking part in the administration of justice, and are genuinely exercising a right of criticism and not acting in malice or attempting to impair the administration of justice, they are immune. Justice is not a cloistered virtue : she must be allowed to suffer the scrutiny and respectful even though outspoken comments of ordinary men'
লর্ড এটিকেনের সেই কৌট করা অংশের মধ্যে wrongheaded শব্দটা থাকার কারনেই আমাদের বীর বাঙালির জামাত-বি এন পি মূর্খ ও অশিক্ষিতদের মত ধরেই নিয়েছে এই শব্দটা প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়েছে।
কত বড় গন্ড মূর্খ, ভাবা যায়?
এই উপরের প্যারাতে কৌট করা ইংরেজী অংশটুকুর সহজ মানে হচ্ছেঃ
(ভাবানুবাদ) সমালোচনা করাটা একটা প্রকাশ্য উপায় কিংবা উন্মুক্ত অধিকার জাতীয় ব্যাপার। এটি সঠিক বিবেচনা প্রসুত/ ভুল বিবেচনা/ উৎকৃষ্ঠ বিবেচনা নয় এমন (wrongheaded) হতেই পারে। কিন্তু কথা থাকে যে সেই সমালোচনা যেন বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য/ উদ্দেশ্যে বিদ্বেষ প্রসুত না হয়। বিচার ব্যবস্থা কোনো নিবিড়/এবসোলিউট/ গুন নয়। এই ব্যবস্থাও সমালোচনার মুখে পড়বে, সুক্ষ ভাবে বিবেচ্য হবে এবং সেটা একজন সাধারণ মানুষও করতে পারে।
সোজা বাংলায় যে কথার মানে দাঁঁড়ায় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে ভুল বিবেচনা প্রসূত কথা বার্তা হতে পারে কিন্তু সেইটা বিদ্বেষ মনোভাবের না হলেই হয়। আর বিচার ব্যাবস্থা কোনো সমালোচনার উর্ধ্বের কিছু নয়।
তো, এই রায়ে বিচারপতিরা wrongheaded শব্দটা একটা কৌট-এর অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, এটা দেখেই জামাত ও বিলুপ্ত বি এন পি'র কর্মীরা আগ-পাশ-তলা-উপর-নীচ কোনো কিছু না বুঝেই করলো কি, প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে ফেললো এবং চাউর করে দিলো যে শেখ হাসিনাকে রঙ হেডেড বলেছে আদালত।
কোন লেভেলের অশিক্ষা-কুশিক্ষা নিয়ে এরা এই সমাজেই ঘোরে ফেরে, ভাবা যায়?
যেখানে রঙ হেডেড শব্দটার মানেই হচ্ছে মিসগাইডেড/ভূল বিবেচনা প্রসুত আবার যেখানে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে লর্ড এইটকিনের একটা মামলার অংশ হিসেবে যে বিচার ব্যবস্থাকে আসলে সমালোচনা করা যাবে কিন্তু কিভাবে সেটা বুঝাতে গিয়ে, আমাদের বঙ্গ মূর্খরা সেটিকে অনুবাদ করলো পুরোপুরি রাজনৈতিক কায়দায়।
রায়ের মধ্যে রঙ হেডেড লেখা আছে তাইলে এইটা শেখ হাসিনাকে বলেছে এইটাই হোলো এক অশিক্ষিত বিরোধী দলের অশিক্ষিত প্রোপাগান্ডা। একবারো বুঝতে চাইলোনা রায়ে আসলে কি বলেছে কিংবা কাকে বলেছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ খারিজ হয়ে যায় উপরের অবজার্ভেশন দিয়ে।
এই হচ্ছে এত বছর ধরে চলে আসা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অশিক্ষিত এক বিরোধী দলের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রোপাগান্ডা।
পড়া নাই, লেখা নাই, গবেষনা নাই। সারাদিন হই হই হই হই। 'রায়ে লিখসে রঙ হেডেড তাইলে ছড়ায়া দে', 'রায়ে লিখসে রঙ হেডেড তাইলে এইটা শেখ হাসিনার গায়ে লাগা দে', এই হচ্ছে আমাদের দেশের বিরোধী দলের কার্যত শোচনীয় অবস্থা।
এই রঙ-হেডেড ক্যাঁচালটা এই মূর্খরা কখন সামনে নিয়ে আসে, আপনি কি তা জানেন? ঠিক তখুনি আনে যখন দেশের বিভিন্ন মামলার রায় এনে আমরা দেখাই যে জিয়া একটা খুনী, খালেদাকে আদালত রাজাকারের পালনকারী বলেছে ইত্যাদি।
মানে দাঁড়াচ্ছে, আদালতের এইসব স্পস্ট বক্তব্য সামনে আনার পর তাঁরা শেখ হাসিনাকেও আদালত কিছু বলেছে এটা বলে একটা ডিফেন্স নিতে চায়। মানে তোমরা আমাদের লিডারদের চোর বলো, তাই আমরাও একটা ভুয়া রায় নিয়ে এসে তোমাদের চোর বলবো। এই হইলো কাহিনি।
আশা করি এই লেখাটা ভবিষ্যতের জন্য রেফারেন্স হয়ে থাকবে। আমি একই সাথে এটা নিয়ে একটা ভিডিও ব্লগও বানাবো যাতে আজীবন যে কেউ রেফারেন্স হিসেবে সেই ভিডিও-ও দিতে পারেন মিথ্যুক ও প্রোপাগান্ডায় জড়িত ব্যক্তিদের মুখের উপর।